বড় বড় মেগা প্রকল্পের ছিটে ফোঁটাও লাগেনি উত্তরের ৮ জেলায়
০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

ইংরেজী ক্যালেন্ডারের ৩১ ডিসেম্বরের সূর্যাস্ত আরো একটি বছরের সমাপ্তি ঘটিয়ে আজকের সূর্যোদয়ের মাধ্যমে নুতন আরো একটি বছরের সূচনা করল। ফেলে আসা বছরে কী পেলাম আর কী হারালাম তার হিসাব-নিকাশ করাটাই স্বাভাবিক। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, উড়াল সড়ক, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ অনেক মেগা প্রকল্পের কথা উত্তরবঙ্গের মানুষ মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছে। কিন্তু খাদ্যে উদ্বৃত্ত দিনাজপুরসহ রংপুর বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলো বরাবরই থেকেছে অবহেলিত। দেশের খনিসমৃদ্ধ জেলা দিনাজপুর, নুড়ি পাথরসমৃদ্ধ ও সমতল ভূমির চা চাষ নিয়ে গর্বিত পঞ্চগড়, গম আবাদে সমৃদ্ধ ঠাকুরগাঁও, তিস্তার অববাহিকায় অবস্থিত নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় কী নেই বা কী হয় না? যা কিছুই হয় এবং হচ্ছে তার সবটুকুই মহান রব্বুল আলামীনের দয়া-রহমতের ভা-ার।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে এসব জেলার উন্নয়নের জন্য কী করা হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে দূরের কথা, সুযোগ-সুবিধার অভাবে বেসরকারীভাবেও বৃহৎ কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি। বরং বন্ধ হয়েছে সেতাবগঞ্জ সুগারসহ তিনটি চিনির মিল, দিনাজপুর টেক্সটাইলসহ অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান। তবে অন্ধকারের মধ্যে কিছুটা আলোর ঝলকানিও লেগেছে গত কয়েক বছরে ঠাকুরগাঁও ও রংপুর জেলায়। চালু হয়েছে বন্ধ থাকা রেশম কারখানা। টাঙ্গাইল থেকে রংপুর পর্যন্ত সুপ্রশস্থ আধুনিক সড়ক কাঠামো, রংপুরে এসেছে গ্যাস লাইন। কিন্তু অপার সম্ভাবনাময় জেলা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে তাকালে একবাক্যেই বলা যাবে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের খতিয়ানে নেই জেলা শহরের রাস্তাঘাট বা নালা নর্দমার কথা।
পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর নিয়ে ব্রিটিশ শাসনামলের দিনাজপুর জেলা শহর। বৃহত্তর এই জেলায় বৃহৎ শিল্প বলতে তিনটি সুগার মিল ছাড়া আর কিছুই গড়ে ওঠেনি। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দিনাজপুর টেক্সটাইল মিল, ঠাকুরগাঁওয়ে রেশম কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। শিল্পে অনগ্রসর এ জেলার প্রাকৃতিক সম্পদ আর কৃষিজ সম্পদ দিয়ে দেশে গড়ে উঠেছে হাজারো শিল্প। পঞ্চগড়ের নুড়ি পাথর দেশের অবকাঠামো ও সড়ক নির্মাণের অন্যতম অপরিহার্য পণ্য হিসাবেই ব্যবহার হয়ে এসেছে এবং আসছে। একটি বাদে দুটি চিনিকল, দিনাজপুর টেক্সটাইল মিল ও রেশম কারখানাটি বন্ধ গেছে গত ১৫ বছরে। নির্মাণ হয়নি নতুন কোনো শিল্প।
তবে সম্প্রতি ২০২৩ সালের শেষার্ধে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানাটি চালু করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে বর্তমান সরকারের শাসনামলে স্কুল কলেজ, মাদরাসার ভবন নির্মাণ হয়েছে অনেক, কিন্তু কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। একই অবস্থা নীলফামারী, রংপুরসহ বিভাগের অন্যান্য জেলাগুলোরও। তবে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকলে এ অঞ্চলের কৃষকদের বেঁচে থাকার সংগ্রামকে বেগবান করেছে। সমতল ভূমিতে চা আবাদ পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। আবাদ হচ্ছে কমলা, ড্রাগন, মালটার মত সুস্বাদু এবং আমদানিনির্ভর ফসল।
দিনাজপুরের পার্বতীপুরের রেলওয়ের ওয়ার্কশপটি অর্থাভাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না। ৮০ দশকে আলোর মুখ দেখা বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি ও মধ্যপাড়া পাথর খনি চালু থাকলেও বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তে পঞ্চগড়ের শালবাহান তেল খনির মতো আলোর মুখ দেখতে পারেনি ফুলবাড়ী, দীঘিপাড়া কয়লা খনি, হাকিমপুরে লোহার খনি। ব্রিটিশ শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত হালে প্রথম শ্রেণীর মর্যাদাপ্রাপ্ত দিনাজপুর পৌরশহরের রাস্তাঘাট এখন সুস্থ লোকের চলাচলের অনুপোযী হয়ে পড়েছে। একসময়ের পরিছন্ন এ শহরের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভাঙ্গা-চোরা রাস্তা ও ময়লার ভাগাড়ের দৃশ্য। পৌরসভার হিসাব মতে, প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভার মোট ড্রেনের দৈর্ঘ্য ১৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ইট দিয়ে তৈরি পাকা ড্রেন ৪৪.৪৩ কিলোমিটার, কংক্রিট দিয়ে তৈরি পাকা ড্রেন ১৪.৮০ কিলোমিটার এবং কাঁচা ড্রেন ১১৬.৯০ কিলোমিটার। এছাড়াও বক্স কালভার্ট ৩২১টি এবং পাইপ কালভার্ট ৩০টি। সাড়ে ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দিনাজপুর পৌরসভায় কাগজ-কলমে এই ১৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেন থাকলেও বেশিরভাগ ড্রেনেই হয়ে পড়েছে অকার্যকর। দিনাজপুর পৌর এলাকায় মোট রাস্তার পরিমাণ ১৭৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা রাস্তা ১২২ কিলোমিটার, আরসিসি রাস্তা ১.০২ কিলোমিটার, এইচবিবি রাস্তা ৬ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা প্রায় ৪৬ কিলোমিটার। কাগজে কলমে পাকা রাস্তা বলা হলেও সংস্কারের অভাবে বেশিরভাগ রাস্তাই হয়ে পড়েছে জরাজীর্ণ।
নীলফামারী দিয়ে বয়ে চলা তিস্তা নদী এ অঞ্চলের মানুষের যতটা না উপকারে আসছে তার চেয়ে বেশি কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ডিমলায় তৈরি তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প রংপুর বিভাগের অধিকাংশ এলাকায় সেচ সুবিধা দেয়ার কথা থাকলেও ভারতের উজানে ভারতের নির্মিত গজলডোবা বাঁধ সেই আশায় গুড়ে বালি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তিস্তার ন্যায্য হিসাবে যতটুকু পানি পাওয়ার কথা তাও দিচ্ছে না ভারত। এ কারণে তিস্তা নদী শুষ্ক মৌসুমে মরা খালে পরিণত হচ্ছে।
তিস্তাকে নিয়ে চীন সরকারের মহাপরিকল্পনাও মাঝ পথে থমকে গেছে। তবে বর্তমান সরকারের শাসনামলে টাঙ্গাইল থেকে রংপুর পর্যন্ত ৪ লেনের সড়ক নির্মাণ, রংপুরে গ্যাস পাইপ স্থাপন উল্লেখযোগ্য অবদান। তবে নতুন শিল্প স্থাপন না হলেও পুরাতন শিল্প সৈয়দপুর রেল কারখানা, দিনাজপুর ট্রেক্সটাইল মিল, চিনিকল এবং উত্তরা ইপিজেডে নুতুন শিল্প স্থাপনের অগ্রগতি না থাকায় এ এলাকার মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ছাত্রদলের সহ সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করায় কুপিয়ে আহত করলো সভাপতি-সম্পাদক

সর্বাধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরি করছে উত্তর কোরিয়া

লৌহজংয়ে বিএনপির পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা

নতুন বছরের প্রথমার্ধে এর মাধ্যমে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরে আসবে - প্রিন্স

আন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ্রেপ্তার

কুমিল্লায় ক্রেতা-বিক্রেতার কলরবে মুখরিত পহেলা বৈশাখের মাছের মেলা

টানা দুই দিন সংঘর্ষ, ১৪৪ ধারা জারি রাজৈরে

নির্বাচনের রোডম্যাপের সমাধান হবে আলোচনার মাধ্যমে: মির্জা ফখরুল

মহেশখালীতে ছাত্রলীগ নেতার হাতে বিএনপির কর্মী খুন -রাজনীতি নিয়ে কথা কাটাকাটি

কিশোরগঞ্জে আনন্দ আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন

প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শাহরাস্তিতে জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা আটক

সুনামগঞ্জে নানান আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

আটঘরায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নিহত আহত ২ জন

নববর্ষে বিএনপির আকাঙ্খা দ্রুত ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া-কাজী শিপন

ইসরায়ীলের সুবিধাভোগী ছিল স্বৈরাচারী আ‘লীগ- নববর্ষে বিএনপি নেতা মাহবুব চৌধুরী

ড. ইউনূসের অনাড়ম্বর আয়োজনে নববর্ষের শুভেচ্ছা, মুগ্ধ নেটিজেনরা

দুমকীতে কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে গাছ উপরে পড়ে আহত-২

দুই পক্ষের সংঘর্ষে এএসপিসহ অর্ধশত আহত, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ

ভারতীয় দুম্বা এবং ছাগল আটক করলো সিলেট বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়ন

মাগুরার শ্রীপুরে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার