রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার না চাইলে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেবো : ড. ইউনূস
২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার না চাইলে দ্রুত নির্বাচন দেয়া হবে এমনটাই জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, সংস্কারের ধরন ও পরিধি নির্ধারণ করবে রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হবে যে নির্বাচন কত দ্রুত হবে। রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার না চাইলে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেব। গতকাল বণিক বার্তাসহ একাধিক দেশি বিদেশী গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা বাইরে থেকে এসেছি। অর্থনীতি, ব্যাংকিং সেক্টর থেকে শুরু করে সবকিছুই বেহাল দশা। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা আজকেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিজ পেশায় চলে যেতে চান। তাদের নিজস্ব ব্যবসা বাণিজ্য আছে। উপদেষ্টা পদে থাকায় ছেলেমেয়েদের বেতন দিতে পারেন না। তারা দ্রুতই অন্তর্বর্তী সরকার থেকে চলে যেতে যান।
ড. মুহম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কার ও নির্বাচন সম্পূর্ণই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের বিষয়। কারণ দেশের জনগণের প্রত্যক্ষ মতামত নিতে হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। সংস্কার যত দ্রুত হবে, নির্বাচনও তত দ্রুত হবে। আর যদি রাজনৈতিক দলগুলো বলে তারা সংস্কার চায় না, তাহলে এখনই নির্বাচন দিয়ে দেবো।
নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, আমরা সমান্তরালভাবে দুটো রাস্তায় চলছি। সমান দৃষ্টিভঙ্গি, সমান প্রচেষ্টা দুটোর পেছনেই থাকবে। একটি হলো নির্বাচন, অপরটি সংস্কার। নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে নির্বাচনের পথ তৈরি করবে।
তিনি বলেন, আমরা কোনো কিছুই চাপিয়ে দিচ্ছি না। দু-একদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন ঘোষণা হয়ে যাবে। কমিশন তার মতো চলবে। সেটা তো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। সেখানে যা যা দরকার সেটা হবে।
প্রশ্ন করা হয়, অনেকগুলো সংস্কার কমিশন হয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, এদের কাজ শেষ করার পর বলা যাবে এগুলোর রোডম্যাপ কী হবে। অনেকগুলো কমিশন হয়েও গেছে। এসব কমিশনের রিপোর্ট কবে পেতে পারেন? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা তো প্রথম ছয়টি সংস্কার কমিশনের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম, যেগুলো আমাদের বিশেষভাবে দরকার। সেটি ছিল যে ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে আমাদের রিপোর্ট দেবে। সেটিই আমরা আশা করছি। ডিসেম্বর তো প্রায় এসেই গেল। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে। কারণ অনেকগুলো সংস্কার কমিশনের কাজ শুরু করতে দেরি হয়ে গেছে। আমরা প্রথমে বলেছিলাম, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দিন। কিন্তু দেখলাম যে এটি আর বলা যাচ্ছে না। যেহেতু শুরুতেই তাদের বসার জায়গা দিতে পারছি না। তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। কাজেই সময় চলে গেছে। ধরে নিচ্ছি জানুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট এসে যাবে। রিপোর্ট এসে গেলে তখন একটি দলিল পেলাম; যেটি রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে দেব যে বলুন, কোনটি আপনাদের পছন্দ? যেটি আপনাদের পছন্দ, যেটি করতে চান, সেটি করব। আর যেগুলো অপছন্দ বা কেউ একমত হতে পারছে না; সেগুলো বাদ রাখব। কাজেই এটা তাদের নেগোসিয়েশন বা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার বিষয়। আমরা সাহায্য করব তাদের আলাপ-আলোচনায়। আমরা ধরে নিচ্ছি এখানে ১০০টা প্রস্তাব আছে। যেখানে বলা আছে এটি করতে হবে, ওটি করতে হবে। ১০০টির মধ্যে ১০টির ব্যাপারে তাদের কোনো আপত্তি নেই। আর দশটি একটু এদিক-ওদিক বদল করে দিলে হতে পারে। আমি আন্দাজ করছি। অথবা যদি বলে যে এগুলোর কোনোটিরই দরকার নেই, তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেন। এগুলো আমরা করব। আপনাদের এসবের মধ্যে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। তাহলে আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
প্রশ্ন করা হয়, আল জাজিরাকে দেয়া আপনার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গগুলো এসেছে। সেখানে একটি বক্তব্য (অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ৪ বছরের কম হতে পারে) নিয়ে নানা ধরনের চর্চা চলছে। আপনার প্রেস অফিস থেকেও এ বিষয়ে একটি বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যদি আরেকটু পরিষ্কার করতেন? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ওখানে আমার বক্তব্য যেটি আল জাজিরায় ছাপা হয়েছে, সেটি দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। সেটিই বোধ হয় আমার অফিস থেকে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গটি নির্বাচন নিয়ে কথা ছিল না। এটি ছিল পার্লামেন্টের চার বছর নিয়ে আলোচনা। ওখানে নির্বাচনের চার বছর নিয়ে আলোচনা হয়নি।
তাহলে কি আল জাজিরা আপনার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আল জাজিরা ভুলভাবে উপস্থাপন করেনি। তারা ঠিকই দিয়েছে। দেশের কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম সুন্দর রিপোর্ট করেছে। আমাকে তো আল জাজিরা পর্যন্ত যেতে হচ্ছে না। সে পত্রিকাগুলো আল জাজিরা থেকে নিয়ে বলছে। কিন্তু অন্য অনেক কাগজে অন্তর্বর্তী সরকার চার বছর লাগবে উল্লেখ করেছে। আরে চার বছর ওদের (উপদেষ্টা) তো ধরেবেঁধে রাখতে পারবেন না। যাদের নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়, উপদেষ্টামণ্ডলী, তারাই বলবে, ‘আজই আমাদের ছেড়ে দিন। আমি কী করে চলব? এ বেতনে আমার ছেলের বেতন দিতে পারছি না। যত তাড়াতাড়ি পারেন নির্বাচন দিয়ে দিন। আমরা চলে যাই।’ কাজেই আমাদের উদ্দেশ্য হলো যে তাড়াতাড়ি যাওয়া। আমরা চার বছর বললে তো লোক এখনই বের হয়ে চলে যাবে। একজন-দুজন না, আমাদের কয়েকজন আছে যারা বলেন, আমাদের ছেড়ে দেন। আর কতদিন আমাদের রাখবেন?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন যে আমাদের প্রতিবেশী একটি বড় দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। আবার আদানির বিতর্কিত প্রকল্পে নতুন করে আলোচনা বা যাচাই-বাছাইয়ের কথা শোনা গেলেও আমরা দেখছি যে আদানির টাকাগুলো বিগত সরকারের সময় যত দ্রুততার সঙ্গে দেয়া হয়েছিল, এবার তার চেয়েও বেশি দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে যদি ব্যাখ্যা দিতেন? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, পাওনাদারের পাওনা শোধ করা হয়েছে। তা না হলে আমাদের গোটা বিদ্যুৎ খাত নিয়ে আমরা সমস্যায় পড়ে যাব। পুরো টাকা তো দিইনি। ভাগ ভাগ করে দেয়া হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ছয়টি বন্যা গেছে। সে সময় ফসল নষ্ট হয়েছে, সবজি নষ্ট হয়েছে। সেটির ধকল সহ্য করতে হয়েছে। এক জায়গায় তো না। বিভিন্ন জায়গায় এটি হয়েছে। কাজেই সেটির একটি ধকল আছে। তারপর যেগুলো আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে মুদ্রার বিনিময় হারে পরিবর্তন এসেছে। এ টাকা ডলারে পরিবর্তন হয়ে সেখানে খরচ বেশি হচ্ছে। এজন্যই মূল্যস্ফীতিটা বেশি হয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে সরকারের ভোক্তাদের আশ্বস্ত করার কোনো উদ্যোগ আছে কি? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা পুরো আশ্বস্ত করছি ভোগ্যপণ্যের ঘাটতি হবে না। ভোগ্যপণ্য বলতে শুধু খেজুর আর ছোলার বিষয় না। চিনির বিষয় না। চাল নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলাম। এখন আর স্বয়ংসম্পূর্ণ নেই। ছয়টা বন্যার কথা বললাম। একেবারে ঠিক মৌসুমে ধান কাটার আগে নষ্ট হয়ে গেছে সব। কাজেই এই বিরাট একটা ঘাটতি। এ ঘাটতি পূরণের জন্য এখন আমদানি করতে হচ্ছে আমাদের। আমরা বলছি যত টাকা লাগে, চালের ঘাটতি যেন না হয়।
ভালো নির্বাচন ও ভালো সংস্কারের জন্য জনপ্রশাসনের বড় সমর্থন দরকার। বর্তমান জনপ্রশাসন যেভাবে সজ্জিত হচ্ছে, সেটি নিয়ে এরই মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নির্বাচন দিতে গেলেও জনপ্রশাসন ও ভালো পুলিশ দরকার। সেটি নিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রস্তুতি কেমন? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, চেষ্টা করছি আরকি। যা যা করতে হয়, সেগুলোই জোড়াতালি দিয়ে চালাতে হবে। আমরা তো আর নতুন পুলিশ আনতে পারব না। এ পুরনো পুলিশকেই জোড়াতালি দিয়ে চালাতে হবে। আমলাতন্ত্রকে নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চালাতে হবে। সে জোড়াতালি দিতে গেলে, দেয়ার সময় আমরা ভুলভ্রান্তি করব, ভুল বুঝব, সেটাও হতে পারে। এর মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের সবাই চেষ্টা করে যাচ্ছে। (সংক্ষিপ্ত) ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত