বিচারপতি শওকতকে তদন্ত কমিশনের মুখোমুখি করার দাবি
২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম
দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টের পর অপসারণ করা হয়েছে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান, হাসিনার ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতি মো: শওকত হোসেনকে। গত ১৬ জানুয়ারি তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করা হয়। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয় প্রজ্ঞাপন। তার স্থলে নিয়োগ দেয়া হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো: রইছউদ্দিন কে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদে মো: শওকত হোসেনের চুক্তির অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৮০ এর ধারা-৫ অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো: রইছ উদ্দিনকে অন্য যেকোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠন-এর সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে দুই বছর মেয়াদে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের প্রাপ্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদিসহ প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো। এ নিয়োগের অন্যান্য শর্ত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে-মর্মে উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে। এদিকে অপসারণ করা হলেও বিচারপতি মো: শওকত হোসেন প্রশ্নে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট, আইনজীবী এবং বিচারাঙ্গনের মানুষের মাঝে। কারণ তিনি শুধু ভারত পালিয়ে যাওয়া হাসিনার দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের দোসরই ছিলেন না। তিনি ছিলেন আলোচিত বিডিআর পিলখানা হত্যা মামলার ফরমায়েশী রায়ের বিচারক। স্পর্শকাতর এ মামলায় পছন্দানুগ রায় দিয়ে হাসিনার কাছ থেকে এনামস্বরূপ জিতে নিয়েছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির পদ। হাইকোর্ট বিভাগে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে হাসিনার সরকারের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করেন। অর্জন করেন শেখ পরিবার ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আস্থা। ফলে অবসরে যাওয়ার পরও তিনি পুরষ্কারস্বরূপ লাভ করেন প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ।
ট্রাইব্যুনালে নিয়োগলাভের পর আনুগত্য অব্যাহত রাখেন। ফলে পরপর তিনবার তিনি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিয়োগ পান। ট্রাইব্যুনালে বসেও তিনি মুজিব বন্দনা অব্যাহত রাখেন। শেখ মুজিবের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। ১৫ আগস্ট ‘জাতীয় শোক দিবস’ পালন করেন। তবে ৫ আগস্ট জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে হাসিনার পাশা উল্টে গেলে ভোল পাল্টে ফেলেন বিচারপতি মো: শওকত। উল্টো সুর ধরে চেষ্টা চালান একই পদে আকড়ে থাকতে। প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে তার কীর্তি-কলাপ নিয়ে গত ২৪ নভেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। তাতে উল্লেখ করা হয়, বিচারপতি মো: শওকত হোসেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসর নেন ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। বিচারিক জীবনের পারফরম্যান্সে তুষ্ট হয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তাকে চুক্তিতে বসান প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। স্বকার্যে দারুণ রকম স্বেচ্ছাচারী ও প্রবল আওয়ামীমনা বিচারপতি শওকত হোসেন এখন পুরোদস্তুর ‘হাসিনাবিরোধী’। বাহ্যত ‘হাসিনাবিরোধী’ হলেও ভেতরে প্রবল আওয়ামীপনায় হাসিনার হয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন স্বেচ্ছাচারিতার।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট তিনি ট্রাইব্যুনালে ‘জাতীয় শোক দিবস’র আয়োজন করেন। চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগে গোপালগঞ্জ ছুটে যান শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে। মাথার ওপর টাঙিয়ে রাখেন মুজিব-হাসিনার ছবি। তবে ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর গত ১৫ আগস্ট তিনি হয়ে যান প্রচন্ড মুজিববিরোধী।
গিরগিটির মতো রঙ পাল্টানো বিচারপতি শওক হোসেন হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার আগে ছিলেন বিডিআর-পিলখানা হত্যা মামলার বিচারক। কথিত এ বিচাওে বলির পাঠা বানানো হয় কিছু বেসামরিক ব্যক্তিকে। বিচারের বাইরে রাখেন শেখ পরিবার, সংশ্লিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা, শেখ হাসিনা এবং সর্বোপরি ভারত সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তিনি প্রতারণামূলক রায় দেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা েেতারাব আলীকে ‘দায়ী’ করে দৃষ্টি ভিন্নখাতে সরান। নিরপরাধ বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টুকে কারাগারে পাঠান। কারাভ্যন্তরেই তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। রায়ে তোরাব আলীর ‘অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, বিডিআর’র অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আ’লীগ নেতা তোরাব আলীর কাছে পরিকল্পিত সেনা হত্যার আগাম তথ্য ছিল । সেই তথ্য নাকি তিনি সরকারকে আগাম জানাননি ! এটিকে ‘গুরুতর অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে বিচারক শওক হোসেন যখন তোরাব আলীকে ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। যদিও এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তোরাব আলী। সেই আপিলের আবার শুনানি হয় বিচারপতি মো: শওকত হোসেনেরই হাইকোর্ট বেঞ্চে। আপিল শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি তোরাব আলীকে ‘বেকসুর খালাস’ও দেন। পরে অবশ্য ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তোরাব আলী। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ আনা হয়, তোরাব আলীকে কারাগারে নির্যাতন করা হয়। ফলশ্রুতিতে কারামুক্তির পর মারা যান।
বিচার এবং আইনাঙ্গনের মানুষ মনে করছেন, ভারত এবং শেখ হাসিনার হয়ে বিডিআর-পিলখানা হত্যার ঘটনা বিচারিকভাবে ধামাচাপা দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ অপকর্মটি সম্পাদন করেন বিচারপতি মো: শওকত হোসেন। পৃথিবী কাঁপানো এ ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়ায় তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। তার কাছ থেকে মিলতে পারে বিডিআর-পিলখানা হত্যার অজানা অনেক তথ্য। বিডিআর পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনায় আধাসামরিক এ বাহিনীর সাবেক মহাপরিচালক আ.ল.ম.ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের যে কমিশন কাজ করছে-বিচারপতি মো: শওকত হোসেনকে সেই কমিশনের মুখোমুখি করা জরুরি। তাহলে হয়তো উদঘাটিত হতে পারে বিডিআর পিলখানা হত্যাকা-ের অনুদঘাটিত নতুন কোনো দিক। তাই তারা তাকে কমিশনের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দাবি জানাচ্ছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড
‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি
বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব
এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার
কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান
বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি
শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল
নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ
বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা
পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়
সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে
ভারতে ৫ বছর সাজাভোগ করে দেশে ফিরলেন স্বামী-স্ত্রী