মন খুলে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে উত্তরের মানুষ

মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে

০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২২ এএম | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২২ এএম

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হলো জুলাই-আগস্ট পরবর্তী নব চেতনার বাংলাদেশে। শান্তি সমৃদ্ধি আর সৌহার্দ্য বন্ধনে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ পেয়েছে দেশের অবহেলিত উত্তরের জনগন। রমজানের আগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস আর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসরদের অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির অপপ্রয়াস সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের দেয়া বরকত ও রহমতের সবকিছুই যেন পরিপূর্ণতা লাভ করে। অকল্পনীয়ভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসে। আগের মত ঘটেনি দুর্ঘটনা। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষদের রাস্তায় ঈদ উদযাপন করতে হত। অভাবনীয় সুখ-আনন্দে বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহর সব জায়গায় সৃষ্টি হয় নতুন মাত্রার ভ্রাতৃত্ববোধ। চাকরিজীবীরা সময়মত বেতন বোনাস আর দেশের স্বনির্ভর করার দিনরাত শ্রম দিয়ে যাওয়া কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে আল্লাহর বিশেষ রহমতে মাঠজুড়ে ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের সবুজের সমারোহ মানুষের মনে আলাদা অনুভ‚তি সৃষ্টি করেছে। লম্বা সরকারি ছুটিকে মনভোরে উপভোগ করছে সকল স্তরের সকল পেশার মানুষ।
ঢাকার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবেদুর রহমানের বাড়ি বোচাগঞ্জ উপজেলার ছাতইল গ্রামে। ঈদের আগের রাতে (চাঁদ রাতে) দিনাজপুর শহরের মার্কেটে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করছে। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় দেখা মাত্রই কুশল বিনিময়। একপ্রকার আবেগে আপ্লুত হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বললেন ভাই প্রায় ২০ বছর পর পরিবার নিয়ে ঈদের আগের রাতে নিজ এলাকার বাজারে বাজার করতে পারছি। তার মতে প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠানের ছুটি পেয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে সময়মত বাসায় পৌঁছাতে পারিনি। ঈদের দিন দুপুরে অথবা পরদিন বাসায়ে পৌঁছেছি। আলহামদুলিল্লহা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো ভাই ঈদের দাওয়াত রইলো।
কথা হলো চিরিরবন্দর উপজেলার কৃষক নজু মোহাম্মদের সাথে তার ভাষায় ভাই ভাবতেও পারিনি পেঁয়াজ দিয়ে গোশত রান্না করার। গ্রামের পছন্দনীয় আলু দিয়ে মাছ গোশতের ঝোল করে মন ভরে খেতে পারবো। কিন্তু মাশাল্লাহ দেশীয় পেয়াজ আর দেশীয় আলু দিয়েই তৃপ্তি সহকারে ঈদের ভোজন করতে পেরেছি। তার মতে আমন ধানের দাম পেয়েছি ভাল। রমজানের রহমত আর বরকত আকাশ থেকে ঝড়ে পরছে। আবহাওয়া এত ভাল যে ইরি-বোরো ধান গাছ তরতর করে বাড়ছে। সেচ নির্ভর এই ধান আবাদ নিয়ে কৃষকের কষ্টের শেষ ছিল না। লোড শেডিং বা সার সঙ্কটের কালো থাবা পড়েনি কৃষকের উপর। লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষক ও খামারীরা আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে। কেননা মুকুলে ভরে পুরো গাছ। আল্লাহর রহম থাকলে এবার লিচুতেও বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছে এই মৌসুমী ফলের সাথে জড়িত লাখ লাখ মানুষ।
ঈদের বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা এতটাই সন্তুষ্ট যে-আগের বছরের কথা ভেবে স্টোক কম করায় তারা এখন কপাল চাপড়াচ্ছে। আগের রাতেই অনেকে পণ্যের অভাবে দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। বরাবরের মত নিম্ন মধ্যবিত্তদের হাহাকার তাড়া করে চলছিল রমজানের শুরু থেকেই। কিন্তু এবার তারাও ভালভাবে ঈদ কাটিয়েছে। ঈদের খাবারের জন্য হুড়াহুড়ি বা জাকাত ফেতরা নিতে যেয়ে প্রাণহানির হেডলাইন সৃষ্টি হয়নি টিভির পর্দায় বা পত্রিকার হেডলাইনে। মুজিব আর হাসিনা বন্দনা হবে না বুঝে নিয়েই আল্লাহ আকবর ধনিতে সামিল হয়েছে হাজার থেকে লাখো মুসল্লি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন অতঃপর আল্লাহর অশেষ রহমতে মানুষের মধ্যে যে আস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা আগামী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বিভাগ : জাতীয়