ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভারতের অভিলাষ ষোলকলা পূরণ

উদার উজাড় ‘বন্ধুত্বের’ বিনিময়ে কী পেল বাংলাদেশ

Daily Inqilab শফিউল আলম

০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

ট্রানজিট এবং করিডোর। বাংলাদেশে দীর্ঘকাল আলোচিত-সমালোচিত বিতর্কিত ইস্যু। নিকটতম ‘বড় দেশ’ প্রতিবেশী ভারতের দীর্ঘদিনের আবদার-আহ্লাদ, অভিলাষ, নীল-নকশা, পরিকল্পনা, স্বপ্ন-সাধ যে অভিধায় বলা হোক না কেন; তা আর অধরা নয়। ট্রানজিটের সঙ্গে করিডোর সুবিধা করায়ত্ত করে নিয়েছে। ভারতের অভিলাষ পূরণ হয়েছে ষোলকলায়। যা এক সময়ে ছিল সোনার হরিণ। ছোটরা বড়দের কাছে স্বভাবতই আবদার করে থাকে। বড়রা আবদার-আহ্লাদ পূরণ করে। সমাজ-রাষ্ট্র-বিশ^-পরিবারের দিকে চোখ মেলে তাকালে তাই দেখা যায়। তবে ভারতের বেলায় ব্যতিক্রম। ভারত নিজস্বার্থে একের পর এক আবদার করেই আসছে বছর, যুগ ধরে। যার তালিকা দীর্ঘ এবং চলমান। আয়তনে ‘বড়’ প্রতিবেশী দেশ ভারতের অভিলাষের ফর্দ থেকে মুঠো মুঠো ভরে দিয়ে আসছে উদার অথচ ছোট আয়তনের বাংলাদেশ। ভারত অবশ্য অপর দুই ছোট আয়তনের প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটানের কাছ থেকেও অতীত থেকে পেয়েই আসছে বেশি। দেওয়ার রেকর্ড নগণ্য। ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশসহ অন্তত এই তিন পড়শীর চাওয়া আর পাওয়া এবং ‘বড়ত্বে’র ব্যালেন্স শিট তথা হিসাব-নিকাশ মিলাতে গেলে কী দাঁড়ায় তা সবারই জানা।
ভারতের দীর্ঘকালের আকাক্সক্ষা : ‘মেগা অর্জন’
ভারতের দীর্ঘদিনের অভিলাষ কিংবা আবদার পূরণ হয়ে গেলো ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধায় ‘মেগা অর্জন’ দিয়ে। সদ্যবিদায়ী ২০২৩ সালে ট্রানজিট ও করিডোর চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয় পুরোদমে। ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ অথবা ‘কানেকটিভিটি’ কথামালা দিয়ে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নেয়া হয়। চুক্তি অনুসারে ‘ভারতের পণ্যÑ যাবে ও আসবে ভারতেই’। বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করছে ভারত। সেখান থেকে দেশের সড়ক মহাসড়ক, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে সীমান্তের বিভিন্ন স্থলবন্দর, পয়েন্ট দিয়ে পৌঁছে যাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের আটটি রাজ্যে এবং অন্যান্য অঞ্চলে। মোটা দাগে একতরফা বা একমুখী (ভারতমুখী) ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা।
বিদায়ী ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দরদ্বয় দিয়ে এবং বিভিন্ন মহাসড়ক ও সড়কপথ হয়ে করিডোর রুটসমূহ অতিক্রম করে ‘ভারতের পণ্য ভারতে’ যাওয়া ও আসা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরফ থেকে বন্দরে অগ্রাধিকার, পরিবহনকালে নিরাপত্তাসহ চুক্তিকৃত যথারীতি সুবিধাদি দেয়া হয়েছে। ট্রান্সশিপমেন্ট, ট্রানজিট অথবা করিডোর সুবিধাদান দেশে দেশে নতুন কিছু নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একতরফা একমুখী এহেন অভিনব ট্রানজিট-করিডোর ব্যবস্থা আগে দেখেনি কেউ। বলা বাহুল্য, এই চুক্তিতে বাংলাদেশের পণ্যসামগ্রীর ভারতে প্রবেশাধিকারের ব্যবস্থাটা রাখা হয়নি। ট্রানজিট-করিডোর সুবিধার ফলে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বসহ বিভিন্ন ভূ-বেষ্টিত ও বন্দরবিহীন অঞ্চলে দেশটির পণ্যসামগ্রী, যাত্রী ইত্যাদি পরিবহনের ক্ষেত্রে দূরত্ব কমে গেছে সর্বোচ্চ ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ চার গুণ বাম্পার লাভ তাদেরই।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে আসীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহের মুখ্যমন্ত্রী ও নেতাদের ট্রানজিট-করিডোর সুবিধার মহাপ্রাপ্তির উচ্ছ্বাসে আনন্দে লাফঝাঁপ ভারতীয় মিডিয়ায় লক্ষ্যণীয়। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে সরাসরি ভারতের ট্রানজিট পণ্য এবং কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা নয়া রুটে যাত্রী স্বল্পতম দূরত্বে পরিবহনের লক্ষ্যে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন চালু হয়েছে। অন্যদিকে ফেনী নদীর উপর নির্মিত সেতু দিয়ে রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর ও সড়ক ট্রানজিট-করিডোরে ভারতের অনুকূলে নতুন মাত্রা সংযোজন হয়েছে। ভারতকে দেয়া ট্রানজিট-করিডোর সুবিধার বিনিময়ে কী পাচ্ছে বাংলাদেশ? ট্রানজিট বাবদ নামেমাত্র কিছু চার্জ-ফি-মাশুল ধার্য্য করা হয়েছে। তাও ডলারের পরিবর্তে টাকায় নির্ধারিত। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি।
‘বন্ধুত্বের বিনিময়’ মিলছে না ছিটেফোঁটা
উদার বাংলাদেশ বন্ধুত্বের আবদার-অভিলাষ উজাড় করে দিয়েও ভারতের পক্ষ থেকে ছিটেফোঁটা ‘বন্ধুত্বের বিনিময়’ আসছে না। এমনকি মিলছে না ন্যায্য পাওনাদি। তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানি বন্টন, সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধ করা, বাংলাদেশের প্রতিকূলে হিমালয়সম বাণিজ্য ঘাটতি নিরসন, এদেশে উৎপাদিত উৎকৃষ্ট গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যসামগ্রীর উত্তর-পূর্ব ভারতের আটটি রাজ্যের ভোক্তাদের মাঝে ব্যাপক চাহিদা সত্বেও শুল্ক-অশুল্ক বাধা-প্রতিবন্ধকতায় রফতানির প্রবেশাধিকার আটকে রাখা, অপর দুই নিকট প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটানে পণ্য রফতানি এবং কম মূল্যে আমদানির সুযোগ বাধাগ্রস্ত করে রাখা, এই দুই দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে জটিলতা সৃষ্টি, শিলিগুঁড়ি সংলগ্ন কড়িডোর (চিকেন নেক তথা চিপা ক্ষুদ্র ভূখ-) সুবিধা কাজে লাগিয়ে চারদেশীয় (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান) পরস্পর বাণিজ্যিক সহযোগিতার অঙ্গীকার ও চুক্তি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত বিষয় বা সমস্যা-সঙ্কট ঝুলে আছে দীর্ঘকাল। নেপথ্যে ভারতের অসহযোগিতা ও অনুদার মনোভাবকে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী-শিল্পপতি মহল।
ভারতকে দেয়া ট্রানজিট থেকে বাংলাদেশের ‘প্রাপ্তির খাতা’ কীÑ এ প্রসঙ্গে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক সংবাদভাষ্যে (৫ মে, ২০২৩ইং) বলা হয়, ‘এখন পর্যন্ত ভারতকে দেয়া ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তির বিষয়টি সেভাবে দৃশ্যমান নয়। সে কারণেই একটা ধারণা বেশ জোরালো যে প্রায় একতরফাভাবে এসব সুবিধা দেয়া হয়েছে। ভারতের সাথে বিদ্যমান বড় বাণিজ্য ঘাটতি (যা এক হাজার ১৭০ কোটি ডলার), তিস্তাসহ ৫৩টি অভিন্ন নদীর পানি বন্টন বিষয়ে সুরাহা না হওয়া, সীমান্তে হত্যা শূণ্যতে নামাতে না পারাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সাথে সন্তোষজনক সমঝোতা না হওয়ায় ট্রানজিট সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীও বেড়েছে’।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আওয়ামী সিন্ডিকেট দমানো যায়নি
প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
জনশক্তি রফতানিতে কাক্সিক্ষত গতি বাড়েনি
পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেই
নাগরিক সেবায় দুই সিটির চ্যালেঞ্জ
আরও

আরও পড়ুন

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে

রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