পতিত হাসিনার প্রেতাত্মা ভুয়া প্রকৌশলীকে বিদেশ পাঠাচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রেতাত্মা এবং জাল জালিয়াতি ও দুর্নীতির দায়ে চাকরি চলে যাওয়া একজন প্রকাশনা কর্মকর্তাকে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী (ভুয়া প্রকৌশলী) বানিয়ে সরকারি অর্থ ব্যয়ে বিদেশ সফরে পাঠাচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ইতোমধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে তার অনুকূলে জিও ইস্যু করা হয়েছে। কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই অতিগোপনে তড়িঘড়ি এ জিও ইস্যু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে তার ফ্লাইট নির্ধারিত রয়েছে। তার সফরসঙ্গী হিসেবে সাথে রয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. হারুনুর রশিদ। এসব বৈষম্যবিরোধী কর্মকাণ্ডে খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা পালিয়ে গেলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনে পতিত সরকারের দোসর ও প্রেতাত্মারা এখনো বহাল তবিয়তে। এসব দেখার কেউ নেই। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সাইফুল ইসলাম খুনি হাসিনার দোসরদের সমর্থনে কাজ করতে বেশি উৎসাহ বোধ করছেন। দীর্ঘ ১৬ বছর যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী বৈষম্যের শিকার তাদের ব্যাপারে ইফার ডিজি সাইফুল ইসলাম চরম উদাসীন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রকাশনা কর্মকর্তা পদে কিছুদিন চাকরি করেছিলেন রেজোয়ানুল আলম নামে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তিনি সদ্য গ্রেফতার হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক সংসদ সদস্য ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরীর নিকটাত্মীয়। ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর মুক্তাদির চৌধুরী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য হিসেবে এবং নিয়োগ কমিটির সদস্য হিসেবে উপস্থিত থেকে তাকে ওই পদে নিয়োগ দেন। পরবর্তীতে ওই নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক অভিযোগের ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করে। তদন্তে বলা হয়, রেজোয়ানুল আলমকে লিখিত পরীক্ষায় নম্বর টেম্পারিং করে নিয়োগ দেয়া হয়। তাকে নিয়োগ দেয়ার জন্য তিনবার সিলেকশন কমিটির কর্মপত্র পরিবর্তন করা হয়। তিনি জেলা কোটায় নিয়োগের জন্য ভিন্ন জেলার বাসিন্দা দেখিয়ে আবেদন করেছিলেন। ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ২১১তম বোর্ড সভায় ওই নিয়োগ বাতিল এবং রেজোয়ানুল আলমকে বাদ দিয়ে পরীক্ষায় পাস করা নাছির উদ্দিন শেখকে চাকরি দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর পরপরই রেজোয়ানুল আলমের চাকরি চলে যায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তৎকালীন মহাপরিচালক ড. মুশফিকুর রহমান (বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব) খুনি হাসিনার প্রেতাত্মা সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরীকে খুশি করতে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত রেজোয়ানুল আলমকে বেতন দিতে থাকেন। ফলে এক পদ দুজন চাকরি করতে থাকেন। বিগত ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে অত্যন্ত ক্ষমতাধর ছিলেন আলোচিত রেজোয়ানুল আলম। তার চাকরি নেই। কিন্তু তাকে পদায়ন করা হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেস প্রকল্পে। ওই সময় তিনি সরকারি অর্থ ব্যয়ে জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ সফর করেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাকে বানানো হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেস আধুনিকায়ন প্রকল্পের কথিত উপ-প্রকল্প পরিচালক। বর্তমানে উপ-প্রকল্প পরিচালক রেজোয়ানুল আলম এবং প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ দুজনই সরকারি অর্থে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সাইফুল ইসলাম বিদেশ সফরে প্রস্তাবে আলোচিত দুই কর্মকর্তার সাথে তার নিজের নামও প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ইফার বিতর্কিত মহাপরিচালক সাইফুল ইসলামের নাম কেটে দেন। গতকাল সোমবার রাতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম এ ব্যাপারে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের কোনো দোসর সরকারি খরচে বিদেশে গেলে তা দুঃখজনক। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা কর্মকর্তা রেজোয়ানুল আলম কিভাবে বিদেশে যাচ্ছে আমি তা জানি না। এ বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অনুবিভাগ দেখভাল করে।
বিভাগ : জাতীয়