ইসলামী আইনে অমুসলিমদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার অধিকার
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
একজন মানুষ নিজেকে অপরের কাছ থেকে আত্মীয়কে অনাত্মীয় থেকে আলাদাভাবে দেখবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে বুদ্ধির চর্চা এবং নৈতিকতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানব সমাজে বিদেশীকে আত্মীয়করণের সহজতর করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। একটি সমাজ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে। যদি আত্মীয়তার বন্ধনে বা রক্তের সম্পর্কই হয় সমাজ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি, তাহলে সেখানে বিদেশীকে দেশীয়করণের প্রশ্নটি অবান্তর। কশ্মিনকালেও এটা সম্ভব নয়। আবার গায়ের রং বা বর্ণই যদি হয় সমাজ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি, তাহলে সে ক্ষেত্রেও দেশীয়করণ সম্ভব নয়। আর গায়ের রং বা বর্ণ এমন একটা জিনিস যা কখনো গোপন করা যায় না। ক্ষেত্র বিশেষে ভাষা ও সমাজের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রেও কাউকে প্রকৃত অর্থে দেশীয়করণের জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। জন্মস্থানের উপর ভিত্তি করে সমাজ গড়ে তোলার প্রশ্নটি আরো ঠুনকো। কারণ মানুষ এখন আর কোন শহর বা রাষ্ট্রের সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। ফলে সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার উপকরণ হিসাবে জন্মস্থানের উপর তেমন কোন গুরুত্ব আরোপ করা যায় না।
বস্তুতপক্ষে উপরে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি কহরে কোন সমাজ গড়ে উঠলে সেটাকে আকস্মিক ঘটনা বলতে হবে। এ সমস্ত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে পশু প্রবৃত্তির সম্পর্কই বেশি। মানুষের বিবেক-বুদ্ধির কাছে এগুলোর গুরুত্ব খুবই সামান্য। এটা সর্বজন বিদিত যে, জাতীয়তা গড়ে তোলার ভিত্তি হিসাবে এইসব ধারণা ইসলাম সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দিয়েছে। আর ভাব বা বিশ্বাস হল এমন একটা জিনিস যা মানুষের পছন্দের উপর নির্ভর করে। রঙ, বর্ণ, জন্মস্থান বা রক্তের বন্ধনের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। ভাব বা বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে যে সমাজ গড়ে ওঠে, সে সমাজে আত্মীয়করণ বা দেশীয়করণে বিষয়টি খুবই সহজ। গোটা মানবজাতির জন্য এর দুয়ার থাকে সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত। তাছাড়া এ পন্থাটি যেমন বাস্তব সম্মত তেমনি যুক্তিসঙ্গত। ভাব বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে উঠা সমাজে একজন মানুষের জীবন অনায়াসেই শান্তি ও প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। যদি একজন মুসলমানকে অথবা একজন পুঁজিবাদীকে কোন সমাজতান্ত্রিক দেশে বহিরাগত হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যদি শ্বেতাঙ্গদের দেশে একজন কৃষ্ণাঙ্গকে পৃথক করে দেখা যায় কিংবা ইতালীতে একজন অ-ইতালীয় চিহ্নত হয় বিদেশী হিসাবে তাহলে একটি মুসলিম দেশে একজন অ-মুসলিমকে বহিরাগত হিসাবে চিহ্নিত করা হলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকে না। আদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে তারতম্য যাই থাক না কেন- এটা সত্য যে একজন ব্যক্তি স্বজাতি ও বিজাতির মধ্যে পার্থক্য করবেই। অন্যান্য রাজনৈতিক বা সামাজিক ব্যবস্থার ন্যায় ইসলামও আত্মীয়-অনাত্মীয় অথবা স্বদেশী ও বিদেশীদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে থাকে। তবে এ পার্থক্য নিরূপণের ক্ষেত্রে ইসলামের স্বতন্ত্র দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
