কামিন্সের চোখে দ্বিচারিতা, হোল্ডিংয়ের চোখে আইসিসি ‘ভন্ড’

খাজার ‘শান্তির’ পায়রা ও লাবুশেনের ‘ধর্মীয়’ ঈগল

Daily Inqilab স্পোর্টস ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম

মারনাস লাবুশেনের ব্যাটে একটা ইগলের স্টিকার থাকে। সে ইগলটি বাইবেলের একটি পদের অর্থ বহন করে। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী, তার ব্যাটেও তিনি সেটি প্রদর্শন করেন। উসমান খাজা তার জুতায় একটি পায়রার স্টিকার লাগাতে চেয়েছিলেন। যে পায়রা শান্তির প্রতীক। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানোর ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খাজার এটি তৃতীয় কোনো উদ্যোগ। আজ ভোর থেকেই শুরু হয়ে যাওয়া মেলবোর্ন টেস্টে লাবুশেনের ব্যাটে ইগলের স্টিকার থাকারই কথা। তবে খাজা তার জুতা বা ব্যাটে পায়রার স্টিকার নিয়ে নামতে পারবেন না। কারণ, আইসিসি অনুমতি দেয়নি।
লাবুশেনের ইগল আর খাজার পায়রা- এ দুটির মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখেন না অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কেন একটিকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, আরেকটিকে দেওয়া হচ্ছে না- সেটিও বুঝতে পারছেন না তিনি। এ প্রসঙ্গে বক্সিং ডে টেস্টের আগের দিন কামিন্স বলেন, ‘না, আসলে না, আমি খুব সূক্ষ্মভাবে এ দুটির প্রয়োগের ব্যাপারে জানি না। তবে এটা সহজ-সরল একটা ব্যাপার, একটা পায়রা। আমরা সত্যিই উজিকে (খাজা) সমর্থন করি। আমার মনে হয়, সে যা বিশ্বাস করে, সেটির পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। আমার মনে হয়, সে এটি সম্মানজনক উপায়েই করছে।’
পার্থে প্রথম টেস্টে অনুশীলনে জুতায় ‘স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার’ ও ‘প্রতিটি জীবনের মূল্য সমান’ সেøাগান লিখেছিলেন খাজা। তবে ম্যাচে এমন কিছু করলে শাস্তি পেতে হবে, এই বার্তার পর টেপ দিয়ে সেসব লেখা মুছে দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পার্থে তিনি নামেন কালো আর্মব্যান্ড পরে। এরপর আইসিসির ভর্ৎসনা শুনতে হয় তাঁকে। এবার পায়রার স্টিকার নিয়ে অনুশীলন করেছেন তিনি। কালো আর্মব্যান্ডের ক্ষেত্রে আইসিসির অনুমতি নেননি বলে ভর্ৎসনা, বলা হয়েছিল এমন। এবার তাই জলপাইয়ের ডাল ধরে থাকা পায়রার স্টিকার ব্যাট ও জুতায় লাগানোর অনুমতি চান তিনি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সংস্থা এর অনুমতি দিলেও আইসিসির সবুজসংকেত খাজা পাচ্ছেন না। খাজার পাশে থাকলেও আইসিসির নিয়ম অবশ্য মেনে নিচ্ছেন খেলার বাইরে পরিবেশ আন্দোলনের মতো ইস্যুতে বেশ সোচ্চার কামিন্স, ‘“প্রতিটি জীবনের মূল্য সমান”- আমার মনে হয় না, এ কথাটি অপমানমূলক। পায়রার ব্যাপারেও সেটিই বলব। এটিই উজি (ভাজা)। সে যেভাবে এগিয়েছে, তাতে সে মাথা উঁচু রাখতে পারে।’
খাজাকে একের পর এক বাধা দেওয়া নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে গত কয়েক দিন ধরে। সেই কাতারে নাম লিখিয়ে খাজার পাশে দাঁড়িয়ে আইসিসিকে ধুয়ে দিয়েছেন এসব ক্ষেত্রে বরাবরই সরব মাইকেল হোল্ডিং। একেক জনের জন্য একেক নিয়ম ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন পদক্ষেপ মানতে পারছেন না ক্যারিবিয়ান সাবেক পেসার ও ধারাভাষ্যকার। দ্য উইকেন্ড অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইসিসিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন হোল্ডিং, ‘আমি খাওয়াজাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া ঝামেলার বিষয়টি অনুসরণ করছি। আর এটা বলতে পারছি না যে আমি আইসিসির অবস্থানে বিস্মিত।’
অবাক না হওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ভ- বলেছেন সাবেক ক্যারিবিয়ান তারকা, ‘যদি এটা অন্যান্য অনেক সংস্থার মতো হতো, যারা এরকম ব্যাপারগুলোতে তাদের মনোভাব ও আচরণের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার কিছু লক্ষণ দেখায়, তবে আমি অবাক হওয়ার দাবি করতে পারতাম। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে নয়। আবারও তারা একটি সংগঠন হিসাবে তাদের ভ-ামি এবং নৈতিক অবস্থানের ঘাটতি দেখিয়েছে।’
ফিলিস্তিনের সমর্থনে খাওয়াজাকে কিছু করতে না দিলেও কৃষ্ণাঙ্গদের সমর্থনে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার (বিএলএম)’ বা সমকামীদের সমর্থনে ‘এলজিবিটিকিউ’ আন্দোলনের পক্ষে বার্তা দেওয়ার অনুমতি কেন দেওয়া হয়েছিল, এমন প্রশ্ন তুলেছেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি, ‘আইসিসির নিয়ম বলে যে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত কার্যকলাপ বা ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বার্তা প্রকাশের অনুমোদন দেওয়া হবে না। তাহলে কীভাবে বিএলএমের সময় মানুষকে হাঁটু গেড়ে সংহতি জানানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল? আর স্টাম্পগুলো এলজিবিটিকিউয়ের রঙে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল?’


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস