ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কালজয়ী মহানায়ক বঙ্গবন্ধু

Daily Inqilab ড. অজয় কান্তি মন্ডল

১৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৪, ১২:০১ এএম

ইতিহাস যেমন একদিনে রচিত হয় না, ঠিক তেমনই ইতিহাসের পাতায় নিজেকে মহানায়ক হিসেবে পরিচিতি করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব সব কালে কিংবা সব যুগে জন্ম হয় না। যুগ-যুগান্তরের পরিক্রমায় হাতেগোনা এক-দুই জনই ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে উঠতে পারেন। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, ইতিহাস তার আপন তাগিদেই মহানায়কদের উদ্ভব ঘটায়। মহানায়কদের তৈরি করে এবং একদিন সেইসকল মহানায়কই হয়ে ওঠেন ইতিহাসের প্রধান কারিগর। এসকল মহানায়ক শত বাধা বিপত্তিকে পেছনে ফেলে জনকল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তেমনই একজন কালজয়ী মহানায়ক। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম বাংলার এই মহানায়কের। ছোট থেকেই নির্ভীক আর সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যিনি সবসময় সত্য ও ন্যায়ের কথা বলেছেন এবং ন্যায়ের পথে চলেছেন। অন্যায় অবিচারের বিপক্ষে তিনি সর্বদা লড়েছেন এবং দিয়ে গেছেন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিশোর থেকে কখনো নায্য কথা বলতে পিছপা হননি। সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করে গেছেন বীরদর্পে। তিনি ভীতি ও অত্যাচারের মুখেও শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে স্বচেষ্ট থেকেছেন সর্বক্ষণ। অত্যাচার এবং অনাচারের প্রতিটি মুহূর্তে সংগ্রামী জীবন পরিচালনা করে বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বাঙালির প্রতিটি নায্য অধিকার আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক। শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে নির্ভীক অবস্থানের কারণে তিনি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পান। তাঁর সমগ্র জীবনে একটিই ব্রত ছিল, বাংলা ও বাঙালির মুক্তি। বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে জেলজুলুম, অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহুবার। একাধিকবার তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য। বাঙালির প্রতি তার বিশ্বাস ও আস্থা ছিল আকাশচুম্বী। আর সেজন্যই হাসিমুখে, নির্ভীকচিত্তে মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সব ধরনের জুলুম ও নির্যাতন বরণ করেছেন সোনার বাংলার স্বপ্নসারথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু একটি গণতান্ত্রিক, প্রগতিবাদী ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সর্বক্ষেত্রে তাঁর চিন্তা ছিল সুনিপুণ। তিনি সব সময় শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে ভেবেছেন। যে ভাবনার মধ্যে ছিল মৌলিকত্ব, ছিল নতুনত্ব, ছিল বিচক্ষণতা, ছিল দেশের মেধাচর্চাকে এগিয়ে নেয়ার ব্রত, ছিল দেশের মানুষকে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত করে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষিত করার কৌশল। স্বাধীনতার পর দেশ যখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগতভাবে চরম বিপর্যস্ত তখন বঙ্গবন্ধু দেবদূতের মতো এসে এদেশের হাল ধরেছিলেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন জরাজীর্ণ, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটা দেশের মেরুদ- সোজা করে দাঁড়ানোর জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সেজন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া লাখ লাখ স্কুল-কলেজকে পুনর্গঠিত করেছিলেন। বিজ্ঞান ও শিক্ষার প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে ভালোবাসা ও প্রচেষ্টা ছিল স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার গঠনের সাথে সাথে তার একের পর এক প্রতিফলন হতে শুরু করে। দেশসেরা বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (তৎকালীন পিসিএসআইআর) প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ড. কুদরত-এ-খুদাকে প্রধান করে শিক্ষা কমিশন গঠন করার মাধ্যমে প্রকাশ পায় বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও শিক্ষাকে কতটুকু মূল্যায়ন করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি একে একে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রসহ আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান ও শিক্ষার প্রতি জাতির পিতার যে একাগ্রতা ছিল সেটার স্পষ্ট প্রতিফলন পাওয়া যায়। তিনি ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। এছাড়াও কৃষি গবেষণার মাধ্যমে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, ইক্ষু গবেষণা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ অনেক প্রতিষ্ঠান সৃজন করেন। যেখানে বিজ্ঞানীদের নিরলসভাবে গবেষণার ফল আমরা প্রতিনিয়ত হাতেনাতে পাচ্ছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সাত কোটি জনগোষ্ঠীর খাবার যোগান দেওয়া কঠিন হলেও বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখন দেশের আঠারো কোটি জনগণের খ্যাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েও খাবার উদ্বৃত থাকে।

আজকের এই শুভদিনে জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দেশকে স্বাধীন করার পর, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্রতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অঙ্গীকারবদ্ধ। যতদিন বিশ্ব থাকবে বাঙালির হৃদয়ে স্থান পাবে বঙ্গবন্ধুর নাম ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। পৃথিবীর সভ্যতা ও ইতিহাস যত দিন থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একইভাবে প্রজ্জ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে, প্রতিটি মুক্তিকামী, শান্তিকামী, মানবতাবাদীর হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন দর্শন, আত্মত্যাগ, চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে ও পথ দেখাবে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহানায়ককে চিরকাল স্মরণ করবে। স্মরণ করবে তাঁর আদর্শকে। দেশকে গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, প্রচেষ্টা, ইচ্ছা, আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের যে সময়ের দরকার ছিল, ঘাতকদের কারণে তিনি সেটা পাননি ঠিকই কিন্তু প্রতিটি স্তরে তাঁর স্বপ্নের জাল বিছিয়ে গেছেন, যার প্রতিফলন এখন আমরা সুস্পষ্ট অনুধাবন করতে পারি। দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় তারই সুযোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আজ স্বাধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সব সূচকে এগিয়ে। সাংবিধানিক সকল মৌলিক অধিকার আজ মানুষের দোরগোড়ায়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আওয়ামী সিন্ডিকেট দমানো যায়নি
প্রশাসনিক সংস্কার সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
জনশক্তি রফতানিতে কাক্সিক্ষত গতি বাড়েনি
পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেই
নাগরিক সেবায় দুই সিটির চ্যালেঞ্জ
আরও

আরও পড়ুন

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে

ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে

রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