কিয়ামতের আলামত
০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৩ এএম
ইয়াজুজ মাজুজ : ইমাম মাহদীর (আ:) ইন্তেকালের পর সা¤্রাজ্যের সকল ব্যবস্থাপনা হযরত ঈসা (আ:) এর দায়িত্বে আসবে। অত্যন্ত শান্তি শৃংখলার সাথে সকলের জীবন চলতে থাকবে। আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ঈসা (আ:) কে ওহী করবেন : আমি এমন এক সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটাব যাদের মোকাবেলা কেউ পারবে না। সুতরাং হে নবী আপনি আমার বান্দাগণকে তুর পর্বতে নিয়ে যান। উল্লেখিত সম্প্রদায়ই হল ইয়াজুজ ও মা’জুজ।
নাওয়াস বিন সামআন (রা:) হতে বর্ণিত, নবী (সা:) ইরশাদ করেন-দাজ্জাল বিষয়ক হাদীসের মধ্যে-এমনি অবস্থায় আল্লাহ তা’য়ালা একদা ঈসা (আ:) এর প্রতি ওহী করবেন’ “আমি আমার এক ধরনের বান্দার আবির্ভাবের সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাদের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই। তুমি আমার অপর বান্দাগণকে পাহাড়ে সমবেত কর। তার পরেই আল্লাহ তা’য়ালা ইয়াজুজ-মাজুজ প্রেরণ করবেন। তারা সকল উচ্চ ভূমি হতে দ্রুত আগমন করবে।
ইয়াজুজ মাজুজের আলোচনা পবিত্র কুরআনেও বিদ্যমান। এ সম্প্রদায়টি ইয়াফাস বিন নূহ (আ:) এর বংশধর। উত্তর দিকে (বাহরে মুনজামেদ)-এর সন্নিকটে এ সম্প্রদায়ের আবাসভূমি। পাহাড়ের মধ্যদিয়ে তাদের আবাসভূমিতে পৌঁছার পথ। বাদশাহ জুলকারণাইন শিশা তামা গলাইয়া লৌহ তক্তায় ঢেলে প্রাচীর নির্মাণ করত: উক্ত পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন। অত্যন্ত শক্তিশালী উক্ত সম্প্রদায় দু পাহাড়ের মাঝে অত্যন্ত সুদৃঢ় লৌহ প্রাচীরের অন্তরালে বন্দী আছে। কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে উক্ত প্রাচীর ভেঙ্গে পড়লে ঐ সম্প্রদায় বের হয়ে আসবে এবং চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে অশান্তি সৃষ্টি করবে।
(ক) ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে তারা বলল :
হে জুলকারনাইন নিশ্চয় ইয়াজুজ মাজুজ প্রাণী আমাদের অঞ্চলে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। আমরা কী আপনাকে কিছু কর পরিশোধ করব যা বিনিময়ে আপনি আমাদের ও তাদের মাঝে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দিবেন? তিনি বললেন, আমাকে আল্লাহ পাক যে সম্পদের অধিকারী করেছেন, তাই উত্তম। তোমরা বরং কায়িক শক্তি দ্বারা তোমাদের বাসনা পূরণে আমাকে সাহায্য কর। আমি তাদের ও তোমাদের মাঝে দুর্ভেদ্য প্রাচীর নির্মাণ করে দেব। তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে দু পাহাড়ের মধ্যস্থান যখন লৌহ পাতের পতনে সমান হয়ে গেল তিনি বললেন (অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করতে) ফুঁক দিতে থাক। এমনকি যখন তা অগ্নিসম রূপ ধারণ করল, তিনি বললেন : গলিত তামা নিয়ে এসো। আমি তা তার উপর ঢেলে দিব। তার পর হতে উক্ত সম্প্রদায় বা ইয়াজুজ-মাজুজ সে পাহাড়ে আরোহণের সক্ষম হল না এবং তাতে কোন ফাটল সৃষ্টি করতে পারল না। (সূরা কাহাফ—৯৪-৯৭)
