খাদ্য সঙ্কট তৈরির পাঁয়তারা
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
চাল আমদানির ওপর সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করে সরকার আমদানির অনুমতি দিলেও ব্যবসায়ীরা তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। শেখ হাসিনার সময়ের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চাল আমদানির জন্য এলসি খুলতে গড়িমসি করছে। তারা চাচ্ছে চালের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা অসন্তোষ তৈরি করতে। একই সাথে চাল আমদানি না করে খাদ্য সঙ্কট তৈরি করে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে। বাজারে এখনো চালের দাম বাড়ছে। এতে বাজারে অস্বস্তি বাড়ছে। চালের চড়া দামে ভোক্তারাও দিশেহারা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান জানিয়েছেন, বেসরকারি খাতে চাল আমদানির জন্য ১৩৪ জন ব্যবসায়ীকে ১০ লাখ টন চাল আমদানির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৯ হাজার ৫০০ টন চালের জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলা হয়েছে এবং এই এলসির বেশিরভাগ চাল ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছে গেছে। সম্প্রতি খাদ্য ভবনে আমন সংগ্রহ কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৯ অক্টোবর ট্যারিফ কমিশন বিশ্ববাজারে চালের বাড়তি দামের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করে এনবিআরের কাছে। এর বিপরীতে ৩১ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির ওপর সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। এরপর খাদ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ব্যবসায়ীরা অনুমতি নিলেও আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। জানা যায়, আমন মৌসুমের ধান কাটা শুরু হয়েছে। বাজারে নতুন ধান আসতে শুরু করলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। যে কারণে ব্যবসায়ীরা এ মুহূর্তে চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চাল আমদানিতে যে ধীর গতি তা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের একটা পলিসি। তারা চায়না চাল আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করতে। তারা চাচ্ছে একটা সঙ্কট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা অর্জন করতে এবং সরকারকে একটা অস্থিতিশীল অবস্থায় ফেলতে। কারণ, যারা চাল আমদানির অনুমতি পেয়েছেন তারা প্রায় সবাই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সময়ের সুবিধাভোগী। তাই তারা অতি কৌশলে এখনো শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করছেন। এ বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে।
দেশের খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি বর্তমানে এমনিতেই নজুক অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে সরকারের কাছে ১২ লাখ ৮৮ হাজার টন খাদ্যের মজুদ রয়েছে। ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের ১৩টি জেলায় ভয়াবহ বন্যায় আমনের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এর ফলে উৎপাদন কমবে ১০ লাখ টন। এই ঘাটতিপূরণ করতে সরকার দ্রুত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির অনুমতি দিয়েছে এবং একই সাথে শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এবিষয়ে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, খাদ্য মজুদে আমরা খুব বেশি কমফোর্ট জোনে না থাকলেও মজুদ বাড়াতে দ্রুত আমন ধান ও চাল কেনা শুরু করছি। একই সঙ্গে আমদানিও দ্রুত করা হবে।
একজন চাল আমদানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, ভারত থেকে ১০০ টন চালের আমদানি মূল্য ৪৫ হাজার ১৫০ ডলার। আমদানি করা চালের কেজিপ্রতি দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ টাকা। এর সঙ্গে আছে এলসি, পরিবহন, বন্দরের ভাড়া, ব্যাংকসহ অন্যান্য খরচ। সেই হিসাবে প্রতি কেজি চালের দাম দাঁড়াবে ৫৫ টাকা। তিনি বলেন, শর্ত অনুসারে আমদানিকারকরা সঠিক সময়ে চাল আমদানি করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব চাল আমদানি করে বাজারজাত করা সম্ভব নয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শর্তে বলা হয়েছে, আমদানিকারকদের আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব চাল দেশে বাজারজাত করতে হবে। আমদানিকৃত চালের পরিমাণ, গুদামজাত ও বাজারজাতকরণের তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে জানাতে হবে। বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি ইস্যু করা যাবে না। আমদানিকৃত চাল অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে প্যাকেটজাত করা যাবে না। আমদানিকৃত চাল বস্তায় বিক্রি করতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়