উপার্জনের পন্থা : জীবন ও জীবিকার জন্য
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
সাধারণভাবে উর্পাজনের অনেক প্রকার থাকতে পারে। তবে মৌলিক দিক থেকে মানুষের উর্পাজনকে দু ভাগে ভাগ করা যায়। ক. বৈধ পন্থায় উপার্জন খ. অবৈধ পন্থায় উপার্জন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপনা করা হলো।
বৈধ পন্থায় উপার্জনের জন্য আমরা সর্বদা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করি। কীভাবে আমরা আমাদের রিজিক বৈধ পন্থায় উপার্জন করতে পারি? কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অন্যতম শর্ত হলো বান্দার উপার্জন হালাল পন্থায় হওয়া। কেননা রিজিক যদি হালাল পন্থায় উপার্জিত না হয়, তাহলে তার কোনো দোয়া-ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দরবারে কবুল হয় না। আর আল্লাহ ও হালাল রিজিক দিয়ে জীবণধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ঘোষণা করেন, আমি তোমাদের জন্য যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু তোমরা ভক্ষণ কর।[২:৫৭]
আর বৈধ পেশায় নিয়োজিত থেকে সম্পদ উপার্জনের জন্য পবিত্রতম ও হালাল বস্তুর খোজঁ করার নির্দেশও আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- হে মুমিনগণ ! জুমার দিন যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ত্রুয়-বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর। সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও। যখন তারা দেখলো ব্যবসা ও কৌতুক, তখন তারা তোমাকে দাড়াঁন অবস্থায় রেখে তার দিকে ছুটে গেলো। বল! আল্লাহর নিকট যা আছে তা ত্রুীড়া-কৌতুক ও ব্যবসা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা। [৬২:৯-১১]
এ প্রসঙ্গে হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, খাওলাহ বিনতে কায়েস ইবনে কাহাদ রা. হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পৃথিবী মিষ্ট ও শ্যামল। এখানে যে ব্যক্তি হালাল সম্পদ উপার্জন করবে এবং ন্যয়সঙ্গত পথে তা ব্যয় করবে, আল্লাহ তাকে উওম প্রতিদান দেবেন এবং তাকে জান্নাত দান করবেন। আর যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করবে এবং অন্যায় পথে ব্যয় করবে, আল্লাহ তাকে অপমানজনক স্থানে নির্বাসিত করবেন। আর হারাম সম্পদ হস্তগতকারী ব্যক্তিরা কেয়ামতের দিন আগুনে জ্বলবে। [সহি ইবনে হিব্বান:৪৫১২]
হালাল রিজিকের ব্যাপারে এমন আরো অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে এবং হালাল পন্থায় উপার্জনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিম্নে বৈধ পন্থায় উপার্জনের কতিপয় উদাহারণ উপাস্থাপন করা হলো।
১.ব্যবসায়
উপার্জনের জন্য ব্যবসা একটি পন্থা। আল-কুরআনও এ ব্যবসার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং তোমাদের জন্য সুদকে হারাম করা হয়েছে আর ব্যবসাকে করা হয়েছে হালাল।’[২:২৭৫]
মানব সভ্যতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য পৃথিবীর শুরু থেকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মানব সভ্যতার উন্নয়ন ও বিকাশে ব্যবসা-বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ঐতিহাসিকগণের মতে,ব্যবসা- বাণিজ্য প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে কোনো না কোনোভাবে চলে আসছে। কেননা সীমিত সম্পদ দ্বারা মানুষ কখনোই তার বিভিন্নমুখী চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয় নি। ফলে তখন হতে প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সম্পদের বিভিন্ন প্রকারের উপযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলে আসছে। মানুষের এ প্রচেষ্টা থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎপওি। অন্যকথায়, মানুষের জীবনে অভাব অপরিসীম । অপরিসীম অভাব পূরণের জন্য মানুষ নানারকম অর্থনৈতিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। অভাববোধ ও অভাব পূরণের জন্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎপওি।
ইসলামে আয়-উপার্জনের যতোগুলো মাধ্যম আছে. তার মধ্যে নিজের শারীরিক শ্রমলব্ধ আয় এবং ব্যবসায়ের সম্পদ উপার্জনের মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করে তা আহরণ করতে হয়্ আল্লাহ তায়ালা বনি ইসরাইলদের জন্য যেমন মান্না-সালওয়া নাজিল করতেন তেমনটি এ যুগে আর হওয়ার সম্ভবনা নেই। মুসলিম উম্মাহকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যম সম্পদ উপার্জনের শিক্ষা রাসুলুল্লাহ সা. দিয়েছেন।
মাধ্যম অর্জিত আয়কে সর্বোত্তম বলা হয়েছে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে ব্যবসা দুনিয়াবি কাজ হলেও যখন একজন মুসলিম মিথ্যা এবং প্রতারণার আশ্রয় না নিয়ে সততার সাথে জনকল্যাণ ও জনসেবার নিয়তে ব্যবসা করে তখন তা ইবাদতে পরিণত হয়। কোনো জাতির অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির নির্ভর করে সে জাতির ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি ও অগ্রগতির উপর। যে জাতি বা রাষ্ট ব্যবসা বাণিজ্যে অমনোযোগী হয় তারা পরোমুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। এ ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ ধরেই উন্নত রাষ্টগুলো দ্বারা তাদের সভ্যতা সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি এমনকি ধর্মীয় কার্যকলাপ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হয়।
যে জাতির মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য নেই সে জাতি অবশ্যই আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে। যে দেশে ব্যবসা বাণিজ্য বরকত থেকে বঞ্চিত বর্তমানে না হলেও ভবিষ্যতে সে জালিম সরকারগুলোর শোষণ ও লুটতরাজের শিকার হয়ে বরবাদ হয়ে যাবে। এজন্যই ইসলাম ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের নির্দেশ দিয়েছে। তার ফজিলত ও বরকতের কথা শুনিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ব্যবসাকে দু’টি ভাগে করা যায়- এক, হালাল জিনিসের ব্যবসা দুই, হারাম জিনিসের ব্যবসা। যে ব্যবসার মধ্যে শঠতা, প্রতারণা, কপটতা, অবিশ্বসতা, ধোঁকা ও সুদী কারবার প্রভৃতি অসচ্চরিত্রের কোনো স্থান নেই, ইসলামে সেগুলো হালাল। এ প্রসঙ্গে হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছ্ েহজরত আবু সাঈদ আল-খুদরি রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সা. বলেছেন- সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কেয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিকিন ও শহিদের সাথে থাকবে। [সুনানে তিরমিজি:১২০৯]
আর অপরটি হলো হারাম তথা অবৈধ পন্থায় উপার্জন। মানবজীবনে এ অবৈধ পন্থায় উপার্জনকে কুরআন ও হাদিসে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন- হে মুমিনগণ ! তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যম হলে ভিন্ন কথ্ াআর তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু। [ ৪:২৯]
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- যে ব্যক্তি ১০ দিরহাম দিয়ে কোনো কাপড় কিনলো এবং তার মধ্যে এক দিরহাম অসৎ উপায়ে অর্জিত, সে যতোদিন ঐ কাপড় পরিহিত থাকবে ততোদিন তার নামাজ কবুল হবে না।’
২. কৃষি কাজ
পুণ্য লাভের জন্য যেমন সৎ কাজ ও সাধনা জরুরি, তেমনি সম্পদ লাভের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ জরুরি। এ জন্য নিজের ভাগ্যকে নিজে গড়ার লক্ষ্যে মানুষকে কষ্ট করে রিজিকের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা ঠিক যে, আল্লাহ তায়ালা যে কোনোভাবে হোক বান্দার রিজিকের ব্যবস্থা করেন। তবে তার জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই কষ্ট করতে হবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন- মানুষের জন্য রয়েছে, সামনে ও পেছনে, একের পর এক আগমনকারী প্রহরী, যারা আল্লাহর নির্দেশে তাকে হেফাজত করে। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো কওমের অবস্থা ততোক্ষণ পরির্বতন করেন না। যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আর যখন আল্লাহ কোনো জাতির মন্দ চান, তখন তা প্রতিহত করা যায় না এবং তাদের জন্য তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক নেই। [৫৩:৩৯-৪১]
আর এজন্যই উপার্জনের অন্য আরেকটি অন্যতম মাধ্যম হলো কৃষি কাজ। আদম আ. এ কৃষি কাজ করেছেন। এটি একটি উন্নত পেশা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে আমাদের রব! নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে নিয়ে ফসলহীন উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করলাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিজিক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে। [১৪:৩৭] এ প্রসঙ্গে অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-তিনিই সে সত্তা, যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, যাতে রয়েছে তোমাদের জন্য পানীয় এবং তা থেকে হয় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা জন্তু চরাও। তার মাধ্যমে তিনি তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেন ফসল, যাইতুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সকল ফল-ফলাদি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন জাতির জন্য, যারা চিন্তা করে। আর তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা-কুমিল্লা জিলা মাদরাসা, ইসলামী চিন্তাবিদ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা