ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ
২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষনা করা হবে না-এই মর্মে রুল জারি করেন আদালত।
রিটের শুনানি শেষে গতকাল (মঙ্গলবার) বিচারপতি ফাতেমা নজীব এবং বিচারপতি মাহমুদুর রাজীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, আইজিপি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এইচ এম সানজিদ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার তাহসিনা তাসনিম মৃদু। বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন প্যাডেল চালিত রিকশা মালিক ঐক্যজোটের সভাপতি জহুরুল ইসলাম মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক মো: মমিন আলী এ রিট দায়ের করেন।
বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রিকশা চলাচল করছে রাজধানীতে। যার বড় একটি অংশ ব্যাটারিচালিত। পুরাতন প্যাডেলচালিত অনেক রিকশায় ব্যাটারি লাগিয়ে ‘যান্ত্রিক’ করা হচ্ছে।
রাজধানীর মূল সড়কের চেয়ে অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বেশি। সুযোগ পেলে মূল সড়কেও দাপিয়ে বেড়ায় এসব রিকশা। রাজধানীর খিলগাঁও, মান্ডা, বাসাবো, মানিকনগর, রামপুরা, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, সবুজবাগ, শ্যামপুর, ডেমরা, মোহাম্মদপুর, বছিলা, উত্তরা, ভাটারা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, ময়নারটেক, মিরপুর, পল্লবী এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বেশি।
এসব এলাকা ছাড়াও রাজধানীর প্রায় সর্বত্র ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল রয়েছে। ফলে নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেকে আহত হচ্ছেন, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কয়েক দফা অভিযান চালালেও বন্ধ হয়নি এসব বাহনের দৌরাত্ম্য।
যে প্রেক্ষাপটে রীট : রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব বহু
প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন। ‘রাজধানীতে যানজটের দুর্ভোগ বাড়ছেই/বেপরোয়ারা ব্যাটারিচালিত রিকশা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দুঃসহ যানজটে ভুগছে রাজধানীবাসী। কোথাও এতটুকু রাস্তা ফাঁকা নেই। এই যানজটের প্রধান কারণ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের পট পরিবর্তনের পর সুযোগ বুঝে রাজধানীর সীমান্ত এলাকার অলিগলিসহ আশপাশের এলাকা থেকে ঢাকায় ঢুকে পড়ে লাখ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ।
যানজট নিরসনে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। গত ২৩-২৪ সেপ্টেম্বরে দুই দিনে ২৯২১টি ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করা হয়। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে মামলা হয়েছে ৮৮৮টি। জরিমানা করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। ভুক্তভুগীদের মতে, ট্রাফিক পুলিশের অভিযান অব্যাহত না রাখলে যানজট কমবে না। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের একজন নেতা বলেন, ৬ লাখ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইকের মধ্যে ২৯২১টি রিকশা আটক কোন প্রভাব ফেলবে না। পুলিশকে আরও জোরালো অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে এগুলোর কারখানায় অভিযান চালিয়ে উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এখন নগরের এক অন্যরকম এক আতঙ্কের নাম। রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ি, বাসাবো, বৌদ্ধ মন্দির, মুগদা, সিপাইবাগ, মানিকনগর, মান্ডা, সায়েদাবাদ, কোনাপাড়া, বছিলাসহ বিভিন্ন এলাকাতেই আগে থেকেই চলতো হাজার হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ট্রাফিক সিস্টেম অনেকটা নিষ্ক্রিয় হওয়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢাকার ভিআইপি এলাকায়ও প্রবেশ করছে। বিমানবন্দর সড়ক এমনকি এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়েতেও এগুলো চলতে দেখা যায়।
নগরীর নিম্ন আয়ের এলাকাগুলোয় এই ব্যাটারিচালিত রিকশা নামানোর ব্যাপারে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয় না। যেমন- গুলশান-বনানী কিংবা বারিধারায় চাইলেই এসব গাড়ি হুট করে নামানো যায় না। কিন্তু যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, মুগদা, মানিকনগর, মান্ডা কিংবা সিপাইবাগের মতো এলাকাগুলোতে যে কেউ যখন-তখন নামিয়ে ফেলতে পারে এসব রিকশা। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এসব এলাকায় আরও যানজট বাড়ছে। বাড়ছে রাস্তায় বিশৃঙ্খলাও। অথচ, নিয়ম রয়েছে রাস্তার হিসাব করে যেকোনো নামানো বিষয়টি। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যেন রাস্তায় নামানোই এখন সহজ একটি প্রক্রিয়া।
রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকা, লালবাগ, হাজারীবাগ, আজিমপুরসহ ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এবং উত্তরাতেও ব্যাপক সংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে অবাধে।
প্রায় প্রতিদিন রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকদের বেপরোয়া চলাচলে প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। কিছু ঘটনা আলোচনায় আসছে। বাকি অনেক ঘটনা জানতেও পারছে না মানুষ।
যানজট-চাঁদবাজি-বিদ্যুৎ অপচয় : ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো প্রতি মাসে বড় অঙ্কের চাঁদাবাজি হয়। যা স্থানীয় থানাসহ রাজনৈতিক পরিচয়ধারী নেতা-কর্মীরা ভাগ পেয়ে থাকেন। ঢাকার মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এখন রাস্তার বিষফোঁড়া। এলাকার ভেতরের রাস্তায় এসব রিকশা চলাচলের কথা থাকলেও এগুলো সব সময় মহাসড়কে উঠে আসে। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব নিয়ন্ত্রণ করা যায় না রাজনৈতিক কারণেই। কারণ দিনশেষে এ থেকে বড় অঙ্কের চাঁদাবাজি হয়ে থাকে। যার ভাগ রাস্তার পাতি নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত পেয়ে থাকে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের আমলে চাঁদাবাজি বন্ধ রয়েছে। অনেকের মতে, এগুলো নির্মুল করার এখনই উপযুক্ত সময়।
দেশের অনেক সড়কেই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলে থাকে ধীরগতির ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা গাড়িগুলো। অন্যদিকে, দূরপাল্লার পরিবহনগুলো দ্রুত গতির হয়ে থাকে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। সরু রাস্তা ও ধীরগতির অবৈধ যানবাহনের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্ভোগও।
ট্রাফিক বিভাগের কাছে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও দেশজুড়েই চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। ধারণা করা হয় এ সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকাসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে চলাচল করছে। সারা দেশে এই অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার অটোবাইকের ব্যাটারি রিচার্জ করা হয়। এতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। সাধারণত একটি ইজিবাইক চালানোর জন্য চার থেকে পাঁচটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি প্রয়োজন। প্রতি সেট ব্যাটারি রিচার্জের জন্য গড়ে ৯০০ থেকে ১১০০ ওয়াট হিসেবে ৫ থেকে ৬ ইউনিট (দিনে বা রাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা) বিদ্যুৎ খরচ হয়। এ হিসেবে ১ লাখ ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা রিচার্জের জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে প্রতিদিন অন্তত ১১০ মেগাওয়াট এবং মাসে ৩৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। অধিকাংশ গ্যারেজ চুরি করে ও লুকিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এসব ব্যাটারি রিচার্জ করায়। এতে বিদ্যুৎ বিভাগ বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব ছাড়াও আরা জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ব্যটারিচালিত অটোরিকমা বিড়ম্বনা বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট করেন প্যাডেলচালিত রিকশা মালিক ঐক্যজোটের সভাপতি জহুরুল ইসলাম মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক মো: মমিন আলী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত