বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমানের বিচারের পর দেশে- বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। তারা বলেছেন, যারা যড়যন্ত্র করছে তাদেরকে বলবো, এই সরকারের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে পতন ঘটানো যাবে না। গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে দলটির নেতারা এমন মন্তব্য করেন। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপ-রাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র’-এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে জুম্মার নামাজের পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে জমায়েত হন। খ- খ- মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসেন তারা। সমাবেশে আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও যোগ দেন।

সমাবেশে আদিলুর রহমান টাকা খেয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে বিদেশিদের বিভ্রান্ত করে ছিল বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, হেফাজত নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, কিছু লবিষ্ট, বিএনপি- জামায়াত ধর্মান্ধদের টাকা খেয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দেয়। সেই আদিলুর রহমান টাকা খেয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে বিদেশিদের বিভ্রান্ত করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপী ইউনিয়ন বিএনপির ভাষায় আরেকটি রেজুলেশন তারা নিয়েছে। আপনারা বাংলাদেশে টিম পাঠান। আপনারা বলেছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নাই, কথা বলার অধিকার নাই, মানবাধিকার হুমকির মুখে। মানবাধিকার কি শুধু মিথ্যাচার করা? আপনারা সংখ্যালঘুদের সাথে কথা বলেন। বাংলাদেশের দুই-এক ভাগ সংখ্যালঘু যদি বলে আওয়ামী লীগ তাদেরকে নিরাপত্তা দেয় নাই, সব চেয়ে ভালো অবস্থানে নাই, আমরা এ দেশে সরকারে থাকবো না।
তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এমপি হিসেবে বলছি, এদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টার, গারো-চাকমা, প্রতিটি মানুষের, এই সংখ্যালঘুদের ৯৯ ভাগ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে তাদের অধিকার সবচেয়ে বেশি থাকে। নাগরিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি অধিকার ভোগ করে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে ৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে হেফাজত সমাবেশ করেছিল। আমি সে দিন খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। খুব কাছে থেকে দেখেছি, তাদেরকে খুব অনুরোধ করেছিলাম সমাবেশ শেষ করতে, সন্ধ্যার দিকে সরকারের কাছে খবর আসলো তারা সমাবেশ থেকে উঠে যাবে না। রাতের মধ্যে তারা গণভবন ঘেরাও করে, সচিবালক ঘেরাও করে, তারা সরকারের পতন ঘটাবে। রাত আটটার দিকে কি দেখেছিলাম? খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়ে জানালো বিএনপির নেতারা হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে। এরশাদ ফ্রিজের ঠান্ডা পানি নিয়ে হেফাজতের পাশে দাঁড়ালেন। খাবার নিয়ে দাঁড়ালেন। সারা দেশ আতঙ্কগ্রস্থ। গণভবন ঘেরাও হবে কিনা ? সচিবালয় ঘেরাও হবে কিনা? হেফাজতের কে প্রধানমন্ত্রী হবেন? নাকি বিএনপির কাছে দিবে ক্ষমতা। এমন এক পরিস্থিতি। আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যান নাই, রাত তিনটার মধ্যে শাপলা চত্বর পরিস্কার হয়েছিল। সেখানে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিল ঢাকা মহানগরের নেতারা।

আদিলুর রহমানের বিচার নিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, হেফাজতের সেই সমাবেশে ৬১ জন মানুষ মারা গেছে, এর চাইতে বড় মিথ্যাচার আর কি হতে পারে? সে মিথ্যাবাদী যদি বিচার হয় আইনে, সেটা কি অন্যায়? তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটানা আন্দোলন সংগ্রাম করছে। একই দাবি নিয়ে ১৩ সাল থেকে শুরু করেছে, শেখ হাসিনা পালাবার পথ পাবে না, একই কথা বারবার বলছে,শেখ হাসিনার পতন না হলে তারা কোন নির্বাচনে যাবে না।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে দেশি -বিদেশি শক্তি যড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, যারা যড়যন্ত্র করছে তাদেরকে বলবো, এই সরকারের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে পতন ঘটানো যাবে না। বিদেশি যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, মানবতার কথা বলে তারা এই যড়যন্ত্রীদের সাথে থাকবে না।
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, আশা করি সকল দল নির্বাচনে অংশ নেবেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনপ্র্রিয়তা যাচাই করুন। বিএনপি-জামায়াতের অশুভ তৎপরতা নসাৎ করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনবো।

তিনি বলেন, বলেন, মির্জা ফখরুলের এখন আর হাসি খুশি মুখ নেই। স্যাংশন ভিসা নীতি করে ভেবেছিল, তারা ক্ষমতায় এসে গেছে। কিন্তু এখন মুখ শুকিয়ে গেছে। বিএনপি ভেবেছিল হেফাজতের সমাবেশ যোগ দিয়ে সরকার পতন হবে।

অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমানের সাজার বিষয়ে যড়যন্ত্র হচ্ছে এমন মন্তব্য করে হানিফ বলেন, হেফাজতের মহাসমাবেশ ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অধিকার বলেছিল। সেই মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তার দুই বছরের কারাদ- হয়েছে। এ জন্য মির্জা ফখরুলের দুঃখ কিসের। এই স্বাধীনতা বিরোধীরা এক হয়ে সরকার পতন ঘটাতে চায়। বিদেশি বন্ধুদের বলবো, বাংলাদেশের জণগনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেকে বিরত থাকুন। আমরা পরিস্কার করে বলছি, বিএনপি জামায়াত কর্মসূচি দিলে আমরা রাজপথে থেকে তাদের যে কোনো ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করবো।

হেফাজতের আন্দোলনের উপরে ভর করে সে সময় বিএনপি ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখেছিলো বলেও এ সময় মন্তব্য করেন হানিফ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ভেবেছিলো হেফাজতের আন্দোলনে সরকার নেমে যাবে। ২০০ গরু মেরে খাওয়ার ব্যবস্থার করার নির্দেশ দিয়েছেন। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমের আল জাজিরায় স্বাক্ষাৎকারেও সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, শহিদুল আলম একাত্তরের পরাজিত শক্তির বংশধর। ওর মাও ছিলো রাজাকার, সে রাজাকার সবুর খানের ভাগ্নে।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, অধিকার (মানবাধিকার সংগঠন) তাদের ওয়েবাসাইটে বলেছিল ৬১ জন নিহত হয়েছে। সেটা যে মিথ্যা তথ্য ছিল গণমাধ্যমে সেটা উঠে এসেছিলো। তারপরও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিন্দা জানিয়েছেন। আগামী ৪৫ দিন রাজপথে থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ লড়াই সংগ্রাম করবে।

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী।