বরকতের পয়গাম নিয়ে ঐএলো রমাযান
১৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩০ পিএম

ঐ যে এলো রহমতের পয়গাম নিয়ে বরকতময় রমাযানুল মোবারক। এখনি শুরু হয়ে যাবে রহমতের বারিধারা। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বৃষ্টিতে অবগাহন করবে বলে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। হে আল্লাহ! তাদেরকে রমযান পর্যন্ত হায়াত বাড়িয়ে দাও। আরবী বার মাসের মধ্যে অত্যন্ত বরকতময় মাস হলো, রমযান। “রমযানের প্রত্যেকটি নেক কাজের বিনিময় দশগুণ।”(বুখারী:১৮৯৪)
কিন্তু আপনি প্রস্তুত তো ? তাহলে দয়াময় প্রভুর কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাদেরকে রহমতের বৃষ্টি ভাগ্যে নসীব করেন। রহমত ও বরকতের বারিধারা বেশী করে ধরে রাখার জন্য নিজের মধ্যে গভীরতা সৃষ্টি করতে হবে। কোথাও মুষলধারে বৃষ্টি হলে যেমন গভীরতা অনুযায়ী বৃষ্টির পানি আটকে থাকে অর্থাৎ যার গভীরতা বেশী তাতে পানি বেশী জমা হয়। তেমনি আল্লাহর রহমত ও বরকত ধরে রাখার জন্য নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। অন্যথায় সমতল ভুমিতে বৃষ্টি পড়ে কিছুক্ষণের মধ্যে যেমন পানি শূণ্য হয়ে পড়ে তেমনি আপনি যদি নিজেকে প্রস্তুত করতে না পারেন তবে রহমত বর্ষিত হবে ঠিকই কিন্তু আপনি সেই রহমত ধরে রাখতে পারবেন না। কারণ আপনি নিজের মধ্যে সেই রহমত ধরে রাখার মতো ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গভীরতা সৃষ্টি করতে পারেননি। অর্থাৎ নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে পারেননি। ফলে রমযান আসে রমযান যায় কিন্তু নিজের মধ্যে পরিবর্তনের কোন কিছু পরিলক্ষিত হয় না। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে ও সেই অনুযায়ী কাজ করা বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই।” (বুখারী: ১৯০৩, কিতাবুস সাওম, বাবু মান এদা কাউলি... আ.প্র-১৭৬৮ ও ইফা:১৭৭৯)
নিজেকে প্রস্তুত করার অর্থ হচ্ছে, রমযান আসার আগেই আপনি একটি পরিকল্পনা তৈয়ার করবেন যে, এক, অশ্লীল কথা ও কাজ ছেড়ে দিবো। অশ্লীলতা থেকে দুরে থাকবো। অশ্লীলতার ধারে-কাছেও যাবো না। এবং এটি হবে আমার স্থায়ী পরিকল্পনা। যদি কোন সময় এই অংগীকার থেকে সরে পড়ি তবে খুব দ্রুত তাওবা করে আল্লাহর রহমতের ছায়াতলে ফিরে আসবো। দুই, জীবনে আর কখনো মিথ্যা কথা বলবো না। অর্থাৎ মিথ্যা সাক্ষ্য দিব না, মিথ্যা ওয়াদা করবো না। কাউকে কটু কথা বলবো না। কাউকে কষ্ট দিবো না। আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মুর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুইবার বলে আমি রোযাদার। আর সেই মহান সত্তার শফথ, যার মুঠিতে মুহাম্মদের প্রাণ। আল্লাহর নিকট রোযাদারের মুখের গন্ধ কস্তরীর খোশবু থেকেও উত্তম। সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমার জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ।” (বুখারী : ১৮৯৪, কিতাবুস সাওম: বাবু ফাযলে সাওম)এমনিভাবে আপনার পরিকল্পনার তালিকা ততটুকু পর্যন্ত লম্বা করুন যতটুকু আল্লাহর নাফরমানীতে আপনি যতটুকু দুরে পৌঁছেছেন। যেই নাফরমানীগুলো আপনার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। আপনার পরিকল্পনার তালিকার শীর্ষে রাখুন যে, আপনি কোন দিন প্রচ্ছন্ন বা অপ্রচ্ছন্নভাবে আল্লাহর সাথে শিরক করবেন না। শিরক একটি জুলুম। শিরকের গুনাহ আল্লাহ তা’আলা কখনো মাফ করবেন না। শিরক সমস্ত নেক আমলকে ধ্বংস করে দেয়। এ শিরক বর্তমানে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে আমাদের সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় এ শিরককে পরিত্যাগ করতে হবে। নীচের আয়াতে উদ্বৃত গোনাহসমূহ পরিত্যাগ করার পরিকল্পনাও আপনাকে গ্রহণ করতে হবে।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,“হে মুহাম্মদ! এদেরকে বলো, এসো আমি তোমাদের শুনাই তোমাদের রব তোমাদের ওপর কি বিধি-নিষেধ আরোপ করেছেন। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। দারিদ্রের ভয়ে নিজের সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমিই তোমাদেরকে জীবিকা দিচ্ছি এবং তাদেরকেও দেবো। প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল বিষয়ের ধারে কাছেও যাবে না। আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন ন্যায় সংগতভাবে ছাড়া তাকে ধ্বংস করো না। তিনি তোমাদের এ বিষয়গুলোর নির্দেশ দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা ভেবে-চিন্তে কাজ করবে। আর তোমরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এয়াতীমের সম্পদের ধারে কাছেও যেয়ো না, তবে উত্তম পদ্ধতিতে যেতো পারো। ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করো, প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর আমি ততটুকু দায়িত্বের বোঝা দেই যতটুকু তার সামর্থের মধ্যে রয়েছে। যখন কথা বলো, ন্যায্য কথা বলো, চাই তা তোমার আত্মীয়-স্বজনের ব্যাপারই হোক না কেন। আল্লাহর অংগীকার পূর্ণ করো। এ বিষয়গুলোর নির্দেশ আল্লাহ তোমাদের দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা নসীহত গ্রহণ করবে। এ ছাড়াও তাঁর নির্দেশ হচ্ছে এই, এটিই আমার সোজা পথ। তোমরা এ পথেই চলো এবং অন্য পথে চলো না। কারণ তা তোমাদের তাঁর পথ থেকে সরিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেবে। এ হেদায়াত তোমাদের রব তোমাদেরকে দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা বাঁকা পথ অবলম্বন করা থেকে বাঁচতে পারবে।”(সুরা আনয়াম:১৫১-১৫৩)
এ তিনটি আয়াতে মহান আল্লাহ বড় বড় গোনাহগুলো সংক্ষিপ্তাকারে বলে দিয়েছেন। এছাড়াও রাসুলুল্লাহ সা: এর সুন্নাহ থেকে আরো কিছু বড় গোনাহ জানা যায়। আয়াতে বর্ণিত বড় বড় গোনাহগুলোর ক্রমধারা হচ্ছে: (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) পিতা-মাতার সাথে অসদ্ব্যবহার করা (৩) দারিদ্রের ভয়ে সন্তান হত্যা করা (৪) প্রকাশে বা গোপনে অশ্লীল কাজ করা (৫) কাউকে হত্যা করা (৬) অবৈধভাবে এয়াতিমের মাল ভক্ষণ করা (৭) ওজনে কমবেশ করা (৮) আল্লাহর অংগীকার পূর্ণ না করা (৯) ন্যায্য কথা না বলে পক্ষপাতিত্ব করা (১০) রবের নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। আরো কিছু বড় অপরাধ হলো, সুদের লেনদেন করা, অহংকার করা, যাদু করা, মদ, জুয়া, ঘোষ, চুরি-ডাকাতি, অত্যাচার বা জুলুম করা, দুর্নীতি, দুরাচার, বিশ্বাসঘাতকতা, পরনিন্দা, পরচর্চা, গিবত করা. কৃপণতা, অপচয় অপব্যয় করা, ধোঁকাবাজী, ছলচাতুরী ও ষড়যন্ত্র করা, দাম্ভিকতা প্রকাশ করা, প্রতিবেশীর হক নষ্ট করা, প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া, মুসলমানদের অন্যায়ভাবে গালি গালি ও কষ্ট দেয়া, দূর্বল শ্রেনী গোষ্ঠীদের নির্যাতন করা, লোকদেখানো ইবাদাত-বন্দেগী করা, জ্যোতিষীর রাশি ফলে বিশ্বাস করা, মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য বা মনোমালিন্য সৃষ্টি করা, গালি দেয়া ও উত্যক্ত করা, সৎ-আল্লাহভীরু বান্দাদের কষ্ট দেয়া, অপমাণিত করা, জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা, সত্যের বিরোধীতা করা, আল্লাহ রহমত থেকে নিরাশ হওয়া ইত্যাদি বড় বড় গোনাহসমূহ পরিত্যাগ করার পরিকল্পনা তৈয়ার করতে হবে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আরো কয়েকটি গোনাহ যা উপরে উল্লেখিত মানুষকে কষ্ট দেয়ার মধ্যে পড়ে। তার একটি হলো, রমযান এলে অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতা। এই প্রবণতা থেকেই খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়, মাল গুদামজাত করে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করা হয়। যা রোযাদারদেরকে কষ্ট দেয়ার মতো মারাত্বক গোনাহের কাজ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রমযানের মহানত্ব ও রোযাদারদের সম্মানের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন দ্রব্যমূল্যে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। এদের মধ্যে অনেক অমুসলিম ব্যবসায়ীও রয়েছেন। আর আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এই সমস্ত কপাল পুড়া মুসলমান কিভাবে আল্লাহর রহমত পেতে পারে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে কিভাবে বরকত লাভ করবে? মহান আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন। আমীন।
লেখক: শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ঘটনাস্থলে দেরিতে যাওয়ায় পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দিলেন দোকানী

ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলের ডাক দিলেন মাওলানা মামুনুল হক

বৃষ্টিস্নাত দিনে মোহামেডানের হার, জয়ের শীর্ষস্থান মজবুদ আবাহনীর

চলন্ত বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছিনতাইকারী আটক

ফুলপুরে অবৈধভাবে মজুদকৃত ৩৯ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ১ জনকে জরিমানা

দাউদকান্দির বানিয়াপাড়ার দরবার শরীফে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে

সুনামগঞ্জে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

সয়াবিন ও শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় খরিপ মৌসুমে ১০৬৮০ জন কৃষক পাচ্ছেন ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৫ টাকার প্রণোদনার বীজ সার

চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গো গ্রীন সেন্টার পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি

‘র’ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

কিমিয়া সাদাত কমিউনিটি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী

মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ভারতকে আহ্বান বাংলাদেশের

পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ

মেয়ে সন্তানের জন্য একের অধিক ছাগল দিয়ে আকিকা করা প্রসঙ্গে।

সখিপুরে গৃহবধূ হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী গ্রেফতার