ঈদুল ফিতরের মানবিক তাৎপর্য

Daily Inqilab ড. মো. কামরুজ্জামান

০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭ এএম

মুসলমানদের সবচেয়ে বড়ো উৎসব ঈদুল ফিতর। ইসলাম ধর্মে এটি শুধু একটি উৎসব নয়, বরং এ উৎসবের বহুবিধ সামাজিক ও মানবিক তাৎপর্য রয়েছে। এ উৎসবের প্রধানত দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো আনন্দ উৎসব। যার ব্যপ্তি ব্যক্তি, পারিবার, সামাজ ও রাষ্ট্রকে ঘিরে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরে এ উৎসবটি পালিত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য রোজা আবশ্যক। এ রোজায় রয়েছে ব্যাপক তৃপ্তি ও আনন্দ। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই আনন্দ সবচেয়ে বেশি। এমনকি পারিবারিক পরিমণ্ডলে যারা শিশু, তারাও রোজা রাখতে উৎসাহী হয়। এর মাধ্যমে তাদের আনন্দময় অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। তারা একটি রোজা রাখতে পারলেই বাবা-মায়ের কাছে গর্বের ধনে পরিণত হয়। রোজাদার হিসেবে তারা নিজেরাও বেশ পুলকিত ও গর্বিত হয়। যার পুরোটাই সীমাহীন আনন্দে ভরপুর। এটি তাদের নিজেদের কাছে ব্যক্তিগত অর্জন। আজকের ৮০ বছরের মুরুব্বি, যিনি এখন শহরে বাস করেন, কর্মজীবনে তিনি জেলা বা বিভাগীয় শহরে চাকরি করেছেন, তিনি যখন শিশু ছিলেন তখন গ্রামে গ্রামীণ পরিবেশে সময় কাটিয়েছেন। গ্রামেই তিনি বসবাস করতেন। আর আমরা যারা এখন শহরে বসবাস করি আমরা গ্রামেই শিশুকাল কাটিয়েছি। আমাদের প্রত্যেকের শিশুকালে রোজা রাখার অনেক স্মৃতি রয়েছে।

গ্রামীণ পরিবেশে ছোটোবেলা খুবই সাধারণভাবে ধর্মীয় নিয়মে রোজা রেখেছি। রমজান শেষে ঈদ উৎসব পালন করেছি। গরিবের ঘরে হাতে তৈরি সেমাই রান্না হতো। বাজার থেকে কিনে আনা সেমাইকে আমরা কলের সেমাই বলতাম। কলের সেমাই সাধারণত গরিবের ঘরে রান্না হতো না। গ্রামীণ মধ্যবিত্ত সচ্ছল পরিবারেই এ সেমাই রান্না হতো। গরিবেরা সেই কলের সেমাই খেতে মধ্যবিত্তদের বাড়িতে ভিড় জমাতো। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবারে ঈদে ফিরনি, সেমাই, পোলাও ও গোশত রান্না হতো। এখন গরিব-ধনী সব পরিবারেই আড়ম্বরপূর্ণভাবে ঈদ পালিত হয়। এখন গ্রাম ও শহরের অধিকাংশের ঘরেই কলের সেমাই, পোলাও ও গোশত রান্না হয়ে থাকে। ঈদুল ফিতরের সামাজিক বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। রোজা ও ঈদ উপলক্ষে ধনী মুসলিমগণ অধিক পুণ্যের আশায় জাকাত প্রদান করে থাকে। ইসলাম মানবতার ধর্ম ও জীবনদর্শন। এ দর্শনের সকল বিধান মানবিকতায় পরিপূর্ণ। জাকাত ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। এটিকে ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলাম যে মানবিকতায় পরিপূর্ণ তা জাকাত প্রদানের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

ঈদের দিন সকাল বেলা সচ্ছলশ্রেণী গরিবদেরকে ফিতরা প্রদান করে থাকে। অনেকে ঈদের আগেও প্রদান করে। এটি মানবিকতার আরেকটি বড়ো দিক। ইসলামের এসব অর্থনৈতিক বিধান সময়োপযোগী বিধান হিসেবে বিবেচিত। এসব বিধানের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক তাৎপর্য সুবিশাল। দ্বিতীয় হিজরির ৬২২ সালে জাকাতের বিধান ফরজ হয়। আজ থেকে ১ হাজার ৪০২ বছর আগের বিধানটি মুসলিম জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সবসময়ের জন্য সমভাবে উপযোগী একটি কালজয়ী বিধানের প্রমাণ বহন করে চলেছে। কারণ ৬২২ সালের সেই প্রাচীন যুগেও সমাজে শ্রেণীবৈষম্য ও বিভক্তি ছিল। তখনকার শ্রেণীবিভক্তিকে কেন্দ্র করেই এ বিধানের প্রবর্তন হয়। এখনকার মত তখনও ক্ষুদ্র একটি উচ্চবিত্তের হাতেই ছিল অর্থনীতির চাবিকাঠি। এ শ্রেণিটি দেশের গোটা অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো। বিপরীতে বিশাল একটি জনগোষ্ঠি ছিল হতদরিদ্র। বর্তমানেও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ গুটিকতক পুঁজিপতির হাতে। আর বিশাল জনগোষ্ঠি দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা যেতে পারে। যেমন- বাংলাদেশে শীর্ষ ধনী আছে ১১ জন। এ ১১ জনই দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক। তাদের পোশাকখাতে মোট কারখানা আছে প্রায় ২০০টি। এ সমস্ত কারখানায় শ্রমিক আছে ৪০ লাখের বেশি। এ ৪০ লাখ শ্রমিকই মালিকদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখছে। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখছে। অথচ, এ সমস্ত শ্রমিক তিন বেলা পেট পুরে ভাত খেতে পায় না। নুন আনতে তাদের পান্তা ফুরায়। এ ১১ জনের কাছে মোট টাকা আছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা থেকে ২.৫% ভাগ হারে জাকাত আদায় করলে আদায় হতো ২ লাখ ৯২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ বিশাল এমাউন্টে ওই ৪০ লাখ শ্রমিকের অধিকার রয়েছে। এছাড়া দেশে ইউনিয়ন আছে ৪ হাজার ৫৭১টি। আদায়কৃত মোট টাকা যদি উক্ত ইউনিয়নের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় তাহলে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পাবে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব, ১৭জুন, ২০২১)। একটি ইউনিয়নকে উন্নত করতে নিশ্চয়ই ৪৪ কোটি টাকার দরকার হবে না।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের অভাবি মানুষের অভাব দূর হবার পরেও কোটি কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। এ সমীক্ষা স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, প্রকৃতভাবে জাকাত আদায় করলে দেশে কোনো অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবেনা। অন্য একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে যে, দেশে করদাতার সংখ্যা ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার জন। ২০২১-২২ অর্থবছরে আয়কর আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৬৭ কোটি টাকা। এসব করদাতার অধিকাংশই মুসলিম যাদের সবার উপরে জাকাত ফরজ। তাদের কাছ থেকে জাকাত আদায় করা হলে কোটি কোটি টাকা জাকাত আদায় হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ধনী মুসলিম এ রোজার মাসেই ব্যক্তিগতভাবে সামান্য পরিমাণ জাকাত আদায় করে থাকে। কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি থাকলে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশ ব্যাপকভাবে লাভবান হতো। ফলে মানবিক দিকটি বিশেষভাবে ফুটে উঠতো-মানবিক দিকের জয় হতো!

সন্দেহ নেই, ঈদ মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। উৎসবের চরিত্র নিয়ে এ অনুষ্ঠান সার্বজনীন। একজন দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ যেভাবে এ উৎসব পালন করে, ঠিক একজন মহাবিত্তবান মানুষও একই প্রেরণায় ঈদ উৎসব পালন করে থাকে। যদিও দুইয়ের পালনের মধ্যে অনেক ব্যবধান থাকে। শুধু অর্থের হিসাবে নয়, মানসিকতার দিক থেকেও ভিন্নতা তাৎপর্যপূর্ণ। ঈদে বিত্তবানদের কেনাকাটায় ও আচরণে এক ধরনের অহংকার কাজ করে। অভিজাত গৃহিণীদের ক্ষেত্রে তা সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এছাড়া পোশাক ও গয়নাগাটির অভিজাত বিপণি বিতানে ভিড় তার প্রমাণ বহন করে। নিম্নমধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত শ্রেণি থেকে নিম্নবর্গীয়দের মধ্যে ঈদ-উৎসবের আন্তরিকতাই বড় হয়ে থাকে। গরিবের আচরণে শুধু ধর্মীয় ও সামাজিক দিকের প্রকাশ মেলে, বিত্তশালীদের আচরণে সেটা প্রকাশ পায় না। ধনীদের আচরণে শুধু দম্ভ ও অহমিকার প্রকাশ ঘটে। বড়দের জন্য ঈদের প্রথাসিদ্ধ ধর্মীয় ও সামাজিক আচরণ প্রাধান্য পেয়ে থাকে। আর ছোটদের জন্য ঈদের একটাই চরিত্রÑতা হলো উৎসব আর উৎসব।

ঈদ উদযাপনের সেকাল ও একালে যথেষ্ট ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। আজকের প্রবীণরাই বিষয়টি ভালো বলতে ও লিখতে পারবেন। যাদের বয়স সত্তরের কোঠায় তারা সহজেই একাল-সেকালের পার্থক্য বুঝতে পারবেন। সেকালে ঈদ উৎসবের প্রধান দিকটি ছিল ধর্মীয় আবহে মিশ্রিত। ধর্মীয় সংস্কৃতি ও উৎসব-আনন্দের সামাজিক চরিত্রটিই ছিল প্রধান। তাতে নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ কেনা যেমন অপরিহার্য ছিল তেমনি ছিল বইপত্র উপহার দেওয়ার সংস্কৃতি। ছিল নানান রকম আহার্য-বিলাস।

ঈদুল ফিতরের বিশেষ মাত্রা ছিল সকাল থেকে সব পরিবারে রান্নার ব্যস্ততা। ছিল রন্ধনশালা থেকে ছড়িয়ে পড়া রান্নার সুগন্ধ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আন্তরিকতা ছিল সবচেয়ে বড় উপাদান। একে অপরের প্রতি প্রীতিসম্ভাষণ ও মেলবন্ধনে দেখা যেতো আন্তরিকতা, যা ছিল সামাজিক ও মানবিক চরিত্রের অকৃত্রিম বহি:প্রকাশ।

বেশ সকালে গোসল করা, নতুন পোশাক পরিধান করা, সেমাই-পায়েস দিয়ে ঈদ উপভোগ উদযাপন, স্থানীয় ঈদগাহে নামাজ আদায়, বৃষ্টির কারণে ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়া, প্রিয়জনের সাথে কোলাকুলি করা, অতঃপর দুপুর বেলা ভূরিভোজ, বিকাল বেলা বাড়ি বাড়ি বেড়ানো, বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, আড্ডা দেওয়া, গল্প করা অতঃপর রাতের খাদ্য গ্রহণ। এটা রোজার ঈদেরই বিশেষত্ব। কিশোর-কিশোরীদের এ বাড়ি থেকে সে বাড়ি আনন্দময় ঘোরাঘুরি। রাত খানিকটা হয়ে গেলেও ঘোরাঘুরি যেন শেষ হবার নয়। অতঃপর সময় করে একটু বই পড়া। এমন একটা দিনের ছবি তৈরি করে ঈদ পর্বের অভিজ্ঞতা শেষ। এ ছবিটা গ্রামের সেকালের। অন্তত ৬০-৭০ বছর আগেকার, গ্রামবাংলার তো বটেই। মফস্বল শহরের চিত্রটাও প্রায় এ রকমই ছিল।

বাংলাদেশে একালের ঈদ গ্রামে, নগরে, বন্দরের সর্বত্রই যেন এক বিরাট আয়োজন। সেখানে বিত্ত এবং আভিজাত্যের প্রতিযোগিতা স্পষ্ট। এ প্রতিযোগিতার কারণে ঈদুল ফিতর যেন তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। রমজান সিয়াম সাধনার মাস, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। কিন্তু সেটি এখন তার আসল চরিত্র থেকে অনেক দূরে সটকে পড়েছে। বিলাসিতা ও আহারের মাসে পরিণত হয়ে গেছে রমজান, যার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে ঈদের কেনাকাটায়। বিশেষ করে, পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলংকারে। সেকালের ঈদ উৎসবে একটি পোশাক ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ছিল সময়ের সেরা কেনাকাটা। সেকালের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন মানুষের পক্ষে এটা ভাবা কঠিন যে, একটি লেহেঙ্গার দাম বর্তমানে লক্ষাধিক টাকা, যা একালের একজন উচ্চবিত্তের মানুষ কিনতে রীতিমত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়! কমবয়সি তরুণীদের প্রবল ঝোঁক এসব ব্র্যান্ডের পোশাকের প্রতি। মূল্য সেখানে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। হতে পারে সেটির মূল্য লক্ষাধিক টাকা! তাতে কিছু যায় আসে না। এর পেছনে থাকে টিভি চ্যানেলগুলোর বাহারি বিজ্ঞাপন, যা তাদের মন কাড়ে ও আকাক্সক্ষার বৃদ্ধি ঘটায়।

