‘কবর’ অনন্ত যাত্রার প্রথম স্টেশন
২২ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৪ এএম
মজবুত দালান-কোঠা, লৌহ কপাট ও নিশ্চিদ্র অজেয় দুর্গ যা-ই গড়ে তুলুন না কেন, আপনাকে আমাকে ফিরে যেতে হবে। সুন্দর পৃথিবীর সকল মায়া-মমতা ও ভালবাসাকে ছিন্ন করে ছেড়ে যেতে হবে। এখানে অনন্তকাল অবস্থান করার কোন সুযোগ নেই। পৃথিবীর সকলকেই যেতে হয়, যেতে হয়েছে। পৃথিবীর কোন শক্তি নেই আপনাকে আটকাবার। ¯েœহময়ী ও মমতাময়ী মা চলে গেছেন, মায়ের সাথে দরদী বাবাও চলে গেছেন। এই ধারাবাহিকতায় দুনিয়াজোড়া প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী, যারা সভ্যতার বিভিন্ন অঙ্গে ঝড় তুলেছেন তারাও ছিলেন। ছিল কারুন, ফেরাউন ও নমরুদও। আমোঘ এ নিয়মের ব্যথ্যয় ঘটাতে পারিনি কেহ-ই। চলে যেতে হয়েছে সকলকেই। সুতরাং আমাদেরও যেতে হবে। চলে যাওয়া পথে আপনাকে প্রথম একটি ষ্টেশন অতিক্রম করতে হবে। অত্যন্ত কঠিন সেই ষ্টেশনের নাম ‘কবর’। অনন্ত ও মহাকালের যাত্রার প্রথমষ্টেশনটি যদি আপনি সফলতার সাথে অতিক্রম করতে পারেন, তাহলে পরবর্তি প্রতিটি ষ্টেশনই আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। এখানে সফলতার সাথে যদি ইমিগেশন, বডিং পাসসহ অন্যান্য চেকিংগুলো সহজ হয়ে যায়, তাহলে আর কোন ভয় ও চিন্তা থাকবে না।
প্রথম সেই ষ্টেশনটি নিয়ে সকল নবী-রাসুল, আসহাবে রাসুল সা: ও ইসলামের বড় বড় খেদমতকারীগণ ভীত সন্ত্রস্ত ছিলেন। তাঁদের সকলেই তা থেকে মুক্তি লাভের জন্য কান্নকাটি করেছেন। এর আরেক নাম আলমে বরযখ বা কবর জগত। যার পরিধি মৃতুর পর থেকে কিয়ামত বা পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়। মৃত্যুর পর মানুষের দেহ দাফন করা হোক বা পুড়ে ফেলা হোক, সলিল সমাধি হোক বা কোন হিং¯্র প্রাণীর পেটে চলে যাক সর্বাবস্থায় রুহ বা প্রাণ অক্ষয় থাকে। মৃত্যুর পর রুহ চলে যায় বরযখের জগতে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “দোযখের আগুন, যে আগুন সামনে তাদেরকে সকাল সন্ধায় পেশ করা হয়। কিয়ামত সংঘটিত হলে নির্দেশ দেয়া হবে, ফেরাউনের অনুসারীদের কঠিন আযাবে নিক্ষেপ করো।” (সুরা মু’মিন:৪৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,“অচিরেই আমি তাদেরকে দু’বার শাস্তি দিবো। পরে তারা প্রর্তাবর্তিত হবে মহাশাস্তির দিকে।”(সুরা তাওবা: ১০১)
বহু সংখ্যক হাদীসে কবরের আযাব নামক বরযখের আযাবের যে উল্লেখ আছে এ আয়াত তার সুষ্পষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতে সুষ্পষ্ট ভাষায় আযাবের দু’টি পর্যায়ের উল্লেখ করেছেন। একটি হচ্ছে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। উল্লেখিত আয়াতে ফিরাউনের অনুসারীদের সকাল-সন্ধায় দোযখের আগুনের সামনে পেশ করা হয় আর ঐ আগুন দেখে তারা সর্বক্ষণ আতংকিত হয়ে কাটায় এই ভেবে যে এ দোযখেই তাদেরকে শেষ পর্যন্ত যেতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে থেকে যে ব্যক্তিই মারা যায় তাকেই সকাল ও সন্ধায় তার শেষ বাসস্থান দেখানো হতে থাকে। জান্নাতী ও দোযখী উভয়ের ক্ষেত্রেই এটি হতে থাকে। তাকে বলা হয় কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তোমাকে পুনরায় জীবিত করে তাঁর সান্নিধ্যে ডেকে নেবেন, তখন তোমাকে আল্লাহ যে জায়গা দান করবেন, এটি সেই জায়গা।”(মুসনাদে আহমাদ)
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,“হ্যাঁ এমন কাফেরদের জন্য, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করতে থাকা অবস্থায় যখন ফেরেশতাদের হাতে পাকড়াও হয় তখন সংগে সংগেই আত্মসমর্পণ করে এবং বলে,“আমরা তো কোন দোষ করছিলাম না।” ফেরেশতারা জবাব দেয় কেমন করে দোষ করছিলে না! তোমাদের কার্যকলাপ আল্লাহ খুব ভালো করেই জানেন। এখন যাও, জাহান্নামের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ো, এখানেই থাকতে হবে চিরকাল। সত্য বলতে কি, অহংকারীদের এই ঠিকানা বড়ই নিকৃষ্ট।”