জাপা ও ১৪ দলের শরিক নেতাদের গ্রেফতার আতঙ্ক

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৬ এএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালনোর পর দুই মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। কেউ কেউ পালিয়ে গেছেন। কিন্তু হাসিনার রাজনৈতিক অলিগার্ক জাতীয় পার্টির নেতাদের উপর পরিবর্তনের বাতাস লাগেনি। তবে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলীয় জোটের নেতারা গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা হাসিনার অলিগার্কদের গ্রেফতারের দাবি করায় সুবিধাভোগী দলগুলোর নেতাকর্মীরা আছেন গ্রেফতারের ভয়ে। তাই নিজেদের দলীয় কার্যালয়েও যেতে চাচ্ছেন না। কেউ সাহস করে গেলেও কোনো আনুষ্ঠানিক সভা করতে পারছেন না। কেন্দ্র থেকে জেলাÑ একই অবস্থা। আর হাসিনার ‘নাচের পুতুল’ জাতীয় পার্টির একাংশের নেতারা অন্য অংশের নেতাদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন পর্যন্ত করেছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার গদি থেকে ছিটকে পড়েন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগের পর পালিয়ে ভারতে যান। সেখান থেকে ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছেন। হাসিনা পালানের পর তার এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। একই পরিস্থিতির শিকার হন ১৪ দলের শরিকরাও। তাদের প্রায় সবার নামে মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট। তবে এখনো ‘সেফ জোনে’ রয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।

মামলার পর গ্রেফতার হয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (ইনু) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আটক হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাসহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের নামে হত্যা ও দুর্নীতির মামলা দায়ের অব্যাহত রয়েছে। জোটের শরিক দলগুলোর সাবেক এমপি ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের নামেও মামলা হয়েছে। ওয়ার্কাস পার্টির অন্তত ১০ জন, জাসদের ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে দল দুটি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ দুই দলের নেতারা জানিয়েছেন, তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে মামলার আতঙ্কে রয়েছেন। কার বিরুদ্ধে কখন মামলা হয়, কোন মামলা হয়Ñ এগুলো নিয়ে তারা ভয় পাচ্ছেন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জোট শরিক এক নেতা বলেন, আমাদের কার নামে মামলা হয়েছে, কার নামে হয়নিÑ সেটি বোঝা যাচ্ছে না। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের কোনো নেতার বিরুদ্ধে মামলা থাকলে সেগুলোয় কাগজ পেলে বোঝা যাবে ১৪ দলের কারো নাম আছে কিনা। হাসিনার নামে দুই শতাধিক মামলা হয়েছে। কোন মামলায় আমাদের কোন নেতার নাম আছেÑ তা স্পষ্ট নয়।

১৪ দলের আরো কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, বুঝতে পারছেন না। কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যন্ত তাদের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছে। দলীয় কোনো সভা তারা করতে পারছেন না। শরিক হলেও আনুষ্ঠানিক কোনো আয়োজন করা যাচ্ছে না। নেতাদের অনেকে অফিস করতে পারছেন না। এভাবে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অনেকটাই কঠিন।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির দুই অংশ জিএম কাদের, রওশন এরশাদ, মুজিবুল হক চুন্নু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। জাপার একাধিক নেতা জানান, মাঝে মধ্যে জিএম কাদের বক্তব্য বিবৃতি দিলেও তিনি গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। রওশনপন্থী নেতারা ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করে জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নুর গ্রেফতার দাবি করেছেন। জাপার একাধিক নেতা বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে জাতীয় পার্টি যে ন্যক্কারজনক ভূমিকা পালন করেছে তা মনে হলে নিজের উপর ঘৃণা লাগে। জাপা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করেছে। এ জন্য দলের নেতাদের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ দলের শরিক একটি দলের এক নেতা বলেন, আমরা কঠিন সময় পার করছি। পার্টি টিকিয়ে রাখাই বড় সংগ্রাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছি। কখন কী হয় কে জানে!

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!
মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ
পলাতক ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
‘জনশক্তি’ নামে কোনও রাজনৈতিক দল নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি : জাতীয় নাগরিক কমিটি
আরও

আরও পড়ুন

‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’

‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’

‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’

‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’

মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর

মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর

৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী

৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী

আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু

আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু

মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?

মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?

পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ

পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ

ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!

ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!

মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ

মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ

৬ বছরের মধ্যেই চীনের হাতে হাজার পরমাণু বোমা! উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

৬ বছরের মধ্যেই চীনের হাতে হাজার পরমাণু বোমা! উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

বিগত সময়ে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে পুলিশ, এ জন্য আমরা লজ্জিত: আইজিপি

বিগত সময়ে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে পুলিশ, এ জন্য আমরা লজ্জিত: আইজিপি

ব্রাহ্মণপাড়ায় পাঁচ দিনেও খোঁজ মিলেনি নিখোঁজ সোহাগের

ব্রাহ্মণপাড়ায় পাঁচ দিনেও খোঁজ মিলেনি নিখোঁজ সোহাগের

কসবায় পাহাড় কাটার অপরাধে ২ জনের অর্থদণ্ড

কসবায় পাহাড় কাটার অপরাধে ২ জনের অর্থদণ্ড

নরসিংদীতে মাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেপ্তার

নরসিংদীতে মাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামকে বিদায় করে টিকে রইল খুলনা

চট্টগ্রামকে বিদায় করে টিকে রইল খুলনা

পলাতক ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

পলাতক ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ফ্রিজে রাখা বাসি ভাতে উপকার দ্বিগুণ!

ফ্রিজে রাখা বাসি ভাতে উপকার দ্বিগুণ!

আ.লীগ দেশটাকে গোরস্থানে পরিণত করেছিল : জামায়াত আমির

আ.লীগ দেশটাকে গোরস্থানে পরিণত করেছিল : জামায়াত আমির

সেনবাগে মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ভাগ্নে নিহত : মামা আহত

সেনবাগে মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ভাগ্নে নিহত : মামা আহত

কুষ্টিয়ায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গৃহবধুকে নির্যাতন

কুষ্টিয়ায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গৃহবধুকে নির্যাতন