ভালোবাসা ও শত্রুতা আল্লাহর জন্য
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
বন্দুত্ব সৎস্বভাবের ফলশ্রুতি। সৎস্বভাবই পরস্পরের মধ্যে প্রীতি-ভালোবাসা এবং সুসম্পর্কের মূল। আর অসৎ স্বভাব পরস্পরের মধ্যে দ্বেষ, হিংসা এবং শত্রুতার মূল। স্বভাব উত্তম এবং প্রশংসনীয় হলে তার ফলও উত্তম এবং প্রশংসনীয় হয়। ধর্মের মধ্যে সংস্বভাবের মাহাত্ম্য ও ফজিলত গুপ্ত বিষয় নয়। আল্লাহতায়ালা তাঁর নবীকে এভাবেই উত্তম সম্বোধন করেছেন : ‘‘ইন্নাকা লা আলা খুলুক্বিন আজীম’’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আপনি সৎ চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি আরও বলেছেন : যে গুণ অধিকসংখ্যক মানুষকে বেহেশতে পৌঁছে দেবে, তা হলো খোদাভীতি ও সৎস্বভাব। হযরত ওসমান (রা.) বলেছেন, আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (স.)! মানুষকে কোন উত্তম গুণটি দান করা হয়েছে? তিনি বললেন, উত্তম স্বভাব। তিনি আরও বললেন, ঐ সৎস্বভাবের পূর্ণতার জন্য আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, মীযানে যা সর্বাধিক ওজনের বস্তু হবে, তা সৎস্বভাব। তিনি আরও বলেছেন, আল্লাহতায়ালা কোনো মানুষের স্বভাব এবং আকৃতি এরূপ সৃষ্টি করেননি যে, আগুন তা দগ্ধ করবে। অর্থাৎ যার স্বভাব-চরিত্র ও আকৃতি-প্রকৃতি সুন্দর, তাকে দোযখের আগুন দগ্ধ করতে পারবে না। হুজুরে পাক (স.) হযরত আবু হোরায়রা (রা.)-কে লক্ষ করে বলেছিলেন, হে আবু হোরায়রা! তোমার সৎস্বভাব অবলম্বন করা উচিত। তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সৎস্বভাব কী? তিনি বললেন, যে তোমার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে তুমি তার সাথে সে বন্ধন অটুট রাখবে। যে তোমাকে অত্যাচার করে তুমি তাকে ক্ষমা করবে। যে তোমাকে বঞ্চিত করে তুমি তাকে দান করবে। রাসূলে পাক (স.) এরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ লোক আমার সর্বাধিক নিকটবর্তী, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সৎস্বভাব বিশিষ্ট। সুরক্ষিত স্থানে চলাফেরাকারিগণই বন্ধুত্ব করে এবং বন্ধুত্ব পায়। তিনি আরও বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি অপরকে ভালোবাসে এবং অপরের ভালোবাসা পায়। যে ব্যক্তি ভালোবাসে না এবং ভালোবাসা পায় না তার মধ্যে কোনো মঙ্গল নেই। তিনি ধর্মের ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্বের প্রশংসা জ্ঞাপনেচ্ছলে বলেছেন, আল্লাহ যার মঙ্গল কামনা করেন, তাকে তিনি একজন ধার্মিক বন্ধু দেন। যদি সে ভুলে যায়, সে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যদি তার স্মরণ থাকে, সে তাকে সহায়তা করে। তিনি আরও বলেছেন, যখন দু’ভ্রাতার মধ্যে সাক্ষাৎ হয়, তখন তাদের দৃষ্টান্ত দুটি হস্তের মতো বলা চলে। একটি হস্ত অন্য হস্তের ময়লা পরিস্কার করে দেয়। দু’জন মুমিনের পরস্পর সাক্ষাৎ হলে, আল্লাহ একজন দ্বারা অন্যজনের উপকার করান। আল্লাহর উদ্দেশ্যে বন্ধুত্বের উৎসাহ দেয়ার জন্য হুজুরে পাক (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভ্রাতৃত্ব করে, আল্লাহ বেহেশতে তার পদমর্যাদা বহুগুণে বধিত করে দেবেন এবং তার আমল থেকে কোনো কিছু হ্রাস করবেন না। হযরত আবু ইদরীস হাওলানী, হযরত মুআযকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসি। শুনে তিনি বললেন, খুবই উত্তম। আমি হযরত রাসূলে করীম (স.) কে বলতে শুনেছি, একদল লোকের জন্য রোজ কিয়ামতে আরশে মুআল্লার চতুর্দিকে আসন স্থাপন করা হবে। তাদের মুখম-ল পূর্ণ চন্দ্রের ন্যায় উদ্ভাসিত হতে থাকবে। সেদিনের মহাবিভীষিকায় লোকগণ ভীত হবে; কিন্তু তারা ভীত হবে না। লোকগণ সন্ত্রস্ত হবে, কিন্তু তারা সন্ত্রস্ত হবে না। তারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের কোনোরূপ ভয়-ভীতি, দুঃখ-দুর্দশা থাকবে না। তখন আরজ করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ (স.)! তারা কোন লোক? তিনি বললেন, যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালোবাসে। হুজুরে পাক (স.) এরশাদ করেছেন, আরশে মুআল্লার চতুর্দিকে নূরের মিম্বর অবস্থি থাকবে তার উপরে একদল লোককে উপবিষ্ট দেখা যাবে, তাদের পোশাক হবে নূরের তৈরি এবং তাদের মুখম-লও হবে নূরদ্বারা নির্মিত। তারা কিন্তু নবী রাসূল বা শহীদ নন; কিন্তু নবী-রাসূল ও শহীদগণ তাদের পদমর্যাদা দেখে ঈর্ষান্বিত হবেন। হুজুরে পাক (স.)-এর নিকট আরজ করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের নিকট তাদের গুণ বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালোবাসে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে একত্রে মজলিসে বসে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ করে। হুজুরে পাক (স.) আরও বলেছেন, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’জন লোক পরস্পরকে ভালোবাসলে তাদের মধ্যে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’বন্ধুর মধ্যে যখন একজন অন্যজন অপেক্ষা অধিক পদমর্যাদাসম্পন্ন হয়, তখন তার সঙ্গে অন্যজনকেও তার পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয় এবং সে তার সঙ্গে একত্রেই থাকতে পারবে। যেমন সন্তানগণ তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে একত্র থাকে এবং যেরূপ এক পরিবারের লোকগণ একে-অন্যের সাথে মিলেমিশে কালযাপন করে। এর কারণ হলো, যখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্ব বা ভ্রাতৃত্ব স্থাপিত হয, তা বংশগত বা রক্ত সম্পর্কিত ভ্রাতৃত্বের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। হুজুরে পাক (স.) এরশাদ করেছেন যে, আল্লাহর তায়ালা বলেন, যারা আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, তাদের জন্য আমার সাহায্য সুনিশ্চিত হয়। হুজুরে পাক (স.) আরও বলেছেন, আল্লাহ-তায়ালা রোজ কিয়ামতে বলবেন, আমারই উদ্দেশ্যে যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছিল তারা আজ কোথায়? আজ আমার ছায়া ব্যতীত কোনা ছাঁয়া থাকবে না। আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় স্থান দান করব।
লেখক: চিকিৎসক-কলামিস্ট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৪
মাগুরায় পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
দেশের প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা তৈরিতে বাজারে অত্যাধুনিক ফিড নিয়ে এল আকিজ রিসোর্স
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের টানা ষষ্ঠ সিরিজ জয়
কমিউনিটি ব্যাংকে ট্রাফিক মামলার জরিমানা দেওয়া যাবে
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
‘ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী ও এমপিরা তাদের কৃত কর্মের জন্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে’
ব্রাহ্মণপাড়ায় ট্রাক্টরের চাপায় কলেজ ছাত্রের মৃত্যু, আহত ২
কুরআন শিক্ষা বোর্ড ঢাকা মহানগর উত্তরের নগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত
এবি ব্যাংক পিএলসি. এর "বিজনেস রিভিউ মিটিং" অনুষ্ঠিত
উথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল সোনালী লাইফ
নেতাকর্মীদের রেখে লক্ষণ সেনের মত পালিয়ে গেছে স্বৈরাচার: ব্যারিস্টার সালাম
অভিনেতা অপূর্বকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার
বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সভায় প্রধান প্রকৌশলী
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে
‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’
‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর