দেশের ভেতরেও শত্রু আছে : প্রধানমন্ত্রী
০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৮ এএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক রকম প্রতিবন্ধকতা আসবে। কারণ আমাদের শত্রু বাইরে থেকে আসতে হয়না, দেশের ভেতরেও আছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারি বা ’৭৫ এর খুনী বা তাদের সন্তান-সন্ততিরা যারা রয়েছে এরা কখনো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না বা বাধা দেবে। সেই শতবাধা অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। কেউ আমাদের আটকাতে পারবেনা। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচটি প্রকল্প-কর্মসূচির আওতায় নির্মিত ভবন ও জিইএমএস সফটওয়্যার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে কোন প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করার মানসিকতা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, অনেক রকম প্রতিবন্ধকতা আসবে। কারণ আমাদের শত্রু বাইরে থেকে আসতে হয়না, দেশের ভেতরেও আছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারি বা ’৭৫ এর খুনী বা তাদের সন্তান-সন্ততিরা যারা রয়েছে এরা কখনো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না বা বাধা দেবে। সেই শতবাধা অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। কেউ আমাদের আটকাতে পারবেনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার চাওয়া এবং স্বপ্ন একটাই যা আমার বাবা এ দেশের মানুষকে নিয়ে দেখেছিলেন। আমার লক্ষ্য হলো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন এবং তাদের জীবনমান উন্নত করা। আজ পর্যন্ত যতটুকু করতে পেরেছি, ভবিষ্যতের জন্য যেন সেটি স্থায়ী হয়ে চলমান থাকে এটিই আমার চাওয়া।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে আমরা কিছু সমস্যায় আছি। রিজার্ভ নিয়ে অনেকে কথা বলে..., আমি বলছি রিজার্ভ নিয়ে অতটা চিন্তার কিছু নেই। আমার গোলায় যতক্ষণ খাবার আছে, ততক্ষণ আমরা চিন্তা করব না। তবে উৎপাদন বাড়াতে হবে এমন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ আমাদের অর্থনীতি কিছুটা চাপে আছে। এ জন্য আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে।
দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ফসল ফলাব এবং নিজের খাবার নিজেরা খাব। আমরা না হয় কেনা কাটা বা খরচ একটু কমই করব। নিজ দেশের মর্যাদা নিয়ে আমাদের চলতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের টেনিউর (সরকারের মেয়াদ) শেষ। তার পর আবার নির্বাচন হবে, জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয় তাহলে ক্ষমতায় আসব, নইলে ঠিক আছে... তাছাড়া বয়স হয়ে গেছে।
নবীন অফিসারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের মূল কারিগর এবং সৈনিক হবেন আজকের কর্মকর্তারা। তখন তো আর আমরা থাকব না। কিন্তু দেশটা যেন এগিয়ে যায়। আমি শুধু সেটিই চাই। উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমাদের অর্থনীতি কিছুটা চাপে আছে। এ জন্য আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থাকতে হবে। তারা (কৃষক) রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করে, সেই উপার্জনের টাকা দিয়ে আমাদের সবার সব কিছু চলে। এ কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে, খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের ফসলটাই আমরা ভোগ করি। শেখ হাসিনা বলেন, চাকরিটা শুধু চাকরি নয়, এটা দেশের সেবা করা। তার সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বলয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে নজরদারির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করবে, তাদের মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের কাজও করতে হবে।
প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকান্ডকে টেকসই করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন প্রতিটি এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের দেখতে হবে নদী-নালা-খাল-বিল সহ জলাধারগুলো যেন সেখানে সংরক্ষিত থাকে।
দেশকে উন্নত করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ ও রাস্তাঘাট করার সময় সেটা যেন ঋতু বৈচিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় যাতে কোন সময় কোন কিছুতে বাধার সৃষ্টি করতে না পারে তা নিশ্চিত করারও আহবান জানিয়ে বলেন, আমাদের ছয়টি ঋতু। বিভিন্ন ঋতুতে যে পরিবর্তন হয় তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে কোন সময় যেন কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয়। আর মানুষগুলোর যেন আর্থিক স্বচ্ছলতাটা বাড়ে। কিভাবে করলে আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়বে সেটাই দেখতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটা উন্নয়ন যাতে টেকসই হয়।
সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ফলে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবং বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। জিয়াই ইনডেননিটি অধ্যাদেশ জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথকে রুদ্ধ করেছিল। আর খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরী দিয়ে পুরস্কৃতও করেছিল।
তিনি বলেন, সে দিন জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমরা আপনজন হারিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছিল তাদের ভবিষ্যৎ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ। সবই হারিয়েছে। তখন ক্ষমতা দখল শুরু হয় হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে, সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে। একের পর এক, সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে এই ধরনের শাসন চলতে থাকে।
এ সময় সফলভাবে কোর্স সম্পন্নকারী ১৯টি ক্যাডার সার্ভিসের ৬০২ জনের মধ্যে ৩০ জনের হাতে মেধা সনদ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া তিনজনের হাতে মর্যাদা পদক তুলে দেন তিনি। ছয় মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত ৭৫তম বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সে শীর্ষস্থান অর্জন করে রেক্টর’স পদক লাভ করেন তাহসিন বিনতে আনিস। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন। ৭৫তম বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) রেক্টর মো. আশরাফ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে ৭৫তম বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স এবং প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর দুটি আলাদা ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লা সার্কিট হাউজের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে সার্কিট হাউজের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি, সাবেক রেলপথমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক মুজিব, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অ্যারমা দত্ত, মমতাব বেগম, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুলসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
কুমিল্লা সার্কিট হাউজ সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ৩৫ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৭শ’ টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা সার্কিট হাউজের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ছয় তলা বিশিষ্ট ভবনে হল রুম, ভিআইপি স্যুট, ভিআইপি এ্যাসোসিয়েট স্যুট, ভিআইপি রুম, আধুনিক বেডরুম, জিমনেসিয়াম, নামাজ ঘর, রিডিং রুম, কিচেন ও ডাইনিং রুম রয়েছে। এছাড়া নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর, এসি, পিএবিএক্স, সিসিটিভি, ইন্টারনেট, লিফট, ফায়ার প্রটেকশন এন্ড ডিটেকশন সিস্টেমসহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দাফতরিক সফরকালে খ-কালীন অবস্থানে নিরাপত্তার সুযোগ-সুবিধা, নির্ধারিত অতিথিদের সাময়িক আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা করার লক্ষ্যে আধুনিক আসবাবপত্র সম্বলিত সার্কিট হাউজ ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হয়েছে গ্যারেজ, গাড়ি চালকদের থাকার জায়গা, পুলিশ ব্যারাক, নিরাপত্তা ছাউনি, সীমানা প্রাচীর, রাস্তা, ড্রেন, বাগানসহ অন্যান্য স্থাপনা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি
বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব
এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার
কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান
বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি
শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল
নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ
বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা
পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়
সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে
ভারতে ৫ বছর সাজাভোগ করে দেশে ফিরলেন স্বামী-স্ত্রী
চার দিনের সফরে সোমবার সুইজারল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা