গাজা : আন্তর্জাতিক আইনের ভন্ডামি উন্মোচিত করেছে
১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
ইসরায়েল, যারা ফিলিস্তিনি ভূমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে এবং কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের মাটিতেই ধর্মীয় নিপিড়ন করে চলেছে, এখন গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধের মধ্যে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের অর্ধেক শিশু, তাদের উপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করছে। আন্তর্জাতিক আইনের এমন নির্মম লঙ্ঘনের মুখে, এবং আরও অনেক কিছু করার জন্য তাদের ঘোষিত দাম্ভিকতাপূর্ণ অভিপ্রায়ের মুখে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পশ্চিমা নেতারা, বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের স্ব-নিযুক্ত রক্ষকরা, কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন?
বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থার অনুমিত ভিত্তি পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক আইনকে সর্বোচ্চ এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য বলে দাবি করাটা এখন অসার। পশ্চিমাদের ন্যায় বিচারের যে মুখোশটি দীর্ঘকাল ধরে আন্তর্জাতিক আইনের প্রকৃত প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্যকে আড়াল করে রেখেছিল, অবশেষে তা খসে পড়েছে। ফিলিস্তিনিরা যখন গাজা থেকে সাহায্যের জন্য আহাজারি করেও কোনও সুবিচার পায়নি, তখন পশ্চিমাদের এই অশুভ সত্যটি অনস্বীকার্যভাবে প্রকাশ্যে চলে এসেছে যে, তথাকথিত আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার পশ্চিমা সাম্রাজ্যের স্বার্থকে এগিয়ে নেওয়ার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়, ন্যায়বিচারের জন্য নয়।
প্রথম নজরে, ‘আন্তর্জাতিক আইন’ একটি মহান ধারণা, যা শান্তি, মানবাধিকারের সার্বজনীন প্রয়োগ, দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা এবং ন্যায়বিচার প্রচার করে বলে মনে হয়ে থাকে। কিন্তু, আফ্রিকাকে কুক্ষিগত করার ইউরোপীয় লালসা থেকে শুরু করে লাতিন আমেরিকায় সাম্প্রতিক মার্কিন হস্তক্ষেপ পর্যন্ত এই অন্ধকার আইনটি কীভাবে বর্তমান বিশ্বে পশ্চিমা আধিপত্যকে রূপ দিতে সাহায্য করেছে, তা সাম্রাজ্যবাদের অতীত ইতিহাস ঘাটলেই পাওয়া যায়।
রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে ইউক্রেনীয় জনগণকে রক্ষা, নিরাময় এবং ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য এই আন্তর্জাতিক আইন সাগ্রহে ব্যবহৃত ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ, ফিলিস্তিনিদের উপর চলমান ইসরায়েলি হামলার প্রতি পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া অনুসরণ করে এখন একই আইন, নিয়ম এবং নীতিগুলি তলানিতে যেয়ে ঠেকেছে।
ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণ এবং শোষণ বহু শতাব্দী ধরে সম্পদ এবং ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের লালসা দ্বারা চালিত পশ্চিমা ইতিহাসকে সংজ্ঞায়িত করেছে। মুষ্টিমেয় ইউরোপীয় রাষ্ট্র বিশ্বকে নিজেদের মধ্যে ভাগভাগি করে নিয়ে অন্যের ভূমি কেড়ে, সম্পদ চুরি করে এবং জনগণকে নৃশংসভাবে পরাধীন করে রেখেছে ও দাসত্ব করাচ্ছে। ঔপনিবেশিক আধিপত্যের এই পুরো সময়কালে, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি এমনভাবে কাজ করেছে, যেন সার্বভৌমত্ব এবং আত্মনিরূপণ শুধুমাত্র তাদেরই স্বাভাবিক অধিকার ও বিশেষাধিকার এবং অন্য কারও নয়।
১৯৪০ এর দশকের শেষের দিকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি আফ্রিকার পুনর্গঠন এবং জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ঠেকানোর সংগ্রাম করছিল। তখন জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক আদালত এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মতো সংস্থাগুলির প্রতিষ্ঠর মাধ্যমে একটি বিভ্রম তৈরি করা হয়েছিল যে, এইসব তথাকথিত বৈশি^ক প্রতিষ্ঠানের বৈশি^ক নতুন নিয়মগুলি শক্তিশালী পশ্চিমা রাষ্ট্র এবং তাদের (সাবেক) উপনিবেশগুলোর প্রত্যেকের জন্য সমানভাবে এবং স্থায়ীভাবে প্রযোজ্য।
যদিও ওপর দিয়ে জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং মানবাধিকারের ধারণা প্রচার করার সময়েও পশ্চিমা শক্তিগুলি অন্যান্য জাতিকে নিয়ন্ত্রণ, চুরি এবং শোষণের অভ্যাস অব্যাহত রেখেছিল, কিন্তু তারা তাদের ঔপনিবেশিক নীতিগুলিকে তলে তলে আরও এগিয়ে নিতে এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দ্বারা অনুরূপ প্রচেষ্টাকে বাধা দেওয়ার জন্য এই নতুন প্রণীত নিয়ম-ভিত্তিক আদেশটি ব্যবহার করতে শুরু করেছিল।
১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে আন্তর্জাতিক আদালতে অ্যাংলো-ইরানীয় তেল কোম্পানির একটি মামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আইন এবং এটি সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলি প্রাথমিকভাবে পরীক্ষার মুখে পড়ে। যখন রায়টি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ পূরণ করতে পারেনি, তখন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য একযোগে ‘অপারেশন এজাক্স’ শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতকের শেষার্ধ জুড়ে লাতিন আমেরিকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলির পতন ঘটিয়েছে, খুনি সন্ত্রাসবাদীদের সশস্ত্র করেছে এবং তাদের স্বার্থের অনুকূল স্বৈরশাসকদের সমর্থন করেছে।
শুধু তাই নয়, এই কর্মকা-ের জন্য পশ্চিমা জোটের কোনও রাষ্ট্র কখনোই কোনও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়নি, যা স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে, জাতীয় সার্বভৌমত্বের ধারণাকে উপহাস করেছে এবং লাখ লাখ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, যেমন অপারেশন কন্ডোরে ঘটেছে। অপারেশন আয়রন সোর্ডস-এর ছত্রছায়ায় গাজার চলমান অবরোধ এবং এর প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আন্তর্জাতিক আইনের ভন্ডামির সর্বশেষ এবং সম্ভবত সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ।
ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম শুধুমাত্র দখলদারিত্ব, বর্ণবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম নয়; এটা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। তেল এবং গ্যাসের মজুদ সমৃদ্ধ ফিলিস্তিন অঞ্চলের কৌশলগত অবস্থান সর্বদা পশ্চিমা স্বার্থবাদীদের জন্য একটি চুম্বক হিসাবে কাজ করেছে এবং ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলে পশ্চিমা নীতিগুলিকে প্রভাবিত করেছে।
১৯৪৮ সালের আগে ইরাকের কিরকুক থেকে ফিলিস্তিনের হাইফা পর্যন্ত বিস্তৃত ইরাক-পেট্রোলিয়াম কোম্পানিতে পশ্চিমাদের তেলের স্বার্থ ছিল। আজ এটি তাদের শেভরন এবং ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের উন্নয়নশীল ভূমধ্যসাগরীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের স্বার্থ। যদিও এগুলোই পশ্চিমা নৃশংসতার একমাত্র কারণ নয়, তবে পরিবর্তনশীল বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বোঝার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা।
যেহেতু পশ্চিমা শক্তিগুলি নির্লজ্জভাবে গাজার উপর একটি বেআইনি এবং অমানবিক আক্রমণকে সমর্থন করেছে, তারা আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থার অখ-তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেকে এবং এটি একটি নিরপেক্ষ বিচারের বিচারক বলে ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা থেকে বিশ্বের বিবেকবান নাগরিকদের বিরত রাখতে পারবে না। তারা এই সত্যটি আর আড়াল করতে পারবে না যে, আন্তর্জাতিক আইন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ পরিবেশনের জন্য তৈরি একটি হাতিয়ার, যা তাদের দায়মুক্তির সাথে অপরাধ করতে দেয়। সূত্র:আল জাজিরা
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কলকাতায় প্রকাশ্যে মুরগির মাংস বিক্রি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ভারত থেকে অনুপ্রবেশের সময় ফেনীতে সুদানের নাগরিক আটক
ক্ষমতা গ্রহণ করেই বাইডেন আমলের ৭৮ নির্বাহী আদেশ বাতিল ট্রাম্পের
পেকুয়ায় প্রাচীন খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ জনমনে স্বস্তি
ঢাকার বাতাস ২৪৬ স্কোর নিয়ে আজ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
ট্রাম্প ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় জড়িত ১৫০০ জনকে ক্ষমা করলেন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘সেকেন্ড লেডি’
গাজা একটি ‘বিশাল ধ্বংসস্তূপ’, পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন: ট্রাম্প
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রথম পদক্ষেপ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি: ডোনাল্ড ট্রাম্প
ট্রাম্পের শপথ : যোগ দেন চীনের হ্যান ঝেং ভারতের জয়শঙ্কর
সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
সত্যিই কি মারা গেছেন ম্যাশ? কি বলছে রিউমর স্ক্যানার?
সেই যুবকের বিরুদ্ধে ৯০০ টাকা চুরির মামলা
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা ট্রাম্পের
সাফারি পার্কের দেয়াল টপকে পালিয়ে গেল নীলগাই
জোকোভিচ-আলকারাজ হাইভোল্টেজ লড়াই আজ
বড় জয়ে পয়েন্ট টেবিলে দুই নম্বরে চিটাগাং
সুবর্ণ সুযোগ শুরুর ঘোষণা ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রাম্প
ভোটের অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে : সিইসি