আবারও দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিদায় করে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া
১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪৬ পিএম | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১১:২৮ পিএম
আরেকটি সেমিফাইনাল, আরেকটি রোমাঞ্চকর লড়াই এবং দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার আরেকটি বিশাদের গল্প। ‘চাপে ভেঙে পড়া’ প্রটিয়ারা এবারও পারল না বিশ্বকাপে নকআউট পর্বের বাধা পেরুতে। তাদের হারিয়ে অষ্টমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বার বার রং বদলানোর ম্যাচে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার জয় ৩ উইকেটে। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৬ বল হাতে রেখে দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায় নিশ্চিত করেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।
আগামী রোববার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ভারতের মুখোমুখি হবেন প্যাট কামিন্সরা। বিশ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে আবারও দেখা হবে ভারত–অস্ট্রেলিয়ার। প্রতিশোধের জন্য এর চেয়ে ভালো মঞ্চ নিশ্চয় পেত না স্বাগতিক ভারত।
এ নিয়ে পাঁচবার টুর্নামেন্টটির সেমিফাইনালে খেললেও কোনোবারই ফাইনালের টিকেট পেল না দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে তিনবারই তাদের বিদায় নিতে হলো অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে।
বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন করে দেন দলের ব্যাটাররা। মাত্র ২১২ রানের সংগ্রহ পায় দল। এরপরও দারুণ লড়াই করে প্রটিয়া বোলিং লাইন-আপ। তবে ফিল্ডিংটা তাদের ভালো হয়নি। অনেকগুলো ‘হাফ চান্স’-এর সুযোগগুলো নিজেদের অনুকূলে নিতে পারলে অন্যরকম হতে পারত ম্যাচের ফল।
অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সের পুরষ্কারস্বরূপ ম্যাচসেরার খেতাব পেয়েছেন ট্রাভিস হেড। টার্নিং উইকেটে বল হাতে ২১ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ৪৮ বলে ৬২ রান করেন এই ওপেনার।
দক্ষিণ আফ্রিকার আসল লড়াই শুরু হয় টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪ রানেই ৪ উইকেট হারানোর পর। রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন ডেভিড মিলার।
ব্যাট হাতেও অজিদের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। ৬ ওভারেই ট্রাভিস হেড আর ডেভিড ওয়ার্নার জুটি যোগ করে ৬০ রান। এরপর লড়াইয়ে ফেরে প্রটিয়ারা।
স্পিনার আক্রমণে এনেই সাফল্য পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম বলেই ডেভিড ওয়ার্নারকে বোল্ড করে দেন এইডেন মার্করাম। ভাঙে ৬ ওভারে ৬০ রানের ঝড়ো উদ্বোধনী জুটি। ১ চার ও ৪ ছক্কায় ১৮ বলে ২৯ রান করেন ওয়ার্নার।
পরের ওভারে শূন্য রানে মিচেল মার্শকে ফেরান কাগিসো রাবাদা। কাভারে দারুণ তৎপর ফন ডার ডাসেন লাফিয়ে নেন দুর্দান্ত এক ক্যাচ।
দ্রুত জোড়া উইকেট পতনের পরও থেমে থাকেননি ট্র্যাভিস হেড। একই ছন্দে ব্যাটিং করে স্রেফ ৪০ বলে তুলে নেন ফিফটি। ১৪তম ওভারে অস্ট্রেলিয়া পায় দলীয় শতক।
আক্রমণে এসেই সাফল্য পান কেশভ মহারাজ। দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন কয়েকবার অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া হেডকে। ভাঙে ৩৯ বল স্থায়ী ৪৫ রানের জুটি। ৪৮ বলে ৯ চার ও দুই ছক্কায় হেড করেন ৬২ রান।
