দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের বেঞ্চ প্রদানের আবেদন!
১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ পিএম | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ পিএম
ফ্যাসিস্ট হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রকে প্রলম্বিত করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিলো বিচার বিভাগ। ব্যক্তিগত খায়েশ পূরণে হাসিনা বিচার বিভাগকে করেছিলেন সম্পূর্ণরূপে করায়ত্ত। হাসিনার কৃপাদৃষ্টির লোভে অনেক বিচারপতি আওয়ামীলীগের দলদাসে পরিণত হয়েছিলেন। আর দলীয় তকমা থাকায় বিচার বিভাগকে পরিণত করেছিলেন দুর্নীতির আখড়ায়। হাসিনার ফ্যাসিবাদের সঙ্গে একট্টা হয়ে যাওয়া দুর্নীতিবাজ অন্তত: ৬০ বিচারপতিকে অপসারণের দাবি ছিলো সুপ্রিমকোর্টে আওয়ামীবিরোধী আইনজীবী সংগঠনগুলোর। সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদের নেতৃত্বে সাধারণ আইনজীবীদের একটি সংগঠন দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের তালিকাও প্রকাশ করেছিলো। তাদের এ দাবির সঙ্গে শুরুতে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলো সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম’র সভাপতি এবং বিএনপি’র সিনিয়র নেতা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনও। গত ৫ আগস্ট হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতকে দুর্নীতিবাজ ও আওয়ামী দলদাসমুক্ত করার দাবি ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে সফলতাও লাভ করেন। হাসিনা নিযুক্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান,‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’খ্যাত এম.ইনায়েতুর রহিমসহ ৬ বিচারপতি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপরও আওয়ামী জমানায় নিয়োগ পাওয়া হাইকোর্ট বিভাগের ৬০ বিচারপতিকে অপসারণের দাবি উচ্চারিত হয়। এ সময় দুর্নীতিবাজ বিচারপতির তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। স্বপ্নবাদী মানুষ আশা প্রকাশ করেছিলো এ যাত্রায় হয়তো বিচার বিভাগ দুর্নীতি মুক্ত হবে। কিন্তু পরক্ষণেই দেখা গেলো দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের তালিকা ছোট হতে লাগলো। তালিকাভুক্ত ৬০ জন থেকে নেমে আসে ৫৮ জনে। ৫৮ থেকে নেমে আসে ৪৬জনে। ৪৬ জন থেকে ৪৩ জন। ৪৩ থেকে ২৯ জন। ২৯ থেকে নেমে আসে ২৩ জনে। ২৩ জন থেকে নেমে আসে ১৫ জনে। কিন্তু সর্বশেষ দেখা গেলো মাত্র ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে ৩ বিচারপতিকে একপ্রকার ওসডি করে রাখা হয়েছিলো আওয়ামীলীগ সরকার আমলেই। দুর্নীতিবাজ বিচারপতির তালিকা ছোট হতে হতে এখন আর তাদের নামই উচ্চারিত হয় না। আর ১২ জনের তালিকায়ও পাওয়া গেলো না প্রধান বিচারপতির দরজায় ‘লাথিমারা’ সেই বিচারপতির নাম। নাম নেই স্বগোত্রীয় নিরীহ মানুষের সম্পত্তি দখলকারী, মামলাবাজ সংখ্যা লঘু বিচারপতিরও। হত্যা ‘মামলার আসামি’ আরেক বিচারপতিতো রীতিমতো উপদেষ্টার পাশে বসে সভা-সেমিনারই করে বেড়াচ্ছেন। অর্থাৎ চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও দলীয় বিচারপতি অনেকের নামই নেই সেই তালিকায়। এর ফলে হতাশা নেমে আসে বিচারপতি অপসারণের দাবিতে আন্দোলনকারীদের মাঝে। দুর্নীতিবাজ বিচারপতি অপসারণ ইস্যুতে বিএনপিপন্থি আইনজীবী সংগঠনও এখন প্রায় চুপ। এ বাস্তবতায় যে ১২ বিচারপতিকে ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল’র মাধ্যমে অপসারণ করা হবে-মর্মে আশা করা হয়েছিলো সেই বিতর্কিত বিচারপতিগণ এখন বরং উল্টো ক্লাইমেক্স সৃষ্টিতে তৎপর হয়েছেন। তারা নানা কৌশলে দায় থেকে মুক্ত হতে চাইছেন। আইনজীবীদের মাধ্যমে সরকারের কাছে ইনিয়ে-বিনিয়ে আবেদন জানাতে দেখা যাচ্ছে। যা আদতে নিজেদের ‘ধোয়া তুলসিপাতা’ হিসেবেই পুন:প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।
এ বাস্তবতায় গতকাল বুধবার ছুটিতে পাঠানো ১২ বিচারপতির বিষয়ে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে বিচার কার্যে অংশগ্রহণের জন্য বেঞ্চ প্রদানের আবেদন জানান একজন আইনজীবী। আইনমন্ত্রণালয় বরাবর করা এ আবেদনে হাইকোর্ট বিভাগের ছুটিতে পাঠানো ১২ বিচারপতির বিষয়ে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত সাপেক্ষে বিচারককার্যে অংশগ্রহণের জন্য বেঞ্চ প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের অ্যাডভোকেট মনিরউদ্দিন এ আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, ১৭ অক্টোবরের বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি যে, হাইকোর্টের ১২ (বার) জন বিচারক বেঞ্চ পাচ্ছেন না। ২০ অক্টোবর তারিখে দৈনিককার্য তালিকায় ১২ (বার) জন বিচারপতিকে বিচারকার্য পরিচালনা করার জন্য কোনো বেঞ্চ দেয়া হয় নাই। যেসব বিচারপতিকে বেঞ্চ দেয়া হয় নাই তাদের মধ্যে ২০২৩ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতিও রয়েছেন। আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, স্কাইপি কেলেঙ্কারি এবং কোটার জাজমেন্ট সম্পর্ককে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে বিচারপতিরা কোনো অপকর্মে জড়িত ছিলেন না। তাদেরকে দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার শপথ ভঙ্গ করিয়েছে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিতর্কিত করা হয়েছে। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি যুদ্ধাপরাধ মামলার এবং কোটার জাজমেন্ট যথাক্রমে বিদেশে বসে এবং গুলিস্তানে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে লেখা হয়েছে। পরে বিচারপতিদের দিয়ে আদালতের মাধ্যমে ঘোষণা করানো হয়েছে। তাদেরকে দিয়ে জোরপূর্বক শপথ ভঙ্গ করানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিচারক সংকটে বিচার ব্যবস্থা প্রায় স্থবির হয়ে আছে। এখন যদি বিচারপতিদের ছুটতে বসিয়ে রাখা হয়, তাহলে বিচার ব্যবস্থা আরও স্থবির হয়ে পড়বে এবং রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হবে। অতএব, ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ দিয়ে বিচারকার্য ত্বরান্বিত করতে মহাশয়ের মর্জি হয়।
এদিকে আইনজীবীর এ আবেদনকে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ১২ বিচারপতিকে বেঞ্চ প্রদানের পক্ষে একপ্রকার ‘সাফাই’ বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত আইনজীবীদের নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব। তিনি বলেন, এটি প্রকারন্তে দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের পুনর্বাসনেরই অপচেষ্টা। দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের ‘সাধু’ সাজানোর চেষ্টা করা হলেও সাধারণ আইনজীবীরা এটি কিছুতেই মেনে নেবে না। তারা পুনরায় আন্দোলনে নামবে-বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অ্যাডভোকেট মামুন মাহবুব বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে কে কি করলো কিংবা বললো,আমাদের কিছুই যায়-আসে না। দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে আমরা এক বিন্দু আপস করবো না। প্রয়োজনে ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ আইনজীবীরা পুনরায় আন্দোলনে নামবে-মর্মে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
###
সাঈদ আহমেদ/৬৮৩
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
‘চিকিৎসা নিতে করাচি যান, ভারতে নয়’, বাংলাদেশিদের ভিসা বাতিলের দাবি শুভেন্দুর
বৃষ্টির কবলে দ. আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট
ইসকন দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে - বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন
আওয়ামী নেতাদের নির্দেশে চট্রগ্রামে নৈরাজ্য সৃষ্টির ব্যর্থ চেষ্টা
সাত কলেজ অনার্স প্রথম বর্ষের কালকের পরীক্ষা স্থগিত
নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের ১২ নেতাকর্মীর পদত্যাগ কমিটি বাতিলের দাবি
মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে মহা জট, ফড়নবিশকে জরুরি তলব দিল্লিতে
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান ফখরুল ইসলামের
আইনজীবী সাইফুল হত্যাকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বহিষ্কার
আইনজীবী হত্যার অবিলম্বে বিচার চাই -ইসলামী আন্দোলন ঢাকা জেলা দক্ষিণ
ফ্যাসিবাদের দোসর উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন’কে নিষিদ্ধ করা হোক আলহাজ হাফিজ সাব্বির আহমদ
ভারতের প্রেসক্রিপশনে ইসকন বাংলাদেশে অশান্তি করছে: হাসনাত
ডোমিনোজ পিৎজা এখন মহাখালীতে
বিএনপি জনগণের দল, 'ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দিন' অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া
ইসকন ভারতের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে দাঙ্গা লাগানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দেশব্যাপী তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়
ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু
ইসকনের মিথ্যাচার ও ভারতীয় মিডিয়ার সিন্ডিকেট নিউজ
ঋণগ্রহীতা মারা যাওয়ার পর পাওনাদার তার পাওনা মাফ করে দেওয়া প্রসঙ্গে।
সংস্কারের প্রাসঙ্গিকতা
আওয়ামী লীগের ফিরে আসা কঠিন