দিনাজপুরের লিচু
০৩ জুন ২০২৩, ০৯:২০ পিএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩, ০১:০২ এএম
লিচুর জন্য বিখ্যাত দিনাজপুর। এখানকার লিচু স্বাদে-রসে অতুলনীয়। জমির উর্বরতার কারণে দিনাজপুরের মাটিতে ধান, গম, ভুট্টাসহ সকল ধরনের ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। সুগন্ধী কাঠারী চাল থেকে রসে টুইটুম্বর বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু’র সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া না গেলেও বহুকাল থেকেই দিনাজপুরে লিচুর আবাদ হয়ে আসছে বলে বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। সূত্র মতে, বিশ্বে প্রথম ১০৫৬ সালে ফল চাষের উপর লেখা বইয়ে স্থান পেয়েছিল লিচু। সে সময়ে রাজা-বাদশাহ, রানী-বেগমদের মন জয় করতে লিচু ছিল উপহারের অন্যতম উপকরণ। মূলত দক্ষিণ চীনে লিচুর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। ফসলের ক্রম বিন্যাসে দিনাজপুর অঞ্চলে এর বিস্তৃতি ঘটে। স্থান ভেদে মাটির প্রকৃতি ও উর্বরা শক্তির কারণে বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদিত হয়ে থাকে। দিনাজপুরও এর ব্যাতিক্রম নয়। সমতল ভূমি বেষ্টিত দিনাজপুর জেলায় আম-লিচুর আবাদ আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে। একদা এই জেলায় প্রসিদ্ধ লিচু হিসেবে বেদেনা লিচু ছিল বিখ্যাত। দিনাজপুর শহরের দক্ষিণ উপকণ্ঠ মাশিমপুর ও তার আশপাশ এলাকা ছিল এই বেদেনা লিচুর উৎপাদনস্থল। স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন জার্নালের তথ্য মতে, লিচুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হার্টের জন্য উপকারী। ব্রেস্ট ক্যানসার নিরাময়ে সহায়ক এই লিচু। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে আছে ৬৬ গ্রাম ক্যালরি। আছে ফাইবার, যা চর্বি গলাতে সাহায্য করে। আছে আরো অনেক গুণাগুণ।
দিনাজপুরে বেদেনা ছাড়াও মাদ্রাজি, বোম্বে ও কাঠালি জাতের লিচু উৎপাদিত হয়। ছোট বিচি মাংসাসি বেদেনা লিচুই সর্বোউৎকৃষ্ট। ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীরা অনেক জাতের লিচু আবিষ্কার করে তা কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে চায়না-৩, মঙ্গলবাড়ী, মোজাফ্ফরপুরী, বারি লিচু-১ ও ৩ উল্লেখযোগ্য।
লিচুর গাছ রোপণের তিন থেকে ৫ বছরের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়। আগে প্রতিটি গাছে ৮০ থেকে ১৫০ কেজি বা ৩২০০ থেকে ৬০০০ লিচু পাওয়া যেত। হালে এর পরিমাণ অনেক বেড়েছে। ভালো ফলনের জন্য গুটি কলমের চারা গাছ সর্বাধিক হলেও বিজ্ঞানের অভূত সাফল্যের কারণে জোড় কলম, কুঁড়ি সংযোজন, ছেদ কলমসহ বিভিন্নভাবে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। কলম উৎপাদনে তেমন কোনো ব্যয় হয় না। কেবল যতœ সহকারে উৎপাদিত কলমের শিকড় গজানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তার পর গর্ত খুঁড়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ সার প্রয়োগের কিছুদিন পর সেই গর্তে কলমের চারা পুঁতে দিলেই গাছ বাড়তে থাকে। চারার আকার ভেদে ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই ফলন আসতে শুরু করে। অনেক ক্ষেত্রে গর্তে পুঁতার আগেই চারা অবস্থায় ফলন দেখতে পাওয়া যায়। রোপণের ক্ষেত্রে ১০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা অতি উত্তম।
অন্যান্য ফসলের মতো লিচুর বাড়ন্ত ফলন, বোটা মজবুতসহ বিভিন্ন কারণে ভিটামিন, বিষ প্রয়োগ করা হতো। সাম্প্রতিককালে ইশ্বরদী এলাকায় কীটনাশকের পরিবর্তে চার্জওয়াটারের নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে লিচুকে বিষমুক্ত ফল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পন্থা উদ্ভাবিত হয়েছে। যার সুফল কৃষকেরা পাচ্ছে বলেও স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে। এবারের প্রচন্ড তাপদাহ থেকে লিচুকে রক্ষায় এই চার্জওয়াটার অনেকটাই সাফল্য এনে দিয়েছে লিচু আবাদে।
