ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হলে কী প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে?
০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:০৬ এএম | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১১ এএম
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর হলেও, তা কমিয়ে ১৭বছর করা উচিত বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এরপরই এটি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা চলছে।
অন্যদিকে, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০শে জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা নিয়ে হালনাগাদ শুরুর কথা থাকলেও সেটি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কেননা নির্বাচন কমিশন মনে করছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম শুরুর পর যদি আইনে পরিবর্তন হয়ে ভোটার হওয়ার বয়স কমানো হয়, তখন নতুন করে সংকট তৈরি হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আগামী ২০ তারিখের আগেই যদি আইনে পরির্বতন আসে তাহলে নির্ধারিত সময়ই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হবে। না হলে কয়েকদিন দেরিও হতে পারে"।
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ করা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর এ নিয়ে রাজনীতিতেও এক ধরনের আলোচনা তৈরি হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পরদিনই এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এর মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণ হতে পারে।
তবে, ১৭ বছর করার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, ভোটার হওয়ার বয়স কমিয়ে তালিকা হালনাগাদ করা হলে যথা সময়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সংকট তৈরি হতে পারে।
এছাড়াও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি, বিবাহ আইন সংশোধনসহ বিভিন্ন আইনে পরিবর্তন আনতে হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান ও নির্বাচন বিশ্লেষক মুনিরা খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "তখন দেশের অন্যান্য আইনের সাথে ভোটার আইন অসামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, সেই সাথে নতুন করে হালনাগাদ করে আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করা বেশ জটিল হবে"।
তবে নির্বাচন কমিশন এখনো মনে করছে এটি খুব জটিল কাজ নয়, এর জন্য নির্বাচন আয়োজনে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে এরই মধ্যে ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার।
ওই সংস্কার কমিশনগুলো সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে নানা সংস্কার প্রস্তাবনা প্রস্তুত করছে।
এরই মধ্যে গত ২৭শে ডিসেম্বর ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ করা নিয়ে নিয়ে তার মত দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "কোন বয়সে একজন নাগরিক ভোটার হতে পারবে তার জন্য নানা দেশে নানা বয়স নির্ধারণ করা আছে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন নিশ্চয়ই এরকম একটা বয়স সুপারিশ করবে। সে বয়স আমার পছন্দ হতেও পারে না-ও হতে পারে"।
প্রধান উপদেষ্টা অপেক্ষাকৃত তরুণদের তাড়াতাড়ি ভোটার করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, যে যত তরুণ, পরিবর্তনের প্রতি তার আগ্রহ তত বেশি।
এসময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত"।
তারপর দিনই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার এ প্রস্তাবনা নিয়ে আপত্তি তুলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ইসলাম আলমগীর।
তিনি এসময় বলেন, "প্রধান উপদেষ্টার এমন পরামর্শ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ নাকি ১৮ হবে তা নির্ধারণের কাজ নির্বাচন কমিশনের"।
যদিও ভোটার হওয়ার বয়স কমানো নিয়ে উল্টো অবস্থান নেয় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী।
এর পরদিন রোববার নীলফামারীতে এক অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ভোটার করার বয়স ১৭ করার দাবি জানান।
এ সময় মি. রহমান বলেন, শিশু-কিশোর ও যুবকেরাই আমাদের নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। তাই তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে আমরা কিছুটা হলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমাদের দায় শোধ করতে পারি।'
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি কী?
সে অনুযায়ী আগামী ২০শে জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরুর সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের বর্তমান ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, পহেলা জানুয়ারি ২০২৫ যে সব ভোটারদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদেরকেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু ভোটার হওয়ার বয়স নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
কেননা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ শুরুর পর ভোটার হওয়ার বয়স কমানো হলে সেক্ষেত্রে নতুন জটিলতায় পড়েতে হতে পারে নির্বাচন কমিশনকে।
যে কারণে প্রধান উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের পর ২০শে জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এখন যদি ১৭ বছর হয় তাহলে পহেলা জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে যাদের বয়স ১৭ বছর হয়েছে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এটা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। শুধুমাত্র সংবিধান ও আইনে পরির্বতন আনতে হবে আগে।"
তাহলে কী নির্বাচন কমিশন এই নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মি. মাছউদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "এটা একটা আইনের বিষয়। সরকার কিংবা রাষ্ট্র যদি ঠিক করে দেয় অমুক বছরে ভোটার হবে সেটা ইসি করবে"।
প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর ২০শে জানুয়ারির মধ্যে আইন কিংবা সংবিধানে পরিবর্তন না হলে হালনাগাদ কার্যক্রমে আরো কিছুদিন পরে শুরু হতে পারে বলেও বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
গত ২৭শে ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছেন, তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি এবং তাদের পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহও বেশি।
যে কারণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এক বছর বয়স কমিয়ে তরুণদের ভোটার করার ব্যাপারে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
এ নিয়ে রাজনীতিতে পক্ষে বিপক্ষে নানা মতামত উঠে আসার পাশাপাশি কিছু সংকটের বিষয়কেও গুরুত্ব দিচ্ছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিজেদের প্রস্তাবনায় ভোটার হওয়ার বয়স কমানোর কোন সুপারিশ এখনো পর্যন্ত করে নি।
তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার তরুণদের সুযোগ দেয়ার জন্য বয়স কমিয়ে ভোটার করার পক্ষে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
মি. মজুমদার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, "সাধারণ জনতাকে সাথে নিয়ে জেন-জি প্রজন্ম চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে। স্বৈরাচারি সরকারের পতন ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনে তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে"।
"তরুণরা তাদের গুরুত্ব প্রমাণ করতে পেরেছে, যে কারণে সেটির স্বীকৃতি হিসেবে ভোটার হওয়ার বয়স কমানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ", বলেন মি. মজুমদার।
তবে ভোটার করার বয়স কমানো হলে কিছু সংকটের কথাও বলছিলেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের চেয়ারম্যান মুনিরা খান।
বিবিসি বাংলাকে মিজ খান বলেন, "প্রথমত বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে আঠারো বছরের নিচে যারা তা অপ্রাপ্ত বয়স্ক। যে কারণে নানা নাগরিক সেবা কিংবা অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়েও তাদের শিশু কিশোর হিসেবে গণ্য করা হয়। ভোটার তালিকায় বয়স কমানো হলে সেটি নিয়ে সংকট তৈরি হবে"।
চলতি বছরের শেষ কিংবা পরের বছরের শুরুর দিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
বিশ্লেষক মিজ খান বলেন, "সেক্ষেত্রে বয়স কমিয়ে নতুন হালনাগাদ করে নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে সময়ক্ষেপণ হবে অনেক। আমি মনে করি চলতি বছর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত"।
একই সাথে উন্নত বিশ্বের ভোটার হওয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, "বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ভোটার হওয়ার বয়স ১৮।''
বাংলাদেশে এই বয়স এক বছর কমানোর পেছনে যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নোয়াখালীতে পচা গন্ধে শ্বশুর বাড়িতে মিলল জামাইয়ের লাশ
লামায় পুড়ছে কাঠ ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ জীব বৈচিত্র্য বিলীনের পথে
শ্রীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিরাপত্তা কর্মী নিহত
জকিগঞ্জে আসছেন পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় আলেম আল্লামা মুফতি আব্দুল মান্নান
কুয়েটে ৪ মাসে ৫২ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বেনাপোলে বিজিবির চিরুনী অভিযান, মাদকসহ ৯ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত পণ্যের শুল্কে পরিবর্তন আনবে না সরকার
তারাকান্দায় শীত বস্ত্র বিতরণ ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রম পরিদর্শন সেনাপ্রধানের
আশুলিয়ায় জুলাই ঘোষণাপত্র ও ৭ দফা দাবিতে লিফলেট বিতরণ
কটিয়াদীতে মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে মাদকাসক্ত ব্যক্তির মৃত্যু
দাউদকান্দি-মতলব সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকা সত্বেও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রীরা
ওয়েস্টার্ন গ্রুপ এ্যামেচার গলফ চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধন
সিলেটকে ‘হ্যাটট্রিক’ উপহার দিয়ে বরিশালের টানা দ্বিতীয় জয়
এনসিসি ব্যাংক এর ১১তম বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত
শেরপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান, ১১ ইটভাটাকে ৬৫ লাখ টাকা জরিমানা
ঈশ্বরদীতে যুবদল কর্মী গুলিবিদ্ধ
হারা ম্যাচে শাস্তিও পেল পাকিস্তান
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের নতুন উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ
গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ নিলেন বিএসএমএমইউ ভিসি
মুসাফির অবস্থায় সুন্নত পড়া প্রসঙ্গে?