(খ) শেষ পর্যন্ত যখন ইয়াজুজ মাজুজ মুক্ত হবে, তারা সকল উচ্চ ভূমি হতে দ্রুত গতিতে আগমন করতে থাকবে। (সূরা আল আম্বিয়া-৯৬) (গ) ঐতিহাসিকগণ বলেন-নূহ (আ:) এর বংশধর তিন ব্যক্তি হতে বিস্তৃত হয়েছে। (ক) শাম (খ) হাম (ইয়াফিস।
আরব আজম ও রোমের পূর্ব পুরুষ ছিলেন শাম, হাবশা ও নাওবা আঞ্চলের বাসিন্দাদের পূর্ব পুরুষ হাম, তুর্কি, সাকালিবা ও ইয়াজুজ-মাজুজের পূর্ব পুরুষ ছিলেন ইয়াফিস। (শরহে আকীদায়ে সিফারিনিয়্যাহ-২/১১৪
লৌহ প্রাচীর ভেঙ্গে পড়লে ইয়াজুজ মাজুজকে উঁচুভূমি হতে দৌড়াতে দৌড়াতে আসতে দেখা যাবে। তাদের প্রথম দল বাহিরায়ে তবরিয়ার পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রমকালে তার সবটুকু পানি খেয়ে ফেলবে। অন্যদল সেখান দিয়ে গমন কালে শুষ্ক সমুদ্রের পানে লক্ষ্য করে বলবে, “এখানে কি কখনো পানি ছিল? ইয়াজুজ মাজুজের কারণে ঈসা (আ:) ও মুসলমানগণ ভীষণ দূরাবস্থায় কাল কাটাবেন। খাদ্যের তীব্র অভাব দেখা দিবে। গরুর একটি মাথা শত দীনার হতেও উৎকৃষ্ট ও মূল্যবান বিবেচিত হবে। বাধ্য হয়ে হযরত ঈসা (আ:) ইয়াজুজ মাজুজের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে দুআ করবেন। আল্লাহ পাক তাদের গ্রীবা দেশে এক প্রকার ক্ষতরোগ সৃষ্টি করে দিবেন। যাতে তারা সকলেই ভবলীলা সাঙ্গ করবে। ভূপৃষ্ঠ মরদেহের দুর্গন্ধে ভরে যাবে। ঈসা (আ:)-এর দুআয় আল্লাহ তা’য়ালা দীর্ঘ গ্রীবাধারী একপ্রকার পাখি প্রেরণ করবেন। তারা মরদেহসমূহ উঠিয়ে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী দূরে কোন একস্থানে নিক্ষেপ করবে। অত:পর এমন মূষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হবে যে, সকল স্থান সকল মাকাম, শহর নগর গ্রামাঞ্চল উক্ত পানিতে বিধৌত হয়ে পরিষ্কার পরিচব্ছন্ন হয়ে যাবে। ঐ সময় ভূমি তার বরকতের দ্বার খুলে দিবে। একটি আনার একটি দলের জন্য যথেষ্ট হবে। তার খোসার ছায়াতে পূর্ণ একটি দল উপবেশন করতে পারবে। একটি মাত্র উটের দুধ একটি বড় দল, একটি গাভীর দুধ তা একটি পূর্ণ গোত্র এবং একটি ছাগলের দুধ, একটি ছোট গোত্র তৃপ্তি ভরে পান করতে পারবে।
নবী করিম (স:) দাজ্জাল সম্পর্কিত হাদীস শরীফে ইরশাদ করেছেন-তাদের (ইয়াজুজ মাজুজেস) প্রথম দলটি বুহাইরায়ে তাবারিয়্যাহ অতিক্রমকালে তার সমুদয়পানি পান করে ফেলবে। তাদের শেষ দলটি সেখান দিয়ে অতিক্রমকালে বলবে, এখানে সম্ভবত কখনো পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা ও সাথীগণ পরিবেষ্টিত ও অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। এমনকি আজকের দিনে তোমাদের কারো নিকট একশত দিনের চেয়ে তখন তাদের একজনের নিকট একটি বলদের মাথা অনেক মূল্যবান হবে। আল্লাহর নবী ঈসা ও তাঁর সাহাবীগণ আল্লাহ পাকের দরবারে কায়মনোবাক্যে দুআ করবেন। আল্লাহপাক ইয়াজুজ মাজুজের উপর ‘নাতাফ’ রোগ প্রেরণ করবেন। ফরে তারা এক সঙ্গে সকলে মৃত্যুবরণকরবে। অত:পর ঈসা (আ:)সাথীগণসহ সমতল ভূমিতে অবতরণ করবেন। দেখতে পাবেন ুরা ভূভ- তাদের মৃতদেহ এবং দুর্গন্ধে ভরে গেছে। ঈসা (আ:) ও তার সাহাবীগণ এ দুর্বিসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য অনুনয়-বিনয়সহ আল্লাহর কাছে মিনতি জানাবেন। আল্লাহ পাক দীর্ঘ গর্দান বিশিষ্ট এক প্রকার পাখি প্রেরণ করবেন। তারা মৃত দেহগুলো আল্লাহর ইচ্ছায় দূর অচেনা কোনো স্থানে নিয়ে নিক্ষেপ করবে।
অত:পর আল্লাহ তায়ালা মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণকরবেন। যার পানিতে সকল কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ী বিধৌত হয়ে আয়নার মত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। তারপর আল্লাহর পক্ষ হতে ভূমির প্রতি নির্দেশ হবে, “তোমার উদ্ভিদ বের কর, ফলমূল বৃদ্ধি কর, বরকত কল্যাণ ফিরিয়ে দাও।” তখন ভূমি উৎপাদিত আনারগুলো এত বড় হবে যে, এক আনারের অংশ বিশেষ একদল লোক খেতে পারবে। তার খোসাতে ছায়া গ্রহণ করতে পারবে। দুগ্ধবতী পশুতে এ পরিমাণ দুধের বরকত হবে যে, একটি উটনীর দুধ একটি সম্প্রদায়ের লোক পান করে পরিতৃপ্ত হতে পারবে। একটি ছাগলের দুগ্ধ একদল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। (সহীহ মুসলিম-২/৪০২)
ধু¤্র আচ্ছন্ন হওয়া :
কিয়ামতের চূড়ান্ত নিদর্শনগুলোর মধ্যে ধু¤্র প্রকাশ পাওয়া অন্যতম। হযরত ঈসা: (আ:) এর তিরোধানের পর কয়েকজন স¤্রাটের শাসনকাল পর্যন্ত সুরক্ষার প্রাধান্য থাকবে। অত:পর ধীরে দীরে অসততার প্রাধান্য পেতে থাকবে। ঐ সময়ে আকাশ হতে এক প্রকার ধু¤্র জগতকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। কুরআন মাজীদেও তার আলোচনা রয়েছে। এর ধোয়ায় মুসলমানগণ সর্দি কাশীতে আক্রান্ত হবে। আর কাফিরগণ বেহুঁশ হয়ে পড়বে। ক্রমাগত চল্লিশ দিন ধোয়াচ্ছন্ন থাকার পর আকাশ পরিষ্কার হবে।
(ক) আল্লাহপাক ইরশাদ করেন-সুতরাং ঐ দিনের অপেক্ষা কর, যেদিন আকাশে প্রকাশ্যে ধোয়া দেখা দিবে। (সূরা আদ দুখান-১০) (খ) হযরত হুযাইফা বিন ইসায়িদ বর্ণনা করেন, নবী করিম (স:) ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয়ই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না, যতক্ষণ না দশটি নিদর্শন প্রকাশ পাবে (তার মধ্যে) একটি হল ধু¤্র প্রকাশ পাওয়া। (সহীহ মুসলিম-২/৩৯৩) (গ) কিয়ামতের নিদর্শনাবলীর মধ্যে ধু¤্র প্রকাশ পাওয়া বিষয়টি কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলুল্লাহ দ্বারা