মুজিবনগর সেচ প্রকল্পে দুদকের অভিযান ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ
১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১০ পিএম | আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১০ পিএম
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসি (সেচ) বিভাগের অধীন মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুদক। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় বিএডিসি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুদক। দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
অভিযোগ রয়েছে, মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ টাকার সিংহভাগই অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে। অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে সরকারি বরাদ্দের এসব টাকা লুট করা হয়েছে। চার বছরে প্রকল্পটির খাতা-কলমে অগ্রগতি ৭৫ ভাগ হলেও মাঠ পর্যায়ে তার অস্তিত্ব নেই। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়ে ইতোমধ্যে ১৯২ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। প্রকল্পটির বিরুদ্ধে সরকারি টাকা নয়-ছয় এবং মাঠ পর্যায়ে কাজের অস্তিত্ব না থাকায় দুদকে অনুসন্ধানের জন্য একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নীলকমল পাল বলেন, ২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বিএডিসি অফিসে অভিযান চালিয়েছি আমরা। মাঠ পর্যায়েও আমরা তদন্ত করবো। অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে নিজেদের পছন্দমতো ঠিকাদার দিয়ে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার পলাতক কয়েকজন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যের কারসাজিতে রাষ্ট্রের এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে অতি উর্বর মাটির জেলা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলকে বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে নিষ্কাশন সুবিধাসহ সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে বিএডিসি। ওইসব জমিতে প্রতি বছর ৫১ হাজার মেট্রিক টন ধান, গম ও ভুট্টাসহ খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যে গৃহীত হয় প্রকল্পটি। ২৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার প্রাক্কলন ব্যয় ও ৫ বছর বাস্তবায়নকাল ধরে অনুমোদন লাভ করে ‘মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’।
প্রকল্প বাস্তবায়নের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে—১৩০টি সৌরচালিত ডাগওয়েল নির্মাণ, যার প্রতিটির ব্যয় ১২ লাখ টাকা। ১৮০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, যার প্রতি কিলোমিটার খনন ব্যয় ৯ লাখ টাকা। ২৫৫টি পাম্প হাউজ নির্মাণ, যার প্রতিটির ব্যয় ১৫ লাখ টাকা। ৯৫টি ২ কিউসেক ফোর্সমোড পাম্পসেট স্থাপন, যার প্রতিটির ব্যয় ১৫ লাখ টাকা। ৫ কিউসেক সোলার পাম্প ২৫টি, যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ১৫ লাখ টাকা। ১৫টি বড় আকারের সেচ অবকাঠামো, যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ৪০ লাখ টাকা। ১২০টি মাঝারি আকারের সেচ অবকাঠামো, যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ২৫ লাখ টাকা। ৩০০টি ছোট আকারের সেচ অবকাঠামো, যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় সাড়ে ৭ লাখ টাকা এবং ২১৫টি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ, যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। এভাবে মোট ১১টি খাতের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই উন্নয়ন প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে টেন্ডার সিন্ডিকেটসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বরাদ্দকৃত টাকা কাগজে বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ ও হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিপুল অঙ্কের রাষ্ট্রীয় টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ২০২৪-২৫ চলতি অর্থ বছরে প্রকল্পের বাকি অংশের বাস্তবায়নে ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ের স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সম্পন্ন করার দাবিতে প্রকল্প কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারগণ।
একইভাবে দুদকে পাঠানো একাধিক লিখিত অভিযোগগুলো হলো—প্রকল্প পরিচালকের যোগসাজশে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান একই কাজ দুইবার বা তিনবার দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার করে কাগজে কলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে ওই খাতের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মনোনীত ঠিকাদারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভুয়া কোটেশনে কাজ দেখিয়ে তার বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করেছে।
কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলে স্থাপনকৃত ২ শতাধিক সেচ প্লান্টের জন্য চাষিদের কাছ থেকে প্রতিটি প্লান্ট বাবদ ৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ। প্রকল্প পরিচালক প্রতিটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য মনোনীত ঠিকাদারের কাছ থেকে মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫ ভাগ কমিশন গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচারের টাকা উত্তোলনে প্রকল্প পরিচালক নেন ৪০ ভাগ এবং ঠিকাদার নেন ৬০ ভাগ। প্রকল্পের ডিপিপির ড্রয়িং ডিজাইন অনুযায়ী নির্ধারিত মাপের ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের সেচ অবকাঠামো নির্মাণ না করার অভিযোগ।
এ ছাড়া কাজ শেষে ঠিকাদার বিল নেওয়ার পূর্বে প্রকল্প পরিচালক (২ শতাংশ), সহকারী প্রকৌশলী (১ শতাংশ), সাইট অফিসার (২ শতাংশ) ও হিসাব সহকারী (১ শতাংশ) হারে কমিশন প্রদান বাধ্যতামূলক।
এ বিষয়ে মুজিব নগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমান প্রকল্প পরিচালক আলী আশরাফের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এই প্রকল্পের প্রথম পরিচালক ছিলেন নুরুল ইসলাম ও দ্বিতীয় পরিচালক ছিলেন মাহাবুব আলম। তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্যাংকিং সেবা খাতে এখনো ভারতীয় আধিপত্য
পরিষ্কার বার্তা চায় জনগণ
অবশেষে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
কারাগারে এস কে সুর
‘গ্রিনল্যান্ডকে সামরিক এলাকা বানাতে চান ট্রাম্প’
ছাত্রলীগ নেত্রী নিশি দুই দিনের রিমান্ডে
অভি খালাস! তাহলে খুনী কে?
জল্পনা উড়াল চীনা সংস্থা টিকটক কিনছেন না মাস্ক
ধামরাইয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরির কারখানায় ফের আবার ডাকাতির চেষ্টা
রাজউক জোনাল অফিস স্থানান্তর আদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন
দ্বিতীয় দিনের মতো অনশনে অব্যাহতি পাওয়া এসআইরা
বন্ধ বেক্সিমকো খুলে দেয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মানববন্ধন
আধুনিক ডেটা ওয়্যারহাউজ স্থাপন করবে বিবিএস
পরিবারসহ জ্যাকব ও ছেলেসহ সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন শুনানির নতুন তারিখ
সামাজিক ও আচরণ পরিবর্তনের বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান ইউজিসি’র
চুক্তিতে নিয়োগের দৌড়ে নওফেলের জালাল উদ্দিন চৌধুরী
পুলিশের চাকরি হারিয়ে ছিনতাইয়ে নামেন হাকিম
ভোটার তালিকা হালনাগাদে সহায়তা করবে ইউএনডিপি
সাকরাইনে মেতেছে পুরান ঢাকা