শোক পালন বা শোক দিবস : প্রেক্ষিত ইসলামের নির্দেশনা-১
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
প্রতিপাদ্যসার : জন্ম যেখানে আছে মৃত্যুও তার পাশাপাশি অনিবার্য, হোক তা দু’দিন আগে বা পরে। বেঁচে থাকার বিষয়টি একটি সংশয়পূর্ণ ব্যাপার হলেও, মৃত্যু বিষয়টি কিš‘ নিশ্চিত। এ মৃত্যুর পরে আমাদের মৃতদের বেলায় আমাদের পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় বিবেচনাতেও প্রতি নিয়ত যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির মুখোমুখী আমরা সকলেই হয়ে থাকি; তা হ”েছ কেউ মারা গেলে তাকে সসম্মানে কাফন-দাফন ও কবর¯’ করার পাশাপাশি তাঁর জন্য বা তাঁর পরিবার-পরিজনদের জন্য আগে-পরে শোক-সহমর্মিতা প্রকাশ বা শোক পালন বা তাদেরকে শান্তনাদানের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমরা ই”ছায় বা অনি”ছায় হোক বা কৃত্রিমভাবে হোক; অথবা ধর্মীয় করণীয় (?) বা রাষ্ট্রীয় বাধ্য-বাধকতা বিবেচনায় আমরা পালন করে থাকি। তবে সত্যিকার ধর্ম পালনকারী একজন মুসলমান হিসাবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি মুসলিম দেশের জনগণ হিসাবে বিষয়টির ব্যাপারে, আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ইসলামের সঠিক নির্দেশনা কি? ও কতটুকু? এবং তার নিয়ম-কানূন কি? এ বিষয়গুলোকে যথাসাধ্য স্পষ্টকরণ এ গবেষণা প্রবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য।
আরবী শব্দ (আয্যা-ইউ‘আয্যী, তা‘যিয়াতান, বাবে- তাফ‘ঈল) অর্থ শোক প্রকাশ করলো, (‘আয্যার রাজুলু’) মানে লোকটিকে প্রবোধ দিল বা শান্তনা দিল।
ভূমিকা : রাষ্ট্র বা জনগণের সরকার পরিচালনা’র মহান ও গুরু দায়িত্ব যারা কাঁধে নিবেন তাঁরা দেশের আপামর জনগণের স্বার্থে ও সুবিধার্থে অবশ্যই বিবেচনায় নিবেন এবং অবশ্যই তাঁদের এমন প্রতিজ্ঞা থাকা চাই যে, ‘আমরা সর্বাগ্রে দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বা¯’ানের মত অত্যাবশ্যকীয় জরুরী কাজগুলোকে অগ্রাধিকার প্রদানের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবো। তার বাইরে সাজ-সজ্জা, সুন্দর, সুখময় জীবন, আনন্দ-বিনোদন, খেলাধুলা-ব্যয়াম তথা অতিরিক্ত যে কাজগুলো সেগুলো দ্বিতীয় পর্যায়ে সামর্থ্য ও সঙ্গতি থাকা সাপেক্ষে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বোধ-বিশ^াস সমুন্নত রেখে বিধি মোতাবেক নূন্যতম যতটুকু সম্ভব বাস্তবায়ন করবো। অন্যথায় আমাদের বাস্তব অব¯’া দাঁড়াবে, একদিকে পেটে খাবার নেই অথচ অন্যদিকে ঋণ করে ঘি খাওয়া হচ্ছে; এবং একদিকে ফরয পরিমাণ সতর ঢাকা হ”েছ না, অপরদিকে শোভা বর্ধনের তরে মাথায় পাগড়ী পরিধান করা হচ্ছে।
