বিশ্বনবী (সা.) সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত
০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সমগ্র সৃষ্টি তথা বিশ্বমানবের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তির পয়গাম নিয়ে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১২ রবিউল আওয়াল সোমবার প্রভাতের সময় মহাবিশ্বে আগমন করলেন প্রিয় নবী, শেষ নবী, রহমাতুল্লিল আলামিন, শান্তির অগ্রদূত, মানবতার মুক্তির দিশারি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সৃষ্টির শুরু থেকেই উভয় জগতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সব রহমত ও দয়া এ নবীর অসিলায় প্রবাহিত করছেন। মহানবী (সা.)-এর আগমনের দিন পবিত্র ১২ রবিউল আউয়াল বিশ্ব ভুবনের জন্য নিঃসন্দেহে রহমত ও বরকতময়।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘হে নবী আমি আপনাকে সারাবিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।’ (২১-সূরা আম্বিয়া :
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন বিশ্ব তথা মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে। হজরত আদম (আ.)- এর মাধ্যমে দুনিয়ার বুকে প্রথম নবীর আগমন, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)’র আগমনের মাধ্যমে পৃথিবীতে নবী-রসুলের আগমন পর্বের সমাপ্তি টানা হয়েছে। মহানবী মুহাম্মদ (সা.)’র পর পৃথিবীতে আর কোনো নবী আসবেন না।
তিনি হলেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য মনোনীত নবী। কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ পৃথিবীতে আসবে তারা তার উম্মতের মধ্যেই গণ্য হবে। পৃথিবীতে আর কোনো নবী আসবে না। মুহাম্মদ (সা.)’র আগে যে নবী-রসুল (আ.) এসেছেন তাদের বিশেষ সম্প্রদায়ের নবী রসুল হিসেবে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আখেরি নবীর আগমন ঘটেছে সমগ্র মানব জাতির জন্য।
মহানবী (সা.) দুনিয়ায় এসেছিলেন মিথ্যা থেকে মানুষকে দূরে রাখতে। যারা সত্যের পথের অনুসারী তাদের আখিরাতের জীবনে কীভাবে পুরস্কৃত করা হবে তার বার্তাবাহক হিসেবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি, অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।’ (৩৪-সূরা সাবা : ২৮)
রাসুল (সা.)’র আগমনের কথা পবিত্র কোরআনের পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলোতেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর পাঠানো রসুল, সত্যতা বিধানকারী সেই তাওরাতের, যা আমার আগে এসেছে, আর সুসংবাদদাতা এমন একজন রসুলের যে আমার পরে আসবে, যার নাম হবে আহমদ।’ (৬১-সূরা আস-সফ : ৬)
সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কোনো একটি বিশেষ দল বা সম্প্রদায়ভুক্ত নবী ছিলেন না এবং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য বিশ্বনবী। কারণ তাঁর পর দুনিয়ায় আর কোনো নবীর আগমন ঘটবে না।
এই প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “অন্য নবীরা তাঁদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন, আর আমি বিশ্বের সব মানুষের জন্য প্রেরিত হয়েছি।”
মহানবী (সা.) পৃথিবীতে আবির্ভূত হন এমন এক কঠিন সময়ে যখন সমগ্র পৃথিবী আইয়ামে জাহেলিয়াতের মধ্যে নিমজ্জিত ছিল। কোথাও শান্তি ছিল না, স্বস্তি ছিল না, ধর্মের নামে অধর্ম বিরাজ করছিল সর্বত্র। শিরক ও কুফরের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল সবাই।
নারীদের সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হচ্ছিল অবলীলায়, কন্যাসন্তানকে দেয়া হচ্ছিল জীবন্ত কবর। মারামারি, হানাহানি, খুন-খারাবির উন্মত্ততায় গোটা সমাজ ছিল টালমাটাল, পৃথিবীর সেই করুণ অবস্থা নিরসনের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় হাবিব হজরত মুহাম্মদ(সা.)-কে সিরাজুম মুনিরা বা প্রদীপ্ত চেরাগরূপে প্রেরণ করলেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, “হে নবী! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁরই দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং প্রদীপ্ত চেরাগরূপে।” (সূরা আহজাব, আয়াত ৪৫-৪৬)।
সমগ্র সৃষ্টির প্রতি সষ্টার এই যে মহান করুণা তাঁর জন্য মানবকুল তাঁর কাছে ঋণী। পরবর্তী পর্যায়ে যার মাধ্যমে এই রহমত ও নিয়ামতের অধিকারী হল, তাঁরই নিকট ঋণী। সেই মাধ্যম হলো মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.), যিনি মানব জাতিকে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দিলেন, পবিত্র করলেন।
সমগ্র মানবকুল সৃষ্টি জগত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাঁরই কাছে ঋণী। কে তাকে স্বীকার করল, কে করুণা সে কথা এখানে গৌণ। তিনি সকল মানুষকে, সকল নবীকে, সকল আসমানী কিতাবকে স্বীকার করেছেন। কাউকে অস্বীকার করার মতো মানসিক দুর্বলতা তাঁর মধ্যে মোটেই ছিলনা। তাই তিনি বিশ্বনবী, শ্রেষ্ঠ নবী (সা.)। সকল মানবিক আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক হলেন তিনি।
রাসুল (সা.)’র মন ছিল আকাশের মতো উদার, সত্যে প্রতি অবিচল। জীবনে কোনো দিন কোন প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেননি। কোন মিথ্যা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি, দানে-ধ্যানে জ্ঞানে, বিচারে-সহানুভবতায় তিনিই ছিলেন তার দৃষ্টান্ত। তার পরিকল্পনা শক্তি ছিল অসাধারণ, তার সংকল্পও ছিল তেমনি সুন্দর। যে কোন ন্যায়, সত্য পরিকল্পনাকে কার্যকরী করে মহান আল্লাহর হুকুম কায়েম করাই ছিল রাসুল (সা.)’র একমাত্র লক্ষ্য। (চলবে)
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট সাবেক ইমাম ও খতিব
কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দেশের প্রাণিসম্পদ উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা তৈরিতে বাজারে অত্যাধুনিক ফিড নিয়ে এল আকিজ রিসোর্স
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আফগানিস্তানের টানা ষষ্ঠ সিরিজ জয়
কমিউনিটি ব্যাংকে ট্রাফিক মামলার জরিমানা দেওয়া যাবে
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
‘ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী ও এমপিরা তাদের কৃত কর্মের জন্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে’
ব্রাহ্মণপাড়ায় ট্রাক্টরের চাপায় কলেজ ছাত্রের মৃত্যু, আহত ২
কুরআন শিক্ষা বোর্ড ঢাকা মহানগর উত্তরের নগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত
এবি ব্যাংক পিএলসি. এর "বিজনেস রিভিউ মিটিং" অনুষ্ঠিত
উথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল সোনালী লাইফ
নেতাকর্মীদের রেখে লক্ষণ সেনের মত পালিয়ে গেছে স্বৈরাচার: ব্যারিস্টার সালাম
অভিনেতা অপূর্বকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার
বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সভায় প্রধান প্রকৌশলী
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে
‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’
‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর
৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু
মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?