'সিরাজুল আলম খানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করা যায় না।'
২৯ জুলাই ২০২৩, ০৮:২২ পিএম | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩, ০৮:২২ পিএম
বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সিরাজুল আলম খানকে বাদ দিয়ে ভাবা যায় না, রচনা করা যায় না। সিরাজুল আলম খানের জীবন সংগ্রাম থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার আছে। সিরাজুল আলম খানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ বিনির্মাণে কথা চিন্তা করা যায় না। আজ শনিবার (২৯ জুলাই ২০২৩) রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত স্মরণসভায় আলোচকরা এ সব কথা বলেন। সিরাজুল আলম খান স্মরণ সভা জাতীয় কমিটি এ আয়োজন করে।
স্মরণ সভা শুরুর পূর্বে সিরাজুল আলম খানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, সদস্য বাদল খান, কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মোহন রায়হান।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বাসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রওশন জাহান সাথী, ফরহাদ মজহার, সমকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আ স ম আবদুর রব বলেন, সিরাজুল আলম খানকে বোঝা, জানা, চেনা অসম্ভব। অন্যদের কাছে বলতেন, আমি যা করতে পারি না, বলতে পারি না সেটা রবকে দিয়ে বলাই, করাই। সিরাজুল আলম খানের মৃত্যু নেই। তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত না করা পর্যন্ত আমার মৃত্যু নেই।
তিনি বলেন, ১৯৬১ সালে ২১ বছর বয়সে নিউক্লিয়াস করেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য। তখন বাংলাদেশ শব্দটাও কারো কাছে শুনিনি। সিরাজুল আলম খানের জন্ম না হলে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার জন্য রাজি করাতেন কে? লক্ষ লক্ষ কর্মী তৈরি করেছিলেন। সিরাজুল আলম খান আমাদের জাতীয়তাবাদের বাতিঘর। যিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশে ভবিষ্যত রাষ্ট্র দর্শন আবিষ্কার করেছেন।
জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, সিরাজুল আলম খান কখনও শেখ মুজিবুর রহমানকে অস্বীকার করেননি, অনাস্থা জানাননি। বঙ্গবন্ধুর হাতে সিরাজ ভাই দেশটা তুলে দিয়েছিলো, দেশটাকে কোন দিকে নিয়ে যাবেন সেই মাঠটা তৈরি করে দিয়েছিলেন। সিরাজুল আলম খান ও তাজ উদ্দীন আহমেদ হলেন বাংলাদেশের ফাউন্ডিং ফাদার।
তিনি বলেন, আজকে আমরা ক্রান্তিলগ্নে আছি। ৫০ বছর পরও আমরা একটা নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা তৈরি করার জন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। সকল রাজনীতিবিদদের উচিত রাজনীতিবিদদের মর্যাদা দিয়ে কথা বলা। বঙ্গবন্ধু রাজনীতিবিদদের সম্মান দিতেন।
আম্বিয়া বলেন, একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। ৮০/৯০ শতাংশ মানুষকে নির্বাচনের বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। জাতি সমাধান চায়। এতদিন ধরে যারা লুটপাট করে যারা বিত্ত বৈভব করেছে তা দিয়ে আমাদের কোনো লাভ নেই।
শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, স্বাধীনতার পর যখন নতুন করে দাঁড়ানোর অসামান্য বীরের কাজ করেছিলেন সিরাজুল আলম খান। এদেশের গ্রামে-গঞ্জে সমাজতন্ত্র ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করেছিলেন তিনি।
সাইফুল হক বলেন, ষার্টের দশকে যারা পর্দার অন্তরালে থেকে জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছেন সিরাজুল আলম খান অন্যতম। প্রচলিত রাজনীতির যে ধারণা, রাজনৈতিকদের যে চরিত্র দাদা ছিলেন তার ব্যতিক্রম। বঙ্গবন্ধুর পর যদি মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে নাম নিতে হয় তাহলে সিরাজুল আলম খানের নাম নিতে হয়। সিরাজুল আলম খানকে যে দল, সরকার শ্রদ্ধা জানাতে পারে না তারা কীসের মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে? এটা তাদের হীনমন্যতা। তরুণ সমাজকে তিনি যেভাবে জাগিয়ে তুলেছিলেন এটা একটা অসাধারণ কর্ম। দাদার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার তরুণ প্রজন্ম রাখবে। প্রচলিত সংবিধানের বাইরে গিয়ে শ্রমজীবী মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ পরাধীনতা ভাঙার জন্য আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন দাদা।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অসাধারণ প্রতিভাবান সংগঠক ছিলেন সিরাজুল ইসলাম খান। স্বাধীনতার পুরো অংশ জুড়ে ইতিহাস রচিত হয়নি। সেই ইতিহাসের কথা যখন আসবে তখন তাকে বাদ দিয়ে করা যাবে না। আজ যদি রাজনীতিবিদরা সিরাজুল আলম খানের মতো নির্মোহ হতে পারতো তাহলে বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত।
জহিরুল ইসলাম বলেন, বুদ্ধি দিয়ে শ্রদ্ধা করতে না পারলে অনেক সময় শ্রদ্ধা করা হয় না। সিরাজুল আলম খানের জীবন সংগ্রাম থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার আছে। সিরাজুল আলম খানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ বিনির্মাণে কথা চিন্তা করা যায় না। যারা সিরাজুল আলম খানকে রহস্য পুরুষ বলেন, কাপালিক বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তা আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সিরাজুল আলম খানকে বাদ দিয়ে ভাবা যায় না, রচনা করা যায় না। সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। নতুন প্রজন্মের কাছে সিরাজুল আলম খানের সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার চিন্তা তুলে ধরাই আমাদের কাজ। তাহলেই আমরা তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে পারবো।
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সশস্ত্র যুদ্ধের অন্যতম কারিগর ছিলেন সিরাজুল আলম খান। সশস্ত্র যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর কাছে জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন। তা না হওয়ায় ১৫ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। ১৫ দফা দাবি অগ্রাহ্য হওয়ার কারণে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেন। তিনি ইতিহাসের নির্মাতা।
নাজমুল হক প্রধান বলেন, আমরা যারা সিরাজুল আলম খানের কর্মময় জীবনের ইতিবাচক দিক ধরে জাতিকে সামনের দিকে পথ দেখাই।
স্মরণ সভার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জাতীয় কমিটির সদস্য করিম সিকদার, তোহা মুরাদ, মঞ্জুর আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন, খালেকুজ্জামান লিপন, তানসেন, তৌফিকুজ্জামান পীরাচা প্রমুখ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
"তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না" : মালালা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট
মোবাইল ইন্টারনেটে সুখবর ‘শর্ত শিথিল’, থাকছে ১ ঘণ্টার প্যাকেজও
গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন
বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে
এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন
বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়
আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি
মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ
বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি
রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা
না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা
এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২
ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ
ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু