বাঁচতে চান তারকা গোলরক্ষক মহসিন
০৫ জুন ২০২৩, ১১:৩৬ পিএম | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩, ১২:০৩ এএম
দাম্পত্য কলহের জের হিসেবে সংসার ভেঙে যাওয়া, নিজ জমি বেদখল হওয়া এবং অর্থসংকটসহ শারীরিক অসুস্থতায় বর্তমানে প্রায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের সোনালী সময়ের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক মোহাম্মদ মহসিন। এখন রাজধানীর একটি বাসায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তবে বাঁচতে চান এই তারকা গোলরক্ষক।
দেশের জনপ্রিয় এই গোলরক্ষক ১৯৯৫ সালে খেলা ছেড়ে দেওয়ার দুই বছর পর যুক্তরাষ্ট্র হয়ে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এলেও মা অসুস্থ থাকার কারণে কানাডা থেকে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসনে ২০১৪ সালে। তার আগেই কানাডায় মহসিনের সংসার ভেঙে যায়। সাবেক এই তারকা গোলরক্ষকের ছোট ভাই কোহিনুর পিন্টু গতকাল জানান, ২০১৩ সালে স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় মহসিনের। তিনি বলেন,‘২০১৩ সালে স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরের বছর পর মহসিন ভাই কানাডা থেকে দেশে ফিরে আসেন। খেলোয়াড়ি জীবনে যে টাকা উপার্জন করেছিলেন তা দিয়ে সাভারে জমি-জমা কিনেছিলেন। সাভারের ইমাদিপুর পাকিজা শাড়ির ফ্যাক্টরির লাগোয়া দুই বিঘার বেশি জায়গা ছিল আমাদের। কিন্তু সেগুলোও এখন দুর্বৃত্তদের দখলে। কানাডায় থাকাকালীন অর্থকড়ি যা জমিয়েছিলেন তার প্রায় পুরোটাই রেখে দিয়েছেন তার স্ত্রী। যে কারণে তাকে ঢাকায় ফিরতে হয়েছিল শূন্য হাতে।’
পিন্টু আরও জানান, মহসিনের ডান হাতের বুড়ো আঙুল বাঁকা হয়ে গেছে। দুই চোখে অপারেশন করাতে হয়েছে। সহায়-সম্বল অবস্থায় কোনরকমে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। পিন্টুর কথায়,‘এখন ভাইয়ের শরীরটা দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। স্মৃতি প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন। পরিবারের কাউকে কাউকে ছাড়া অন্যদের চিনতে পারছে না। সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন। ভাত খেতে বললে বলেন, এইতো এখনই খেলাম। দরজা খোলা পেলে বাইরে চলে যান তিনি। কিছুই মনে রাখতে পারছে না। তবে কিছুদিন আগেও তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। তিনি ভুল চিকিৎসারও শিকার হয়েছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে মহসিন ভাইয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। কতটা খারাপ তা মুখে বলে পুরোটা বোঝাতে পারবো না আমি। দেখলে বুঝতেন তিনি এখন কি অবস্থায় আছেন।’ কান্না জড়িত কন্ঠে পিন্টু বলেন,‘আমার ভাই বাঁচতে চান। তাকে বাঁচানোর জন্য দেশের ক্রীড়া প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি।’
ঢাকা লিগে মোহাম্মদ মহসিন ছিলেন গোলবারের অতন্ত্র প্রহরি। ১৯৬৫ সালের ১ আগস্ট ঢাকার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী মহসিন ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় বিভাগ লিগে নিজ ক্যারিয়ার শুরু করেন। ওই বছর দ্বিতীয় বিভাগ লিগে রেলওয়ে ব্লুজের হয়ে খেলার পর একই বছর জাতীয় লিগ শেরেবাংলা কাপে রেলওয়ে দলের হয়েই অংশ নেন তিনি। আবাহনীর তৎকালীন তারকা ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু পরের বছরই মহসিনকে দলে ভেড়ান। তখন মহসিন ছিলেন আবাহনীর তৃতীয় গোলরক্ষক। তবে ১৯৮১ সালে তিনি দলটির প্রথম একাদশে জায়গা করে নেন। অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই ১৯৮২ সালে যোগ দেন ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। সাদাকালো শিবিরে এসে মহসিন নিজেকে পরিপূর্ণভাবে মেলে ধরেন। টানা পাঁচ বছর মোহামেডানের গোলবার সামলান দক্ষতার সঙ্গেই। ১৯৮৫ সালে তিনি মোহামেডানের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে ফিরে যান আবাহনীতে। এরপর টানা সাত বছর ছিলেন এখানে। ১৯৯১ সালে তার অধিনায়কত্বেই অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী। তিনিই একমাত্র ফুটবলার একই সঙ্গে যিনি দেশের দুই ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান ও আবাহনীর অধিনায়ক ছিলেন। আবাহনীর হয়ে তিনবার (১৯৮১, ১৯৮৯-৯০, ১৯৯১) এবং মোহামেডানের হয়ে দুইবার (১৯৮২ ও ১৯৮৬) লিগ চ্যাম্পিয়ন এবং মোহামেডানের পক্ষে দুইবার (১৯৮২ ও ১৯৮৩) ও আবাহনীর হয়ে একবার (১৯৮৮) ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতেছেন মহসিন। এছাড়া ১৯৮২ সালে ভারতের কলকাতায় আশীষ জব্বার স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে স্বাধীনতা দিবস ফুটবল চ্যাম্পিয়ন, ভারতের নাগজি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন, ১৯৯১ সালে বিটিসি কাপ ক্লাব চ্যাম্পিয়ন এবং ১৯৯৪ সালে কলকাতার চার্মস কাপে চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর হয়ে দুর্দান্ত খেলা উপহার দেন মহসিন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে সালে পুল ভেঙে যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রে। তার অধিনায়কত্বেই ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা। মহসিন ঘরোয়া আসরের মতো আন্তর্জাতিক আসরেও সুনামের সঙ্গেই খেলেছেন। জাতীয় দলে ১৯৮২ সাল থেকেই খেলার সুযোগ হয় তার। ওই বছরেই দিল্লি এশিয়ান গেমসে মাঠে নামেন তিনি। ১৯৮৩ সালে ঢাকায় তৃতীয় প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ, মালয়েশিয়ায় ২৭তম মারদেকা ফুটবল টুর্নামেন্ট, ১৯৮৪ সালে ঢাকায় ২৪তম এশীয় যুব ফুটবলের গ্রুপ-২ এর বাছাই পর্ব, ইন্দোনেশিয়ায় অষ্টম এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব, ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানের পেশোয়ারে কায়েদে আযম ট্রফি, ঢাকায় দ্বিতীয় সাফ গেমস, ১৯৮৬ সালে ঢাকায় প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে বাংলাদেশ লাল দল, সিউলে দশম এশিয়ান গেমস, ১৯৮৭ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে বাংলাদেশ সাদা দল, ১৯৯১ সালে সিউল ও কুয়ালালামপুরে প্রি-অলিম্পিক ফুটবল, কলম্বোয় পঞ্চম সাফ গেমস, ১৯৯২ সালে ব্যাংকক এশিয়া কাপ, ১৯৯৩ সালে সপ্তম প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে বাংলাদেশ লাল দল এবং জাপান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খেলেন মহসিন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি তাকে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার দেয়। পরে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারও পান মহসিন।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