তাবরাইজ শামসির ষোড়শ ওভারে আম্পায়ার্স কলের সৌজন্যে 'বেঁচে' যান মার্নাস লাবুশেন। একই বোলারের ২২তম ওভারে আম্পায়ার্স কলেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
এক ওভার পরেই মন্থর উইকেটে তেড়েফুঁড়ে মারতে চাওয়ার মাশুল দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তাবরাইজ শামসির বলে আগেই ব্যাট চালিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন ৫ বলে ১ রান করে। ১৩৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
ধীরে সুস্থে ব্যাটিং করে এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের পথে নিচ্ছিলেন স্টিভেন স্মিথ। কিন্তু হঠাৎই অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান বাজে এক শট খেলে বল আকাশে তুলে আউট হন কুইন্টন ডি করের হাতে।
খানিক পর জশ ইংলিশ প্রতিরোধও ভাঙেন কোয়েৎজি। ইয়োর্কার ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে ৩ চারে ৪৯ বলে ২৮ রান করেন ইংলিস। ৪০তম ওভারে ১৯৩ বলে সপ্তম উইকেট হারায় অজিরা। জয় তখনও ২০ রান দূরে।
মিচেল স্টার্ককে নিয়ে দূর্গম পথটুকু পাড়ি দেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতে টুর্নামেন্টের ইতিহাসের সফলতম দলটি। আরেকটি বিশাদ সঙ্গি হয় দক্ষিণ আফ্রিকার।
প্রথম ইনিংসেও ছিল অজিদের দাপট। মিচেল স্টার্ক আর জশ হেইজেলউডের বোলিং তোপে দাঁড়াতেই পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকার টপঅর্ডার। হেনরিক ক্লাসের আর ডেভিড মিলারের ব্যাটে ধ্বস কাটিয়ে না উঠতেই হেডের জোড়া আঘাত। সবকিছু সামলে বুক চিতিয়ে একাই লড়েন মিলার। তুলে নেন দুর্দান্ত শতক।
আসরে লিগ পর্বে তারা ছিল দারুণ ছন্দে। ৯ ম্যাচের ৭টিতে জয় তুলে সেমিফাইনালে ওঠে দ্বিতীয় হয়ে। তবে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামার কিছুক্ষণ পরই রীতিমতো ধুঁকতে শুরু করে টেম্বা বাভুমার দল। স্টার্ক ও হ্যাজলউডের জোড়া আঘাতে ১২ ওভারের মধ্যে ২৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার চাপে ভেঙে পড়ার যে প্রবণতা, সেটি তখন প্রবলভাবে ধরা দেয়।
১৪ ওভারে তাদের সংগ্রহ যখন ৪ উইকেটে ৪৪ রান তখন বৃষ্টির বাধায় পড়ে ম্যাচ। খেলা শুরুর এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় যেতেই নামে বৃষ্টি। পরে খেলা শুরু হলেও রিজার্ভ ডে থাকায় কমানো হয়নি ম্যাচের দৈর্ঘ।
পঞ্চম উইকেটে ১১৩ বলে ৯৫ রানের জুটি গড়েন মিলার ও ক্লাসেন। ক্লাসেনকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন অনিয়মিত বোলার হেড। পরের বলেই দুর্দান্ত স্পিনে মার্কো ইয়েনসেনকে ফেলেন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। জোড়া আঘাতে আবারও ব্যাকফুটে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
তবে অপর প্রান্তে দৃঢ়তার সাথে ব্যাটিং চালিয়ে যান মিলার। সপ্তম উইকেটে জেরাল্ড কোয়েৎজিকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৫৩ রানের জুটি। জুটি ভাঙেন প্যাট কামিন্স।
অবশ্য এই ভুল আউটে দায় আছে কোয়েৎজিরও। কামিন্সের বাউন্সার তার ব্যাট কিংবা গ্লাভসে লাগেনি। আবেদনের প্রেক্ষিতে আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নেননি কোয়েৎজি ও মিলার। হটস্পটে দেখা যায় বল ছুয়েছে কোয়েৎজির কাধ।
এরপর আরও কিছু সময় চালিয়ে যান মিলার। ১১৫ বলে ৮টি চার ও ৫ ছক্কায় তুলে নেন ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপ ইতিহাসে যা নকআউট পর্বে কোনো ছয় নম্বর ব্যাটসম্যানের প্রথম শতক। এত দিন সর্বোচ্চ ছিল ১৯৭৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কলিন্স কিংয়ের ছয়ে নেমে ৮৬। নকআউটে দক্ষিণ আফ্রিকানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের ইনিসংও এটিই।
পরের বলেই কামিন্সের শিকার হন ছয়ে নামা এই ব্যাটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ রান আসে ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। বিশোর্ধো ইনিংস নেই আর একটিও।
৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার স্টার্ক। ৫১ রানে ৩টি নিয়েছেন কামিন্সও। দুটি করে নেন হেড ও হেইজেলউড।
বিশ্বকাপের নক আউট পবে ‘চোকার্স’ তকমা থেকে এবারও বেরিয়ে আসা হলো না দক্ষিণ আফ্রিকার। এর আগে ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ ও ২০১৫ সালে সেমিফাইনালে খেলেছে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.৪ ওভারে ২১২ (ডি কক ৩, বাভুমা ৪, ফন ডার ডাসেন ৬, মার্করাম ১০, ক্লসেন ৪৭, মিলার ১০১, ইয়ানসেন ০, কুটসিয়া ১৯, মহারাজ ৪, রাবাদা ১০, শামসি ১*; স্টার্ক ১০-১-৩৪-৩, হেইজেলউড ৮-৩-১২-২, কামিন্স ৯.৪-০-৫১-৩, জ্যাম্পা ৭-০-৫৫-০, ম্যাক্সওয়েল ১০-০-৩৫-০, হেড ৫-০-২১-২)
অস্ট্রেলিয়া: ৪৭.২ ওভারে ২১৫/৭ (হেড ৬২, ওয়ার্নার ২৯, মার্শ ০, স্মিথ ৩০, লাবুশেন ১৮, ম্যাক্সওয়েল ১, ইংলিস ২৮, স্টার্ক ১৬*, কামিন্স ১৪*; ইয়ানসেন ৪.২-০-৩৫-০, রাবাদা ৬-০-৪১-১, মার্করাম ৮-১-২৩-১, কুটসিয়া ৯-০-৪৭-২, শামসি ১০-০-৪২-২, মহারাজ ১০-০-২৪-১)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ট্রাভিস হেড।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আলফাডাঙ্গায় হালি পেঁয়াজের চাড়া রোপনের ধুম পড়েছে
শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ড. সোহেল, সদস্য সচিব ড. মাসুদ
মাস্ক, ঘোমটা ও ভুয়া পাসপোর্টসহ 'কট' নিপুণ! তদন্তে রহস্যময় তথ্য
খুনিরাই খুনিকে সহযোগিতা করেছে : সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ
নাটোরে মহাশ্মশানের মন্দিরে তরুণ দাস হত্যার মূল আসামি গ্রেপ্তার
টাকাটাই শেষ কথা বাকি সব বাতুলতা! শফিক রেহমান সম্পর্কে যা বললেন ডা: জাহেদ
উত্তরা পশ্চিম থানার জামায়াতের সহযোগী সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শীতার্তদের পাশে জামায়াত
সালথায় রাতের আঁধারে কৃষকের পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন
রাণীশংকৈলে মারামারি ও ভাংচুরের মধ্য দিয়ে শেষ হলো জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির শুটিং
ওসি শাহ আলমকে কত টাকার বিনিময়ে ছেড়েছেন, প্রশ্ন হান্নান মাসউদের
দৌলতখানে ছাত্রদলের মাদক বিরোধী র্যালি ও আলোচনা সভা
৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে লাকসামে বিএনপির জনসভা
এক ট্রলারেই ১৯৫ মণ ইলিশ, ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি
শিবচরের পদ্মায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে গ্রেপ্তার ২
গার পাহাড় সীমান্তে শাড়ি-লেহেঙ্গা, সানগ্লাসসহ ২ কোটি ৩২ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ
ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে টপকে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করতে যাচ্ছে ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজ
নরসিংদীতে সাদপন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
ঈশ্বরগঞ্জে শীতার্তদের মাঝে বিএনপি নেতার কম্বল বিতরণ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মুচলেকা ও জরিমানার পরও বন্ধ হয়নি ইট ভাটা