ব্যক্তি না থাকলেও প্রতিষ্ঠান চলবে
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
কোনো কোম্পানিতে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি থাকুক আর না থাকুক, প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে দেব না। সেটা এস আলমের হোক কিংবা বেক্সিমকোর হোক। প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় সম্পদ। ব্যক্তি থাকুক আর না থাকুক, প্রতিষ্ঠান থাকবে, প্রতিষ্ঠান চলবে। এসব বড় শিল্পগ্রুপের সঙ্গে যে বহু মানুষের জীবিকা জড়িত, সে কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে আরো শক্তিশালী করা যায়, সে বিষয়েও সরকার কাজ করছে। সেখানে আমাদের শ্রমিকদের জীবিকা আছে। আবার সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্যাংকের সম্পর্ক আছে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আলাদা। আমাদের প্রধান লক্ষ্য, আমরা কোনো প্রতিষ্ঠানকে মরতে দেব না। ফান্ড ভাঙতে দেব না। সেই ফান্ডকে আরও গড়তে চেষ্টা করব। তাড়াহুড়া করে ইমোশনালি কোনো কিছু করা যাবে না। ইমোশন দিয়ে দেশ চললে সেটা কিন্তু ভালো হয় না।
ইসলামী ব্যাংকের নতুন বোর্ড ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে’ কাজ করছে মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, তারল্য ঘাটতিতে পড়া ইসলামী ব্যাংক ইতিবাচক ধারায় ফিরছে। ২০১৭ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৮০ শতাংশ ঋণ এস আলম নিয়েছে। এটা যে বিশাল ক্ষতি তা একদিনে কাঁটিয়ে ওঠা সম্ভব না। নতুন বোর্ড দেওয়ায় তারা আবার পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করছে। এতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। গভর্নর বলেন, অযোগ্য ব্যক্তিদের আর প্রতিষ্ঠানে রাখা যাবে না। যারা নিজের স্বার্থে কাজ করছে, তাদের রাখা যাবে না। কিন্তু যারা যোগ্য ব্যক্তি, নিঃস্বার্থভাবে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করবেন, কেন তারা থাকবেন না? যারা অভিজ্ঞ, তারা এসব প্রতিষ্ঠানে থাকতেই পারেন। ঢালাওভাবে কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। ইসলামী ব্যাংকে কারা থাকবেন কিংবা কারা থাকবেন না, সে বিষয়গুলো বোর্ড থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর বোর্ডে যাদের দেওয়া হয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকিং খাত বিষয়ক অভিজ্ঞ কর্মী হিসাবেও কাজ করছেন।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাঁচানোর জন্য নতুন কৌশল নেওয়া হবে। তবে এসব কৌশল কি তা এখনি বলব না। সামনে তা জানানো হবে। ডিপোজিটরদের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আগের মত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তা করা হচ্ছে না। নতুন বোর্ড কর্মপরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করছে একটু একটু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবাইকে রক্ষা করবে। তবে ছেলে এসে ললিপপ চাইলেই সেটা দেওয়া হবে না। নিয়মের মধ্যে সাপোর্ট দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের পুনর্গঠিত পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ ও আমানতের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যবধান রয়েছে। এস আলম গ্রুপের শেয়ার বিক্রি এবং নতুন শেয়ার ইস্যু করে এই ঘাটতি কমানো হবে। এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন শেয়ারের ফেস ভ্যালু (অভিহিত মূল্য) ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রতিটি শেয়ারের দাম ৬০ টাকা হিসেবে এওবস শেয়ারের বর্তমান মোট বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা নতুন শেয়ার ইস্যু করে সংগ্রহ করা হবে বলে জানান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, এস আলম ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। শুধু টাকা নেয়নি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল, সেটাও ধ্বংস করে দিয়েছে। পাশাপাশি পুরোনো উদ্যোক্তা সউদী প্রতিষ্ঠান আল রাজিকে আনার চেষ্টা চলছে। আইএফসিকেও যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে। জানুয়ারি মাসের মধ্যে তাদেরকে আবার বিনিয়োগ করতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ইসলামী ব্যাংকের উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, তিন মাসে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে। প্রবাসী আয় বাড়ছে। নতুন বিনিয়োগ দেওয়া বন্ধ আছে। ব্যাংকের ২ হাজার ৭০০ এজেন্ট পয়েন্টে তিনজন করে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা ব্যাংকের আমানত বাড়াতে ভূমিকা পালন করতে পারেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মালিকানা পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছাড়তে শুরু করেন। এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে ইসলামী ব্যাংকের ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা বিদেশিদের হাতে ছিল। এখন যা কমে ১৩ শতাংশে নেমেছে। এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ধীরে ধীরে শেয়ার ছেড়ে দেয় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), দুবাই ইসলামী ব্যাংক, ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড করপোরেশন দোহা, ইসলামিক ব্যাংকিং সিস্টেম ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিং লুক্সেমবার্গ, শেখ আহমেদ সালেহ জামজুম, শেখ ফুয়াদ আবদুল হামিদ আল-খতিব, আল-রাজি গ্রুপ, কুয়েতের সরকারি ব্যাংক কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস, সউদী কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সিসহ বেশির ভাগ বিদেশি উদ্যোক্তা ও সাধারণ শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠান।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিভোর্সের দুদিন পরই নতুন সুখবর এ আর রহমানের
বেনাপোল বন্দরে কম শুল্কে আরও ২ লাখ ৩২ হাজার পিস ডিম খালাস
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিতে ডিএনসিসির কমিটি
কুড়িগ্রামের আকাশে হঠাৎ ধুলি ঘূর্ণিঝড়
সিঙ্গাপুরে মাদক পাচারকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
পীরগঞ্জে ক্রপ প্রোটেকশন এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন
প্রকাশিত হয়েছে শহীদদের স্মরণে ' জুলাই অনির্বাণ', ভিডিও দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সাধারণ মানুষ
সায়ানাইড প্রয়োগে হত্যায় অভিযুক্ত নারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে থাই আদালত
ঢাকায় আসলেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি
ইতালি নেদারল্যান্ডস কানাডায় পা রাখলেই গ্রেফতার নেতানিয়াহু
এবার আদানি গ্রুপের সঙ্গে বড় দুটি চুক্তি বাতিল করল কেনিয়া
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৪২
সিলেট সীমান্তে ১ কোটি ২১ লক্ষ টাকার ভারতীয় চোরাই পণ্য আটক করেছে বিজিবি
বেনাপোল সীমান্তে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল জব্দ
চীনে ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান
টিসিবির তালিকায় আ'লীগের লোকজন বহাল থাকায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ
দৌলতখানে মা -মেয়েকে পিটিয়ে আহত
স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার দূরে থামল সীমান্ত এক্সপ্রেস
কুষ্টিয়ায় প্রতিমা ভাঙচুরের পর যুবক আটক, কথাবার্তা অসংলগ্ন
জুরাইনে পুলিশের সঙ্গে অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষ, রেলপথ অবরোধ