এ বিকিকিনির পেছনে রয়েছে হঠাৎ বড়োলোক হওয়া রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যু। এরা অতিদ্রুত মহাবিত্তবান হওয়া লুটেরা শ্রেণী। শুধু পোশাকই নয়, নামি দামি গাড়ির নিত্য-নতুন ব্র্যান্ড বদল তাদের অনৈতিক এক নেশা। রসনায়-বাসনায় নতুনত্বের উপভোগ একালের ঈদ উৎসবের বিশেষত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একালের আটপৌরে মধ্যবিত্তের ঈদে কোনো জৌলুস নেই বললেই চলে। ততোটা সুবিধাজনক অবস্থানে তারা নেই। তাদের কেনাকাটায় বৈচিত্র্য নেই। তাদের আয় বলতে মাসিক বেতনের সাথে একটি বোনাস। এ বাড়তি আয়টুকু হিসাব চুকাতে চুকাতে শেষ। বউ-বাচ্চার পোশাক কিনতে কিনতে শেষ পর্যন্ত নিজের জামাটার হিসাবে ঘাটতি পড়ে। এ ঘাটতি পড়া তাদের প্রতি ঈদেরই প্রতিচ্ছবি। নিম্নমধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরাও ঈদ নিয়ে অনেক আকক্সক্ষা পোষণ করে। ঈদ মানে নতুন পোশাক। আর তাদের কাছে নতুন পোশাক মানেই বাড়তি টাকা। আর বাড়তি টাকা মানেই বাড়তি পরিশ্রম। পরিবারের সদস্যদের একটা পোশাক দিতে পারাই তাদের জন্য বড়ো উৎসব। তাই ঈদ উপলক্ষে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। দিনে-রাতে যেন তাদের কোনো বিশ্রাম নেই। একটু বাড়তি ইনকামের আশায় রাত-দিন পরিশ্রম। সবাই শুধু ব্যস্ত আর ব্যস্ত। ঈদুল ফিতর মানেই সবাই ব্যস্ত। ছোট বড় সবপেশার জমজমাট তৎপরতা। দর্জি দোকান থেকে রকমারি পণ্যের দোকানদারি। হেন জায়গা নেই যেখানে ব্যস্ততা নেই।

ভোগবাদী সমাজ ভালোর চেয়ে মন্দের বিস্তার ঘটাচ্ছে বেশি। গ্রামের সঙ্গে নগর-মহানগরের বিশাল ব্যবধান তৈরি করছে। বাংলাদেশের দ্রুত পরিবর্তনশীল ভোগবাদ নাগরিক সমাজের আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমাজ গড়ে তুলেছে শিল্পপতি, বৃহৎ ব্যবসায়ী শ্রেণি, সেই সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক আমলা, বৃহৎ আয়ের পেশাজীবী এবং অনুরূপ ধনিক শ্রেণি। ভোগবাদী চরিত্র ঈদের সেকাল ও একালের মধ্যে বিপুল ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। ঈদ মানেই হলো সামাজিক ও মানবিক উৎসব, যার মাধ্যমে প্রকাশ ঘটে সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ। অথচ সুবিধাভোগী শ্রেণিতে সেটা নেই বললেই চলে। এ শক্তিমান শ্রেণির জীবনাচরণের প্রভাব পড়েছে সমাজে। সমাজ হয়ে গেছে চরম লোভী ও নিষ্ঠুর, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত অন্যান্য শ্রেণির ওপর। ফলে তাদের চরিত্রেরও পরিবর্তন ঘটেছে। তবে ঈদের উৎসব-আনন্দের আমেজ, এর সহজ-সরল দিক এখনও আবশিষ্ট আছে গ্রামে। ঈদের মানবিক আবেগের দিক, এর পারিবারিক, সামাজিক ও সহমর্মিতার দিকগুলো এখনও হারিয়ে যায়নি গ্রামীন জীবন থেকে। তাই শহরবাসী হাজারো কষ্ট করে ফিরে যায় গ্রামে। শিকড়ের টানে তারা ফিরে আসে পিতৃপুরুষের ভিটেমাটিতে। এ আগমন যদিও ঈদকেন্দ্রিক, তথাপিও এ ক্ষেত্রে বেশি কাজ করে মানবিকতা।

লেখক: অধ্যাপক, দা‘ওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
ঊসধরষ: ফৎ.শহুধসধহ@মসধরষ.পড়স


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

সমীকরণ মেলানোর রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তা শেষে চেন্নাইকে বিদায় করে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

পানির সংকট

পানির সংকট

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু