নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ রাজপথে!
২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
চট্টগ্রামে রাস্তায় নেমেছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা। চব্বিশ ঘণ্টার মাথায় নগরীর পল্টন রোড ও ব্যস্ততম প্রবর্তক মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা। দুইদিনে পৃথক দুটি বিক্ষোভ মিছিল থেকে ‘একটা গুলি চললে, পাল্টা গুলি চলবে, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’Ñ সেøাগানও দিয়েছে খুন সন্ত্রাসসহ নানা অপরাধে নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনের কর্মীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে বার বার রাস্তায় নামার দুঃসাহস দেখাচ্ছে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরেরা। নিষিদ্ধ হওয়ার পর রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।
এসব খুনি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জুলাই আগস্টের গণহত্যাসহ বিগত দেড় দশকে অগণিত খুনের ঘটনায় সুস্পষ্ট মামলা রয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে অস্ত্র ও চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং মাদকের মামলাও আছে। স্বৈরাচারের পতন হলেও আওয়ামী অপরাধীদের দূর্গের কোন হেরফের হয়নি। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার তিন মাস পার হয়েছে। এ সময়ের মধ্যেও ছাত্রলীগ ও আওয়ামী অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাড়াঁশি কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। মাঝে মধ্যে পুলিশের নিয়মিত অভিযানে দু’একজন ক্যাডার ধরা পড়ছে। কিন্তু বাকিরা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসের দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরও তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার হয়নি।
আর এ সুযোগে পতিত স্বৈরাচারের সুবিধাভোগী এসব অপরাধীরা গোপনে সংঘটিত হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা প্রকাশ্যে দিনের আলোতে ছাত্র জনতার ওপর গুলি করে ১১ জনকে হত্যা করেছে তারাই এখন সরকার বিরোধী চক্রান্ত ও নাশকতার ছক আঁকছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে পতিত স্বৈরাচারের নিকৃষ্টিতম দোসর মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। পাতালে থেকে নির্দেশনা দিয়ে তার ক্যাডারদের সংগঠিত করার খবরও রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ভয়ঙ্কর অপরাধীদের গ্রেফতার এবং তাদের অবৈধ অস্ত্র ভাণ্ডার উদ্ধার করা না হলে সরকারকে অস্থিতিশীল করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করে বসবে তারা। ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন এলাকায় তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়ার আড়ালে পরাজিত শক্তির দোসরেরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। নগরীর হাজারী গলিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসকনের বিরুদ্ধে দেওয়া একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেখানে নেপথ্যে ছিল ছাত্রলীগ যুবলীগ।
ওই ঘটনায় সেনা সদস্য ও পুলিশের ওপর ভয়ঙ্কর এসিড হামলা হয়। পরে সেখান থেকে নগর যুবলীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির কয়েকটি ঘটনায়ও ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ চব্বিশ ঘণ্টার মাথায় সোমবার রাতে নগরীর দামপাড়ার পল্টন রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা। মিছিলটি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু হয়ে মেহেদীবাগের দিকে চলে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় মিছিলকারীদের মুখে মাস্ক পরা। মিছিলের সামনে থাকা এক ক্যাডারের হাতে একটি কালো ব্যাগ দেখা যায়। তাতে আগ্নেয়াস্ত্র বা ভারী কিছু ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা ধীরগতিতে মিছিল নিয়ে মেহেদীবাগের দিকে এগিয়ে যায়। তবে সেখানে কোন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। এর আগে রোববার রাতেও তারা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। প্রবর্তক মোড়ে এ মিছিলটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলায়মান বলেন, একদল যুবক ঝটিকা মিছিল বের করে। মিছিলটি প্রবর্তক মোড় হয়ে বদনাশাহ মাজারের সামনে গিয়ে শেষ করে বিভিন্ন অলি-গলিতে ঢুকে পড়ে। মিছিলকারীদের সংগঠিত করার অভিযোগে দিদারুল আলম (৪২) নামে এক জনকে শিশু একাডেমি এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, মিছিলকারীদের বেশির ভাগের মুখে মাস্ক দেয়া ছিল। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু সেøাগানের পাশাপাশি চলছে লড়াই চলবে শেখ হাসিনা লড়বে, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই, বার বার দরকার শেখ হাসিনার সরকার- সেøাগান দিতে দেখা যায় তাদের। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিল করার আগে তারা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হন। এরপর সংঘবদ্ধ হয়ে মিছিল বের করেন। এ সময় আশপাশে কোথাও পুলিশকে দেখা যায়নি। ছাত্রলীগের নামে মিছিল দেখে হতবাক হন পথচারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাদের অনেকে নিষিদ্ধ সংগঠনের মিছিল করা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। স্থানীয়রা বলেন, পুলিশের আসকারা পেয়ে এসব চিহ্নিত খুনিরা রাস্তায় নামার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। জানা গেছে নওফেলপন্থি ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা রাস্তায় নামছে। আর নেপথ্যে থেকে তাদের সংগঠিত করছেন নওফেল।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মুখে গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও অনেকটা আড়ালে চলে যায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। কিন্তু ব্যতিক্রম চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসন। হাতেগোনা কয়েকজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের মধ্যেই সীমিত থাকে পুলিশের গ্রেফতার অভিযান।
অনেকে মনে করেন, শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের কারণেই চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ ক্যাডারেরা গ্রেফতার এড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সাথে মেট্রোপলিটন পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে এখনো যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। মূলত এ কারণেই ছাত্রলীগের কাডারেরা চট্টগ্রাম থেকে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে নগরীর জামালখানেও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারেরা। তাদের ওই কর্মসূচির পরও জোরদার হয়নি পুলিশের গ্রেফতার অভিযান।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নিপীড়ত, নির্যাতনসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন আইন অনুযায়ী গত ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ধারণা করা হয়েছিল, নিষিদ্ধ হওয়ার পর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার হবে। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোচিত্র বিরাজ করছে নগরীতে। বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তাদের দেখা যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ১১ জনের পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মামলা হয়। এ মামলার আসামিদের অনেকেও এখন প্রকাশ্যে। অপরাধীদের গ্রেফতারে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় তারা সংঘবদ্ধ হচ্ছে। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