(ক) ইসলামী আদর্শকে গ্রহণ করে যে কেউ বাধার প্রাচীর অতিক্রমের সুযোগ নিতে পারে। (খ) দুটি শ্রেণীর মধ্যে পার্থিব বিষয়ে তারতম্য থাকলেও সেটা হবে খুবই সামান্য। এখানে আমরা শেষোক্ত বিষয়ে আলোকপাত করবার চেষ্টা করবো।
মুসলমানরা এ বিশ্বাস নিয়ে ইসলামী আইন-কানুন মেনে চলে যে এর ভিত্তিমূলে রয়েছে ঐশী প্রত্যাদেশ। এখানে তারা কেবলমাত্র দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতার ইচ্ছাতেই পরিচালিত হয় না। বস্তুতপক্ষে এ ধরনের বিশ্বাসের ব্যবহারিক তাৎপর্য অপরিসীম। সংখ্যাগুরুর সম্মতির ভিত্তিতে কোন কোন আইন প্রণীত হলেও সংখ্যালঘুরা সবসময় তাদের মতকে বাস্তবায়ন করার জন্য সংগ্রাম করে। আর আধুনিক গণতান্ত্রিক নিয়মে নির্বাচনের ধারাই এমন যে, একবার যারা সংখ্যালঘু হিসাবে বিবেচিত হয়েছে, পরের বারে তারাই হয়ত সংখ্যাগুরু হবে। প্রথমবারে তাদের যে মতটা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, এবার হয়ত তাদের মতটাই প্রতিষ্ঠা পাবে। তাছাড়াও এটাও লক্ষ্য করা যায় যে, যারা ক্ষমতায় আসে তারা পূর্ববর্তীগণের সমস্ত রীতি-নীতি বাতিল করে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এমন কি তারা প্রচলিত আইন কানুনকে পাল্টে ফেলে। কিন্তু ইসলামী আইনের ব্যাপারটা আলাদা। এখানে যে কেউ নির্দ্বিধায় এ কথা স্বীকার করবে যে, অন্যান্য আইনের তুলনায় ইসলামী আইন অধিকতর স্থিতিশীল। সমাজের ক্রমবিকাশ বা পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে এ নিয়ম-নীতিগুলো কতটুকু উপযোগী, এ নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তোলে না। বস্তুতপক্ষে ইসলামী আইন-কানুন আল্লাহর তরফ থেকে নির্ধারিত বিধায় এমনটি হয়ে থাকে। এখানেই রয়েছে দুনিয়ার অন্য যে কোন আইনের তুলনায় ইসলামী আইনের শ্রেষ্ঠত্ব। ইসলামী আইনে এমন কতকগুলো ধারা রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে অমুসলিমদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়। রাজনৈতিক কোন্দল যত ব্যাপক বা সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, ইসলামী আইনের কোন পরিবর্তন ঘটে না অথবা কোন শাসক বা সংসদ ইসলামী আইনের পরিবর্তন বা ভয়-ভীতির মধ্যে থাকতে হয় না। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী কখনো সম-মর্যাদার হতে পারে না। যারা বিশ্বাসী বা মুমিন তারা যাবেন জান্নাতে। আর অবিশ্বাসীরা যাবে জাহান্নামে। এ সবই আখিরাতের বিষয়।
মুসলিম আইনবেত্তাগণের মধ্যে কেউ কেউ পার্থিব জীবনে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী- এ দুয়ের মধ্যে অধিকতর সমতা সংরক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তাঁদের মধ্যে আদ দাউসীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁদের এ সমতা নীতির তুলনা চলে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যকার সম্পর্কের সঙ্গে। নিম্নের আলোচনা হতে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ধর্মীয় সহনশীলতার বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন মজীদ স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে যে, ধর্মের ব্যাপারে কোন জোর জবরদস্তি নেই। মুসলমান শাসনাধীন অঞ্চলে যে সমস্ত অমুসলিম স্থায়ীভাবে বসবাস করে অথবা সামায়িকভাবে অবস্থান করে তাদের সকলের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাছাড়া তাদের সকলেরই বিবেক সম্মত মত প্রকাশ করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।
কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, মুশরিকদের মধ্যে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তুমি তাকে আশ্রয় দেবে যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে অত:পর তাকে নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে কারণ তারা অজ্ঞ লোক (৯ ঃ ৬)। বস্তুতপক্ষে ধর্মীয়, জাতিগত, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য কারণে নির্যাতিতদের সব সময়ে ইসলামী হুকুমতে নিরাপদ আশ্রয় পেতে দেখা যায়। হিজরত করে নবী করীম (সা:) যখন মদীনায় আসেন তখন সেখানে বিরাজ করছিল চরম বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা। বিভিন্ন জাতি ও উপজাতির মধ্যকার আত্মকলহ ছিল তুঙ্গে। রাষ্ট্র বা রাজা সম্পর্কে তাদের কোন প্রত্যক্ষ ধারণা ছিল না। আত্মকলহে ছিল তুঙ্গে। রাষ্ট্র বা রাজা সম্পর্কে তাদের কোন প্রত্যক্ষ ধারণা ছিল না। আত্মকলহে লিপ্ত জাতিগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য কেউ কখনো উদ্যোগ নেয়নি। প্রিয়নবী (সা:) সেই মদীনায় আসার সপ্তাহ কয়েকের মধ্যে সেখানকার জনগণকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে সমর্থ হন। তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন একটি নগর রাষ্ট্র। মুসলমান, ইয়াহুদী, পৌত্তলিক একটি সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে এই নগর রাষ্ট্রের আওতার মধ্যে চলে আসে। খুবসম্ভব কিছুসংখ্যক খৃষ্টানও ছিল এই চুক্তির আওতাভূক্ত।
শুরুতে এই মুসলিম রাষ্ট্রটি ছিল সংঘ বা জাতিপুঞ্জ ধরনের। কারণ বহু জাতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল এ রাষ্ট্র। নগর রাষ্ট্রের লিখিত সংবিধানটি এখনো অপরিবর্তিতভাবে সংরক্ষিত আছে। সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারায় লেখা আছে ‘‘মুসলমানদের জন্য তাদের দীন ইয়াহুদীদের জন্য তাদের ধর্ম।’’ এই সংবিধানটিতে এও বলা হয় যে, সেখানে প্রতিষ্ঠা পাবে সমতা ও ন্যায়বিচার। ইব্ন হিশাম এবং আবু উবায়দার বর্ণনা মতে উক্ত সংবিধানে ইহাহুদীদের চিহ্নিত করা হয়েছে মুসলমানদের একটি অংশ হিসাবে। নগর রাষ্ট্র মদীনার আশেপাশে কতকগুলো স্বাধীন ইহাহুদী বসতি ছিল। তারাও স্বেচ্ছায় নগর রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেয় এবং নবীজীকে গ্রহণ করে সরকার প্রধান হিসাবে। এ ঘটনা থেকে এটা অনুমান করা যায় যে মুসলিম রাষ্ট্রের সরকার প্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে অমুসলমানদেরও ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল। অন্তত দেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য ছিল।
সংবিধান অনুসারে দেশের প্রতিরক্ষার বিষয়টি নগর রাষ্ট্রের সকল জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব। ইহাহুদীরাও ছিল এর অন্তর্ভূক্ত। এটা মূলত কর্মসূচী প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণের ইঙ্গিত বহন করে। সংবিধানের আরো উল্লেখ আছে যে, চুক্তিভুক্ত গোষ্ঠী বহিরাগত দ্বারা আক্রান্ত হলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করা হবে এবং ইয়াহুদী ও মুসলমানেরা যার যার ব্যয়ভার সে বহন করবে। চুক্তিভূক্ত সকল দল যুদ্ধ এবং শান্তি- সব সময় পরস্পরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিরাজ করবে।
নগর রাষ্ট্র মদীনার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশ কিছু সংখ্যক বিধর্মী পৌত্তলিক বসবাস করত। বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, নবী করমী (সা:) এ সমস্ত রাষ্ট্র মদীনা প্রতিষ্ঠার দশ বছর পর। অথচ এ সময় তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে কোন ফাটল ধরেনি অথবা সন্ধিপত্র বাতিল হয়নি। পরবর্তী ঘটনাগুলো থেকে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে।
দ্বিতীয় হিজরীতে মক্কার কাফির-মুশরিকরা আবিসিনিয়ায় একটি কূটনৈতিক মিশন প্রেরণ করে। মক্কার যে সমস্ত মুসলিম আবিসিনিয়ায় সম্রাট নাজ্জাশীর দরবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের বহিষ্কারের জন্য দাবি উত্থাপন করাই ছিল মিশনের উদ্দেশ্য। প্রকৃতপক্ষে এ সমস্ত মুসলিম স্বগোত্রীয়দের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সুদূর আবিসিনিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। কাফির-মুশরিকদের দুরভিসন্ধির মুকাবিলা করা এবং দেশত্যাগী মুসলমানদের পক্ষে নাজ্জাশীর সমর্থন লাভের আশায় নবী করীম (সা:) ও একজন প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। তার নাম আমর ইব্ন উমাইয়া আদ-মাদ্রী। অথচ তিনি তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি ছিলেন উপরিউক্ত সংবিধানের স্বাক্ষরকারী এবং পার্শ্ববর্তী একটি মিত্র গোত্রের লোক।
এমন এক সময় এসেছিলো যখন সীমান্তের ব্যাপক অংশ জুড়ে অবিরাম যুদ্ধ চলছিল। অথচ সে সময়ে সামরিক বিভাগে চাকরি করে কেউ জীবিকা অর্জন করার কথা চিন্তাও করত না। কারণ সে সময়ে যুদ্ধে ঝুঁকির পরিমাণ ছিল বেশি। যারা সৈনিক হিসাবে যুদ্ধ করত তাদের আর্থিক অবস্থাও অস্বচ্ছল। আরবের অসংখ্য অমুসলিম হিসাবে যুদ্ধ করত তাদের আর্থিক অবস্থাও ছিল অস্বচ্ছল। আরবের অসংখ্য অমুসলিম তখন মুসলিম শাসনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল। তাদের শাসনকে মেনে নিয়েছিল অকপটে। তাছাড়া অন্য কারো সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মুসলমানদের উৎখাত করার কোন চিন্তাও তাদের ছিল না। তবু এ সমস্ত অমুসলিমদের সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে তাদেরকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হত। অমুসলিমরা এতে বরং খুশি হত। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুসলমানদের ছুটে যেতে হত যুদ্ধের ময়দানে। এই অবসরে অমুসলিমরা নিজেদের কাজকর্ম ও ব্যবসা বাণিজ্য চালাতে পারত পুরো মাত্রায়। ফলে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হতো। বিনিময়ে তারা জিযিয়া নামে অতিরিক্ত একটি ট্যাক্স দিত। অবশ্য মহিলা শিশু এবং দরিদ্রদের জিযিরা প্রদান করতে হত না।
জিযিয়ার পরিমাণও ছিল যৎসামান্য। নবী করীম (সা:)-এর আমলে একজন অমুসলিমের বাৎসরিক জিযিয়ার পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ দিরহাম। এটা ছিল মোটামুটিভাবে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের দশ দিনের খরচের সমান। তাছাড়া একজন অমুসলিম যদি বছরের কোন সময়ে কোন যুদ্ধে অংশ নিত তাহলে সেও ঐ বছরের জিযিয়া প্রদান করা থেকে অব্যাহতি পেত। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মদীনা অথবা অন্য কোথাও জিযিয়া প্রদানের প্রচলন ছিল না। নবম হিজরীতে জিযিয়া সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হয়। বলা রাখা আবশ্যক যে, জিযিয়া ইসলামের অবশ্য পালনীয় কোন বিধান নয় বরং বিশেষ ব্যবস্থা ও পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জিযিয়ার বিধান কার্যকর করা হয়। নিম্নের দুটি ঘটনা থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
ক. নবী করীম (সা:) এর এক ছেলের নাম ইবরাহীম (রা:)। তাঁর মা ছিলেন একজন মিশরীয় কিবতী মহিলা। ইবরাহীম (রা:) তখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত। সে সময়ে নবী করিম (সা:) বলেছিলেন যে, যদি ইবরাহীম আরোগ্য লাভ করে তাহলে ইবরাহীমের মায়ের সম্মানে কিবতীদের জিযিয়া থেকে অব্যাহতি দেবেন।
খ. ফুসতাত (কায়রো) থেকে লোহিত সাগর পর্যন্ত একটি খাল ছিল। হযরত উমর (রা:)-এর শাসনামলে একজন অমুসলিম মিশরবাসী চমৎকার একটি পরিকল্পনা নেয়। সে প্রস্তাব দেয় যে, এ খালটি পুন:খনন করা হলে নৌপরিবহনের উন্নতি ঘটবে এবং মিশর থেকে মদীনায় খাদ্য-খাবার পাঠান অনেকখানি সহজতর হবে। সেই খালটির নামই নহরে আমিরুল মু’মিনীন। খলীফা তাঁর পরামর্শে খুশি হয়ে তাকে গোটা জীবনের জন্য জিযিয়া প্রদান করা থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। (চলবে)
লেখক: শিক্ষাবিদ ও কলামিষ্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প