পদ্মা নদীর ভয়ঙ্কর আগ্রাসনে হুমকির মুখে কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়ক
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ পিএম | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ পিএম
কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জেলার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া, বারুইপাড়া ও বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামসহ কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়ক। রানাখড়িয়া এলাকায় পদ্মা নদীর তীর থেকে কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়কের ব্যবধান মাত্র ৫০ মিটার। এরই মধ্যে তীব্র ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে নদী ও মহাসড়কের মধ্যকার আয়তন। দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পাঁচটি হাই ভোল্টেজ টাওয়ার, বহু সড়ক এবং দুটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অথচ এ মহাসড়ক দিয়েই উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জেলার ব্যবসা বাণিজ্য কার্যক্রম চলে। যানবাহন যাতায়াতেরও একমাত্র মাধ্যম এই মহাসড়ক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী রানাখড়িয়া, নওদাপাড়া, মির্জানগর, সাহেবনগর, তালবাড়িয়া ও শামুথিয়া গ্রামে এক যুগ ধরে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে।ব্যাপক ভাঙন থেকে রক্ষায় সরকার ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিলেও যথাসময়ে কাজ বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার স্থানীয়রা মিছিল, মানববন্ধন ও জনসভায় আন্দোলন করেও ফল পাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এবং কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি এলাকা রক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের দরপত্র গত এপ্রিল মাসে উন্মুক্ত হয়। এ প্রকল্পে নদীর ১০.৫৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁধ নির্মাণ হবে। প্রথম পর্যায়ে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে ভাঙন এলাকায় বাঁধ নির্মাণে ১৮টি গ্রুপ কাজ শুরু করেছে। কিন্তু বাকি ১৫টি গ্রুপ পুনঃদরপত্র প্রক্রিয়ার সব কার্যক্রম শেষ করলেও সিদ্ধান্তহীনতায় কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। ১৫ ঠিকাদার ১০ শতাংশ কম দরে দরপত্র জমা করলেও অদৃশ্য কারণে তাদের কাজ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় যথাসময়ে এই ১৫টি প্যাকেজের কাজ করা না গেলে বর্ষা মৌসুমে মহাসড়কসহ জনপদ ফের ভাঙনের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
জানা গেছে, ৩৩টি প্যাকেজের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গত জুনে ২৫টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। আর বাকি আটটি প্যাকেজের কাজ জুলাই মাসে দরপত্র আহ্বান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। যাচাই-বাছাই শেষে ১৮টি গ্রুপকে কাজের অনুমতি দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী জুলাই মাস থেকে এসব ঠিকাদার ভাঙন এলাকায় কাজ শুরু করেছেন। জুনের আগে যে ৩৩টি গ্রুপের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, তার মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ তাঁর অনুগত কয়েকজন ঠিকাদার ছিলেন। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার গত অক্টোবরে ১৫টি কাজের কার্যাদেশ বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের জন্য নির্দেশ দেয়। জুলাই মাসেও ১৫টি কাজের দরপত্র আহ্বান করে তা সেপ্টেম্বর মাসে উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু উপযুক্ত ঠিকাদার বাছাই করার পরও অদৃশ্য কারণে তা বাতিল করে পুনঃদরপত্র আহ্বানের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
একাধিক ঠিকাদার বলেন, কাজ করার উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে জুনের আগ পর্যন্ত। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতা ও একাধিকবার পুনঃদরপত্র হওয়ার কারণে অনেক কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়ে যাচ্ছে। এতে বর্ষা এসে গেলে ভাঙন শুরু হলে ক্ষতি হবে সবার। কাজের মান নিম্ন হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় কঙক্রিট ব্লক তৈরির কাজ চলছে। সিদ্ধান্তহীনতায় ঠিকাদার নিযুক্ত না হওয়ায় বাঁধ নির্মাণের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর প্যাকেজের কাজ শুরু হয়নি। তবে ১০ ও ১২ নম্বর প্যাকেজের কাজ চলমান আছে। মাঝে আবার ১১ নম্বর প্যাকেজের কাজ শুরুই হয়নি। সাইটে কাজ করা ঠিকাদার নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, একজন ঠিকাদার এমন দুটি প্যাকেজের কাজ পেয়েছেন, তার আগে-পিছে অনেক কাজ পড়ে আছে। এখন আমরা কাজ শুরু করে বিপাকে। আমরা কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করলাম অথচ আগে-পিছে শুরু হলো দেরিতে। তখন পানি বাড়লে ভাঙনে আমাদের কাজ করা অংশও নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাই বাকি যে প্যাকেজের কাজগুলো আছে, সেগুলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস্তবায়ন করা জরুরি।
পাউবোর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৬৭২ কোটি টাকার কাজ নিয়ে দোটানায় পড়েছে তারা। দরপত্র উন্মুক্ত করার ৪০ দিন পেরিয়ে গেলেও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দেরি হলে কাজ বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
নদীভাঙন প্রতিরোধ ও বাঁধ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মওদুদ আহমেদ রাজীব জানান, কাজ ঠিকাদার দিয়ে করানো হবে, নাকি অন্য কোনো বিশেষ বাহিনীকে দিয়ে করা হবে, সেটি আমাদের জানার বিষয় নয়। আমরা ভাঙন বন্ধে দ্রুত ও যথাসময়ে কাজ বাস্তবায়ন চাই। পাউবোর কোনো গাফিলতি থাকলে এলাকাবাসী সহ্য করবে না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রশিদুর রহমান বলেন, ১৮টি গ্রুপ তাদের কাজ শুরু করেছে। বাকি ১৫টি গ্রুপের পুনঃদরপত্র হয়েছে। আমরা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী কাজ করছি। যথাসময়ে কাজ শুরু না হলে বর্ষায় মহাসড়ক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা আছে। আমরা ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান জানান, তালবাড়িয়ায় নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কে হবেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার?
বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা