টানা দুই ম্যাচে অর্ধেকের বেশি ‘ডট’!

তবু ওপেনারদের দায় দেখছেন শান্ত

Daily Inqilab স্পোর্টস রিপোর্টার

২১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম

ওপেনিং জুটি থেকে বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের সর্বোচ্চ রান পেয়েছিল বাংলাদেশ। লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম এনে দিয়েছিলেন দারুণ ভিত। তবে অমন শক্ত ভিতও বাকিরা টেনে নিতে পারেননি। তানজিদ-লিটনও ফেরেন অসময়ে। কিন্তু রান পেলেও এই ম্যাচে বড় ইনিংস খেলতে না পারায় দুই ওপেনারের দায় দেখছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

গতপরশু পুনেতে ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং নিয়ে শুরুর কঠিন পরিস্থিতি সামলে দারুণ জুটি গড়েন তানজিদ-লিটন। চার-ছক্কায় ভারতীয় বোলারদের এলোমেলো করে দিতে থাকেন তারা। ২৪ বছরের রেকর্ড ভেঙে তাদের জুটিতে বাংলাদেশ পায় বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা শুরু। ১৫তম ওভারে দলের ৯৩ রানে ৫১ করা তানজিদের আউটে ভাঙে এই জুটি। পরে শান্ত নিজে, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাওহিদ হৃদয় মিডল অর্ডারে হন ব্যর্থ। এক পর্যায়ে ৬৬ রান করে ছক্কার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটনও। এরপর মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ দুটি মাঝারি ইনিংস খেললেও লড়াইয়ের পুঁজি পায়নি বাংলাদেশ।

বড় রান না হওয়ার পেছনে ম্যাচ শেষে তাই ওপেনারদের দায় খুঁজে পাচ্ছেন শান্ত, ‘আমরা যে জায়গা নিয়ে সংগ্রাম করছিলাম সেটা ভালো হয়েছিল, টপ অর্ডারে। ওপেনিং ভালো হয়েছিল। কিন্তু আমি মনে করি, যে দুজন ব্যাটার থিতু ছিল, তাদের আরও লম্বা করা উচিত ছিল ইনিংস। কারণ উইকেট এরকম ছিল। ওখান থেকে একজন ব্যাটার ১২০-১৩০ রানের ইনিংস যদি খেলত, তাহলে হয়তো শেষের দিকে ব্যাটারদের জন্য আরেকটু সহজ হতো।’ শান্তর মতে, দল না জেতায় নিজেদের ইনিংস নিয়ে খুশি হবেন না লিটন-তানজিদও, ‘আমাদের দলে কোনো ব্যাটারই ৫০-৭০ বা একশতে খুশি না যদি না দলের সাহায্য হয়। আমি নিশ্চিত, তানজিদ বা লিটন কেউই খুশি না তাদের ইনিংস নিয়ে। প্রতিটি ব্যাটারেরই দায়িত্ব রান করা। আমি যে জায়গায় ব্যাট করি— তিনে রান করা দায়িত্ব।’

প্রতিপক্ষকে বড় রান না দেওয়ার পর বোলিংও হয়েছে বিবর্ণ। ভারতীয় ব্যাটাররা আগ্রাসী মেজাজে গুঁড়িয়ে দেন বাংলাদেশের আক্রমণ। তবে বোলারদের এই ম্যাচে কোনো দায় দেখেন না শান্ত, ‘আমি বোলারদের খুব একটা দোষ দেখি না। তারা ভালো বল করছে। অবশ্যই, এখানেও উন্নতির জায়গা আছে। ব্যাটাররা যদি আরেকটু রান যদি দিতে পারতাম, তাহলে ভালো হতো।’

আরেকটু রান পেতে হলে যেটি করতে হতো সেটিই করতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটারা। তাতে উঠছে বেশ কিছু প্রশ্ন। প্রথমটি, উইকেটে দ্রুত থিতু হতে গেলে কী প্রয়োজন? স্ট্রাইক অদলবদল করে খেলা। ব্যাটিংয়ে নামলে এটা যেন ভুলে যান বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ভারতের বিপক্ষে এদিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ‘ডট’ খেলেছেন ১৫৯টি। এর আগের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তো আরও বেশি- ১৭৫টি। সে ম্যাচে কিউই পেসার লকি ফার্গুসনের করা ৬০ বলের মধ্যে ৪৪টি ডেলিভারিতে কোনো রান নিতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। পাকিস্তান অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে এর ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করেছেন। ‘প্যাভিলিয়ন’ নামে সেই অনুষ্ঠানে মালিকের সঙ্গে আরও ছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম, সাবেক উইকেটরক্ষক মঈন খান ও সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক।

বাংলাদেশের ব্যাটিং প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রথমে পাকিস্তানের সাবেক উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মঈন ডট বলের প্রসঙ্গ তোলেন। তখন মালিক বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে নিজের মতামত দেন। এই অলরাউন্ডারের মতে, বাংলাদেশের উইকেটের সমস্যার কারণেই ব্যাটসম্যানরা ডট খেলছেন, ‘বাংলাদেশের সব উইকেট একরকম। তাদের অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। উইকেটগুলো এমন কঠিন থাকে যে ডট বল খেলতেই হয়। ব্যাটসম্যানরা ক্রিজে গিয়ে সেট হতে পারে না। সে কারণে ডট বল খেলে উইকেট বোঝার চেষ্টা করে। এরপর বাউন্ডারি থেকে রান করার চেষ্টা করে। জাতীয় দলেও খেলার ঠিক একই ধরন দেখা যায়।’