প্রমাণিত। কিতাবুল্লাহ হল, উপরে উল্লেখিত সূরা দুখানের ১০নং আয়াত। সুন্নাত বা হাদীস হল- হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস, ইবনে উমার, হাসান ও যায়িদ বিন আলী (আ:) বলেন, উল্লেখিত আয়াতে দুখান দ্বারা ঐ ধুমকে বুঝানো হয়েছে যা কিয়ামতের পূর্বে প্রকাশ পাবে। তা কাফির মুনাফিকদের কানে প্রবেশ করবে, মুমিনগণ এতে শিশির বা সর্দি ঠা-া অনুভব করবে। সমগ্র ভূপৃষ্ঠ এমন একটি ঘরতুল্য মনে হবে যাতে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছে। (ঘ) হযরত হুজাইফাতুল ইয়ামান (রা:) এর হাদীসে উল্লেখ আছে যে, কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে একটি হল ধোয়া, যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যবর্তী স্থানকে ভরে দিবে। তা পৃথিবীতে চল্লিশ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হবে। ফলে মমিনগণ সর্দি বা ঠা-াতে আক্রান্ত হবে আর কাফিরগণ জ্ঞান বিলুপ্তির পর্যায়ে পৌঁছবে। মাদক গৃহীত ব্যক্তির মত তাদের মুখ, নাক, কান, চক্ষু ও পায়ুপথ দিয়ে ধু¤্র নির্গত হতে থাকবে। (শরহে আকিদায়ে সিফারিনিয়্যাহ-২/১২৮) (চলবে)
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে নওগাঁ
নির্বাচনের রোড ম্যাপ দেন অতিসত্বর : আবুল কালাম আজাদ
উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ করা হল ‘হট ডগ’
সিংগাইরে ১ সপ্তাহে আত্মহত্যা-৬
মির্জাপুরের অবৈধ সেই ৭ ইটভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
সীমান্তে সাহসী বাংলাদেশিরা, অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে পুরো দেশকে
দাবানলে পুড়ছে প্যারিস হিলটন, অ্যান্টনি হপকিন্সের কোটি টাকার বাড়ি
‘অতিথি দেবতার মতো’, এই নীতিতে হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ালো ভারত
ভূরুঙ্গামারী মহিলা কলেজের গভর্ণিং বডির সদস্য নির্বাচনে মনোনয়ন পত্রের মূল্য ১০ হাজার টাকা
গোয়ালন্দে পাখিদের নিরাপদ আবাসনে গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি বসাচ্ছেন একদল যুবক
নভোএয়ার এর ১২ বছরের সাফল্য উদযাপন
ফরিদপুরে বিল্ডিংয়ের দরজার পাশে পড়েছিল কেয়ারটেকারের হাত-পা বাঁধা মরদেহ
ডিএমপির ১২ ডিসিকে বদলি
আবারও অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে স্মিথ
‘৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া ২২৭ জনের বেশিরভাগই চাকরিতে যোগ দিতে পারবে’
বিএনপির ২২৭৬ নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে
ভোটার এবার আগের মত ভোট হবে না-মৌলভীবাজারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন
ইহুদি খ্রিস্টানদের স্বর্গরাজ্য পুড়ে ছাই হচ্ছে!
জালিয়াতির প্রশ্ন তুলে শিরোপা হারালেন মিস ইউনিভার্স
‘হাসিনা জানুয়ারিতে দেশে আসবেন দাবি সঠিক নয়’