আমদানিকারকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
পাকিস্তানের করাচি হয়ে আসা এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং নামের কন্টেইনার জাহাজটি গতকাল রোববার চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের দুই নম্বর বার্থে বার্থিং দেয়া হয়েছে। করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি জাহাজ চলাচল দেশের আমদানিকারকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বিশেষ করে কম সময়ের মধ্যে চিনি, আলু, খেঁজুর, পেঁয়াজের মতো ভোগ্যপণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আসায় খুশি আমদানিকারকেরা। সামনে পবিত্র মাহে রমজান। তাই ভোগ্যপণ্যের চাহিদা পূরণে ভারতের বিকল্প হিসাবে পাকিস্তানের পণ্য আমদানিতে আগ্রহী আমদানিকারকেরা। কারণ দূরত্ব কম হলেও ভারতের শুল্ক-অশুল্ক নানা বাধা আর জটিলতার কারণে সে দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে সময় বেশি লেগে যায়। তাতে আমদানি ব্যয় বাড়ে আবার সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘিœত হওয়ায় বাজারে পণ্যের সঙ্কটও দেখা দেয়।
পক্ষান্তরে মাত্র দশ দিনে পাকিস্তান থেকে আমদানি পণ্য দেশে আসছে। এতে একদিকে সময় কম লাগছে, অর্থেরও সাশ্রয় হচ্ছে। কম সময়ে বাজারে পণ্য সরবরাহ দিতে পারায় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা কমছে। আবার পাকিস্তান থেকে কম সময়ে তৈরি পোশাকসহ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হওয়ায় দেশে শিল্প-কারখানায় উৎপাদনের গতি বাড়ছে। সেই সাথে উৎপাদন খরচও কমছে।
করাচি-চট্টগ্রাম সরাসরি জাহাজ চলাচল পাকিস্তান থেকে পণ্য আনা-নেয়া অনেক সহজ ও স্বস্তিদায়ক করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আমদানিকারকেরা। তারা বলছেন, একটি নতুন সোর্স তৈরি হওয়ায় আমদানিকারকদের মাঝে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। এই রুটে জাহাজ বাড়ানোর কথাও ভাবছে শিপিং কোম্পানি। দ্বিতীয় জাহাজ চলাচল শুরু হলে ৩৮ দিনের পরিবর্তে প্রতি ২০ দিনে করাচি-চট্টগ্রাম ভয়েজ সম্পন্ন হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজটিকে জোয়ারের সময় বন্দরের জেটিতে বার্থিং দেয়া হয়েছে। সেখানে কন্টেইনার খালাস শুরু হয়েছে। আগের বারের চেয়ে এবার আরো বেশি পণ্য নিয়ে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে ওই রুটে জাহাজ চলাচল বাড়তে পারে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো করাচি থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে আসা জাহাজে আমদানি পণ্য ছিল ৩২৮ টিইইউএস। ৩৮ দিনের মাথায় দ্বিতীয় ভয়েজে তা প্রায় তিনগুণের কাছাকাছি ঠেকেছে। দ্বিতীয়বারের মতো করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজটিতে ৮২৫ টিইইউএস কন্টেনার রয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি করাচি থেকে আসে ৭১২ কন্টেনার। এসব কন্টেনারে রয়েছে ভোগ্যপণ্য, গার্মেন্টস এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল।
গত ১১ নভেম্বর ৩২৮ টিইইউএস পণ্য নিয়ে আসা জাহাজটি ১২ নভেম্বর বন্দর ছেড়ে গিয়েছিল। প্রথম ভয়েজে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে প্রথমে পাকিস্তান এবং পরে সেখান থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। ওই সময় জাহাজটিতে সোডা অ্যাশ, ডলোমাইট চুনাপাথর, ম্যাগনেশিয়াম, ভাঙা কাচ, গার্মেন্টসের কাঁচামাল, কাপড়, রং, গাড়ির যন্ত্রাংশ পেঁয়াজ, আলু, খেজুর, জিপসাম, পুরনো লোহার টুকরা, মার্বেল ব্লক, কপার ওয়্যার, রেজিন, হুইস্কি, ভদকা ও ওয়াইন নিয়ে এসেছিল।
জাহাজটি দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে পৌঁছায় শনিবার। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যগুলো খালাসের পর জাহাজটি ফিরতি পথে ১২শ’ টিইইউএস পণ্য বোঝাই ও খালি কন্টেইনার নিয়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর বন্দর ছেড়ে যাবে। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ১১৩ টিইইউএস কন্টেইনার নিয়ে জাহাজটি প্রথমে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে পৌঁছে। ওখান থেকে ৭১২ টিইইউএস কন্টেইনার নিয়ে জাহাজটি গত ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পথ ধরে।
এবার জাহাজটিতে থাকা ৮২৫ টিইইউএস কন্টেইনারের মধ্যে ২৮৫ টিইইউএস কন্টেইনারে পরিশোধিত চিনি, ১৭১ টিইইউএস কন্টেইনারে ডলোমাইট, ১৩৮ টিইইউএস কন্টেইনারে সোডা অ্যাশ, ৪৬ টিইইউএস কন্টেইনারে গার্মেন্টসের কাপড়ের রোল, ২০ টিইইউএস কন্টেইনারে আখের গুড়, ১৮ টিইইউএস কন্টেইনারে আলু এবং ২০ টিইইউএস কন্টেইনারে পুরনো লোহার টুকরা, রেজিন ও কাপড় রয়েছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জাহাজটিতে বোঝাই করা কন্টেইনারে খেঁজুর, লুব অয়েল, মার্বেল পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। পাকিস্তান থেকে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় ব্যাপক আলোচনা হয়। ভারতীয় মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চলে আসছে অনেক আগে থেকে। তবে এতদিন দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কোনো জাহাজ চলাচল ছিল না। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট হয়ে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো। এতে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে জাহাজ ধরার বিষয় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের উদ্বেগের বড় কারণ ছিল। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে চার দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত পণ্য আটকা পড়ে থাকার ঘটনা ঘটত। এতে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতির কবলে পড়তে হতো।
সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় এখন করাচি থেকে কোনো কন্টেইনার বোঝাই করা হলে তা চট্টগ্রামে নির্দিষ্ট দিনে পৌঁছার এবং চট্টগ্রাম থেকে ফিরতি পথেও নির্ধারিত সময়ে করাচি পৌঁছা নিশ্চিত হওয়ায় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের অস্বস্তি কেটে গেছে। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ বা ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য একটি নতুন সোর্স তৈরি হয়েছে- যা প্রতিযোগিতামূলক দরে পণ্য আমদানির ক্ষেত্র প্রসারিত করবে।
পানামার পতাকাবাহী ১৮২ মিটার দৈর্ঘ এবং ৩০ মিটার প্রস্থের ৮.১ মিটার ড্রাফটের জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজেন্সি লাইনস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, করাচি-চট্টগ্রাম জাহাজ চলাচল ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন রকম ভোগান্তি ছাড়াই কম সময়ে পণ্য আমদানি-রফতানি করতে পারায় খুশি অনেকে। তারা আরো খোঁজখবর নিচ্ছেন। পণ্য আমদানি বাড়লে এই রুটে তারা দ্বিতীয় জাহাজের চলাচল শুরু করবে। তাতে আরো কম সময়ে পণ্য আনা-নেওয়া সম্ভব হবে। এতে ব্যবসায়ীদের খরচ আরো সাশ্রয় হবে। #
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক