চরম দুর্ভোগে ১০ জেলার মানুষ
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
ভাদ্রের বন্যায় উত্তরাঞ্চলসহ দেশের ১০টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। অসময়ের এই বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর রোপা আমনের ক্ষেত। নষ্ট হয়েছে শীতের আগাম সবজি ক্ষেত ও বীজতলা। এছাড়া অসময়ের বন্যায় তিস্তা, যমুনা এবং ব্রহ্মপুত্রের ব্যাপক ভাঙনে নিস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। পানিবন্দি মানুষের না খেয়ে দিন কাটছে। বন্যায় জামালপুর জেলায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। সেখানে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগে পানিবন্দি মানুষ। তিস্তার ভাঙনে কুড়িগ্রামে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। এছাড়া সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় যমুনা ভাঙছে বাড়ি-ঘর জমি-জমা। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা গ্রামে যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙে বসতঘর ও সহায়-সম্বল হারিয়ে এখন নিঃস্ব দেড় শতাধিক পরিবার। গতকাল প্রায় ৫০০ মিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর তারা পাশের আরেকটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে খাবার ছাড়াও বিশুদ্ধ পানির সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। লক্ষীপুরের রামগতি ও কমলনগরে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে মসজিদ, বিদ্যালয় ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বন্যা ও ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট নি¤েœ তুলে ধরা হলোÑ
টাঙ্গাইল থেকে আতাউর রহমান আজাদ জানান, যমুনা, ধলেশ্বরী, ঝিনাইসহ সবক’টি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে তিনটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ভূঞাপুর ও কালিহাতী উপজেলার ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ভূঞাপুর, নাগরপুর ও কালিহাতীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও নিকরাইল ইউনিয়নের পাটিতাপাড়া, কোনাবাড়ি ও চিতুলিয়াপাড়া এলাকায়।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের বেশকয়েকটি গ্রাম ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ি এলাকাতেও পানি প্রবেশ করেছে। ফলে এলাকার মানুষজন পানিবন্দি হওয়ায় বিপাকে পড়েছে। নিচু এলাকায় আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তবে পানি আরও বৃদ্ধি পেলে সেসব এলাকাগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টাঙ্গাইলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। তারপর থেকে পানি কমতে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢলে জামালপুর জেলার যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, বকশিগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার যমুনার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার প্রায় ৩৫হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ২২শ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
গতকাল সরেজমিনে দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, যমুনার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারীদের অনেকের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার কিছু কিছু রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও ইসলামপুর উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।
ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের ঢেঙ্গারগড় এলাকার মো. মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি। রান্না করে খাওয়ার উপায় নাই। চুলাতে পানি উঠে গেছে। আগলা চুলাই কোন রকমে রান্না করে জীবন চলতেছে। এদিকে ফসলের খেতে পানি ওঠে সব ফসল নষ্ট করে ফেলেছে। দ্রুত পানি না কমলে আমাদের দুঃখের শেষ থাকবে না।’
ওই উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নের বামনা এলাকার রওশন আরা বলেন, খেত-খামারের সব ফসল তলিয়ে গেছে। ধান, শাকসবজি সব ফসলের খেতে পানি ওঠেছে। রাস্তা-ঘাটে পানি। চলাফেরা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে শুরু করলেও প্লাবিত নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, সাহেবের আলগা, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট, চিলমারী ইউনিয়ন ও রৌমারী-রাজীবপুর উপজেলার অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল বন্যার পানিতে এখনো ডুবে আছে। গত এক সপ্তাহের তুলনায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো পানিবন্দি আছে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার। এসব চরাঞ্চলে কৃষকের বীজতলা, শাকসবজি ও রোপা আমন ধানক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে আছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় গোখাদ্য ও জ্বালানি-সংকট দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সব নদ-নদীর পানি সমতলে কমছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রৌমারী উপজেলার ফলুয়ারচর, পালের চর, গোয়ালের চর, খেরুয়ারচর, সুখেরবাতি, ধনারচর, রাজীবপুর উপজেলার চর সাজাই, ডাটিয়ারচর, কোদালকাটি, শংকর মাধবপুর, বড়চর, সাজাই ম-লপাড়ার প্রায় ২৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে এখনো প্লাবিত অবস্থায় আছে। রৌমারী উপজেলার ফলুয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সবুর বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ প্লাবিত হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম সিরাজী জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বেড়ে সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে অনেক ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অনেক মানুষ।
সিরাজগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গতকাল সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৩ দশমিক ১০ মিটার রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল থেকে যমুনার পানি বেড়েছে ৬ সেন্টিমিটার। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলী ও বাঐতাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রাম দুটির নতুন নতুন রাস্তা, বসতবাড়ি, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। গ্রামের মানুষ যাতায়াত করছেন নৌকা ও ভেলায়। এতে তারা দুর্ভোগে পড়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে আমানত উল্যাহ জানান, রামগতি ও কমলনগরে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে মসজিদ, বিদ্যালয় ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মেঘনার এ ভায়াবহ ভাঙনে উপজেলার পাটারীরহাট, ইসলামগঞ্জ, লুধুয়া ফলকন ও মধ্য চরফলকন এলাকায় বাস্তবায়নাধীন নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বালুভর্তি জিও ব্যাগের বাঁধ নদীতে ধসে পড়ছে। গত এক সপ্তাহে ওইসব এলাকার জিও ব্যাগের বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভাঙনকবলিত ওইসব এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নালিতাবাড়ী সীমান্তবর্তী উপজলায় জন সচেতনতামূলক সভা ও গণসংযাগ
দুমকিতে নিষিদ্ধ পলিথিনসহ আটক ১
দাবানলে সব ঘরবাড়ি পুড়লেও অলৌকিকভাবে অক্ষত একটি বাড়ি!
নিজ দলের দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের গ্রেফতার করার দাবি আওয়ামীলীগ নেতার
রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে দাউদকান্দিতে ধানের চারা রোপন কর্মসূচি
ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের মতবিনিময় সভায় চরমোনাই পীর
ধামরাইয়ে যুবকের লাশ উদ্ধার
ফেনীতে বন্যায় ব্রিজ ভেঙে খালে ৪ মাসেও সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগ চরমে
সউদী আরব ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও বিক্রির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে
মুজিবনগর সেচ প্রকল্পে দুদকের অভিযান ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ
শীত আসতেই রাজনগরে শুরু হয়েছে নাচ-গান আর জুয়ার আসর
বিজিবি দিনাজপুর সেক্টরের উদ্যোগে শীতার্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ
বুড়িচংয়ে কাকদী নদীর পাড় কাটায় বাধঁ ভাঙ্গার আশঙ্কা বিরাজমান
বীজ সরবরাহে প্রতারণা উপরে সুন্দর গাছে আলু ফলন নেই
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় খালাস পেলেন বাবর
ভারতের মহাকুম্ভ মেলায় পবিত্র নদীতে স্নানের মহোৎসব , আধ্যাত্মিকতার মহাযজ্ঞ
কলাপাড়ায় বিএনপি'র দপ্তর সম্পাদকের বাসায় চুরি
কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলায় মানুষের ঢল
রাজউক উত্তরা জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন
নিষিদ্ধ সংগঠন সহ-সভাপতি সজল ১ দিনের রিমান্ডে