প্রশ্ন: ইসলামে ধৈর্যের প্রতিদান কি?
১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

উত্তর: অধিক আনন্দবশত, আনন্দে দিশাহারা হয়ে মানুষ নানাবিধ উপায়ে আনন্দ উচ্ছাস প্রকাশ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে নীতি গর্হিত এমনকি আল্লাহর নাফরমানিমূলক কাজে লিপ্ত হয়ে পরে। পবিত্র কুরআনের সূরা হুদের ৯ ও ১০নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন- “যদি আমি মানুষকে আমার নিকট হতে অনুগ্রহের আশ্বাস করাই ও পুনরায় উহা ছিনিয়ে নেই, তখন সে অবশ্যই হতাশা ও অকৃতজ্ঞ হয়। দুঃখ- দৈন্য স্পর্শ করার পর যদি আমি তাকে অনুগ্রহের আস্বাদ করাই তখন সে বলে আমার বিপদ-আপদ কেটে গেছে আর সে তখন হয় উৎফুল্ল ও অহংকারী। কিন্তু যারা ধৈর্যশীল ও সৎকর্মপরায়ণ তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও মহাপুরুষ্কার।” আনন্দের অতিশর্যে এমন কোন কিছু করা যাবে না যা আল্লাহ ও তার রসূল সমর্থন করেনা। জীবনের সকল ক্ষেত্রে সকল বিষয়ে ইসলাম যে নিয়ম রীতি প্রণয়ন করেছে তা মেনে চলাই মুসলমানের করনীয়। তাহলেই আখেরাতের সুখ-শান্তি আশা করা যায়।
সুখ সম্পদ আল্লাহ তায়ালার দান। আল্লাহ প্রদত্ত সুখের জীবনে শুধু আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই মানুষের একান্ত করণীয়। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে, মানুষ তা জানেও না বুঝেও না যে, অদৃশ্য জগত হতে মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। সুখের রাজত্বে মানুষ তো আল্লাহকে মনে করেনা। অতি সুখে তাই ইসলাম গর্হিত আনন্দ উল্লাস না করে সেখানেও ধৈর্য অবলম্বন করা কর্তব্য। সুখের উল্লাসে ধৈর্য ধারণ হচ্ছে একটা আত্মসংযম। আত্মসংযমই এখানে ধৈর্যের পরিচয়। আত্মসংযমকারীকে আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন। সুখের বিষয়ে মাতোয়ারা না হয়ে অন্তরে আল্লাহতায়ালাকে ভয় করাই উচিত। কেননা বান্দার জীবনের সুখ তো আল্লাহতায়ালার হাতে। আল্লাহর সাথে নাফরমানি করলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন, মানুষের জীবনের সুখ সৌন্দর্য বিনষ্ট হওয়া কোন সময়ের ব্যাপার নয়। তাই সুখের সময় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং দুঃখের সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করাই মুমিনের কাজ। আল্লাহ পাক তার পবিত্র কালামেপাকের সূরা বাকারার ৪৫নং আয়াতে বলেন- “ওয়াস্তাইনু বিচ্ছাবরি অয়াচ্ছালাহ” অর্থাৎ তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য কামনা করো। এটাই হচ্ছে বান্দার করণীয়। বিপদ আপদ, দুঃখ কষ্টেও অনুরূপ আল্লাহ তায়ালার কাছে অন্তত দু-রাকাত নামাজ পড়ে সাহায্য চাওয়াই হচ্ছে মুসলমানের কাজ।
দুঃখ-কষ্ট ঘাত-প্রতিঘাত মানব জীবনের থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঘাত-প্রতিঘাত নেয়েই তো জীবন। বিপদ-আপদ মুক্ত জীবন খুঁজে পাওয়া যেমন কঠিন তেমনি নিরবিচ্ছিন্ন শান্তিময় জীবনও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নবী-রাসূলদের জীবনে কষ্ট ছিল নিত্যসাথী। সরোয়ারে কায়েনাত অর্থাৎ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ নবী কারীম সা. এর জীবনেও অভাবের কষ্ট ছিল নিত্যদিনের সাথী। দ্বীনি সফর হতে ক্ষুদার্থ ক্লান্ত শরীরে গৃহে ফিরে কোনদিন বিবি আয়েশাকে বলতেন না আমাকে খাবার দাও। তিনি জিজ্ঞাসা করতেন আয়েশা ঘরে কোন খাবার আছে কি? এ ধরনের উক্তি থেকে নবী গৃহের অভাব অনটনের চিত্রই প্রতিভাত হয়। তিন দিন পর্যন্ত অনাহারে থেকে পেটে পাথর বেঁধে কন্যা ফাতিমার গৃহে খাবারের আশায় গিয়ে বিমুখ হয়ে ফিরে গিয়ে ইহুদীর বাড়ি শ্রমের বিনিময়ে খেজুর নিয়ে প্রিয় নাতিদয়, অনাহারে শয্যাশায়ী হাসান-হোসেনের মুখে তুলে দিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনায় হৃদয়ের গহীনে আঘাত লাগে না এমন কোন মুমিন বোধ করি নেই। শত অভাবে শত কষ্টে পিতৃহারা-মাতৃহারা এতিম শিশু একদিন আরব জাহানের অধিপতি হয়েছেন- ধৈর্যের পরীক্ষায় পরীক্ষা দিয়ে। আরব জাহানের খলিফা হয়ে শুকনো রুটি জয়তুনের তেল দিয়ে খেয়ে হযরত ওমরের চেহারায় কালো দাগ পরেছিল।
অঘাত জ্ঞান ও শক্তির অধিকারী হযরত আলীর গৃহ ছিলো অভাবের জলন্ত নিদর্শন। বছর শেষে ঈদের দিনেও শিশুপুত্র হাসান হোসাইনের গায়ে একটি নতুন জামা তুলে দিতে পারেননি মাতা হযরত ফাতেমা রা.। এমনিভাবে অভাবের সংসারে ধৈর্য ধারন করে পেয়েছেন জান্নাতের সর্দারনী হবার শুভ সংবাদ আর যুবকদের সর্দার হবার সৌভাগ্য লাভ করেছেন হযরত হাসান হোসাইন। অনেক দ্বীনি বুযর্গগণ অভাবের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে জীবন কাটিয়ে গেছেন। কষ্টের সংসারে ধৈর্য ধারন করাই অনেক কথিন ব্যাপার। তথাপিও ধৈর্য ধারন করলে সবুরে মেওয়া ফলে, এ প্রবাদের দৃষ্টান্ত সমাজের বুকে ভুরি ভুরি রয়েছে। হযরত আলী রা. বলেন ধৈর্য ৩ প্রকার - ১. বন্দেগীতে ধৈর্য ধারন করা। ২. বিপদে ধৈর্য ধারন করা। ৩. রোগে-শোকে ধৈর্য ধারন করা। ইবাদত বন্দেগীতে ধৈর্য অবলম্বন হচ্ছে ইবাদতের সকল ক্ষেত্রে পরম নিষ্ঠার সাথে যথাযথভাবে তা পালন করা। অধৈর্য তথা চঞ্চলতার মধ্যে অস্থির ও অন্যমনস্ক হয়ে যেন তেন ভাবে নামাজ আদায় করা, রমজানের রোজার মধ্যে একাগ্রতার অভাব থাকা এবং সকল ক্ষেত্রে সহি-শুদ্ধভাবে নিবিষ্ট মনে সুন্নতি আদর্শের ত্রুটি বিচ্যুতি থাকা এসবই এবাদতের অধৈর্যের পরিচয়। এধরনের এবাদতে কখনও আল্লাহর সন্তুষ্টি সম্ভবপর নয়। শরিয়তের ফরয হুকুম আহকাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং তদানুযায়ী আমল করা ফরয। পবিত্র কোরয়ানের সুরা বাকারার ২০৮নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন - “ইয়া আয়্যূহাল্লাজিনা আমানুদ খুলুফিছ ছিলমি কাফফাই” অর্থাৎ হে ঈমানদার গন তোমরা সম্পূর্নরুপে ইসলামে প্রবেশ করো। এখানে সম্পুর্ন বলতে শরিয়তের ফরয হুকুমগুলো পরিপূর্ণভাবে এবং সহিশুদ্ধ রুপে পালন করা। যারা এবাদতে ধৈর্যধারন করেছে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা রোজ হাশরে তিন’শ উচ্চ মর্যাদাসম্পূর্ন স্তর প্রদান করবেন। প্রতিটি স্তরের দূরত্ব আসমান জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। বিপদাপদে ধৈর্যাবলম্বন কারীদেরকে আল্লাহতায়ালা সাত’শ মর্যাদাসম্পন্ন স্তর প্রদান করবেন। প্রতিটি স্তরের দূরত্ব আসমান জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান। রোগে শোকে ধৈর্যাবলম্বন কারীকে প্রদান করা হবে নয়’শ উচ্চমর্যাদা। যার মর্যাদার দূরত্ব আসমান ও জমিনের দুরত্বের সমান।
ধৈর্যের বিষয় না এমন বিষয়ে ধৈর্যের পরিচয় দেয়া হচ্ছে দুর্বলতা মূলক নৈতিক অবক্ষয়। সন্তান কোনো গুরুতর অপরাধ করলে অভিভাবকের কর্তব্য হচ্ছে তার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সে ক্ষেত্রে যদি অভিভাবক প্রতিকারের পরিবর্তে সন্তানকে কোন কিছু না বলে ধৈর্যধারণ করে, হয়তো আর করবে না মনে ভেবে। এক্ষেত্রে সন্তান অবশ্যই প্রশ্রয় পাবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকের সন্তানের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেয়াটা ধৈর্যের বিষয় নয়। অনেক ক্ষেত্রে ধৈর্যেরও সীমা আছে। অপরাধী কে বার বার ক্ষমা করাও এক ধরনের নৈতিক অপরাধ। আবার যেটা ধৈর্যের বিষয় সেখানে ধৈর্য অবলম্বন না করে তাৎক্ষণিক তৎপরতা অবলম্বন করলে ফলটা অনেক ক্ষেত্রেই বিপর্যয় দেখা দেয়। কারণ ধৈর্যের ফল তো একটু হলেও বিলম্ব হয়। যারা বিনয় নম্রতার অধিকারী তাদের পক্ষে ধৈর্য ধরাটা সহজতর। রাগ শয়তানের স্বভাব। রাগে অন্তরের অনল প্রজ্জ্বলিত হয়। রাগ আগুনের অংশ যে আগুন দিয়ে শয়তানকে সৃষ্টি করা হয়েছে। রাগকে আল্লাহ তায়ালা আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন। রাগ এক প্রকার গরম শক্তি যা মানুষের ভেতর থেকে আসে। রাগী ব্যক্তির নিকট শয়তানের গমনাগমন সহজ। ধৈর্যশীল, উদার মন, অহিংসুক, পরমত সহিষ্ণু ও উন্নত হৃদয় মনের অধিকারী ব্যক্তিরাই মহৎ হিসাবে আখ্যায়িত। মহত্বের অধিকারী হতে হলে ধৈর্যাবলম্বনের সাথে রাগ, হিংসাদ্বেষ, অহংকার, পরনিন্দা, লোভ, প্রভৃতি মহৎ গুণাবলীর প্রতিবন্ধকতা মূলক স্বভাবগুলো সর্বাগে পরিত্যাজ্য।
উত্তর দিচ্ছেন: শিক্ষাবীদ, গবেষক, ইসলামী চিন্তাবীদ, অধ্যাপক মীর মোশারফ হোসেন
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ঘটনাস্থলে দেরিতে যাওয়ায় পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দিলেন দোকানী

ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলের ডাক দিলেন মাওলানা মামুনুল হক

বৃষ্টিস্নাত দিনে মোহামেডানের হার, জয়ের শীর্ষস্থান মজবুদ আবাহনীর

চলন্ত বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছিনতাইকারী আটক

ফুলপুরে অবৈধভাবে মজুদকৃত ৩৯ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ১ জনকে জরিমানা

দাউদকান্দির বানিয়াপাড়ার দরবার শরীফে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে

সুনামগঞ্জে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

সয়াবিন ও শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় খরিপ মৌসুমে ১০৬৮০ জন কৃষক পাচ্ছেন ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৫ টাকার প্রণোদনার বীজ সার

চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গো গ্রীন সেন্টার পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি

‘র’ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

কিমিয়া সাদাত কমিউনিটি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী

মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ভারতকে আহ্বান বাংলাদেশের

পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ

মেয়ে সন্তানের জন্য একের অধিক ছাগল দিয়ে আকিকা করা প্রসঙ্গে।

সখিপুরে গৃহবধূ হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী গ্রেফতার