লাশ উদ্ধার আর জানাজা পড়ে পড়ে ক্লান্ত গাজাবাসী
০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
আজ থেকে ৮৬ দিন আগের ঘটনা। ৭ অক্টোবর শনিবারের সকাল। ইসরাইলের নারী-পুরুষ ব্যস্ত উৎসব উদযাপনে। এসময় তাদের ওপর প্যারাগ্লাইডিং করে আকাশ থেকে নেমে আসে শত শত হামাস যোদ্ধা। ‘আল-আকসা ফ্লাড’ নামে অভিযান পরিচালনা করে হামাস। এরা সেই সব নির্যাতিত-নিপীড়িত ও বন্দিত্বের শিকার মুসলিমদের প্রতিনিধি যারা প্রতিদিন বর্বর ইসরাইলি সরকার ও ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর দখল করে বাড়িঘর গড়ে তোলা ইহুদি অভিবাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত, মারধরের শিকার ও কারারুদ্ধ হচ্ছে। ৭৫ বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসা এসব নির্যাতনে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না পশ্চিমাদের যারা তাদের যারজ ইসরাইলকে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমদের মাঝখানে বসতি গড়ে দিয়ে এবং নানা ধরনের মারণাস্ত্রে পুষ্ট করে একটি খুনি রাষ্ট্রে পরিণত হতে সহায়তা করেছে। এরা ফিলিস্তিনিদের রক্ত পানে পশ্চিমাদের লাইসেন্সপ্রাপ্ত।
ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীর শাসন করে ফাতাহ গ্রুপ। আর অবরুদ্ধ গাজা ভূখ- শাসন করে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে হামাস। ইরান সমর্থিত হামাসের যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর যে হামলা পরিচালনা করে তাতে ইসরাইলের সৈন্য ও সাধারণ নাগরিকসহ নিহত হয় সাড়ে ১১শ’ ইহুদী। হামাস যোদ্ধারা পণবন্দি হিসেবে আটক করে নিয়ে যায় প্রায় আড়াইশ’ জনকে যাদের মধ্যে ছিল থাইল্যান্ড, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। হামাসের বিস্ময়কর আক্রমণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ইসরাইল তাৎক্ষণিকভাবে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং তাদের সর্বশক্তি দিয়ে গাজার ওপর বোমা হামলা শুরু করে। শুধুমাত্র হামাস
যোদ্ধাদের নির্মূল করার ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু করলেও তাদের বিমান হামলা, স্থল অভিযান ও লোহিত সাগর থেকে যুগপত আক্রমণে বোঝা যায় যে, তারা শুধু হামাসকে নির্মূল নয়, বরং পুরো গাজা ভূখ-কে ধ্বংসস্তূপ এবং সেখানে বসবাসকারী ২৩ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনির অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে এ অভিযান শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা বিলিয়ন বিলিয়ন নগদ ডলার, মারাত্মক সব মারণাস্ত্র এবং সমর্থন যুগিয়ে তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগারে পরিণত করেছে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডকে।
গাজার বিশাল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসা সেবা পরিচালনাকারী প্রায় সব হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে বর্বর ইহুদিরা। ছাড় দেয়নি জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণশিবিরও। এসব স্থানে মুহুর্মুহূ হামলা চালিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ২৩ হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিককে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ছিল প্রায় ৯ হাজার শিশু, ৭ হাজার মহিলা যাদের মধ্যে ছিল বহু গর্ভবতীও। বর্বর ইসরাইলিরা উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ গাজা থেকে উত্তরে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে ফিলিস্তিনিদের। ৮০ শতাংশের বেশি ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর হারাতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়িঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। কতশত ফিলিস্তিনির লাশ ধ্বংসপ্রাপ্ত বিল্ডিংয়ের নিচে চাপা পড়ে আছে তার কোনো হিসাব কারো কাছে নেই। ৫৬ হাজার আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছে বা নানাভাবে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন।
বিতাড়নের শিকার ফিলিস্তিনিরা খাবার, স্যানিটেশন এবং বিশ্রামের স্থানের অভাবে অপুষ্টিতে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে মারাত্মক রোগব্যধি এবং দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে শিশু এবং বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা। যেখানে রাত যাপনের মতো পরিস্থিতি নেই সেখানে সন্তান প্রসব কোথায় হবে, ডাক্তার সুবিধা পাবেন কিনা তা নিয়ে এক ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। মিসর থেকে রাফা সীমান্ত দিয়ে পর্যাপ্ত ট্রাক প্রবেশ করতে না দেয়ায় প্রতিদিন অর্ধেকেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে অভুক্ত থেকেই রাত পার করতে হচ্ছে।
৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভিযান শুরুর পর থেকে শুধু গাজায় ১০৬ জন সাংবাদিকের প্রাণ গেছে ইসরাইলি বর্বরতায়। বহু পরিবারের কোনো একজন সদস্যও পৃথিবীতে বেঁচে নেই। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভিযান শুরুর পর থেকে তাদের বোমা হামলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তিন শতাধিক কর্মী প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়াও জাতিসঙ্ঘের শতাধিক কর্মী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ রিপোর্ট লেখার দিন পর্যন্ত বিগত কয়েক দিনে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দুশ’ করে ফিলিস্তিনি অভিশপ্ত ইসরাইলিদের পোড়ামাটি নীতির শিকার হয়ে শাহাদাতবরণ করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালিয়ে গেলেও ভেটো পাওয়ারের বলে তা পাস হচ্ছে না। সর্বশেষ নিরাপত্তা পরিষদে ত্রাণ সরবরাহ সংক্রান্ত আরব আমিরাতের আনা একটি প্রস্তাব পাস হলেও তা পীড়িত পক্ষের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি। এমনকি যাদের ভোটে পাস হয়েছে তারাও এর ভবিষ্যত নিয়ে কোনো আশা ব্যক্ত করেননি। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো এড়াতে দায়সারা গোছের একটি প্রস্তাব পাস করা হয়েছে যার প্রশংসা করেছে খোদ ইসরাইলও।
এ প্রস্তাব পাসের পর থেকে অভিশপ্ত ইসরাইল যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশ্বের সকল প্রান্তের শান্তিকামী মানুষ গাজায় হামলা ও ফিলিস্তিনি নিধন বন্ধ এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তাকে থোড়াই কেয়ার করছে। বরং সোৎসাহে ঘনবসতিপূর্ণ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শাহাদতবারণকারীদের লাশ উদ্ধার এবং জানাজা আদায় করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন গাজাবাসী। লাশ দাফনের স্থান ও জিও ব্যাগের সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে একটি কাপড়ে তিন-চারটি লাশ জড়িয়ে গণকবরে দাফন করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