পেঁয়াজ চাষিদের মাথায় হাত

ফরিদপুরে ৫০ ভাগই অঙ্কুরিত হয়নি প্রণোদনার বীজ

পেঁয়াজ চাষিদের মাথায় হাত

আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে

২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম

ফরিদপুর জেলা থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। সেই লক্ষ্যে প্রতি বছর সরকারিভাবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়। তবে এবারের প্রণোদনার পেঁয়াজ বীজে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। সংশ্লিষ্টদের গাফেলতিতে নিম্নমানের বীজ পেয়ে দিশেহারা তারা। বিষয়টির সত্যতাও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রবি মৌসুমের আওতায় ৫ হাজার ২০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-৪ ও ৬ জাতের পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি পেঁয়াজ বীজের সঙ্গে ২০ কেজি সারও বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে তাহেরপুরী জাতের ৪ হাজার ও বারি জাতের ১২’শ কেজি বীজ বিতরণ করা হয়েছে। তবে এতে প্রণোদনা পাওয়া সব কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
স্থানিয় কৃষকরা ইনকিলাবকে জানান, এসব বীজের ৫০% শতাংশ বীজও অঙ্কুরিত হয়নি। এমনকি কোনো কোনো কৃষকের জমিতে অঙ্কুরিত বীজের হার ০ শতাংশ। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা ইনকিলাবকে জানান, ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে বলে সরেজমিনে প্রমাণ পেয়েছেন। যার হার মোটেও সন্তোষজনক নয়। এদিকে বীজ বপনের সময় শেষ হওয়ায় হতশায় দিন কাটছে কৃষকদের।
এবছর ফরিদপুর, নগরকান্দা, ভাঙ্গা, সদরপুর, সালথা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যারা তাহেরপুরী জাতের এক কেজি বীজ পেয়েছেন তারা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়ে পড়ছে। এদিকে, ফরিদপুর সদর উপজেলা, ডিক্রিচড়, নগরকান্দা, সাগরদি, ভাঙ্গা, সদরপুর, চরমানাই, মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদী গ্রামের কৃষকরা সকলেই ৮০ থেকে ৯০ শতক জমিতে আবার কেউ দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করবেন বলে জানান। এ লক্ষ্যে উল্লেখিত উপজেলার কৃষকরা প্রণোদনার এক কেজিসহ আরো এক কেজি বীজ চড়া দামে ক্রয় করে বপন করেন। কিন্তু প্রণোদনায় পাওয়া বীজ অঙ্কুরিতের হার দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। ওই এলাকার কারও বীজ অঙ্কুরিত হয়নি বলে কৃষকরা ইনকিলাবকে অভিযোগ করেন।
সালথার কৃষক আহসান মোল্যা ইনকিলাবকে বলেন, যে বীজ পেয়েছি তার কিছুই অঙ্কুরিত। কয়েকদিন পরই হালি পেঁয়াজ লাগানো শুরু হবে। এখন নতুন করে বীজও পাওয়া যাচ্ছে না বা বপন করার সময়ও শেষ। আমি এখন কী করবো জানি না। এই পেঁয়াজ দিয়ে সংসার চলে। এ বছর পেঁয়াজ বীজের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় উপজেলা থেকে এক কেজি বীজ পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। আমি এর ক্ষতিপূরণ এবং জড়িতদের বিচার চাই। নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক নজরুল মিয়া মাত্র এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যে প্রণোদনা হিসেবে এক কেজি বীজ বপন করেন। কিন্তু তার জমিতে ৫ শতাংশ বীজও অঙ্কুরিত হয়নি। তিনি জানান, আমাদের এমন ক্ষতি করলো কেন? এখন কী দিয়ে চাষাবাদ করবো? ক্ষতিপূরণ না দিলে না খেয়ে মরতে হবে।
অপরদিকে, কৃষকদের এমন ক্ষতির দায়ভার নিতে চাচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তারা। তারা বিএডিসি কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন। নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোষ ইনকিলাবকে জানান, আমাদের কাজ শুধু বিতরণ করা। বীজ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার দায়িত্ব বিএডিসি (বীজ বিপণন) কর্মকর্তাদের। এজন্য তারাই দায়ী। তিনি আরো বলেন, আমরা সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পেয়েছি। অঙ্কুরিতের হার সন্তোষজনক নয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও বিএডিসি কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে এবং সম্প্রতি ডিসি স্যারের সঙ্গে আমাদের জরুরি মিটিংও হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে বিএডিসির জেলা বীজ বিপণনের উপ-পরিচালক সৈয়দ কামরুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক জনাব মোহম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা ইনকিলাবকে জানান, কেউ আইনের বাইরে নয়, ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষকরা দেশের সম্পদ। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।

বিভাগ : জাতীয়