প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ

প্রতিপক্ষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার পরিণতি কখনো ভালো হয় না : মির্জা ফখরুল

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য ‘অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, লন্ডনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। এত অশালীন, কুরুচিপূর্ণ, দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর মতো দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দিতে পারেন সেটা আমরা ভাবতে পারি না। তার বক্তব্যে প্রমাণ হয়েছে এদেশের মালিক একজন। এদেশে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ নেই। বিচার বিভাগ তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন।

তিনি আইন আদালতের তোয়াক্কা করেন না। বেগম জিয়ার চিকিৎসার নিয়ে যে কথা তিনি বলেছেন তাতে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ফুটে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার ৮০ বছর বয়স হয়েছে, আবার অসুস্থ, সময় হয়ে গেছে, এতো কান্নাকাটি করে লাভ নেই প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কতটা অমানবিক হলে এ ধরনের কথা তিনি বলতে পারেন।

খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শর্ত দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো শর্ত সাপেক্ষে তিনি বিদেশে যাবেন না এটা পরিবার থেকে বলে দেওয়া হয়েছে। বেগম জিয়াকে হাসপাতালে রেখে কেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেও বিএনপির কোনো নির্বাচন যাবে না। এটা একে বারেই পরিষ্কার কথা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সুচিকিৎসা পাওয়া একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বেগম খালেদা জিয়া দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন। সংবিধানে তাকে বেঁচে থাকার জন্য চিকিতসা গ্রহনের অধিকার নিশ্চিত করেছে। যে রোগের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া সংবিধানকে অবজ্ঞা করা। প্রকৃতপক্ষে দেশনেত্রীকে সংবিধানে দেওয়া চিকিতসা সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে- যা অন্যায়, অমানবিক ও অসাংবিধানিক। আমরা মনে করি, দারুণভাবে অসুস্থ এবং দেশে চিকিৎসা অসম্ভব হওয়া সত্ত্বেও একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বেগম খালেদা জিয়াকে আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখার সুযোগ নেই। সরকার হীন উদ্দেশ্যে আইনের দোহাই দিয়ে চিকিৎসা থেকে দেশনেত্রীকে বঞ্চিত রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পুনরায় সরকারকে বলব, রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার পরিণতি কখনো ভালো হয় না বিধায় যত দ্রুত সম্ভব দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে একজন নাগরিক হিসাবে তাকে রোগের চিকিৎসা পাওয়ার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়া হোক। অন্যথায় সরকারকে একজন গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় প্রবীন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার না দিয়ে তার প্রতি বিআইনি, অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করার জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে।

সরকার বিদেশে যেতে দেবে না বলেছে এই অবস্থায় দলের চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনার(খালেদা জিয়া) যারা চিকিতসা করছেন এটা তাদের বিষয়। চিকিৎসকরা এখানে যতদূর পারা যায় বেস্ট ট্রিটমেন্ট এখানে পাওয়া যায় সেটাই করবেন, করছেনও। আমরা তো জোর করে তাকে নিয়ে চলে যেতে পারবো না বিদেশে। আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব না। আমরা এভাবে যা আছে সেই চিকিৎসা করিয়ে যাবো এবং আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হবে এবং খালেদা জিয়ার তখন উন্নত চিকিতসা করা সম্ভব হবে।

বিদেশে চিকিৎসার দৃষ্টান্ত অনেক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের শাসনামলে দ-প্রাপ্ত আসামী তৎকালীন জাসদের সাধারণ সম্পাদক আসম আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানীতে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। একইভাবে ১৩ বছরের দ-প্রাপ্ত আসামী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে ১/১১ ‘র সরকার ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।এরকম দৃষ্টান্ত আরো আছে। শেখ হাসিনাও এমন সুযোগ (বিদেশে চিকিৎসা) ব্যবহার করেছেন ২০০৮ সালে। জরুরী আইনের সরকারের সময়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজী মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জসিট দেওয়া হয়েছিলো। এই অবস্থায় নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো তাকে। অসুস্থতার কথা বলে উনি মুক্তির দুই/তিনদিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি বিদেশ থেকে দেশে ফিরে ছিলেন একজন ওয়ারেন্টি আসামী হিসেবে এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিয়েছিলেন ওয়ারেন্টে আসামী থাকা অবস্থায়। সুতরাং আইনের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই।

সরকার সুযোগ দিচ্ছে না আপনারা এই অবস্থায় কি গণতান্ত্রিক পথে হাটবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রের বাইরে যেতে পারি না। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে যাবো, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাবো।এরপরে যদি কেউ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেয় সেই বাধাও আমরা গণতান্ত্রিকভাবে অতিক্রম করবো। উনার (শেখ হাসিনা) বক্তব্য তো আপনারা শুনেছে। উনি তো দেবেন না বলেছেন। তারপরও আমরা আপীল করছি শুভ বুদ্ধির কাছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি, আ.লীগের জয়জয়কার

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি, আ.লীগের জয়জয়কার

নাম পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হলো না সাইফের আততায়ীর

নাম পাল্টিয়েও শেষ রক্ষা হলো না সাইফের আততায়ীর

থানায় বসে ঘুষ গ্রহণ: সেই এসআই প্রত্যাহার

থানায় বসে ঘুষ গ্রহণ: সেই এসআই প্রত্যাহার

জেলেদের দিক নির্ণয়ের জন্য বরগুনায় লাইট হাউজ স্থাপন

জেলেদের দিক নির্ণয়ের জন্য বরগুনায় লাইট হাউজ স্থাপন

ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের অভিষেকের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের অভিষেকের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা বর্ণনার বাইরে

বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা বর্ণনার বাইরে

বেনাপোলে ৩০ হাজার মার্কিন ডলারসহ ৪০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

বেনাপোলে ৩০ হাজার মার্কিন ডলারসহ ৪০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ ‘অস্থায়ী’: নেতানিয়াহু

গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ ‘অস্থায়ী’: নেতানিয়াহু

রক্তে প্লাবিত শরীর, সিংহের মতো তৈমুরের হাত ধরে হাসপাতালে সাইফ

রক্তে প্লাবিত শরীর, সিংহের মতো তৈমুরের হাত ধরে হাসপাতালে সাইফ

বড়লেখায় যুবদল নেতাকে হত্যা

বড়লেখায় যুবদল নেতাকে হত্যা

মার্কিন বিমানবাহী জাহাজে হামলার দাবি হুথির

মার্কিন বিমানবাহী জাহাজে হামলার দাবি হুথির

সীমান্তের কাঁটাতার: কীসের, কেন আর কবে থেকে এই বেড়া?

সীমান্তের কাঁটাতার: কীসের, কেন আর কবে থেকে এই বেড়া?

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে শীতার্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে শীতার্ত মানুষের পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল

নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পাওনা টাকার দ্বন্দ্বে কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

ঘরে ফেরার আশায় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা

ঘরে ফেরার আশায় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা

জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধে মা-বোনদের খুন ও সম্ভ্রমহানির সাথে জড়িত ছিল: হাফিজ ইব্রাহিম

জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা যুদ্ধে মা-বোনদের খুন ও সম্ভ্রমহানির সাথে জড়িত ছিল: হাফিজ ইব্রাহিম

সীমান্তে উসকানিদাতাদের চরম মূল্য দিতে হবে: আখতার হোসেন

সীমান্তে উসকানিদাতাদের চরম মূল্য দিতে হবে: আখতার হোসেন

সেনাপ্রধানের সঙ্গে রাওয়ার নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ

সেনাপ্রধানের সঙ্গে রাওয়ার নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ

ইস্তাম্বুলে শুরু হলো ফিলিস্তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ফোরাম 'তাওয়াসুল'

ইস্তাম্বুলে শুরু হলো ফিলিস্তিনি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ফোরাম 'তাওয়াসুল'

বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে : লে. কর্নেল কিবরিয়া

বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে : লে. কর্নেল কিবরিয়া