সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে পড়েছে :এম সাখাওয়াত হোসেন
১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
জাতীয় সংসদে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন, দলের প্রাথমিক সদস্য পদে তিন বছরের কম হলে প্রার্থিতার সুযোগ না রাখাসসহ নির্বাচন-বিষয়ক একগুচ্ছ সংস্কারের সুপারিশ করেছেন বিভিন্ন দলের নেতা ও সংশ্লিষ্টরা। গতকাল শনিবার রাজধানী সিরডাপ মিলনায়তনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব সুপারিশ করেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অন্তর্বর্তী সরকারের বস্ত্র, পাট ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কাজেই দায় দায়িত্ব এখন থেকেই শুরু। অনেক রক্ত ঝরেছে। পাঁচ থেকে ৭০০ মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তারা বলেছে, কোনো অসুবিধা নেই। কাজেই আমরা যদি ঠিক করতে না পারি তাদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি হবে। তিনি বলেন, ডিসিরা নির্বাচন করে এই কথা ঠিক না। আইনে ৩০০ আসনে ৩০০ রিটার্নিং অফিসার দেয়া যাবে। আবার ডিসিদেরই রিটার্নিং অফিসার পদে নিয়োগ দিতে হবেÑ এমন কোনো কথা নেই। তিনি বলেন, দলের প্রার্থী হতে হলে দলের প্রাথমিক সদস্য পদে অন্তত তিন বছর থাকতে হবে। তৃণমূল থেকে এক দুই বছর আগে থেকে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। নারী প্রার্থী ৫০ জন ১০০ জন যাই করেন সেটি সরাসরি নির্বাচন করেন। সংরক্ষিত আসনে নারীদের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। নির্বাচন সংস্কার-বিষয়ক কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষমতা আমাদের নেই। এটি করবে অন্তর্বর্তী সরকার। আমাদের এখতিয়ার হলো কতগুলো সংস্কারের সুপারিশ করা। আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো এখতিয়ার নেই। একটি আলাপ-আলোচনা হতে পারে। আমাদের কতগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে, ভোটার তালিকা করতে হবে। রাজনৈতিক দল সবাই মতামত ব্যক্ত করুক।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন একটি প্রক্রিয়া। ভোটার তালিকা থেকে শুরু হয়, এরপর মনোনয়ন বাছাই, প্রচার, ভোটগ্রহণ। এই প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এ জন্য ইসিকে পর্যবেক্ষণ করতে হব। পুরো প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতীয়মান হতে হবে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিকভাবে বাতিল করা হয়েছিল। এটি করা হয়েছে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য। এ জন্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার, সে যেভাবে হোক। সরকার মানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন নিরপেক্ষ আচরণ করে। এরপর হলো দল। দল যদি দায়িত্বশীল না হয়। তারা যদি ছলে বলে কৌশলে, টাকার খেলা করে, পেশিশক্তির ব্যবহার করে, গণমাধ্যম যদি সঠিক খবর না দেয় তাহলে সঠিক নির্বাচন ব্যাহত হয়। এতে সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনাতেই থেকে যাবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করেই সংস্কার কমিশন কাজ করবে। জনগণের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব কথা বলা দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতার অভাব। তারা সুযোগ পেলে নিরঙ্কুশ জয় পেতে চায়। যদি দলগুলো চায় প্রশ্নহীন নির্বাচন হতে পারে। সংবিধানের কাঠামোই এমন করা হয়েছে, যে স্বৈরাচারী। ওইখানে সরকারপ্রধান জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দরকার। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার ক্ষেত্রে যদি দেখি সেখাবে সচিব ও অতিরিক্তি সচিব সরকার থেকে হয়। এ জন্য ইসি পুরো নিয়োগ স্বতন্ত্র হতে হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. মু. শফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী সংস্কারে ৯টি পয়েন্ট সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে আমরা তুলে ধরেছি। সংসদে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন। এতে সব মানুষের প্রতিনিধি সংসদে থাকবে। স্থায়ীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করা। কেননা, দেশে যত নির্বাচন হয়েছে, এগুলোর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের তিনটি নির্বাচন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে। নির্বাচন একাধিক দিনে সম্পন্ন করতে হবে।
গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, শুধু নির্বাচনের জন্য এত মানুষ প্রাণ দেয়নি। প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতের আধিপত্য কায়েম করা চলবে না। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমি মনে করি, সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয় করতে হবে। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে। দল নিবন্ধন প্রথা সঠিক। তবে গত সরকার এর অপব্যবহার করেছে। নিবন্ধিত দলগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে সরকারকে। রাষ্ট্রের যৌক্তিক সরকার চাই। এ জন্য সব দলের সহায়তা নিতে হবে।
আরএফইডির সভাপতি আকরামুল হক সায়েমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘নির্বাচন ব্যবস্থা কেমন সংস্কার চাই’ শীর্ষক সেমিনারে আয়োজক সংগঠন নেতারাসহ অন্য দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে
‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’
‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর
৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু
মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!
মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ
৬ বছরের মধ্যেই চীনের হাতে হাজার পরমাণু বোমা! উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের
বিগত সময়ে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে পুলিশ, এ জন্য আমরা লজ্জিত: আইজিপি
ব্রাহ্মণপাড়ায় পাঁচ দিনেও খোঁজ মিলেনি নিখোঁজ সোহাগের
কসবায় পাহাড় কাটার অপরাধে ২ জনের অর্থদণ্ড
নরসিংদীতে মাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামকে বিদায় করে টিকে রইল খুলনা
পলাতক ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ফ্রিজে রাখা বাসি ভাতে উপকার দ্বিগুণ!
আ.লীগ দেশটাকে গোরস্থানে পরিণত করেছিল : জামায়াত আমির
সেনবাগে মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ভাগ্নে নিহত : মামা আহত