মিরাজ : আল্লাহর নিদর্শন দর্শনে মহানবী (সা.)
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম

মহান আল্লাহ তা’লা তাঁর প্রিয় হাবীবকে যত মু’জিযা দান করেছেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম বিস্ময়কর মু’জিযা হলো ইসরা ও মি’রাজ। এজন্যই মি’রাজের আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন ‘সুবহানা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যা কেবল অত্যাশ্চর্য্য ঘটনার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মি’রাজ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের শ্রেষ্ঠ মু’জিযা। ইসলামের ইতিহাসে যেসব যুগান্তকারী ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তন্মধ্যে রাসূল (সা.)-এর মি’রাজের স্থান সর্বশীর্ষে। মহানবী (সা.) যখন জাগতিক ও পারিপার্শিক অসহায় অবস্থার সম্মুখীন হন, পিতৃব্য আবু তালিব ও বিবি খাদিজা (রা.) এর আকস্মিক ইন্তেকাল হয়, অন্যদিকে কাফেরদের অত্যাচার তাঁকে বিপর্যস্ত করে তোলে; তখন মি’রাজের মাধ্যমে আল্লাহ তা’লা স্বীয় হাবীবকে নিজের সান্নিধ্যে নিয়ে সান্তনা দেন। সম্মান প্রদর্শন করেন। এমন তিনটি মর্যাদায় ভুষিত করেন যা পূর্বে কেউ পাননি, আর কেউ কখনো পাবেন না। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন রাসূল (সা.)-কে যে তিনটি মর্যাদায় ভুষিত করেন তা হচ্ছে- ১. ‘সাইয়্যিদুল মুরসালীন’- সকল রাসূলগণের সরদার। ২.‘ইমামুল মুত্তাকীন’- সকল মুত্তাকীদের প্রতিনিধি। ৩.‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’- সর্ববিশ্বের করুণা। আল্লাহ তা’লা রাসূল (সা.)-কে এভাবেই সম্মান প্রদর্শন করেন, শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন এবং আদর্শ সমাজ সংস্কারের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। মুসলিম উম্মাহের জন্য রাসূল (সা.)-এর মি’রাজ অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। ইসলামী সংস্কৃতিতে প্রতিবছর মি’রাজ রজনী খুবই ভাবগাম্ভীর্যের সহিত পালিত হয়।
মি’রাজ শব্দটি ‘উরজুন’ ধাতু থেকে উৎসারিত। এর অর্থ- সিঁড়ি, ঊর্ধ্বারোহণ বা উর্ধ্বারোহণের বাহন। মি’রাজের একটি অংশ হলো ‘ইসরা’। কুরআনে শব্দটিকে ‘আসরা’ বলা হয়েছে। ‘ইসরা’ ধাতু থেকে ‘আসরা’ শব্দটি উদগত হয়েছে। এর অর্থ- রাতে নিয়ে যাওয়া বা রাত্রিকালীন ভ্রমণ। যেহেতু রাসূল (সা.)-এর মি’রাজ রাত্রিকালে হয়েছিল, তাই এটিকে ইসরা বলা হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা রাসূল (সা.)-কে এক রাত্রিতে বা রাত্রীর কিছু অংশে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত, এরপর সেখান থেকে সপ্তাকাশ, সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত ও জাহান্নাম এবং উর্ধ্বজগতের অন্যান্য বড় বড় নিদর্শন দর্শনের উদ্দেশ্যে জাগ্রত অবস্থায় স্বশরীরে রাত্রীবেলা ভ্রমণ করান। মাসজিদে হারাম থেকে মাসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণকে ‘ইসরা’ এবং সেখান থেকে ঊর্ধ্বে গমনকে মি’রাজ বলা হয়। নবী করীম (সা.)-এর মাক্কি জীবনের শেষলঘেœ নবুওতের একাদশ বছরে রজব মাসের ২৭ তারিখ রাত্রীতে মি’রাজের মহিমান্বিত ও বিস্ময়কর ঘটনা সংঘটিত হয়। আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতাগণ ‘বোরাক’ তথা আল্লাহর কুদরতি দ্রুতগতিসম্পন্ন বৈদ্যুতিক বাহনের মাধ্যমে নিয়ে যান মাসজিদে হারাম (বায়তুল্লাহ) থেকে মাসজিদে আকসা (বায়তুল মুকাদ্দাস) পর্যন্ত। তারপর উর্ধ্বলোকে পরিভ্রমণে মহানবী (সা.) বিশ্ব¯্রষ্টার নভোমন্ডলের অপরূপ দৃশ্যাবলি দেখে বিমোহিত হন। সপ্তাকাশে ফেরেশতারা তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং নবীগণের সাথে সাক্ষাত করেন। জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করেন। তিনি আল্লাহর বিধি-বিধান, ভাগ্যলিপি অবিরাম লিখে চলতেছে যে কলম সেটাকেও লিখনরত অবস্থায় দেখতে পান। ফেরেশতাদের গমণাগমণের শেষ সীমানা সিদরাতুল মুনতাহা দেখেন। সিদরা হচ্ছে- বদরিকা বৃক্ষ, এই বৃক্ষের মূল শিকড় ষষ্ঠ আকাশে এবং শাখা-প্রশাখা সপ্তম আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত। সেখানে আল্লাহ তা’লার নির্দেশে স্বর্ণের প্রজাপতি এবং বিভিন্ন রঙ-বেরঙের প্রজাপতি ইতস্ততঃ ছোটাছুটি করছিল। ফেরেশতারা স্থানটিকে ঘিরে রেখেছিলেন। সেখানে রাসূল (সা.) জিবরাইল (আ.)-কে স্বরূপে দেখতে পান। তাঁর ছয়শত পাখা ছিল। সেখান থেকেই একটি দিগন্তবেষ্টিত সবুজ রঙের কুদরতি বাহন ‘রফরফে’ (সবুজ রঙের গদিবিশিষ্ট পাল্কীকে রফরফ বলা হয়) আরোহণ করে কল্পনাতীত দ্রুতবেগে ৭০ হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে মোয়াল্লার সন্নিকটে এবং আল্লাহর দরবারে হাজির হন। সেখানে আল্লাহ তা’লার সঙ্গে সাক্ষাত ও কথোপকথন হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজে তাঁকে সালাম বলে অভিবাধন জানান এবং তুহফা (আত্তাহিয়্যাতু) প্রদান করে সম্মানিত করেন। আল্লাহ তা’লা রাসূল (সা.)-কে খলীল ও হাবীবরূপে গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর নৈকট্য, সান্নিধ্য ও দিদার লাভ করার পর জ্ঞান গরিমায় মহিয়ান হয়ে তার প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেন। করুণা ও শুভেচ্চার নিদর্শনস্বরুপ মি’রাজ রজনীর উপহার হিসেবে আল্লাহর বান্দাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে ওই রাতেই গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ হয়। পরে তা হ্রাস করে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেওয়া হয়। এবং এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াবের সমপরিমাণ করে দেওয়া হয়। এর দ্বারা সকল ইবাদতের মধ্যে নামাজের বিশেষ গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। (তাফসীরে মা’রিফুল কুরআন)।
মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমে ইরশাদ ফরমান- “পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মাসজিদুল হারাম হতে আল-মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা-বনী ইসরাঈল-১)। রাসূল (সা.)-কে আল্লাহর নিদর্শন দেখানোর বিবরণ দিতে গিয়ে আল্লাহ তা’লা বলেন- “সিদরাতুল মুনতাহার কাছে, যার কাছে রয়েছে মু’মিনদের বসবাসের ঠিকানা জান্নাত; সে সেদরাটি তখন যেরকম জ্যোতি দ্বারা আচ্ছন্ন হওয়ার সেরকম আচ্ছন্ন ছিলো, এখানে তাঁর (রাসূল সা.) কোন রকম দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং তার দৃষ্টিও সীমালঙ্ঘন করেনি। অবশ্যই সে তার মালিকের বড় বড় নিদর্শনসমুহ দর্শন করেছে।” (সুরা নাজম- ১৪ থেকে ১৮)।
একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে মি’রাজের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। হজরত ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- ‘রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে হঠাৎ আমার কাছে জিবরাইল (আ.) একটি সাদা রঙের ‘বোরাক’ নিয়ে উপস্থিত হলেন। আমি এতে আরোহন করলাম, অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং সেখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করলাম। এরপর আমি মসজিদ থেকে বের হলাম। তখন জিবরাইল (আ.) একটি শরাব ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার সামনে উপস্থিত হলেন। তখন আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি ফিতরাতকেই গ্রহণ করেছেন।’ (মুসলিম)।
শিক্ষক, সভাপতি : ইসলামী তরুণ সংঘ, শাহপরান (রহ.), সিলেট।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বৃষ্টিস্নাত দিনে মোহামেডানের হার, জয়ের শীর্ষস্থান মজবুদ আবাহনীর

চলন্ত বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছিনতাইকারী আটক

ফুলপুরে অবৈধভাবে মজুদকৃত ৩৯ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ১ জনকে জরিমানা

দাউদকান্দির বানিয়াপাড়ার দরবার শরীফে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে

সুনামগঞ্জে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

সয়াবিন ও শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় খরিপ মৌসুমে ১০৬৮০ জন কৃষক পাচ্ছেন ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৫ টাকার প্রণোদনার বীজ সার

চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গো গ্রীন সেন্টার পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি

‘র’ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

কিমিয়া সাদাত কমিউনিটি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী

মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ভারতকে আহ্বান বাংলাদেশের

পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ

মেয়ে সন্তানের জন্য একের অধিক ছাগল দিয়ে আকিকা করা প্রসঙ্গে।

সখিপুরে গৃহবধূ হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী গ্রেফতার

কাতারে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন দুই নারী ক্রিকেটার ও ফুটবলার

আমরা সকলকে নিয়ে বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব : অনুদান হস্তান্তরকালে নারায়ণগঞ্জের ডিসি