ধীরে চলছে তদন্ত কমিটির কাজ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:১৮ পিএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
আলোচিত-সমালোচিত ও সাময়িক বরখাস্তকৃত এডিসি হারুন অর রশিদকে বাঁচাতে তৎপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের একটি অংশ। তারা ইতোমধ্যে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য নানা তদবির করছে। অভিযুক্তদের রক্ষায় ধীরে চলছে তদন্ত কমিটির কাজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
অন্যদিকে ডিএমপির তদন্ত কমিটির সময় বাড়ানো হলেও গতকাল পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি অভিযুক্ত এডিসি হারুন অর রশিদ, এডিসি সানজিদা আফরিন ও প্রেসিডেন্টের এপিএস আজিজুল হক মামুনকে। তবে তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনার সূত্রপাত বারডেম হাসপাতালের ইটিটি বিভাগে, সেখানকার আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগের তিন নেতাকে যখন থানায় নিয়ে আসা হয় তখন কারা কারা শাহবাগ থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) রুমে ঢুকেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত সেসব বিষয়ক খতিয়ে দেখছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সব জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে গুরুত্ব সহকারে। এরই মধ্যে এডিসি সানজিদা আফরিন গণমাধ্যমে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না উল্লেখ করে তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, এ ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে কমিটি। যাদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অপরাধের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পুলিশ কমিশনার অপারেশনস আবু ইউসুফ সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ধাপে ধাপে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া শাহবাগ থানায় নির্যাতনের ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিষয় তুলে ধরে প্রতিবেদন দেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।
সূত্র জানায়, শনিবার ৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগের বারডেম হাসপাতালে ৩৩তম ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা এডিসি সানজিদা ও ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা এডিসি হারুনকে একসঙ্গে দেখতে পান সানজিদার স্বামী প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ও বর্তমানে প্রেসিডেন্টের এপিএস হিসেবে নিযুক্ত আজিজুল হক। এ সময় আজিজুলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তিন নেতা উপস্থিত ছিলেন। সানজিদার সঙ্গে হারুনের সম্পর্কের জের ধরে সেখানে গ-গোল শুরু হয়। বাক-বিত-ার এক পর্যায়ে সেখান থেকে তিন পক্ষই চলে যায়। পরবর্তী সময়ে এডিসি হারুন শাহবাগ থানা পুলিশের মাধ্যমে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে থানায় তুলে নিয়ে যান। থানায় ওসির কক্ষে পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমকে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধরে আহত আনোয়ার হোসেন নাঈমের কয়েকটি দাঁত পড়ে যায়। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নাঈমের বন্ধুরা জানিয়েছেন, নাঈমকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার ঘাড়ে লাঠি দিয়ে পেটানোর কারণে টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাঈম এখনও ঘাড় নড়াতে পারছেন না। অন্য দুজন ঘটনার পরপরই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় গিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, আলোচিত এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এডিসি হারুনকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে রমনা বিভাগ থেকে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) বদলি করেন। পরে পুলিশ সদর দফতরের এক আদেশে এডিসি হারুনকে পিওএম থেকে এপিবিএন বদলি করা হয়। এর একদিন পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, এডিসি হারুনকে পুলিশের রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও সদস্য মারধরের শিকার হলেও আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার কোনও সুযোগ নেই। এডিসি হারুন তিন ছাত্রলীগ নেতাকে যেভাবে থানায় এনে পিটিয়েছেন, সেটি ফৌজদারি অপরাধের শামিল। তিনি আগে মারধরের শিকার হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এর প্রতিকার চাইতে পারতেন। তা না করে তিনি আইনের মধ্যে না থেকে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তার জন্য পুরো বাহিনীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, হারুনকে যেন চাকরিচ্যুত হতে না হয়, এজন্য তদবির শুরু করেছে একটি মহল। সাধারণত থানায় নিয়ে যে ধরনের ঘটনা তিনি ঘটিয়েছেন, তাতে পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের চাকরি থেকে বহিষ্কার করার কথা। এজন্য তারা হারুনকে সঙ্গে নিয়ে প্রভাবশালীদের কাছে গিয়ে তদবির শুরু করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ১২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আরেকটি প্রজ্ঞাপনে এডিসি হারুনকে রংপুরের রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। যাতে হারুন সশরীরে প্রভাবশালীদের কাছে গিয়ে তদবির করতে না পারেন।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, পুলিশ হেফাজতে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। কোনও ঘটনারই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ার কারণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে থাকা অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তারা আরও বেশি সাহসী হয়ে সাধারণ মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। এডিসি হারুনই তার বড় প্রমাণ। তার বিরুদ্ধে আগের ঘটনাগুলোতে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে, নতুন করে এই ঘটনার জন্ম হতো না। তিনি আরো বলেন, এখন সরকারের ছাত্রসংগঠনের দুই নেতা নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণে এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কিছুদিন পর হয়তো দেখা যাবে, তারা মিলেমিশে গিয়েছে। এডিসি হারুন আবার সগৌরবে আগের স্থানে ফিরে এসেছেন। কিন্তু এতে পুরো বাহিনীর ওপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যায়। এজন্য দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লস অ্যাঞ্জেলেসে এবার ‘আগুন টর্নেডোর’ আশঙ্কা
দেশে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু
মোংলায় ভটভটি উল্টে ২ জন নিহত, আহত ২
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ প্রকাশ
নাম ভাঙিয়ে তদবির-টেন্ডারবাজি: সতর্ক করলেন সারজিস
গুলশান থেকে ওবায়দুল কাদেরের ‘পালিত ছেলে’ গ্রেফতার
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
বায়ুদূষণে আজ সবার শীর্ষে ঢাকা
শৈলকুপায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত
বাবরের মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়
ব্যাংক খাত নিপুন কারিগরের মতো যেভাবে ধ্বংস করেন এসকে সুর
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠক বর্জন করবে লেবার পার্টি
দেশে ফিরতে চান মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া অভি
দুর্নীতির মাধ্যমে পুতুলের ডব্লিউএইচও'র পদ পাওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
বাড়িতে ঢুকে সাইফ আলিকে ৬ বার ছুরিকাঘাত, হাসপাতালে ভর্তি
রাজশাহী জেলা ছাত্রদল নেতার পিতা বাচ্চু সরকারের দাফন সম্পন্ন
মোংলায় সড়কের ওপর রাখা পাথরের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ভটভটিতে থাকা দুই যাত্রীর মৃত্যু, আহত ৪
গাজায় ঐতিহাসিক পরাজয় ইসরাইলের
১৭ বছর পর আজ দুপুরে কারামুক্ত হচ্ছেন বাবর
দীর্ঘ এক যুগ পর কারামুক্ত হলেন ডেসটিনির চেয়ারম্যান