আল কোরআন : তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারীমে হযরত ইয়াহইয়া (আ:)-এর মীলাদনামাও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। যখন তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতা যাকারিয়া (আ:) হযরত মারয়ামের প্রতিপালনের প্রাক্কালে ‘তাওয়াচ্ছুলে মাকামী’ করত: মারয়াম (আ:)-এর হুজরায় দাঁড়িয়ে দোয়া করেছিলেন এবং আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সেই দৃশ্য এভাবে অঙ্কন করেছেন। সূরা আলে-ইমরানের ৩৮,৩৯,৪০ ও ৪১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : সেখানেই যাকারিয়া তাঁর প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তুমি তোমার পক্ষ হতে সৎ বংশধর দান কর, নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী। যখন যাকারিয়া কক্ষে দাঁড়িয়েছেন, তখন ফিরিশতা তাঁকে সম্বোধন করে বলল, আল্লাহ আপনাকে ইয়াহইয়ার শুভ সংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহর বাণীর সমর্থক, নেতা, জিতেন্দ্রীয় এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র কিরূপ হবে? আমার তো বার্ধক্য এসে গেছে এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা; বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন। সে বলল, হে আমার প্রতি পালক! আমাকে একটি নিদর্শন দিন; তিনি বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে, তিন দিন তুমি ইঙ্গিত ব্যতীত কথা বলতে পারবে না, আর তোমার প্রতিপালককে অধিক স্বরণ করবে এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে। (সূরা আলে-ইমরান : আয়াত-৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১)।
একথা স্বরণযোগ্য যে, তখনও হযরত ইয়াহইয়া (আ:)-এর জন্ম হয়নি, শুধু দোয়া কবুল হয়েছে এবং আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা বেলাদতের পূর্বেই তাঁর কোন কোন ফযিলত বর্ণনা করেছেন। সামনের সূরা মারয়ামে তাঁর জন্মের পূর্ণ বিবরণ উপস্থাপিত হয়েছে। এই সূরার প্রথম রুকুতে ইয়াহইয়া (আ:)-এর মীলাদের বিবরণ স্থান লাভ করেছে। কোরআনুল কারীমে বর্ণনাটি এভাবে শুরু হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে :
কাফ, হা, ইয়া, আইন, ছোয়াদ (মূল অর্থ আল্লাহ এবং রাসূলই ভালো জানেন)। এ হচ্ছে আপনার প্রভুর রহমতের জিকির বা আলোচনা। যা তিনি স্বীয় (বরগুজিদাহ) বান্দাহ যাকারিয়া (আ:)- কে এনায়েত করেছিলেন। (সূরা মারয়াম : আয়াত ১, ২)।
এই আয়াতে কারীমার আলোকে বুঝা যায় যে, পয়গাম্বরদের জন্মের আলোচনা (মীলাদনামা) কোরআন মাজীদের শব্দাবলীর মধ্যে আল্লাহতায়ালার রহমত স্বরূপ। যখন হযরত ইয়াহইয়া (আ:)-এর মীলাদের আলোচনা আল্লাহপাকের রহমত সাব্যস্ত হয়েছে, তখন মীলাদে মোস্তফা (সা:)-এর আলোচনা অবশ্যই রহমত হিসেবে বরিত ও স্বীকৃত হবে। বেলাদতে মোস্তফা (সা:) হতে বড় রহমত আর কি হতে পারে? সুতরাং বুদ্ধিবৃত্তিক ও দর্শনের নিরিখেও মীলাদে মোস্তফা (সা:)-এর আলোচনা অবশ্যই রহমত হিসেবে চিহ্নিত হবে। সূরা মারয়ামের ৩নং আয়াত হতে ১৫ নং আয়াত পর্যন্ত ইয়াহইয়া (আ:)-এর জন্মের কাহিনী ধারাবাহিকভাবে বিবৃত হয়েছে। ইরশাদহচ্ছে : যখন সে (যাকারিয়া আলাইহিস সালাম) নিভৃতে তাঁর প্রতিপালককে আহ্বান করেছিল, সে বলেছিল, আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে, বার্ধক্যে আমার মস্তক শুভ্রোজ্জ্বল হয়েছে, হে আমার প্রতিপালক! তোমাকে আহ্বান করে আমি কখনও ব্যর্থকাম হইনি। আমি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে আংশকা করছি, আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার নিকট হতে আমাকে উত্তরাধিকারী দান কর। যে আমার উত্তরাধিকারিত্ব করবে এবং ইয়াকুবের বংশের উত্তরাধিকারত্ব করবে এবং হে আমার প্রতিপালক! তাকে সন্তোষভাজন করো। তিনি বললেন, হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, তাঁর নাম হবে ইয়াহইয়া, পূর্বে এই নামে আমি কারও নামকরণ করেনি। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আমার পুত্র হবে, যখন আমার স্ত্রী বন্ধ্যা এবং আমি বার্ধক্যের শেষ সীমায় উপনীত। তিনি বললেন, এরূপই হবে, তোমার প্রতিপালক বলছেন, ইহা আমার জন্য সহজসাধ্য, আমি তো পূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি, যখন তুমি কিছুই ছিলেনা। যাকারিয়া বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি নিদর্শন দার করুন। তিনি বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ থাকা সত্ত্বেও কারও সাথে তিন দিন বাক্যালাপ করবে না। তারপর সে কক্ষ হতে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট আসল ও ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বললো। আমি বললাম, হে ইয়াহইয়া! এই কিতাব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ কর, আমি তাকে শৈশবেই জ্ঞান দান করেছিলাম এবং আমার নিকট হতে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা এবং সে ছিল প্রকৃতই মুত্তাকী। পিতা-মাতার অনুগত এবং সে অহংকারী ও অবাধ্য ছিল না। তাঁর প্রতি সালাম ও শান্তি বর্ষিত হচ্ছিল, যেদিন সে জন্মগ্রহণ করেছে এবং শান্তি অব্যাহত থাকবে যেদিন তার মৃত্যু হবে এবং যেদিন সে জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে। (সূরা মারয়াম : আয়াত- ৩-১৫)।
বস্তুুত : সূরা মারয়ামের প্রথম রুকুটি মীলাদে ইয়াহইয়া (আ:)-এর আখ্যানে ভরপুর রয়েছে। এতে প্রথমে তার মীলাদের কথা আলোচিত হয়েছে। কিভাবে তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতা হযরত যাকারিয়া (আ:) একান্ত বৃদ্ধ বয়সে স্বীয় উত্তরাধিকারীর জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, তারপর আল্লাহতায়ালা তাঁকে হযরত ইয়াহইয়া (আ:)-এর জন্মের শুভ সংবাদ দিলেন। যখন তিনি আশ্চর্যভাব প্রকাশ করলেন। তখন আল্লাহপাক স্বীয় কুদরতের বয়ান পেশ করলেন। মোটকথা, হযরত ইয়াহইয়া (আ:)-এর বেলাদত সম্পর্কে আল্লাহপাক এবং তাঁর প্রিয় পয়গাম্বরের মধ্যে যে কথাবার্তা হয়েছিল কুরআনুল কারীম তা বিস্তারিতভাবে বয়ান করেছে। তারপর হযরত ইয়াহইয়া (আ:)-এর রূহানী মাকামাত এবং তাঁর সীরাতের কতিপয় নির্দিষ্ট দিকের কথাও ব্যক্ত করা হয়েছে। হযরত ইয়াহইয়া (আ:) এর বেলাদতের শুরু হতে আরম্ভ করে তাঁর সীরাতের বিভিন্ন দিক বয়ান করার পর তাঁর জন্মদিন, মৃত্যুর দিন এবং পুনরুত্থানের দিনের (কেয়ামতের দিন উত্থিতকরণ) উপর শান্তি ও সালাম বর্ষণের মাধ্যমে পরিসমাপ্তি করা হয়েছে। কোরআনুল কারীমের এ সকল বিবরণ বয়ান করার উদ্দেশ্য শুধু কেবল একজন বরগুজিদাহ নবী হযরত ইয়াহইয়া (আ:)-এর বেলাদতের গুরুত্বকে বিকশিত করা এবং পাঠকারীদের মনে একে স্থায়ী আসন দান করা। এটা ছিল মীলাদ নামায়ে ইয়াহইয়া যার ঘটনার কথা আল কোরআনে তিলাওয়াত করা হয়।
৫। মীলাদ নামায়ে ঈসা (আ:)।
হযরত মারয়াম (আ:)-এর মীলাদনামার পর তাঁর ছেলে হযরত ঈসা (আ:)-এর মীলাদনামা ও কোরাআন মাজীদে বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা মারয়ামের পুরো একটি রুকু মীলাদনামায়ে ঈসা (আ:) সম্পর্কিত বিষয়ের আলোচনায় ভরপুর। এতে তাঁর বেলাদতের পূর্বে তাঁর ¯েœহময়ী মাতাকে ছেলে সন্তান লাভের খোশখবরী প্রদান করা হয়েছে। কোরআন মাজীদের সূরা আলে ইমরানের ৪৫ ও ৪৭ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : যখন ফেরেশতাগণ বললেন, হে মারয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে নিজের নিকট হতে এক কালেমার খোশখবরী দিচ্ছেন যে, এর নাম হবে ‘মসিহ ঈসা বিন মারয়াম’। সে দুনিয়া এবং আখেরাত (উভয় জগতে) সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে এবং আল্লাহর খাস নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাহদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (চলবে)
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বৃষ্টিস্নাত দিনে মোহামেডানের হার, জয়ের শীর্ষস্থান মজবুদ আবাহনীর

চলন্ত বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছিনতাইকারী আটক

ফুলপুরে অবৈধভাবে মজুদকৃত ৩৯ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ১ জনকে জরিমানা

দাউদকান্দির বানিয়াপাড়ার দরবার শরীফে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে

সুনামগঞ্জে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

সয়াবিন ও শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় খরিপ মৌসুমে ১০৬৮০ জন কৃষক পাচ্ছেন ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৫ টাকার প্রণোদনার বীজ সার

চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গো গ্রীন সেন্টার পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি

‘র’ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

কিমিয়া সাদাত কমিউনিটি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী

মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ভারতকে আহ্বান বাংলাদেশের

পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ

মেয়ে সন্তানের জন্য একের অধিক ছাগল দিয়ে আকিকা করা প্রসঙ্গে।

সখিপুরে গৃহবধূ হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী গ্রেফতার

কাতারে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন দুই নারী ক্রিকেটার ও ফুটবলার

আমরা সকলকে নিয়ে বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব : অনুদান হস্তান্তরকালে নারায়ণগঞ্জের ডিসি