আশা জাগানিয়া বিশ্বকাপ আফগানিস্তানের
১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১৩ এএম
চলমান আসরসহ এখন পর্যন্ত তিনবার আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে আফগানিস্তান। এর আগে আফগানরা ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে অংশ নিলেও চমক দেখাতে পারেনি। দু’বারই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেন মোহাম্মদ নবী-রশিদ খানরা। তবে এবারের বিশ্বকাপ আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্স করেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান। বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালের দৌড়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছে তারা। যদিও সেরা চারে থাকতে পারেনি দলটি। তবে হাশমতুল্লাহ শহিদীরা এবার যে পারফরম্যান্স করেছেন তা ভাবিয়ে তুলেছে ক্রিকেট বিশ্বকে। আগের দুই বিশ্বকাপে তাদের পারফরম্যান্সের সঙ্গে বর্তমানের পার্থক্য বিস্তর। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের অতীত পারফরম্যান্স যে কাউকে হতবাক করবে। শুধূ তাই নয়, তারা গত দুই বিশ্বকাপে নিজেদের পারফরম্যান্সে নিজেরাই লজ্জা পাবে। আগের দুই বিশ্বকাপে ১৫ ম্যাচে আফগানিস্তানের জয় মাত্র একটিতে। ২০১৯ সালে তারা ৯ ম্যাচের সবকটিতেই হেরেছিল। অথচ চলমান বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচের চারটিতে জিতে ৮ পয়েন্ট পেয়ে দশ দলের মধ্যে ষষ্ঠ স্থান পেয়ে আসর শেষ করেছে আফগানরা। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, এবার আফগানিস্তান যদি নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে না হারতো তাহলে সেরা চারে জায়গা পেতে তাদেরকে খুব বেশি বেগ পেতে হতো না। কারণ প্রথম ম্যাচ জিতলে পরের ম্যাচগুলো ভালো করার রসদ পেত দলটি। এবারের আসরে ছোট দলগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানই একমাত্র দল যারা সাবেক তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলকে হারিয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ও ভারতের বিপক্ষে হেরে তৃতীয় ম্যাচে এসেই ঘুরে দাঁড়ান হাশমতুল্লাহ শহিদীরা। এ ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চমক দেখায় আফগানিস্তান। চতুর্থ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেও পঞ্চম ও ষষ্ঠ ম্যাচে তারা হারিয়ে দেয় সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে! আর সপ্তম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জিতে হ্যাটট্রিক জয়ের স্বাদ পান রশিদ খানরা। যদিও শেষ দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। তবুও দলটিকে নিয়ে আশাবাদি আফগানিস্তানের কোচ জোনাথন ট্রট। স্মরণীয় বিশ্বকাপের পর আফগানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত আশা করছেন তিনি। বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসে এ যাবতকালের সবচেয়ে সফল এক যাত্রা শেষে আফগানিস্তানের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ ট্রট বলেন,‘বিশ্বকাপে আমি খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস দেখেছি। কিন্তু অনেক সময় এটা দৃশ্যমান না হলে কিংবা মাঠে কেউ সেটা প্রমাণ করতে না পারলে খুব বেশী নিশ্চিত হওয়া যায়না। এই টুর্নামেন্টের আগে আমি বেশ কয়েকবারই ছেলেদের বলেছি নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে হলে অন্তত দু’টি ম্যাচে জয় প্রয়োজন। ছেলেরা তা করে দেখিয়েছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ম্যাচ জয়ের পথ খুঁজে পেয়েছি আমরা। আমার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ম্যাচে জিতেছে দল।’
রশিদ খানের নেতৃত্বে আফগানিস্তানের বিশ্বমানের স্পিন আক্রমণ সম্পর্কে সবাই জানেন। এবারের বিশ্বকাপে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১১ উইকেট শিকার করেছেন রশিদ। মোহাম্মদ নবী এবং মুজিব-উর রহমানও প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে দেননি। প্রথম আফগান ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে ইব্রাহিম জাদরান। নিজেদের অষ্টম ম্যাচে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হতাশাজনক হারের ম্যাচটিতে জাদরান শতক হাঁকিয়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। দলের হয়ে ৪৭ গড়ে সর্বোচ্চ ২৭৬ রান নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করেছেন ইব্রাহিম জাদরান। বিশ্বকাপে শীর্ষ ১০ জন রান সংগ্রাহকের তালিকায় তার এই রান যথেষ্ট। এ তালিকায় ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের আধিপত্য রয়েছে। ট্রট আরো বলেন, ‘স্বাভাবিক ভাবে এই দলগুলোর বোলিং বিভাগই বেশী শক্তিশালী থাকে। কিন্তু কিছু কিছু ম্যাচে রান তাড়া করতে গিয়ে সহজেই আমাদের ব্যাটাররা তা ধরে ফেলেছে। বিশেষ করে বড় দলগুলোকে হারানোর ক্ষেত্রে ব্যাটাররা বেশিরভাগ সময় সহযোগিতা করেছে।’
টিনএজ রিস্ট স্পিনার নুর আহমেদ ও পেসার নাভিন-উল হক দলে তাদের উপস্থিতির জানান দিয়েছেন। এ সম্পর্কে ট্র্রটের কথা,‘অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের উপরই নজর ছিল বেশী। কিন্তু নুর ও নাভিনের মত খেলোয়াড়রাও ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন আফগানিস্তানের ভবিষ্যত। তাদের উপর অনায়াসেই আস্থা রাখা যায়। এখন দলীয় ব্যবস্থাপনা, কোচিং স্টাফদের দায়িত্ব তাদের সঠিক পথে পরিচালনা করা। তাদেরকে প্রতিভা বিকাশের সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’
বিশ্বকাপে জয় পাওয়া চার ম্যাচের মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টা ছিল অন্যরকম এক অনুভূতি। আফগানিস্তানের অনেক খেলোয়াড়ই পাকিস্তানের শরণার্থী শিবিরে থেকে ক্রিকেটের তালিম নিয়েছে। সে কারণে বাবর আজমদের বিপক্ষে মোহাম্মদ নবীদের জয়টা ছিল বিশেষ এক অর্জন। জোনাথন ট্রট বলেন, ‘ভারত বিশ্বকাপ আমাদের জন্য কঠিন ছিল। কিন্তু চার জয় অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। সে কারণে এবারের আসরটা সবদিক থেকেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই খেলোয়াড়দের আমি কখনই ভুলতে পারবো না।’
ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ক্রিকেটে আফগানিস্তানের পথচলা শুরু। দেশটির ক্রিকেট পরিচালনা সংস্থা ‘আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)’ নামে পরিচিত। ১৯৯৫ সালে এসিবি গঠিত হয় । তবে মজার ব্যাপার হলো, আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পাকিস্তানের তৈরি। ২০০১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সহযোগী সদস্য হয় আফগানিস্তান। এর দুই বছর পর দেশটি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সদস্য পদ লাভ করে। প্রায় এক যুগ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গণে বিচরণের পর ২০১৭ সালে আইসিসি’র পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে আফগানরা। একই সঙ্গে টেস্ট খেলুড়ে দেশের কাতারে উঠে আসে। নাম লেখায় ১২তম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে খেলা শুরু করলেও আফগানরা একুশ শতকের শুরুর দিকে সাফল্য পেতে শুরু করে। এরই মধ্যে রেকর্ডের পাতায়ও স্থান করে নেয় দেশটি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের র্যাঙ্কিংয়ে দশম স্থানে উঠে আসে আফগানিস্তান। এর আগে তারা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দলীয় সর্বোচ্চ রানের কীর্তিও গড়েছিল। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৭৮ রান করেছিল আফগানরা। যদিও সম্প্রতি এই রেকর্ড ভেঙে দেয় নেপাল। গত মাসে শেষ হওয়া হ্যাংজু এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে নেপাল করেছিল ৩১৪ রান। আফগানিস্তান ক্রিকেটের একটা অন্ধকার দিকও রয়েছে। তবে সেই দিকটা বিশ্ববাসীকে দেখতে হয়নি শেষ পর্যন্ত। আফগানিস্তানকে আর কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যাবে না- এমন একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ২০২১ সালে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এমন শঙ্কা জেগেছিল। শুধু তাই নয়, দেশটির ক্রিকেটারদের জীবন নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এমন শঙ্কার মাঝে স্বস্তি হয়ে দেখা দিয়েছিল তালেবান মুখপাত্রের ঘোষণা। তারা জানিয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফগানিস্তানের খেলার পথে তারা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তবে তাদের এই প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র পুরুষ দলের ক্ষেত্রে ছিল।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দিল্লিতে দূষণ-কুয়াশার কারণে ভ্রমণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত ,যাত্রীদের ভোগান্তি
বাগেরহাটে লখপুর গ্রুপের কর্মহীন শ্রমিকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
নিকলীতে দশ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
‘গণঅভ্যুত্থানে আহত ১১ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে, আরও যাবেন ২৮ জন’
১০ কোটিতে মাল্টার পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা টিউলিপের চাচীর
জামিন বাতিল করে সাদপন্থিদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি
পাকিস্তানকে ছেড়ে ভারতের দিকে ঝুঁকছে তালেবান?
টাঙ্গাইলে জিয়া মঞ্চে ৩১ দফা নিয়ে লিফলেট বিতরণ
পলাতক ওসিকে গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি, অভিযানে সেনাবাহিনী-পুলিশ-র্যাব
কানাডার লিবারেল পার্টি ৯ মার্চ নতুন নেতা নির্বাচন করবে
স্বৈরাচারের সহযোগীদের রাজনৈতিক দলে ঢোকালে প্রতিরোধ করা হবে : ড. রিপন
দশ বছর পর ফের পুরষ্কৃত মালালা, ফিরছেন পাকিস্তান
ভারতে এক মাসে এক গ্রাহক পেলেন ২১০ কোটির বিদ্যুৎ বিলের কপি
সাতক্ষীরায় ইজিবাইকের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে কিশোরী নিহত
সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী জনগণ, রাজনৈতিক দলের কোনো ভূমিকা নেই
চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, মৃদু শৈত্য প্রবাহের কবলে গোট জেলা
খলনায়ক এআই, একধাক্কায় বেকার হতে চলেছেন ২ লাখ কর্মী
মক্কায় বন্যার পানিতে ভেসে গেল গাড়ি, ৪ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানে অস্ত্রের মুখে ১৭ সরকারি কর্মীকে অপহরণ
যুক্তরাষ্ট্রে দাবানল নেভানোর কাজে এবার নামানো হলো কারাবন্দিদের