ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মাগুরার গ্রামে ফুলশোলা তৈরির ব্যস্ততা

Daily Inqilab সাইদুর রহমান

০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

মাগুরার শ্রীপুর উপজলোর বরালিদহ, শালিখা উপজেলার শতপাড়া, সান্দরা, সদর উপজেলার দরিমাগুরা, বাটাজোড়সহ ১০টি গ্রামে ফুলশোলার বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অন্তত ৬০টি পরিবার। এর মধ্যে শালিখার শতপাড়ার শঙ্কর মালাকার ফুলশোলা শিল্পে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন। ভূষিত হয়েছেন বিসিকসহ বেশকিছু সম্মাননা পদকে। এ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত কারুশিল্পীরা এটিকে পেশা হিসাবে আঁকড়ে ধরে অতিবাহিত করেছেন কমপক্ষে ৪ পুরুষ। বর্তমানে তারা বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। তাদের প্রতিটি পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। প্রতিমাসে পরিবারপ্রতি আয় হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সারা বছরই তাদের এ শিল্প নিয়ে চলে ব্যস্ততা।
শালিখার শতপাড়া গ্রামে গেলেই দেখা যায়, সেখানে শংকর মালাকারসহ ৬টি পরিবারের পুরুষ, নারী ও ছেলে মেয়েরা নিজেদের পুরোপুরি সম্পৃক্ত করেছেন শোলা শিল্পের সাথে। শংকর মালাকারসহ আরো অনেকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তাদের পূর্বপুরুষদের কাছেই শিখেছেন শোলাশিল্পের এসব কারুকাজ। তার পূর্বপুরুষ ফুল-শোলাকেই জীবিকার উপকরণ হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। এমনকি তার আগের ৩ পুরুষের পেশা ছিল এই শিল্প। শংকর মালাকারের কাছ থেকে এ কাজ শিখেছেন তার স্ত্রী নিশা রাণী মালাকার, চাচাতো ভাই অমল মালাকার ও তার স্ত্রী ঝর্ণা রাণী মালাকার, পুত্র নিখিল মালকার ও তার স্ত্রী মিতালী রাণী মালাকার, নিমাই মালাকার ও তার স্ত্রী কল্পনা রাণী মালাকার, পুত্র রামপ্রসাদ মালাকার ও স্ত্রী দিপালী রাণী মালাকার, জামাতা রতন মালকার ও তার পরিবারের অপর দুইজন নারীসদস্য। বংশানুক্রমে এ কাজ শিখে পড়াশোনার পাশাপাশি মা-বাবাকে সাহায্য করছে রতœা মালাকার ও লক্ষী মালাকারসহ আরো অনেক স্কুল ও কলেজ পড়–য়া ছাত্রীরা।
শোলা শিল্পীরা জানান, বৈশাখ মাসের শেষের দিকের বর্ষণে ফুল শোলার বীজ বপন করা হয় অথবা এমনিতেই চারা গজাতে থাকে ডোবা জমি কিংবা ধানি জমিতে। মাগুরা জেলাধীন শ্রীপুর উপজেলার বেনিপুরের মাঠ, শালিখা উপজেলার আড়পাড়ার কালার বিল, শালিখার বগনাল বিল ও হিজলিবিল এবং সদর উপজেলার পলিতা গ্রামের কাতলামারি বিল ও কা-বাশের বিলে প্রচুর পরিমাণে ফুলশোলা জন্মায়। কোনো কোনো চাষি তাদের ধানের ক্ষেতে ফুল শোলার চাষ করে থাকেন। প্রতি বোঝা শোলা দু’শ’ থেকে পাঁচশ’ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি বোঝায় ২০০ থেকে ২৫০ পিস শোলা থাকে। ভাদ্র্র-কার্তিক মাস পর্যন্ত ফুল শোলার মৌসুম।
বিল থেকে শোলাগুলো উঠিয়ে এনে প্রথমে শুকানো হয়। তারপর মালাকার সম্প্রদায়ে প্রচলিত যন্ত্র কাইত (ছুরি) দ্বারা শুকানো শোলাগুলো ছেদন করতে হয়। ছেদনকৃত শোলার টুকরোগুলো কাইত (ছুরি) দ্বারা উপরস্থ বাকল পরিষ্কার করা হয়। কাইতই ফুলশোলা কর্তনের প্রধান অস্ত্র। কাজের ধরন অনুযায়ী বড়-মাঝারি-ছোট ৩ আকৃতির কাইত রয়েছে। কাইত দ্বারা ফুল শোলাকে আড়াআড়ি করে কাগজের মতো করে ছেদন করতে হয় যাকে মালাকার সম্প্রদায় কাপ বলে থাকে। এই কাপ থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের উপকরণ তৈরি করা হয়। কদমফুল তৈরির ক্ষেত্রে ফুলশোলার ছেদনকৃত টুকরাগুলোকে কদমফুলের শলাকার মতো করো চেরা হয়। কাপে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করতে তুলোর সুতা পাটের সুতা ব্যবহার করা হয়। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী রঙ করা হয়। শোলার কারুকাজের উপকরণ তৈরি করতে অন্যান্য যন্ত্র বা বিষায়াদির মধ্যে রয়েছে কাঁইচি, বালিধারা, পিঁড়ি, রঙ, ময়দা, তুঁতে প্রভৃতি। ফুলশোলায় তৈরি উপাদানের মধ্যে রয়েছে বিয়ের ফুল, পূজার ফুল, বিয়ের টোপর, হাতপাখা, বেলিফুলের কুঁড়ি, বেলিমালা, কদমফুল, গোলাপফুল, গোলাপের তোড়া, হ্যাট, মুখোশ, বানর, কবুতর, কাকাতুয়া ও বিভিন্ন রকম খেলনা।
ফুল শোলার তৈরি উপকরণ মাগুরার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত পূজায় চাহিদামাফিক ফুল সরবরাহ করেন শংকর মালাকারের পরিবার। এছাড়াও তিনি ঢাকার নিউমার্কেট, শ্যাওড়াপাড়া, জুরাইনে এসব উপকরণ সরবরাহ করেন। অংশ নেন বাংলা একাডেমির বৈশাখী মেলা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ফাউন্ডেশেনের মাসব্যাপী মেলা, বিসিক মেলাসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মেলায়। এসব মেলায় অংশ নিয়ে শংকর মালাকার ২০১৪ সালে বাংলা একাডেমীর বিসিক মেলায় পেয়েছেন কারুগৌরবের পদক।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আওয়ামী সিন্ডিকেট দমানো যায়নি
প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
জনশক্তি রফতানিতে কাক্সিক্ষত গতি বাড়েনি
পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেই
নাগরিক সেবায় দুই সিটির চ্যালেঞ্জ
আরও

আরও পড়ুন

কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন

কুরস্কে ৪০ শতাংশ এলাকার দখল হারিয়েছে ইউক্রেন

আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আমরা জমিদার নই,মানুষের পাহারাদার : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত

জর্ডানে ইসরাইলি দূতাবাসের কাছে গুলি, বন্দুকধারী নিহত

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ট্রাম্পের জয়ের পর ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়ছে রকেট গতিতে

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ভয়াবহ তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্য, বহু ফ্লাইট বাতিল

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ১২০ ফিলিস্তিনি

ইভেন্টের  সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ইভেন্টের সেরা লড়াইটি উপহার দিলেন আফরা-সানজিদা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান পাহাড়ের পর জয়-জাকিরকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা