মোক্তারের মতো অনেকেই বাড়িঘর করছেন কিনেছেন জমি

শেরপুরে শখের নার্সারী থেকেই আয় হচ্ছে লাখ টাকা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার, গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চল থেকে

০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২২ এএম | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২২ এএম


মেধা, শ্রম আর ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে সফলতা অর্জন করা যায় তার উজ্বল দৃষ্টান্ত শেরপুরের নকলা পৌরসভার ধুকুড়িয়ার নার্সারী ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন। শখের বসে বাড়ির আঙ্গীনায় ফুল চাষ শুরু করে বাণিজ্যিকভাবে ফুল ও ফলের চারার নার্সারী করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। হয়ে উঠেছেন সফল নার্সারীর মালিক। সংসারেও ফিরেছে স্বচ্ছলতা। বছরে উপার্জন করছেন লাখ টাকা। পরিচিতিও ছড়িয়ে পড়েছে জেলাজুড়ে। তাকে দেখে জেলা-উপজেলায় ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বাড়ছে। নার্সারীতে বিনিয়োগে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জেলার অর্ধশত পরিবার। ভ্যানে করে ফুল, ফলের চারা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন কমপক্ষে ৩০টি পরিবার। রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোয় যাচ্ছে চারা ও ফুল। সহজলভ্য নয় এমন উন্নত জাতের ফুল ও ফলের চারা অন্য জেলা থেকেও আনছেন তারা। নকলা উপজেলার সব বাজারেই চারা ও ফুল বেচাকেনা হয়। বিক্রেতারা জানান, সারা বছরই ফল-ফুলের চারা বিক্রি হয়। ধুকুড়িয়া, রামপুর, কবুতরমারী, বাউসা, কায়দা, মোজার, পুলাদেশী ও মাউড়া ইত্যাদি গ্রামের শতাধিক পরিবার এ পেশায়ই জীবীকা নির্বাহ করছেন। বিভিন্ন চারা ও ফুল ভ্যান গাড়িতে গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন।
মোক্তার হোসেন জানান, ফুল ও চারা বিক্রি করে দৈনিক ৫০০ থেকে হাজার টাকা আয় হয়। নার্সারীগুলোয় গোলাপ, গাদা, মৌচান্দা, মাদবীলতা, জুঁই, চামেলী, শিউলী, কামিনি ফুলসহ বিভিন্ন জাতের চারা বিক্রি হয়। মোক্তার হোসেনের নার্সারীতে গোলাপ, গাদা, ডাবল ও সিংগেল স্টার, বার্ডিং হার্ট, বাগান বিলাশ, ক্রিশমাশ, দোপাটি, চন্দ্রমল্লিকা, ডাবল ও সিংগেল রঙ্গন, মৌচান্দা, মাদবী লতা, জুঁই, চামেলী, শিউলী, কামিনি, কৃষ্ণচ‚ড়া, রাধাচ‚ড়া, সেঞ্চুরী, গন্ধরাজ, জবা, সেলবিয়া, জিনিয়া, কসমস, ক্যাবিস্ট, মিনি ও বড় টগর, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, হাসনাহেনা, চায়না ও ভারত থেকে আনা নানা প্রজাতির ফুলের চারা এবং সাথী চারা হিসেবে উন্নত জাতের আম, পেঁপে, কাঁঠাল, লিচু, থাইপেয়ারা, ডালিম, জাম্বুরা, মেহেদীর চারা বিক্রি হচ্ছে। জাত ভেদে প্রতিটি চারা ২০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন। এই আয় থেকেই মোক্তারের মত অনেকেই বাড়িঘর করছেন ও কিনেছেন জমিজমা।
মোক্তার জানান, ধান, গম, পাটসহ অন্যান্য ফসল চাষ করে লোকসান গুনতে হতো। ১৯৯৮ সালে বাড়ির আঙ্গীনায় ফলদ ও কাঠ গাছের নার্সারী করে, প্রথম বছরেই ভাল লাভ হয়। এরপর জমির পরিমাণ বাড়িয়ে আড়াই একরের নার্সারী গড়েছেন। শতকরা ৬০ ভাগ জমিতে ফুলের নার্সারী করা হয়েছে। নিজের ৫০ শতকসহ ২ একর জমি বন্ধক নিয়ে নার্সারী করেছেন। নার্সারীতে ৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। নার্সারী থেকে এ বছর ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার চারা বিক্রে করতে পারবেন। আয়-ব্যয় শেষে এ বছর লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা তার।
বিক্রেতা সাদির, চানু, মোক্তারসহ কয়েকজন জানান, বিভিন্ন গ্রাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ফুলের চারা বিক্রি করেন তারা। শিক্ষার্থীরা চারা ও ফুল বেশি কিনেন। বর্ষা মৌসুমে কাঠ ও বিভিন্ন ফলের চারা বেশি বিক্রি হয়।
নার্সারী মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোক্তার হোসেন জানান, ২০১৩ সালে এক বীজ কোম্পানীর মাধ্যমে উপজেলার ৫ জন নার্সারীর মালিক যশোরে নার্সারী বিষয়ে ৩ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণের জ্ঞান কাজে লাগিয়েই নার্সারী ব্যবসায় তারা স্বাবলম্বী। সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে, নার্সারী ব্যবসার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রাক্ষাও নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নার্সারীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করছে। উপজেলায় ছোট-বড় অর্ধশত নার্সারী গড়ে উঠেছে। কর্মসংস্থানের ও সৃষ্টি হয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আবেদ আলীর বাড়ি-ফ্ল্যাট-জমি জব্দ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত : আইসিসিবি সভাপতি
পহেলা বৈশাখ পান্তা-ইলিশ খাওয়া আমাদের সংস্কৃতি না -প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
ঢাকায় মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি
গণজাগরণ মঞ্চের নেপথ্যের নায়কদের সচিব করার প্রস্তাব
আরও
X

আরও পড়ুন

কুমিল্লার সাবেক এমপি শফিউদ্দিন শামীমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

কুমিল্লার সাবেক এমপি শফিউদ্দিন শামীমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ইসরাইল নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমাও অতিক্রম করেছে : কর্নেল অলি

ইসরাইল নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমাও অতিক্রম করেছে : কর্নেল অলি

আবেদ আলীর বাড়ি-ফ্ল্যাট-জমি জব্দ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

আবেদ আলীর বাড়ি-ফ্ল্যাট-জমি জব্দ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

পুরান ঢাকায় আগুনে একজনের মৃত্যু

পুরান ঢাকায় আগুনে একজনের মৃত্যু

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত : আইসিসিবি সভাপতি

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে ব্যবসায়ীরা চিন্তিত : আইসিসিবি সভাপতি

আরব আমিরাত ও তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

আরব আমিরাত ও তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

পহেলা বৈশাখ পান্তা-ইলিশ খাওয়া আমাদের সংস্কৃতি না -প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

পহেলা বৈশাখ পান্তা-ইলিশ খাওয়া আমাদের সংস্কৃতি না -প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার বৈঠক

আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার বৈঠক

ঢাকায় মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি

ঢাকায় মার্কিন নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি

ইসরাইল নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমাও অতিক্রম করেছে : কর্নেল অলি

ইসরাইল নৃশংসতার সর্বোচ্চ সীমাও অতিক্রম করেছে : কর্নেল অলি

গণজাগরণ মঞ্চের নেপথ্যের নায়কদের সচিব করার প্রস্তাব

গণজাগরণ মঞ্চের নেপথ্যের নায়কদের সচিব করার প্রস্তাব

ওয়াকফ বিল ইস্যুতে সারজিস :  মোদিকে ছুড়ে ফেলার বিকল্প নেই

ওয়াকফ বিল ইস্যুতে সারজিস :  মোদিকে ছুড়ে ফেলার বিকল্প নেই

উদ্যোক্তাদের জন্য ৮০০-৯০০ কোটি টাকার তহবিল আসছে

উদ্যোক্তাদের জন্য ৮০০-৯০০ কোটি টাকার তহবিল আসছে

গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যা-মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ

গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যা-মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ

গাজার পক্ষে ড. ইউনূসের বিবৃতি

গাজার পক্ষে ড. ইউনূসের বিবৃতি

শুল্ক ৩ মাস স্থগিত চেয়ে ট্রাম্পকে চিঠি দিলেন ড. ইউনূস

শুল্ক ৩ মাস স্থগিত চেয়ে ট্রাম্পকে চিঠি দিলেন ড. ইউনূস

জনসমর্থন হারাচ্ছেন ট্রাম্প

জনসমর্থন হারাচ্ছেন ট্রাম্প

নিরাশা নয়, আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-১

নিরাশা নয়, আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা মুমিনের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন-১

বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ

বিক্ষোভে উত্তাল সারাদেশ

টঙ্গীতে পোশাক শ্রমিককে ছুরিকাঘাতে হত্যা

টঙ্গীতে পোশাক শ্রমিককে ছুরিকাঘাতে হত্যা