উক্ত যৌক্তিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে, আমরা যুগ যুগ ধরে প্রচলিত কারো শোক পালনের রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় আয়োজন ও বাধ্য-বাধকতা এবং তার পিছনে বছরে বছরে সরকারী ও বেসরকারীভাবে পালন করতে গিয়ে রাষ্ট্রের জনগণের টেক্স-করের টাকা বা ঋণের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের পাশাপাশি অপরাপর জরুরী কর্মঘণ্টা বিনষ্ট, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-মাদরাসাগুলো বন্ধ রাখা কতটুকু বৈধ বা অবৈধ? বিশেষ করে সেক্ষেত্রে যেক্ষেত্রে আমার দেশের লাখো-কোটি জনতা দু’বেলা পেটপুরে খাবার পা”েছ না, লাখো অসহায় নারী-পুরুষ ফুটপাতে বা জীর্ণশীর্ণ পরিবেশে বস্তিতে বসবাস করছে; হাজারো-লাখো জনতা সারা দেশে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করে দু’মুঠো খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে; লক্ষ-কোটি জনতা নূন্যতমভাবে জীবন ধারণের প্রয়োজনে একটা চাকুরি বা কর্মসংস্থান পাচ্ছে না; হাজারো-লাখো জনতা প্রতি বছর জীবন ধারণের প্রয়োজনে এবং হালাল রুজি অন্বেষণ করতে গিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে এবং পথিমধ্যে পাহাড়ে-জঙ্গলে ও সমুদ্রে উপবাস ও নিরুপায় হয়ে ডুবে মারা য”েছ; এ সবের বাইরেও মরার উপর খাড়ার ঘা’ স্বরূপ প্রতি বছরই লক্ষ-কোটি জনতা বর্ষা-বন্যায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেÑ তা একজন মুসলমান হিসাবে কুরআন-সুন্নাহ্র নির্দেশনা মোতাবেক নি¤েœর উপস্থাপনার সঙ্গে আমরা মিলিয়ে নিতে পারি; এবং ভবিষ্যতের জন্য এ ব্যাপারে জাতীয়ভাবে আমরা একটি ¯’ায়ী সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি। বিশেষ করে আপামর ছাত্র-জনতার প্রাণের দাবী ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ এর আন্দোলনে হাজারো শহীদানের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন চিন্তা ও নতুন বাস্তবতায় ঘটিত বর্তমান অন্তরবর্তি সরকারের সংস্কারকর্মে প্রবন্ধটি একদিকে যেমন প্রাসঙ্গিক, অপরদিকে নতুন সংস্কার চিন্তায় সহায়কও বটে।
প্রসঙ্গ : প্রথমে আমরা বিষয়টির ব্যাপারে কুরআন, হাদীছ, ইজমা ও কিয়াস এবং এ সবের সূত্রে ও মাধ্যমে প্রণীত গবেষণালব্ধ শরীয়া আইনের প্রাচীন ও আধুনিক গ্রš’াদিতে কোথায় কি ও কতটুকু স্পষ্ট্যভাষ্য পাওয়া যায়Ñ সেগুলোকে একত্র করি। তার পর প্রবন্ধটির উপসংহার বা সার-সংক্ষেপ হিসাবে জরুরী বিষয়গুলো পাঠকদের সমীপে তুলে ধরবো, ইন্শাআল্লাহ্।
মৃতের বাড়ীতে খানা প্রেরণ :
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবন জা‘ফর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত জা‘ফর রা. এর লাশ যখন আনা হল, তখন রাসূলুল্লাহ্ স. বললেন: তোমরা জা‘ফরের পরিবারের জন্য খানা তৈরি কর। কেননা তাদের এমন বিপদ পেয়ে বসেছে, যা তাদের ব্যস্ত রেখেছে; অথবা এমন অব¯’া হয়েছে, যা তাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে”। (২).আসমা বিনতি উমায়স রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন জা‘ফরকে শহীদ করা হয়, তখন রাসুলুল্লাহ্ স. নিজের পরিবারের কাছে আসেন এবং বলেন, জা‘ফরের পরিবারকে তাদের মৃত ব্যক্তি নিয়ে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। কাজেই, তোমরা তাদের জন্য খানা তৈরি কর”।
অনু”েছদ : স্বামী ব্যতীত অন্যের জন্য স্ত্রীলোকের শোক প্রকাশ :
“মুহাম্মদ ইবন সীরীন র. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উম্মে আতিয়্যা রা. এক পুত্রের ইন্তেকাল হল। তৃতীয় দিনে তিনি হলুদ বর্ণেও সুগন্ধি আনিয়ে ব্যবহার করলেন, আর বললেন, স্বামী ব্যতীত অন্য কারো জন্য তিন দিনের বেশী শোক করতে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে”।
‘তা‘যিয়াত’ বা শোক সন্ত্রস্ত পরিবারের শান্তনাদান প্রসঙ্গ’ : ‘বিপদগ্রস্ত লোককে শান্তনা দেওয়ার সওয়াব’ শিরোনামে তিরমিযী শরীফের এ দু’টি অনু”েছদেও অনুরূপ আরো তিনটি হাদীছ বিদ্যমান।
শোক প্রকাশের নতুন কয়েকটি পদ্ধতি
“পশ্চিমা সভ্যতার অনুকরণ এবং তার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ফলস্বরূপ মুসলমানদের মধ্যেও শোক পালনের কিছু এমন পদ্ধতি প্রচলিত হয়ে গেছে- যা ইসলাম বহির্ভূত। উদাহরণত কিছুক্ষণ চুপ থাকা, পতাকা অবনমিত করা, কালো পট্টি বাঁধা, শোক ধ্বনি বাজানোÑ শোক প্রকাশের এ সবগুলো পদ্ধতিই জায়েয নয়। তবে স্বভাবজাত বা সৃষ্টিগত ও অকৃত্রিমভাবে যে কান্না-অশ্রু বেরিয়ে আসেÑ শুধু তারই অনুমতি রয়েছে”।
ইসলাম-পূর্ব যুগেও শোক প্রকাশের কিছু পদ্ধতি প্রচলিত ছিল; যেমন সশব্দে কান্না করা, চিৎকার করে কান্না করা, কাপড় ছিঁড়ে ফেলা, দীর্ঘ সময় ধরে প্রথাগত শোক পালন করা। প্রিয়নবী স. এসব নিষেধ করে দিলেন।
মহানবী স. বললেন, যে শোক প্রকাশ করার জন্য চুল কামিয়ে নেয়, চিৎকার দিয়ে কান্না করে এবং জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলেÑ তার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই” (অর্থাৎ সে আমার উম্মত নয়)।
আরো বর্ণিত রয়েছে, “যে ব্যক্তি গালে থাপ্পড় দেয়, জামার গলা বা কলার ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়্যা যুগের ন্যায় চিৎকার বা সুর দিয়ে কান্না করে- সে মুসলমানদের মধ্যে গণ্য নয়”।
“মহানবী স. একজন নারীর পক্ষে তার স্বামী ব্যতীত, অন্য কারো জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালনের অনুমতি দেননি। কেবল স্ত্রীর পক্ষে চার মাস দশ দিন তার স্বামীর জন্য শোক পালনের অনুমতি প্রদান করেছেন”।
ফকীহগণ এ উদ্দেশ্যে কালো কাপড়/জামা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। যেমনÑ
“মৃতের জন্য শোক প্রকাশ করার লক্ষ্যে কাপড়কে কালো রং দ্বারা রঙ্গিন করা জায়েয নয়..; এটিও জায়েয নয় যে, মৃতব্যক্তির ঘরের জামা-কাপড় কালো রং দ্বারা রং করা”।
উপসংহার : এ থেকে বোঝা গেল, এমন প্রকৃতির প্রথাগত শোক পালন বা শোক দিবস পালন ইসলামের শরীয়া আইনসম্মত নয়”।
লেখক: মুফতী মোঃ আবদুল্লাহ্, মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