(নাহল:২৯) “অন্যদিকে যখন মুত্তাকীদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে কি নাযিল হয়েছে, তারা জবাব দেয়, সর্বোত্তম জিনিস নাযিল হয়েছে। এ ধরণের সৎকর্মশীলদের জন্য এ দুনিয়াতেও মঙ্গল রয়েছে এবং আখিরাতের আবাস তো তাদের জন্য অবশ্যই উত্তম।” (নাহল:৩০) দুটি আয়াতে মৃত্যুর পর ফেরেশতাদের সাথে মুত্তাকী ও বদকারদের আলাপ আলোচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো কুরআন মাজিদের এমন ধরণের আয়াতের অন্যতম যেগুলো সুস্পষ্টভাবে কবরের আযাব ও সওয়াবের প্রমাণ পেশ করে। আয়িশাহ রা: থেকে বর্ণিত যে, এক ইহুদী স্ত্রীলোক আয়িশাহ রা: এর কাছে এসে কবর আযাব সম্পর্কে আলোচনা করে তাঁকে (দু’আ করে) বলল, আল্লাহ আপনাকে কবর আযাব থেকে রক্ষা করুন! পরে আয়িশাহ রা: কবর আযাব সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সা: এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন: হ্যাঁ, কবরের আযাব (সত্য)। আয়িশা রা: বলেন, এরপর থেকে নবী সা: কে এমন কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি, যাতে তিনি কবর আযাব হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেননি।”(বুখারী:১৩৭২) উরওয়া ইবনু যুবাইর রা: সুত্রে বর্ণিত। তিনি আসমা বিনতে আবু বকর রা: কে বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহর রাসুল সা: (একবার) দাঁড়িয়ে খুৎবাহ দিচ্ছিলেন তাতে তিনি কবরে মানুষ যে কঠিণ পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তার বর্ণনা দিলে মুসলমানগণ ভয়ার্ত চিৎকার করতে লাগলেন।”( বুখারী: ১৩৭৩) বারা ইবনে আযেব রা: থেকে বর্ণিত একটি বিশাল হাদীসে এসেছে, নবী সা: বলেছেন, বাকী আল গারকাদ অর্থাৎ বা’কী কবরস্থানে আমরা একটি জানাযায় এসেছিলাম। নবী সা: আমাদের কাছে এসে বসলেন। আমরা তাঁকে ঘিরে বসলাম। সবাই এত চুপ যে, মনে হয় মাথার উপর পাখি বসে আছে। কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। তিনি তিনবার করে বলে উঠলেন, আমি আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আযাবিল কবরে” অর্থাৎ হে আল্লাহ নিশ্চয় আমি তোমার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই।” (আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ) বুখারীর ১৩৭৬ নং হাদীসে আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সা: কবর, জাহান্নাম, জীবন মৃত্যুর ফিতনা ও মাসীহ্ দাজ্জাল থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। ইবনে আব্বাস রা: বর্ণনা করেন, নবী সা: এমন দু’টো কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে কবর দুটোর বাসিন্দাদের আযাব দেয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বললেন: এদের দু’জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে অথচ তাদের এমন কোন গোনাহের জন্য আযাব দেয়া হচ্ছে না যা দুরূহ ছিল। তাদের একজন পেশাবের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতো না। আর অপরজন চোগলখুরী করে বেড়াতো। অত:পর একটি তাজা ডাল নিয়ে দু’ভাগ করে দু’কবরে গ্রোথিত করলেন। অত:পর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এরূপ করলেন? তিনি বললেন: ডাল দুটো না শুকানো পর্যন্ত আশা করা যায় তাদের আযাব লঘু করা হবে।”(বুখারী: ১৩৬১ ও মুসলিম) আনাস বিন মালিক রা: বর্ণনা করেন, নবী সা: বলেছেন, যদি তোমরা দাফন-কাফন ছেড়ে না দিতে, তাহলে আল্লাহর কাছে চাইতাম, তিনি যেন তোমাদেরকে সরাসরি কবর আযাব শোনার ব্যবস্থা করে দেন। যা আমাকে শুনানো হয়েছে।(মুসলিম, নাসাঈ, আহমাদ) আনাস রা: থেকে বর্ণিত যে, নবী সা: বলেছেন: বান্দাকে যখন কবরে রাখা হয় এবং তাকে পিছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায়, (এতটুকু দুরে যে,) তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়, এমন সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন। অত:পর তাঁরা প্রশ্ন করেন, এই যে, মুহাম্মদ সা:! তাঁর সম্পর্কে তুমি কি বলতে? তখন বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল। তখন তাকে বলা বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলা তোমার জন্য জান্নতে একটি স্থান নির্ধারিত করেছেন।
লেখক: শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