চোখে বিদ্ধ গুলির যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন মাদরাসাশিক্ষার্থী মেহেদী
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম
রাজপথে একদিকে ছাত্রলীগের হামলা অপরদিকে গরম পানি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের পাশাপাশি এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছিল পুলিশ। এহেন পরিস্থিতির মধ্যেও অবিচল ছিলেন মাদরাসা শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান। সারা শরীরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায়ও ২১ বছরের এ যুবক রাজপথে দৃঢ় মনোবলে মোকাবিলা করছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসরদের। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে তার ডান চোখে বিদ্ধ হয় চারটি গুলি। তখন চোখ দিয়ে ঝরছিল রক্ত আর রক্ত। এহেনও পরিস্থিতিতে তিনি আর মেরুদ- শক্ত করে দাঁড়াতে পারেননি। লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়।
ঘটনার দিন ৪ আগস্ট। আওয়ামী সরকার পতনের ঠিক এক দিন আগেও আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর বাহিনী। সেদিন ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার মতোই আন্দোলনে উত্তাল ছিল সিলেট জেলার সর্বত্র। সিলেট জেলা সদরের জামিয়া হিদায়েতুল মাদরাসার সরফ শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেদীও সক্রিয় ছিলেন সেই আন্দোলনে। ওই দিন ৬-৭শ’ আন্দোলনকারী সিলেট সদর সোবহানি গার্ডের সামনে অবস্থান নেয়। বেলা ১২টা থেকে অবস্থান নিলেও ১টার দিকে শুরু হয় সংঘর্ষ। নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের হঠাতে একযোগে হামলা চালায় ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ হাসিনার পেটোয়া বাহীনী। তাদের সাথে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ করে পুলিশের কয়েকটি ইউনিট ছিল খুবই বেপরোয়া। পুলিশের একটি ইউনিট আন্দোলনকারীদের গাড়ি থেকে গরম পানি ছুড়ছিল। অপর ইউনিটগুলো একাধিক এপিসি গাড়ি নিয়ে গুলি ছুড়ছিল। পুলিশের অপর একটি ইউনিট ভারী অস্ত্র নিয়ে গুলি ছুড়ছিল। এছাড়া পুলিশের ভ্যান বেপরোয়াভাবে ঘুরে গাড়ির নিচে আন্দোলনকারীদের চাপা দেয়ার চেষ্টা করে।
এ পরিস্থিতিকে বেলা ঠিক ১টার কিছু পরেই আন্দোলনে সামনে থেকে হাসিনা বিরোধী স্লোগান দেয়া মেহেদী হাসান হঠাৎই লুটিয়ে পড়েন রাস্তায়। এর আগে তার শরীরে অনেকগুলো ছররা গুলি বিদ্ধ হলেও তিনি রাজপথ ছাড়েননি। হঠাৎ চোখে গুলিবিদ্ধ হলে তিনি আর দাঁড়াতে পারেননি। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাসেবা পাননি তিনি। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ পুলিশের প্রহরায় সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন আগে থেকেই। যাতে করে আন্দোলনে আহতদের কেউ সেখানে চিকিৎসা নিতে না পারেন। এহেনও পরিস্থিতিতে মেহেদীকে নিয়ে যাওয়া হয় সিলেট ওসমানি হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। সেই থেকে হাসপাতালটির চতুর্থ তলার পিবি-৩১ নং সিটে ভর্তি রয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মেহেদীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে মোট ৬৯টি গুলি লাগে। যা বের করা সম্ভব নয়। তবে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছেÑ তার ডান চোখেই বিদ্ধ হয়েছিল চারটি ছররা গুলি। এর মধ্যে এখনো দুটি গুলি ভেতরে রয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, চোখের বাকি দুটি গুলি এমনভাবে বিদ্ধ হয়েছে যা চোখের নার্ভ ভেদ করে ভেতরে চলে গেছে। এ গুলি বের করতে গেলে তার মস্তিস্ক অ্যাটাক করার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের রোগীকে আর বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। অপরদিকে সম্প্রতি তার আক্রান্ত চোখে সিলিকন নামক অয়েল ব্যবহার করা হয়েছে। আরো চার মাস পরে বোঝা যাবে ভবিষ্যত পরিস্থিতি। এ সময় পর্যন্ত তাকে পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে হাসপাতালে।
মেহেদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানাধীন উত্তর দাররা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা সোহেল মিয়া লিভার সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। মা কুসুম বেগম একটি হাসপাতালের কর্মচারী। মেহেদীর একমাত্র ছোট ভাই মোহাম্মদ জিসানও মাদরাসার কাদিয়া ক্লাসের ছাত্র। অভাবের সংসারে কিছুটা অর্থনৈতিক জোগান দিতে মেহেদী লেখাপড়ার পাশাপাশি স্থানীয় একটি আড়তে সেলসম্যানের চাকরি করতেন।
মেহেদী বলেন, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসায় ডাক্তারদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। ওষুধপত্রসহ সব ধরনের চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করলেও তার অতিরিক্ত সেবার জন্য পরিবারের কাউকে না কাউকে পাশে থাকতে হচ্ছে সার্বক্ষণিক। এ জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকার পাশাপাশি পুনাক সংগঠন থেকে ১০ হাজার টাকার অনুদান পেয়েছেন। যা ইতোমধ্যে খরচ হয়ে গেছে। এহেন পরিস্থিতিতে তিনি নিজের সংসারের হাল ধরতে তাকে একটি কর্মসংস্থান করে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। পাশাপাশি তাকে বিদেশে নিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান ’২৪-এ দেশ স্বাধীনের ভূমিকায় থাকা এ কারিগর।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রিক্সা ভ্যানে চলন্ত ট্রাকের ধাক্কায় বাবা মেয়ে সহ নিহত ৩
পদ্মা নদীর ভয়ঙ্কর আগ্রাসনে হুমকির মুখে কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়ক
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা: চালকসহ গ্রেপ্তার ২
গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেডের আরএমও জেল -হাজতে
বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে আবারও মাঠে নামতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা
সাংবাদিক আনিসুর রহমানের মৃত্যু
নিউজিল্যান্ডের কাছে শ্রীলঙ্কার অবিশ্বাস্য পরাজয়
রাশিয়ার উপর আজারবাইজানের বিমান ভূপাতিতের অভিযোগ : যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিত
ফিরে দেখা ২০২৪: সংস্কারের বছরে মাঠের ক্রিকেটে হতাশা
মানুষ সুন্দর ও কল্যাণের অপেক্ষায় আছে : হাজী ইয়াছিন
সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার সময় বাড়ছে
সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ দেশে ফিরেছেন
ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখার উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর
আগস্ট বিপ্লবের অর্জন যেকোন মূল্যে ধরে রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: নিয়ামত উল্যা ভূঁইয়া
ঐতিহ্যবাহী শ্রীপুর হাইস্কুলের প্লাটিনাম জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত
বিশ্বে প্রতি ৬ জন শিশুর মধ্যে ১ জন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বাস করে : ইউনিসেফ
বাউফলে বিএনপির ৫ নেতাকর্মী আহত
২০২৫ সালে আসছে কোক স্টুডিওর নতুন গান
মার্কিন ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার কিংবদন্তি গ্রেগ গাম্বেলের বিদায়
সচিবালয় ছিল দালালদের হাটবাজার: ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি