১৬ ডিসেম্বর ওসমানীর হেলিকপ্টারে হামলা করল কারা?
১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
পূর্বকথন
ফরাসি সাহিত্যিক, রোমান্টিক রাজনীতিবিদ ও ফরাসি সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী আঁদ্রে মালরো স্প্যানিশ সিভিল ওয়ারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ষাটের দশকে নাইজেরিয়ায় বিয়াফ্রার যুদ্ধে মালরো বিয়াফ্রার বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। সেই যুদ্ধ হঠাৎ থেমে যাওয়ায় তাঁর কাছে বহু অব্যবহৃত অস্ত্র ছিল। মালরোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সেপ্টেম্বর মাসে ওসমানী সাহেব আমাকে ফ্রান্সে যাবার নির্দেশ দেন। ভারত ত্যাগের প্রাক্কালে ভারতীয় পুলিশ আমার ডায়েরিটি এবং কাস্টম কর্তৃপক্ষ দামি ক্যামেরাটা রেখে দিলেন।
প্যারিসের উপকণ্ঠে আঁদ্রে মালরোর প্রাসাদসম বাড়ি। আমার কাছে ছিল ওসমানী সাহেবের একটি চিঠি। চিঠিতে তিনি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে মালরোর সঙ্গে দেখা করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। চিঠিটি ভারতীয় পুলিশ পরীক্ষার নিমিত্তে রেখে দিয়েছিল। বিষয়টি জেনে লন্ডনস্থ ভারতীয় দূতাবাস চক্রান্ত করে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ফ্রান্স যাত্রায় বাধার সৃষ্টি করে। আমি একলা আঁদ্রে মালরোর সঙ্গে দেখা করি।
প্যারিস থেকে লন্ডন, লন্ডন থেকে কলকাতা ফেরার পরপরই ওসমানী সাহেব আমাকে লক্ষ্ণৌতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত খালেদ মোশাররফকে দেখে আসতে অনুরোধ করেন। খালেদ মোশাররফ নিজে আমাকে দেখতে চেয়েছেন। খালেদ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের অত্যন্ত প্রিয়জন। কলকাতা থেকে সরাসরি লক্ষ্ণৌর ফ্লাইট না পাওয়ায় দিল্লি হয়ে লক্ষ্ণৌ যাত্রা করি। দিল্লিতে কয়েকজন বিশিষ্ট বাঙালি ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তা সাক্ষাতে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, ‘সব ঠিক হয়ে গেছে, আপনারা ডিসেম্বরে ঢাকা ফিরতে পারবেন। প্রবাসী সরকারের সঙ্গে ভারতের চুক্তি হয়েছে।’ আশ্চর্য হলাম, ওসমানী সাহেব তো আমাকে কিছুই বলেননি।
লক্ষ্ণৌ সেন্ট্রাল কমান্ড হাসপাতালে খালেদ মোশাররফ আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘আমাকে লন্ডনে নিয়ে চলুন, ভারতীয়রা আমাদেরকে ভুটান-সিকিম বানাবে। তারা আমাদের চাইনিজ অস্ত্র নিয়ে ভারতীয় নিম্নমানের অস্ত্র দিচ্ছে, আমাদেরকে তাদের পদানত করে রাখার জন্য। আমি বললাম, ‘আপনার জন্য টিকিটের ব্যবস্থা তো আমিই করতে পারি, কিন্তু ভারতীয়রা আপনাকে ভারত ছাড়ার অনুমতি দেবে তো? বিষয়টি আমি সর্বাধিনায়ককে জানাব।’
ফেরার পথে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। দিল্লি-কলকাতার একটা ফ্লাইট লক্ষ্ণৌ হয়ে যায়। প্লেনে উঠে দেখি আমার পাশে আবদুস সামাদ আজাদ এমএনএ। তিনি দিল্লি থেকে উঠেছেন। তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তিনি ন্যাপ-ভাসানী দল করতেন। অনেকটা সময় জেলে ছিলেন। চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এলে, ওনার পুলিশ গার্ডকে আমাদের ক্যান্টিনে বসিয়ে ভালো করে খাওয়াতাম এবং সামাদ ভাইকে গোপনে তাঁর আগামসি লেনের বাসায় পাঠিয়ে দিতাম। স্ত্রীর সঙ্গে সারাদিন কাটিয়ে বিকেলে জেলে ফেরত যেতেন। তাঁর চিকিৎসাপত্রে পুনরায় পরের সপ্তাহে চিকিৎসার জন্য আসার নির্দেশ লিখে দেবার ব্যবস্থা করতাম। আমি তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র-সংসদের সাধারণ সম্পাদক, আমার দোর্দণ্ড প্রতাপ, আমি সবার প্রিয়। সামাদ ভাই বললেন, ‘তুমি কিন্তু আমাকে দেখোনি। কাউকে বলবে না। এয়ারপোর্টে আমার গাড়ি থাকবে, সেটা নিয়ে তুমি চলে যেও। আমার জন্য অন্য একটি গাড়ি থাকবে। তুমি আমার কথা কাউকে বলো না।’ আমার অনুসন্ধিৎসা বাড়ল, জিজ্ঞেস করলাম, ‘দিল্লিতে কী করলেন? কোনো চুক্তি হয়েছে কি?’ সামাদ ভাই উত্তর দিলেন না। আমার সন্দেহ দৃঢ় হলো। কলকাতা পৌঁছে সোজা থিয়েটার রোডে ওসমানী সাহেবের রুমে। রেগে বললাম, ‘দেশ তো বেচে দিয়েছেন’। তিনি আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। আমি খালেদ মোশাররফ ও আবদুস সামাদ আজাদের সঙ্গে আমার কথোপকথনের কথা বললাম। আবদুস সামাদ আজাদের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে তাঁদের সঙ্গে আলাপের বিস্তারিত তথ্য জানালাম। আরও জানালাম দিল্লির বিশিষ্টজন আমাকে কী বলেছেন। ওসমানী সাহেব সোজা প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন সাহেবের ঘরে ঢুকে উচ্চৈঃস্বরে বললেন, ‘ণড়ঁ ংড়ষফ ঃযব পড়ঁহঃৎু, ও রিষষ হড়ঃ নব ধ ঢ়ধৎঃু ঃড় রঃ.’ তাজউদ্দীন সাহেব কর্নেল ওসমানীকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন, নিচু স্বরে কী বললেন, আমি শুনতে পেলাম না। আমি দরজার বাইরে ছিলাম।
কয়েক দিন পরে উভয়ের মধ্যে পুনরায় বাগ্বিতণ্ডা ভারতীয় একটি প্রস্তাবনা নিয়ে। ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হলে আইনশৃঙ্খলা স্থাপনের জন্য বেশ কয়েকজন ভারতীয় বাঙালি প্রশাসনিক ও পুলিশ অফিসাররা বাংলাদেশের সব বড় শহরে নির্দিষ্ট মেয়াদে অবস্থান নেবেন। ওসমানী সাহেব বললেন, ‘এটা হতে পারে না, আমাদের বহু বাঙালি অফিসার আছেন। কেউ কেউ পাকিস্তানে আটকা পড়েছেন। এরা নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন।’
ওসমানী সাহেবের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীদের মতপার্থক্যের কথা জেনে ভারতীয়রা আরও সতর্ক হলেন। ওসমানী সাহেবকে তাঁরা কড়া নজরে রাখলেন। কাগজে-কলমে যৌথ কমান্ডের কথা থাকলেও বস্তুত তাঁরা ওসমানী সাহেবকে একাকী করে দিলেন। ভারতীয়রা সব কমান্ড নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করলেন। ওসমানী সাহেবের সঙ্গে ভারত কর্তৃপক্ষের সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটল।
হেলিকপ্টারে হামলা
পরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশি গেরিলাদের সঙ্গে নিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী অতর্কিতে সরাসরি যশোর সীমান্তে আক্রমণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে। যৌথ কমান্ড বাহিনীর অন্যতম এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর যশোর পরিদর্শনে বাধা সৃষ্টি করা হলে তিনি ছাত্রনেতা কে এম ওবায়দুর রহমান ও আমাকে ৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ যশোরের অবস্থা দেখে আসার জন্য নির্দেশ দেন। ওই দিনই আমরা যশোর ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে পড়ি। ভারতীয় সেনারা একের পর এক পাকিস্তানি অফিসারদের বাসস্থানের এসিসহ বিভিন্ন সামগ্রী, অস্ত্রাগার, এমনকি যশোর সিএমএইচের যন্ত্রপাতি লুট করছে। বলছে, ‘বেঙ্গল রেজিমেন্ট এত বৈভব ও আরাম-আয়েশে ছিল, কেন বিদ্রোহ করেছে?’ বিষয়টা ফোনে ওসমানী সাহেবকে জানানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে ৭ ডিসেম্বর আমি কলকাতা ফিরে আসি। ওবায়দুর রহমান তাঁর জেলা ফরিদপুরের পথে অগ্রসর হবার সিদ্ধান্ত নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। কলকাতায় পৌঁছে সঙ্গে সঙ্গে আমি পুরো বিষয়টি ওসমানী সাহেবকে জানানোর পর, তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে তাজউদ্দীন আহমদকে সেটা অবহিত করেন। ভীষণ দুঃখের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘তাহলে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তফাৎটা কোথায়?’ ওসমানী সাহেব বললেন, ‘বুঝতে পারছেন, ভারতীয়রা আমাকে কেন সরাসরি সমরাঙ্গনে যেতে দিচ্ছে না, তাদের উদ্দেশ্য ভালো না।’
কয়েক দিন অক্লান্ত চেষ্টার পর, কুমিল্লা হয়ে সিলেট পরিদর্শনের জন্য একটি বড় হেলিকপ্টার, সম্ভবত এম-৮ দেয়া হলো ব্রিগেডিয়ার গুপ্তের তত্ত্বাবধানে। ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে আমরা কুমিল্লা পৌঁছি। বিশ্রামের জন্য কুমিল্লা সার্কিট হাউসে পৌঁছে আমরা হতভম্ব হয়ে যাই। ওসমানী সাহেবকে হাত বাড়িয়ে ‘রিসিভ’ করছেন কয়েকজন ভারতীয় বাঙালি। একে একে পরিচয় দিলেন, ‘আমি মুখার্জি ওঅঝ, আমি গাঙ্গুলী ওচঝ, ইত্যাদি।’ তাঁরা বললেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে গতকাল এখানে পৌঁছেছি কুমিল্লা মুক্ত হবার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা দেবার জন্য। অবশ্য এখনও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে যুদ্ধ চলছে।’ ওসমানী সাহেব ভারতীয় অফিসারদের সঙ্গে সার্কিট হাউসে রাত্রি যাপন করতে রাজি না হওয়ায় আমরা ওয়াপদা গেস্ট হাউসে যাই। পরের দিন ভোরবেলা থেকে ওসমানী সাহেব কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা পরিদর্শনে বিভিন্ন পথে গেরিলাদের পাঠান এবং বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর সেনাদের সম্মুখ আক্রমণে উৎসাহ দান করেন। ফলে পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল ভেঙে যায়। পরের দিনই তারা আত্মসমর্পণ করে। খবর পাই, ঢাকার পতন আসন্ন। আমরা ঢাকা যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি।
১৬ ডিসেম্বর সকালে ব্রিগেডিয়ার গুপ্ত জানালেন, আজ ঢাকায় পাকিস্তান সেনারা আত্মসমর্পণ করবে। ভাবলাম নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের কাছে। কিন্তু আশ্চর্য, ওসমানী সাহেব একবারে চুপ, কোনো কথা বলছেন না। খটকা লাগল।
জেনারেল ওসমানীর এডিসি আমাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামাল আমাকে বলল, ‘স্যার কখন রওনা হবেন, তা তো বলছেন না। জাফর ভাই, আপনি যান, জিজ্ঞেস করে সময় জেনে নিন। অধীর আগ্রহে আমরা সবাই অপেক্ষা করছি।’ আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করায় ওসমানী সাহেব বললেন, ‘ও যধাব হড়ঃ ুবঃ ৎবপবরাবফ চগ’ং ড়ৎফবৎ ঃড় সড়াব ঃড় উধপপধ.’ আমি বললাম, ‘আপনাকে অর্ডার দেবে কে? আপনি তো মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক।’ ওসমানী বললেন, ‘ও ফবপরফব ঃধপঃরপং, সু ড়ৎফবৎ রং ভরহধষ ভড়ৎ ভরৎরহম, নঁঃ ও ৎবপবরাব ড়ৎফবৎং ভৎড়স ঃযব পধনরহবঃ ঃযৎড়ঁময চগ, গৎ. ঞধলঁফফরহ অযসবফ.’ কথাগুলো বললেন অত্যন্ত বিষণ্ন কণ্ঠে। পরিষ্কার হলো তিনি আসন্ন ঢাকা পতনের সংবাদ জানেন এবং প্রবাসী সরকারের নির্দেশের অপেক্ষা করছেন। আমাদের অস্থিরতা বাড়ছে আর বাড়ছে। শেখ কামাল বারবার আমাকে চাপ দিচ্ছে পুনরায় ভালো করে বুঝিয়ে বলে ওসমানী সাহেবকে রাজি করাতে ঢাকা রওনা হবার জন্য। ঘণ্টাখানেক সময় পরে, পুনরায় ওসমানী সাহেবের সামনে দাঁড়ানোর পরপরই তিনি অত্যন্ত বেদনার্ত কণ্ঠে যা বললেন তার মর্মার্থ হলো, ‘আমার ঢাকার পথে অগ্রসর হবার নির্দেশ নেই। আমাকে বলা হয়েছে পরে প্রবাসী সরকারের সঙ্গে একযোগে ঢাকা যেতে, দিনক্ষণ তাজউদ্দীন সাহেব জানাবেন। গণতন্ত্রের আচরণে যুদ্ধের সেনাপতি প্রধানমন্ত্রীর অধীন, এটাই সঠিক বিধান।’ মনে হলো, তিনি জেনেশুনে বিষপান করছেন। পরে ব্রিগেডিয়ার গুপ্তকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সিলেটের কী অবস্থা?’ ব্রিগেডিয়ার গুপ্ত জানালেন ‘সিলেট ইজ ক্লিয়ার’। ওসমানী বললেন, ‘তাহলে চলুন আমরা সিলেট যাই, সেখানে গিয়ে আমার পিতামাতার কবর জিয়ারত করব, শাহজালালের পুণ্য মাজারে আমার পূর্বপুরুষরা আছেন।’ ওসমানী সাহেব শেখ কামালকে ডেকে সবাইকে তৈরি হতে বললেন। আধাঘণ্টার মধ্যে আমাদের আকাশে নিরুপদ্রব যাত্রা। ভারতীয় এম-৮ হেলিকপ্টারে সিলেটের পথে চলেছি। পরিষ্কার আকাশ। হেলিকপ্টারের যাত্রী জেনারেল ওসমানী ও তাঁর এডিসি শেখ কামাল, মুক্তিবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল এম এ রব এমএনএ, রিপোর্টার আল্লামা, ব্রিগেডিয়ার গুপ্ত, ভারতীয় দুই পাইলট এবং আমি। কেউ কথা বলছেন না, সবাই নীরব।
অতর্কিতে একটি প্লেন এসে চক্কর দিয়ে চলে গেল। হঠাৎ গোলা বিস্ফোরণের আওয়াজ, ভিতরে জেনারেল রবের আর্তনাদ। পাইলট চিৎকার করে বলল, ‘উই হ্যাভ বিন অ্যাটাকড।’ রবের ঊরুতে আঘাতের পরপরই তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলো। আমি এক্সটার্নাল কার্ডিয়াক ম্যাসাজ দিতে শুরু করি। পাইলট চিৎকার করলেন, ‘অয়েল ট্যাংক হিট হয়েছে, তেল বেরিয়ে যাচ্ছে, আমি বড়জোর ১০ মিনিট উড়তে পারব।’ কো-পাইলট গুনতে শুরু করলেন– ওয়ান, টু, থ্রি... টেন... টুয়েন্টি ... থার্টি ... ফোরটি ... ফিফটি ... নাইন সিক্সটি-ওয়ান মিনিট গন। এভাবে মিনিট গুনছেন উদ্বিগ্ন চিন্তিত সহ-পাইলট। অন্য পাইলট ধীরস্থিরভাবে পাইলটের আসনে বসা। ওসমানী সাহেব লাফ দিয়ে উঠে, অয়েল ট্যাংকের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলেন, ‘জাফরুল্লাহ্, গিভ মি ইয়োর জ্যাকেট’। আমি আমার জ্যাকেটটা ছুড়ে দিলে, ওসমানী সাহেব সেটা দিয়ে তৈলাধারের ছিদ্র বন্ধের চেষ্টা করতে থাকলেন। বললেন, ‘উড় হড়ঃ ড়িৎৎু সু নড়ুং, ও শহড়ি ঝুষযবঃ ষরশব ঃযব ঢ়ধষস ড়ভ সু যধহফং.’ কার্ডিয়াক ম্যাসাজ দেবার ফাঁকে ফাঁকে আমি ভাবছিলাম, আজ ১৬ ডিসেম্বর, দেশ স্বাধীন হবে। কিন্তু আজ আমরা সবাই কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যাব। আগামীকাল পত্রিকায় শোক সংবাদ কলামে কী লেখা হবে? বীরের মৃত্যু, অপঘাতে মৃত্যু? কার গোলাতে এই দুর্ঘটনা? পাকিস্তানের সব বিমান তো কয়েক দিন আগেই ধ্বংস হয়েছে কিংবা গ্রাউন্ডেড করা হয়েছে। তাহলে আক্রমণকারী বিমানটি কাদের? গোলা ছুড়ে সেটি কোথায় চলে গেল? গৌহাটির পথে? চিন্তা বিঘ্নিত হলো ওসমানী সাহেবের চিৎকারে। নিচে একটা জায়গার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, ‘খধহফ যবৎব’। আরও বললেন, ‘খবঃ সব ষধহফ ভরৎংঃ ঃড় ঃধংঃব ঃযব বহবসু ধঃঃধপশ রভ ঃযবৎব রং ড়হব’। লাফ দিয়ে তিনি নামলেন, ‘ধরুন’ বলে আমি জেনারেল রবকে ছুড়ে দিলাম, সঙ্গে নামলাম নিজেও। আমার পিছনে পিছনে অন্যরা লাফিয়ে নামলেন। হেলিকপ্টারটা আমাদের চোখের সামনে দাউ দাউ আগুনে পুড়ছে।
হঠাৎ গ্রামবাসী এসে ওসমানী সাহেবকে ঘিরে ধরল, ‘দুশমন আইছে রে বা দুশমন আইছে, দুশমনরে ধর।’ পরপরই ভালো করে তাকিয়ে দেখে হঠাৎ চিৎকার করে উঠল, ‘আমাদের কর্নেল সাব রে বা।’ তারপর তাঁকে নিয়ে নাচতে শুরু করল।
জনতার বিজয় উল্লাসে যেন জেনারেল রবের ঘুম ভাঙল, তিনি চোখ খুলে তাকালেন, দেখলেন আমার মুখে হাসি। জেনারেল রব সবাইকে বলতেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ্ আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছেন।’ হেলিকপ্টারে ব্রিগেডিয়ার গুপ্ত এবং শেখ কামালও সামান্য আহত হয়েছিলেন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কখনও এই ঘটনার তদন্ত প্রকাশ করেননি। ভারত সরকার সব সময় এই ঘটনার ব্যাপারে নীরব, নিশ্চুপ।
স্বাধীনতার বিজয় উল্লাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারও দুর্ঘটনাটির তদন্তের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করেনি।
লেখক : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা (লেখক কিছুদিন আগে ইন্তেকাল করেছেন)
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চকরিয়ায় বাইক-ডাম্পার মুখোমুখি সংঘর্ষে বায়ো ফার্মার এরিয়া ম্যানেজার নিহত
প্রকাশনা জালিয়াতি করে পদোন্নতির অভিযোগ রাবি অধ্যাপক সাহালের বিরুদ্ধে
সখিপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
ইবিতে র্যাগিংয়ের ঘটনা, প্রতিবেদন চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
‘মানুষ একদিন বলবে আ.লীগ নামে কোন দল ছিল না সন্ত্রাসীরাই আ.লীগ’
হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার, বরখাস্ত ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল
পান্তকে রেকর্ড দামে কিনে নিল লাক্ষ্ণৌ
তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন
বিএনপি’র জন্য ফাঁকা মাঠ এমন ভাবার কোন অবকাশ নাই: তারেক রহমান
রায়গঞ্জে বাস চাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু
ঈদগাঁওতে ছোট ভাইয়ের আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু
টেকনাফে সাগরে ভেসে যায় তিন শিশু, মৃত্যু উদ্ধার-১, নিখোঁজ দুই
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ
একতরফা ও গায়ের জোরের নির্বাচন দেখতে চাই না: প্রধান নির্বাচন কমিশনার
যশোরের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
নয়াদিল্লি-লন্ডনের নতুন প্রেস মিনিস্টার ফয়সাল ও আকবর
বিএনপির কেউ অন্যায় করলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে: রিজভী
আবারও আলোচনার তুঙ্গে শাকিব-পূজা,নেটিজেনদের দৃষ্টি কেড়েছে দুজনের ম্যাচিং পোশাক
কর্মসূচি স্থগিত করলেন অটোরিকশা চালকরা
মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব আন্দালিভ রহমান পার্থের