ওয়াসিম আকরাম মালিকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ঘরোয়া লিগে তরুণ প্রতিভা তার চোখে পড়েছে কি না? সে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মালিক আরও বড় সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এই পাকিস্তানি অলরাউন্ডার দুষছেন বাংলাদেশের উইকেট আর কন্ডিশনকে, ‘প্রতিভা আছে। অনেক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। তবে যারা বিশ্বকাপে খেলছে, তারাই ওদের সেরা। আমরা যখন লিগ খেলি সেখানে, তখন এরাই ধারাবাহিক পারফর্ম করে। তবে লিগগুলো টি-টোয়েন্টি সংস্করণে হয়। টি-টোয়েন্টিতে অনেক সময় ছোট পারফরম্যান্সও অনেক বড় হয়ে যায়। দলগুলো যখন বাংলাদেশে খেলতে যায়, তখন বাংলাদেশের কন্ডিশনে ভালো করার চ্যালেঞ্জ থাকে। ঘরের মাঠে টার্ন থাকে, বল নিচু হয়ে আসে। যদি মিরপুরে খেলি, অনেক সময় তো ১১০ রানই করা কঠিন হয়ে যায়।’

বিশ^কাপে চার ম্যাচ থেকে এক জয়ে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের সপ্তমে আছে বাংলাদেশ। ঘুরে দাঁড়াতে সামনে আরো ৫টি ম্যাচ আছে সাকিবের দলের। আগামী ২৪ অক্টোবর মুম্বাইয়ে হাথুরুসিংহের শিষ্যদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা।


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রোমাঞ্চকর ড্রয়ে শেষ ইউনাইটেড-লিভারপুল হাইভোল্টেজ লড়াই
টিভিতে দেখুন
অকালেই ঝরে গেল স্পিনারের প্রাণ
পিএসএল ড্রাফটে বাংলাদেশের ৮
নেপালের ফ্র্যাঞ্চইজি কাবাডিতে বাংলাদেশের ৬
আরও

আরও পড়ুন

রোমাঞ্চকর ড্রয়ে শেষ ইউনাইটেড-লিভারপুল হাইভোল্টেজ লড়াই

রোমাঞ্চকর ড্রয়ে শেষ ইউনাইটেড-লিভারপুল হাইভোল্টেজ লড়াই

মির্জাপুর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মৃধার পদ স্থগিত

মির্জাপুর উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মৃধার পদ স্থগিত

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিবি হেফাজতে ৩৬ মিয়ানমার নাগরিক

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে বিজিবি হেফাজতে ৩৬ মিয়ানমার নাগরিক

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির মহাসচিব নেওয়াজ

বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির মহাসচিব নেওয়াজ

আইনজীবীদের জুরিসপ্রুডেন্সের ওপর বই লেখার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

আইনজীবীদের জুরিসপ্রুডেন্সের ওপর বই লেখার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

রোমানিয়ায় কূটনীতিক মহসিনকে শাস্তির দাবিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম

রোমানিয়ায় কূটনীতিক মহসিনকে শাস্তির দাবিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম

লক্ষ্মীপুরে ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান, ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা

লক্ষ্মীপুরে ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান, ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা

দক্ষিণ এশিয়ান টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানশীপে রানার্স-আপ সৈয়দপুর দলকে সংবর্ধনা

দক্ষিণ এশিয়ান টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানশীপে রানার্স-আপ সৈয়দপুর দলকে সংবর্ধনা

সাভার হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত

সাভার হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত

ভাড়াটিয়াসহ মালিককে বের করে বসত বাড়ি দখল

ভাড়াটিয়াসহ মালিককে বের করে বসত বাড়ি দখল

যে মামলায় আটক লতিফ বিশ্বাস

যে মামলায় আটক লতিফ বিশ্বাস

নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রস্তুতি নিতে হবে

নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের প্রস্তুতি নিতে হবে

প্রশাসন সংস্কারে কঠোর হতে হবে

প্রশাসন সংস্কারে কঠোর হতে হবে

অসভ্য নগরীতে পরিণত ঢাকা

অসভ্য নগরীতে পরিণত ঢাকা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞা

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চীনের পাল্টা নিষেধাজ্ঞা

সমুদ্রে ক্ষয়যোগ্য শক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে গাড়িতেও

সমুদ্রে ক্ষয়যোগ্য শক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে গাড়িতেও

উৎসবে আতশবাজি নিষিদ্ধে হাজারও মানুষের আবেদন

উৎসবে আতশবাজি নিষিদ্ধে হাজারও মানুষের আবেদন

বাথরুমের নাম করে গয়না নিয়ে পালালেন কনে

বাথরুমের নাম করে গয়না নিয়ে পালালেন কনে

অর্থ, রসিদ বই নিয়ে পালিয়ে গেল ইসকনের কর্মী

অর্থ, রসিদ বই নিয়ে পালিয়ে গেল ইসকনের কর্মী