হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া চলছে
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে দিল্লি থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, হাসিনা নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ভাবতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৯) ফাঁকে কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। গত রোববার এই ভিডিও সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করেছে সংবাদ মাধ্যমটি।
গত ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে শেখ হাসিনাকে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) নিজেকে অনেক কিছু বলতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। এমনকি ভারতও তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছে। সুতরাং আশ্রয়দাতাও তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কিছু বলছে না।
ভারতে থেকে হাসিনার বিক্ষোভের ডাক প্রসঙ্গে ড. ইউনূস আরও বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশিল করার চেষ্টা করছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিচ্ছেন। এগুলো বাংলাদেশের জন্য উপকারী নয়। তাই ভারতের কাছে তারা এসব বিষয়ে বলছেন। তাকে আশ্রয় দিচ্ছে, ঠিক আছে। কিন্তু এমনটা হতে থাকলে ভারতের কাছে আবার অভিযোগ করা হবে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, আইনি প্রক্রিয়া চলছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ভারতের কাছে তার (হাসিনার) প্রত্যাবর্তন চাওয়া হবে। আগামী নির্বাচনের সঠিক সময় কখন হবে এ বিষয়ে ড. ইউনূসের কোনো ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, না। আমার মাথায় এমন কিছু নেই। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে বাংলাদেশ বিভিন্ন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগও ছিল। তখনকার সমস্যাগুলো যেন এখন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে অন্তর্র্বতী সরকারের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অব্যবস্থাপনা, অপশাসন, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুক্ষিগত করা এবং আরও নানান অপকর্মে ভরে উঠেছিল বাংলাদেশের বিগত ১৬টি বছর। এই পরিস্থিতি থেকে দেশের উত্তরণে আমাদের বিশাল কাজ রয়েছে। প্রতিটি খাত ধরে ধরে আমাদের তা স্বচ্ছ করতে হবে। তবে এটা সাময়িক সময়ের জন্য করলে হবে না। পুরনো নীতিতে চলা প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে কাজ করছে তাতে জনগণ সরকারি কার্যালয়ে যেতে ভয় পায়, কেননা সেখানের কেউ টাকা চেয়ে আপনাকে নির্যাতন করতে পারে। যদিও এ বিষয়টি লজ্জার তবুও আমি এখানে তা উল্লেখ করলাম। সরকারকে জনগণের সহায়ক হতে হবে। এখন নাগরিকরা সরকারি অফিসগুলোকে নির্যাতনের চেম্বার হিসেবে দেখে। আপনি একবার সেখানে প্রবেশ করলে তাদের কেউ আপনার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য আপনাকে চেপে ধরবে। গোটা ব্যবস্থাপনাতেই দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, আমরা স্থায়ী সরকার নই। নিয়মিত সরকার পাঁচ বছরের হয়। নতুন সংবিধানে সরকারের মেয়াদ সম্ভবত চার বছর হতে পারে। কারণ, মানুষ সরকারের মেয়াদ কম চায়। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চার বছরের কম হওয়া উচিত, এটা নিশ্চিত। এটা আরও কম হতে পারে। পুরোটা নির্ভর করছে মানুষ কী চায়, রাজনৈতিক দলগুলো কী চায় তার ওপরে। তিনি আরও বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো চায় এটা (সংস্কার) ভুলে যাও, নির্বাচন দাও। তাহলে সেটা করা হবে। তাহলে অন্তর্র্বতী সরকারপ্রধান হিসেবে চার বছর থাকছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি তা বলিনি যে চার বছর। আমি বলেছি, এটা সর্বোচ্চ মেয়াদ হতে পারে। তবে আমাদের উদ্দেশ্য তা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা।
চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পুরো সরকার ব্যবস্থার সংস্কার হবে। মানুষ নতুন কিছু চায়। সেখানে সব ক্ষেত্রে সংস্কার হবে। এমনকি সংবিধানও সংস্কার হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দুটো প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলছে- নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সব সংস্কার শেষ করার প্রস্তুতি।
ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আচ্ছা আপনার ও তার (ট্রাম্প) মধ্যে তেমন ভালো সম্পর্ক যায়নি, তাই না? সুনির্দিষ্ট একটি টেনশন আছে। আমার মনে হয় আমি ঠিক বলতে যাচ্ছি। আপনার এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এর আগে ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। সুতরাং ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। যদি আপনি রিপাবলিকান পার্টির বিষয়ে কথা বলেন, তাহলে আমি বলবো ডেমোক্রেট পার্টিতে আমার বন্ধু আছেন। রিপাবলিকান পার্টিতেও আমার বন্ধু আছেন। আমাকে দেয়া কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলের জন্য ভোট দিয়েছিল হাউস (কংগ্রেস)। উভয় দল শতভাগ সম্মতি দিয়েছিল এতে। তাই সেখানে আমার কোনো সমস্যা নেই। সুতরাং রিপাবলিকান পার্টি অথবা ডেমোক্রেট পার্টি অথবা ট্রাম্প উদ্বিগ্ন হলেও এ পর্যন্ত আমার তাতে কোনো রকম সমস্যা হয়নি। তাই আকস্মিকভাবে নেতিবাচক কিছু ঘটবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, ট্রাম্প হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। আমি মনে করি কে প্রেসিডেন্ট তার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন হয়ে একবার সামনে, একবার পেছনে যায় না। এটা তাদের একটি স্থিতিশীল নীতি।
ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাহলে আপনি কি মনে করেন, এ অঞ্চলে তিনি (ট্রাম্প) ভিন্ন অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হবেন? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, একেবারেই না।
জলবায়ু প্রসঙ্গেও আল জাজিরার প্রশ্নের জবাব দেন ড. ইউনূস।
বিভাগ : জাতীয়