একসময়ে রুচিকর রসালো লিচু ছিল মূলত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে আপ্যায়ন, বিতরণ বা উপহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অর্থনৈতিক চাহিদার সাথে ৭০ দশক থেকে বাণিজ্যিক তথা বিক্রির মাধ্যমে সংসারের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ হতে থাকে। বয়োজ্যৈষ্ঠদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বেদেনা লিচু ছাড়া অন্য কোনো লিচুই বিক্রি হতো না। বেদেনা লিচু বিক্রি হতো ৫০ থেকে ১০০ টাকা শ’ হিসাবে। বর্তমানে এই বেদেনা ও চায়না-৩ লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি শ নি¤েœ ৬’শ এবং ঊর্ধ্বে ১৮০০ টাকা। মাদ্রাজি বা বোম্বে নি¤েœ ২৫০ থেকে ৪’শ টাকা প্রতি শ’। শুধু তাই নয় বেদেনা বা চায়না-৩ লিচু মৌসুমের শেষ ভাগে টাকা দিলে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। দিনাজপুরের বেদেনা ও চায়না-৩ থ্রি এখন ভিভিআইপি লিচু হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এই লিচু হয়ে গেছে উপহারের প্রধান উপাদান।
লিচুর কদর বাড়লেও এর সংরক্ষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। নেই কোনো বিশেষায়িত কোল্ড স্টোরেজ। ফলে প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে যতদিন গাছে রাখা যায় লিচু ততদিনই থাকে। পাক ধরার ১৫ দিনের মধ্যে লিচু পেড়ে নিতে হয় গাছ থেকে। গাছ থেকে পাড়ার পর সর্বোচ্চ ১০ দিন খাওয়ার উপযুক্ত থাকে। আধুনিক বিশ্বে উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র। লিচু সংরক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেখক: সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক ইনকিলাব, দিনাজপুর।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
বিষয় : year
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সজলকে ছাত্র জনতার ডিম নিক্ষেপ, পাঠানো হলো কারাগারে
গাবতলীতে বালুবাহী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক মহিলা নিহত
পঞ্চগড়ে শিক্ষার্থী নিয়ে শিশুস্বর্গের শীত আনন্দ উৎসব
টোল প্লাজায় ৭ জনকে চাকায় পিষে হত্যা: শোক ও ক্ষোভ নেটিজেনদের
ইয়েমেন বিমানবন্দরে হামলায় আহত জাতিসংঘ কর্মী উদ্ধার: ডব্লিউএইচও
গোপালগঞ্জে জেলা বিএনপি'র একাধিক কার্যালয় নিয়ে যা বললেন নেতৃবৃন্দ
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ দিতে আসার খবর ভিত্তিহীন : আইএসপিআর
সংস্কারের কারণে অনির্বাচিত সরকারের হাতে দিনের পর দিন দেশ চালাতে দিতে পারি না
‘বিআইডব্লিউটিএ’ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে নারায়ণগঞ্জে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন জেটি দিয়ে পণ্য খালাস
সংস্কারের নামে দিনের পর দিন অনির্বাচিত সরকারকে দেশ চালাতে দেওয়া যায় না: মির্জা ফখরুল
ময়মনসিংহে ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর সীরাতুন্নবী সম্মেলন চলছে
গণঅভ্যুত্থান না হলে আমি ওসি হতে পারতাম না
আটঘরিয়ায় খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা
চবি ভর্তি পরীক্ষার ফি যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার দাবি ছাত্রদলের
নাজিরপুরে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার
এভারকেয়ারে অবহেলায় গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগ
সাদপন্থি শীর্ষ নেতা জিয়া বিন কাসিমকে গ্রেপ্তার
জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন মিজানুর রহমান আজহারী
নীতীশ-সুন্দরের ব্যাটে ফলো-অন এড়ালো ভারত
বগুড়ায় বালু ব্যবসার দ্বন্দ্বে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা